ব দ লে যা ও ব দ লে দা ও মি ছি ল-অবশেষে লাশটা আমরা খুঁজে পেয়েছি by ফারহানা হোসাইন
‘বদলে যাও বদলে দাও মিছিল’-এ দেশের বিভিন্ন জরুরি সমস্যা ও নির্বাচিত তিনটি ইস্যু নিয়ে অব্যাহত আলোচনা হচ্ছে। আজ নৌ-দুর্ঘটনার বিষয়ে বদলে যাও বদলে দাও মিছিল ব্লগের নিয়মিত লেখক ফারহানা হোসাইন-এর স্বজন হারানোর অভিজ্ঞতার লেখা ছাপা হলো।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর ১৫ মার্চ আমার মামার লাশটা খুঁজে পাওয়া যায়। পাঁচ দিন বুড়িগঙ্গার বিষাক্ত পানিতে ডুবে থাকার কারণে পুরো লাশটাই খুব বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। একদমই চেনা যায় না তিনি সেই ‘আসলাম সেরনিয়াবাত’। মামা দেখতে খুব সুন্দর ছিলেন। উজ্জ্বল বর্ণের, মিষ্টভাষী, সদা হাস্যোজ্জ্বল তিরিশ বছরের এক টগবগে যুবক। পরিবার-পরিজনের কতই না প্রিয় মুখ। বিয়ে করেছিলেন গত বছরের মাঝামাঝি। ভালোবেসে বিয়ে, তাই বাবা-মায়ের ভয়ে প্রথমে লুকিয়ে বিয়ে, তারপর দুই পরিবারের কাছে ক্ষমা চাওয়াপূর্বক বিয়ে মেনে নেওয়া।
আমার মামি কম বয়সী, সতেরো পেরিয়ে আঠারোতে পড়েছেন মাত্র। তাই মামিদের বাসা থেকে বলা হয়েছিল, মামা যেন একটা চাকরি করে ভালোভাবে নিজের পায়ে দাঁড়ান, তবেই মামিকে তুলে দেওয়া হবে মামার হাতে! স্ত্রীর জন্য চ্যালেঞ্জ মাথা পেতে নেন মামা। মামা গত ফেব্রুয়ারি মাসেই একটা চাকরি পেয়েছিলেন বহু লড়াই করে, খুব স্বল্প বেতনের ছোটখাটো একটা চাকরি। তাতেই খুব খুশি ছিলেন তিনি। প্রথম বেতনের কিছু টাকা তাঁর নববিবাহিতা স্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়ার জন্য ছুটে গিয়েছিলেন শ্বশুরবাড়ি কেরানীগঞ্জে। আমার নানুকে ডেকে হাসতে হাসতে বলে গিয়েছিলেন, ‘শর্ত পূরণ করেছি, এই বার আমার বউকে আমার কাছে রাখব।’ স্ত্রীর হাতে সেই আনন্দময় বেতনের টাকা তুলে দিয়েছিলেন ঠিকই। ফিরে আসার সময় যখন নৌকা দিয়ে বুড়িগঙ্গা নদী পার হচ্ছিলেন, তখনই দুর্ঘটনাটি ঘটে। সবাই বলছে, মাঝনদীতে নৌকাটি একটি ট্রলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়। নৌকার বেশির ভাগ যাত্রী পাড়ে উঠে আসে সাঁতার কেটে, শুধু দুজন ছাড়া। একজনের লাশ কিছুক্ষণ বাদেই ভেসে ওঠে। শুধু মামাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। লাশ খুঁজে পেতে কত বেদনার্ত ছোটাছুটি, থানা-পুলিশ ধরাধরি, কত অনুনয়, কতই না কাকুতি-মিনতি। কিন্তু পুলিশ নির্বিকার। উল্টো এই আইন-সেই আইন, নৌ-পুলিশ, নৌ-থানা, বিশেষায়িত পুলিশ ইত্যাদি বয়ান। সেসব তো আমাদের দেশে নেই। যেদিন দেশে এগুলো গড়ে উঠবে, সেদিন তারা সত্যিকার সাহায্যের কাজ করতে পারবে। পাঁচ দিন পর বুড়িগঙ্গা কুঠিবাড়ি এলাকায় ভেসে ওঠে তাঁর লাশটি। মামা সাঁতার জানতেন না।
ওনার ভালোবাসার স্বপ্নজয়ের সেই স্ত্রীকে দেখলাম কেঁদে কেঁদে অবশেষে পাথর হয়ে বসে পড়লেন। নির্বাক নিথর। ঘর বাঁধার প্রিয় মানুষটির সঙ্গে তো ঘর শুরুই করা গেল না! আর আমার নানুর অবস্থা আমার পক্ষে বর্ণনা করা অসম্ভব। শুধু ওনার আকুল একটা আবেদন এখনো কানে ভাসছে, ‘আমার বাবাটা তো আর ফিরে আসবে না, আর কখনো আমাকে ডাকবে না। এর চাইতে তো ওকে খুঁজে না পাওয়াই ভালো ছিল! আমি তো আর বেশি দিন বাঁচব না। বাকি দিনগুলো না হয় অপেক্ষা করেই কাটিয়ে দিতাম।’
