সাদাকালো-মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দক্ষতার সঙ্গে দ্রুত শেষ করতে হবে by আহমদ রফিক
সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম দলমত-নির্বিশেষে স্বাদেশিকতার প্রকাশে অসাধারণ দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছিল। তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাবি তোলে, যুদ্ধাপরাধীদের অবিলম্বে বিচার শুরু করা হোক। মীর শওকত আলী, বিএনপির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। তাতে কী আসে যায়? তাঁর প্রথম ও শেষ পরিচয়, তিনি একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা, একজন সেক্টর কমান্ডার।
যেকোনো জাদুমন্ত্রে হোক, নেপথ্যের অজানা কারণে হোক তাঁরা সমস্বরে হাঁক দিলেন 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই।' এ আহ্বান সমাজে বেশ সাড়া জাগায়, বিশেষ করে তরুণ সমাজে। এই যোদ্ধাদের বিবৃতি, দৃঢ়প্রত্যয়, সমাবেশ-সম্মেলন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য মানুষকে উদ্দীপ্ত করে তোলে। এ ধরনের বিচার, বিশেষ করে তা যদি শুরু হয় ৪০ বছর পর, সে ক্ষেত্রে ব্যাপক জনসমর্থনের প্রয়োজন পড়ে। সেটা ঠিকই ছিল, এখনো আছে। আছে জামায়াতের বিরোধিতা ও বিএনপির নির্বিকারত্ব সত্ত্বেও।
স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ এ সময় ব্যাপক জনসমর্থনে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। দুই-তৃতীয়াংশ আসন সংখ্যা নিয়ে শাসনক্ষমতায় আসার পর বিচার শুরু, তাদের জন্য রাজনৈতিক বিচারে, নৈতিক বিচারে যুক্তিসংগত দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। দ্বিধা-সংশয়ের অবকাশ থাকে না। আন্তর্জাতিক সমর্থনেরও অভাব পড়েনি। তাদের একটাই কথা- বিচার যেন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, প্রতিহিংসা যেন ছায়া না ফেলে। আমাদের মনে পড়ে, ন্যুরেমবার্গ বিচারের কথা। দীর্ঘকাল পর দক্ষিণ আমেরিকা থেকে নাৎসি যুদ্ধাপরাধী আইখম্যানকে ধরে এনে জাতিসংঘের আদালতে নয়, ইসরায়েলি আদালতেই বিচার ও শাস্তি বিধান সম্পন্ন করে ইহুদিরা। তখন কিন্তু প্রতিহিংসা বা প্রতিশোধের প্রশ্ন ওঠেনি। তবে এখানে প্রশ্ন উঠছে, কারা যুদ্ধাপরাধী? অবশ্যই পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সদস্য, যারা যুদ্ধের নিয়মনীতি না মেনে গণহত্যার অপরাধে অভিযুক্ত। যারা নিরপরাধ বাঙালিকে ঘর থেকে টেনে এনে হত্যা করেছে। করেছে এমন নারী-পুরুষ ও শিশুদেও, যারা যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত নয়। কিন্তু কোথায় পাওয়া যাবে ওই নৃশংস বর্বরদের? তারা তো বাহাত্তরেই সহিসালামতে পাকিস্তানে ফিরে গেছে; কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের পর ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সেনা যখন ভারতীয় হেফাজতে তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাদের মধ্য থেকে ৪০০ সেনা অফিসার ও জওয়ানের বিচারের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এপ্রিল নাগাদ এই সংখ্যা প্রথমে ১৯৫ এবং পরে ১১৮তে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত ১১৮ জনকেও বিচারের আওতায় আনা হয়নি। কুখ্যাত নিয়াজি ফরমান-আরবাব সবাই বাংলাদেশের সম্মতি সাপেক্ষে সিমলা শীর্ষ বৈঠকের জের ধরে পাকিস্তানে ফিরে যায়।