আজকে দিনটা শুরু করেছিলাম ‘বদলে যাও বদলে দাও মিছিল’ ব্লগে শ্রদ্ধেয় জাফর ইকবাল স্যারের সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে একটা লেখা পড়ে। লেখাটায় তিনি এক মন্ত্রী মহোদয়ের নাম উল্লেখ করে তাঁর কিছু দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন। আমি স্যারের মতো এভাবে লিখতে পারব না। আর তাঁদের মতো ব্যক্তিরা লিখেও তো কোনো পরিবর্তন করতে পারছেন না। সরকার তো এসবের কোনো ধারই ধারে না। পৃথিবীতে এমন বিস্ময়কর রাষ্ট্রপ্রশাসন আর কোথায় আছে, জানতে পারছি না। কিন্তু আমার খুব ইচ্ছা, অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু মানুষ যদি একবার জানত পাঁচ দিন পানিতে ভেসে থাকা গলিত একটা লাশ কফিনে ঢোকানো যে কত কঠিন! এমন ধরনের একটা লাশ ছাইয়ের মতো কালো হয়ে যায়, কতটা অস্বাভাবিক ফুলে ওঠে! এটাও তো অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানেন না।
কিন্তু আমরা যারা স্বজন হারিয়েছি, তারা জানি। আমরা আরও অনেক কিছু জানি। জানি, একটা মানুষ মরে গেলে তাঁর সঙ্গে সঙ্গে কতগুলো মানুষ বেঁচে থেকেও মরে যায়, কত মানুষের জীবন থেকে লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, গোলাপি সব রং মুছে যায়। নিক্ষেপিত হয় নিকষ কালো অন্ধকারে।
আমরা জানি, বিধবা একটি মেয়ের জীবন সাদা রঙের হয়ে যায়, কোনো গান কোনো মধুর সুর তাকে আর স্পর্শ করে না। এই সুন্দর অপরূপ পৃথিবী তার জীবনে কত বিবর্ণ হয়ে ওঠে। আমি চাই, কাল থেকে আমার জীবনটা ঠিক তত দিনের হোক, যত দিনের মধ্যে আমার কোনো স্বজন হারানো লাশ আমাকে দেখতে হবে না। আমি এতটা সাহসী নই, আমি পারব না মৃত্যুসম বেদনার্ত জীবন কাটাতে। ১৫ মার্চের মামার সেই লাশ দেখার পর আমি জেনে গেছি, আমি পারব না প্রাণপ্রিয় স্বজন হারিয়ে প্রতিদিন মৃত্যুর মুখোমুখি হতে।
আমি জানি না, দুঃখের রং কালো কি না? যদি তা-ই হয়, তাহলে শুধু শোক দিবসে নয়, প্রতিদিনই আমাদের কালো ব্যাজ বুকে লাগানো উচিত। আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থাপনা অন্তত এইটুকুু নিশ্চিত করতে পেরেছে অভাগা নাগরিকদের জন্য। আমি জানি না, ‘পৃথিবীতে সবচেয়ে ভারী বস্তু মা-বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ’ কথাটা চিরসত্য কি না! যদি সত্য হয়, তবে ছোট্ট মেঘের মনের ওপর তার বাবা-মায়ের লাশ দুটো কতটুকু ভারী? তারচেয়ে কম, না আরও বেশি? আমরা জানি না, আমাদের কোথায় নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব, জায়গাটা যদি বেডরুম না-ও হয়, তাহলে সেটা কোথায়? রাস্তায়, নদীপথে, না রেলপথে? কোথায় সেই নিরাপদ স্থান। যদি জানতাম তাহলে অন্তত আমাদের স্বজনদের সেই জায়গাগুলোতেই অবস্থান নিতে বলতাম, তার বাইরে যেতে দিতাম না। আমরা এখনো জানি না, আর কত বিকৃত লাশ উদ্ধার হলে নৌপুলিশ নামক প্রচেষ্টার অব্যাহতি হবে। পৃথিবীটা গোল, এই গোলকের বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। এই গোল পৃথিবীর মধ্যে আমাদের দেশটা অনেক ছোট্ট একটা জায়গা নিয়ে। এত ছোট্ট জায়গায় নিরাপত্তা দেওয়া কেন অসম্ভব! এই প্রশ্নের উত্তর আমরা জানি না।