আর স্থানীয় অপরাধী রাজাকার-আলবদরদেরও বিচার হয়নি। যত দূর মনে পড়ে, তাদের নৃশংস কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় তখন মানুষের ক্ষোভ-ক্রোধের সীমা-পরিসীমা ছিল না। সাক্ষ্য-প্রমাণেরও অভাব ছিল না- আজ ৪০ বছর পর যে জন্য মাথা খুঁড়ে মরতে হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধী সৈনিক, কিন্তু স্থানীয় ঘাতকরা তো যুদ্ধ করেনি, পাকিস্তানি বাহিনীর সহায়ক শক্তি হিসেবে গুম, খুন, নারী নির্যাতন ও বাড়িঘর পোড়ানোর পবিত্র দায়িত্ব পালন করেছে। তাই যুদ্ধাপরাধের পরিবর্তে এখন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলছে। কিন্তু কথাটা বলেছিলাম বিচারব্যবস্থার প্রধান কেঁৗসুলিকে যে ওই ১১৮ জনের প্রতীকী বিচার কি করা যায় না? গণহত্যার কারণে যুদ্ধাপরাধের প্রতীকী বিচার? সেখানেও প্রশ্ন সাক্ষ্য-প্রমাণ? প্রতীকী বিচারে বিদেশি সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যাদি কী যথেষ্ট নয়। তা ছাড়া এমন লোক সম্ভবত এখনো জীবিত আছেন, যাঁরা সুনির্দিষ্ট পাকিস্তানি অফিসারদের অপরাধের তথ্য সরবরাহে সক্ষম। এ বিষয়ে ডা. এম এ হাসানের বইটি তো রীতিমতো তথ্যে ভরা, ওদের নাম ও কর্মসহ। জনদাবির চাপে শেষ পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বিচার শুরু হয়েছে। শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে। সে ট্রাইব্যুনালের বয়স এখন তিন বছরে পড়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে, যাদের গত ৪০ বছরে মানুষ অপরাধী হিসেবে জেনে এসেছে, অপরাধ মূলত খুন, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগের। দুই বছর কিন্তু কম সময় নয়, তবু বিচারপ্রক্রিয়া যেন হাঁটি-হাঁটি পা পা করে চলছে।
প্রথম বছরের অবস্থা দেখে লোকজনকে বলাবলি করতে শুনেছি, 'না, বিচার বুঝি আর শেষ হবে না, শাস্তি তো দূরের কথা, নিগৃহীত অনেককে দৈনিক পত্রিকা মারফত আক্ষেপ করতে দেখা গেছে এই বলে যে মৃত্যুর আগে বোধ হয় হত্যার বিচার দেখে যেতে পারব না।' সম্প্রতি দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের যাত্রা শুরু হয়েছে। এ কাজটি কি এক বছর আগে করা যেত না। যে উদ্দীপনা নিয়ে বিচারকাজ শুরু হয়, তাতে মানুষ খুবই আশান্বিত হয়েছিল। এখন ক্রমে হতাশা তাদের গ্রাস করছে। সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি এবং দলীয় নেতারা যেভাবে দৃঢ়তার সঙ্গে বলছেন, বাংলার মাটিতে অপরাধীদের বিচার হবেই, সে প্রত্যয়ের সঙ্গে বিচারপ্রক্রিয়ার অগ্রগতির কোনো মিল নেই। সে কারণেই মানুষের মনে হতাশা। সরকারের বোঝা দরকার যে গ্রেপ্তার করে জেলে নিয়ে একদা চিহ্নিত অপরাধীদের যদি প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস দিতে হয়, তাহলে এর রাজনৈতিক পরিণাম মোটেই শুভ হবে না। কারো জন্যই হবে না। কাজেই কাজটা যখন এতদিন পর শুরু হয়েছে, তখন তা আটঘাট বেঁধে শেষ করা দরকার। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কোনো সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে কাগজে বা দুয়েকটি টিভি চ্যানেলে অভিযোগপত্র, তদন্ত রিপোর্ট ইত্যাদি নিয়ে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে তাতে দেখা যায়, শৃঙ্খলার অভাব, দক্ষ পরিবেশনের অভাব। এমনকি সময়মতো অভিযোগপত্র পরিবেশনও সঠিকভাবে হচ্ছে না। এসব দেখে দুটি কারণ যুক্তিবাদী মানুষ মাত্রেরই মনে আসতে পারে। যেমন- যথাযথ গুরুত্বে তদন্তকাজ সম্পন্ন না করার প্রবণতা অর্থাৎ অবহেলা। দ্বিতীয়ত, শর্ষের ভেতর ভূতের উপস্থিতি। ট্রাইব্যুনাল হয়তো বিষয়টা বুঝতে পারছেন। কিন্তু তাঁদের তো হাত-পা বাঁধা। তাঁদের নির্ভর করতে হচ্ছে তথ্য-উপাত্ত ও সাক্ষ্যের ওপর।
আর এসব কারণে ট্রাইব্যুনালকে অভিযোগপত্র ফেরত পাঠাতে হচ্ছে। তাঁরা ক্ষুব্ধ। কারণ সওয়াল-জবাবের সময় অনেক ক্ষেত্রে সাক্ষী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ভয়ভীতির কারণে অনেকে এগিয়ে আসছেন না। ক্ষেত্রবিশেষে তাঁদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। স্বভাবতই কেউ কেউ নিজস্ব আবাস ছেড়ে অন্যত্র আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। ঘাতক-অপরাধীদের বিচার করতে গিয়ে এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে আমরা কি কখনো ভাবতে পেরেছিলাম? কিন্তু সাধারণ মানুষকে অসহায় চোখে সেটাই দেখতে হচ্ছে। মনে হচ্ছে, বর্তমান সমাজে অপরাধী পক্ষই শক্তিমান।
কিন্তু যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে হত্যা, গুম, নারী নির্যাতনে সহায়তা ও ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়া ও লুটপাটের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের অধ্যক্ষকে হত্যার ঘটনা তো বহু আলোচিত বিষয়। তাঁর সন্তান হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী। প্রসঙ্গত একটা কথা বলি- যেসব স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, বধ্যভূমি বা গণহত্যার স্থানের আশপাশে এখনো কোথাও কোথাও বয়স্ক মানুষ আছেন, যাঁরা ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী, তাঁদের খুঁজে বের করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনগুলো কি এ কাজেও সহায়তা করতে পারে না। তারা তো রীতিমতো ঐক্যবদ্ধ-সংগঠিত শক্তি হিসেবে পরিচিত।
তাই দরকার প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সরকারি বা নির্ভরযোগ্য বেসরকারি তত্ত্বাবধানে রেখে সাক্ষ্যদানের ব্যাপার নিশ্চিত করা। দরকার যেসব পরিবার থেকে সুনির্দিষ্ট অপরাধীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছিল সেগুলো থেকে সহায়তা নেওয়া- যেমন নথিপত্রের তেমনি ব্যক্তিবিশেষের সাক্ষ্যের। প্রসঙ্গত, আরো একটি কথা বলি, আজ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সমস্যা হিসেবে বারবার প্রমাণের অভাব, সাক্ষীর অভাবের কথা বলা হচ্ছে- কিন্তু একসময় এ দুটির কোনোটিরই অভাব ছিল না। সে সব কিছুই কিন্তু লুপ্ত হয়ে যাওয়ার কথা নয়।
বিদেশি পত্রপত্রিকায় যেসব বিবরণ লিপিবদ্ধ আছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নাম, হত্যাকাণ্ডের স্থানসহ সেগুলো কি সাক্ষ্য-প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হতে পারে না? তা ছাড়া সংগ্রামসহ একাধিক পত্রিকায় প্রকাশিত গোলাম আযম ও অন্যদের প্রকাশ্য বিবৃতিতে রয়েছে পাকিস্তানি সেনাদের সমর্থনে কাজ করতে, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করার আহ্বান জানানোর তথ্য।
প্রমাণাদি সম্পর্কে আরো বলি, ডা. এম এ হাসানের তথ্যনির্ভর বিশাল গ্রন্থে ('যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা ও বিচারের অন্বেষণ') ও অনুরূপ বইতে অনেক ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়, যাঁরা হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী এ জাতীয় সাক্ষ্য-প্রমাণ কি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না? পারে। এ জন্য দরকার সময়সাপেক্ষ শ্রম, সঠিক প্রত্যক্ষদর্শীকে খুঁজে বের করা। এর জন্য স্বদেশপ্রেমী লোক নিয়োগ কি একান্তই অসম্ভব? আর ডা. হাসানের সাহায্যও তো নেওয়া যেতে পারে, প্রয়োজনে সাক্ষ্য। আমার বিশ্বাস, আন্তরিক হলে এবং গণহত্যার বিচারে দেশাত্মবোধে উদ্দীপ্ত হলে শ্রমসাপেক্ষ তৎপরতায় অন্তত চিহ্নিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ অসম্ভব নয়। ট্রাইব্যুনাল আরো একটি কাজ করতে পারেন। তাঁরা প্রেস মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় নিয়মিত বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ জানা ব্যক্তিদের উদ্দেশে আহ্বান জানাতে পারেন, যাতে তাঁরা সাক্ষ্য দিতে বা প্রমাণ হাজির করতে এগিয়ে আসেন। এই সঙ্গে তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথাও স্পষ্টভাবে ওই আহ্বানে থাকতে হবে।
সবশেষে একটি কথা! কাগজের প্রতিবেদনে একটি বিষয় স্পষ্ট যে তদন্তকাজে দক্ষতার অভাব রয়েছে, তাই এ কাজের জন্য খোল-নলচে বদলে অভিজ্ঞ ও দক্ষ ব্যক্তির গ্রুপ নতুন করে হলেও গঠন করা দরকার। তা না হলে সব কিছু ভেস্তে যাবে। ব্যক্তিবিশেষের নাম উল্লেখ না করেও বলা যায়, নতুন ট্রাইব্যুনাল ও প্রসিকিউটর নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্য, দক্ষ ব্যক্তি আমাদের চেনামুখ আইনজীবীদের মধ্যেই রয়েছেন, যাঁদের মেধা এ কাজের উপযোগী। তাঁদের কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিয়েছেন। সেই আলোকে দল-নির্বিশেষে নিয়োগকাজের স্বার্থেই জরুরি। তাঁদের নিয়ে তৈরি হোক না তৃতীয় ট্রাব্যুনাল এবং যোগ্য তদন্ত সংস্থা! তবে সবচেয়ে জরুরি তদন্তটিমের নির্বাচনে মেধা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, স্বদেশপ্রেম ও কাজে আনুগত্যের বিষয়গুলো বিবেচনা করা। কারণ আমরা জানি, সাধারণ আদালতেও অভিযোগপত্রের দুর্বলতায় চিহ্নিত প্রকৃত অপরাধী খালাস পেয়ে যায়। বিচারকের কিছু করার থাকে না। এ বিষয়টা সরকারের ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ গুরুত্বে বিবেচনায় রাখা উচিত। কারণ চিহ্নিত অপরাধীদের বিচার ও শাস্তির এ সুযোগ আমরা হারাতে চাই না। চাই না তদন্ত ও সাক্ষী-সাক্ষ্য জোগাড়ের দুর্বলতায় বর্তমান বিচারপ্রক্রিয়া অর্থহীন হয়ে যাক, অপরাধী খালাস পাক, নর-নারী হত্যার দায় মাথায় নিয়েও তারা দিব্যি সমাজে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াক। কিংবা জাতীয় পতাকাশোভিত গাড়িতে চড়ে বেড়ানোর আরাম-আয়েশ উপভোগ করুক। সরকারের হাতে সময় কম। অথচ বিচারের কাজটা সময়সাপেক্ষ। তাই বলি, দোহাই আপনাদের, 'একটু পা চালিয়ে ভাই', দ্রুত পায়ে চলুন, চালিয়ে নিন তদন্তকারী সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে। অবহেলা ও সময় ক্ষয় যেন তদন্তসহ বিচারপ্রক্রিয়ার সঙ্গী না হয়। আন্তর্জাতিক নিয়মকানুনের অজুহাতে লক্ষ্য অর্জনকে হাতের মুঠো থেকে ছেড়ে দেবেন না, আবারও বলি, ইসরায়েল যখন নিজস্বার্থে আন্তর্জাকি শক্তিকে পাত্তা দেয় না, তখনো তার অর্জন কেউ কেড়ে নিতে পারে না। বাংলাদেশ ইসরায়েলের মতো অস্ত্রশক্তিতে প্রবল না হতে পারে, কিন্তু ন্যায়ানুগ মানসিক শক্তিতে দৃঢ় হতে পারে, সে প্রমাণ রয়েছে একাত্তরে। আজ ঘাতকদের বিচারে সেই মানসিক দৃঢ়তা ও শক্তির প্রকাশ ঘটাতে হবে বাংলাদেশকে। একমাত্র তখনই সম্ভব অপরাধীর বিচার ও শাস্তি প্রদান।
লেখক : ভাষাসংগ্রামী, কবি, প্রাবন্ধিক, রবীন্দ্রগবেষক
No comments