লিখতে গিয়ে আজ আমার হাত দুটো খুব ভারী লাগছে, চোখ ভিজে যাচ্ছে। কী অদ্ভুত করুণ এক কষ্ট! বুক ভেঙে আসে। প্রিয় পাঠক, আমার মামার মৃত্যুর খবর সংবাদপত্রে আসেনি, কোনো চ্যানেল দেখায়নি। সরকারের অপমৃত্যুর ডায়েরিতেও হয়তো ওঠেনি। এই মৃত্যুর দায়ভার নৌ মন্ত্রণালয় নেবে না, তা-ও জানি। যেখানে মেঘনায় লঞ্চডুবিতে দেড় শতাধিক মৃত্যুর দায়ভার নিল না, সেখানে একটি মৃত্যুর দায় নেওয়ার কল্পনা করাটাই তো অপরাধ! আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ, আমার সদা হাস্যোজ্জ্বল মামার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করবেন।
লেখক: ফারহানা হোসাইন। বদলে যাও বদলে দাও মিছিল ব্লগের নিয়মিত লেখক।
আমার মামি কম বয়সী, সতেরো পেরিয়ে আঠারোতে পড়েছেন মাত্র। তাই মামিদের বাসা থেকে বলা হয়েছিল, মামা যেন একটা চাকরি করে ভালোভাবে নিজের পায়ে দাঁড়ান, তবেই মামিকে তুলে দেওয়া হবে মামার হাতে! স্ত্রীর জন্য চ্যালেঞ্জ মাথা পেতে নেন মামা। মামা গত ফেব্রুয়ারি মাসেই একটা চাকরি পেয়েছিলেন বহু লড়াই করে, খুব স্বল্প বেতনের ছোটখাটো একটা চাকরি। তাতেই খুব খুশি ছিলেন তিনি। প্রথম বেতনের কিছু টাকা তাঁর নববিবাহিতা স্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়ার জন্য ছুটে গিয়েছিলেন শ্বশুরবাড়ি কেরানীগঞ্জে। আমার নানুকে ডেকে হাসতে হাসতে বলে গিয়েছিলেন, ‘শর্ত পূরণ করেছি, এই বার আমার বউকে আমার কাছে রাখব।’ স্ত্রীর হাতে সেই আনন্দময় বেতনের টাকা তুলে দিয়েছিলেন ঠিকই। ফিরে আসার সময় যখন নৌকা দিয়ে বুড়িগঙ্গা নদী পার হচ্ছিলেন, তখনই দুর্ঘটনাটি ঘটে। সবাই বলছে, মাঝনদীতে নৌকাটি একটি ট্রলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়। নৌকার বেশির ভাগ যাত্রী পাড়ে উঠে আসে সাঁতার কেটে, শুধু দুজন ছাড়া। একজনের লাশ কিছুক্ষণ বাদেই ভেসে ওঠে। শুধু মামাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। লাশ খুঁজে পেতে কত বেদনার্ত ছোটাছুটি, থানা-পুলিশ ধরাধরি, কত অনুনয়, কতই না কাকুতি-মিনতি। কিন্তু পুলিশ নির্বিকার। উল্টো এই আইন-সেই আইন, নৌ-পুলিশ, নৌ-থানা, বিশেষায়িত পুলিশ ইত্যাদি বয়ান। সেসব তো আমাদের দেশে নেই। যেদিন দেশে এগুলো গড়ে উঠবে, সেদিন তারা সত্যিকার সাহায্যের কাজ করতে পারবে। পাঁচ দিন পর বুড়িগঙ্গা কুঠিবাড়ি এলাকায় ভেসে ওঠে তাঁর লাশটি। মামা সাঁতার জানতেন না।
ওনার ভালোবাসার স্বপ্নজয়ের সেই স্ত্রীকে দেখলাম কেঁদে কেঁদে অবশেষে পাথর হয়ে বসে পড়লেন। নির্বাক নিথর। ঘর বাঁধার প্রিয় মানুষটির সঙ্গে তো ঘর শুরুই করা গেল না! আর আমার নানুর অবস্থা আমার পক্ষে বর্ণনা করা অসম্ভব। শুধু ওনার আকুল একটা আবেদন এখনো কানে ভাসছে, ‘আমার বাবাটা তো আর ফিরে আসবে না, আর কখনো আমাকে ডাকবে না। এর চাইতে তো ওকে খুঁজে না পাওয়াই ভালো ছিল! আমি তো আর বেশি দিন বাঁচব না। বাকি দিনগুলো না হয় অপেক্ষা করেই কাটিয়ে দিতাম।’
আজকে দিনটা শুরু করেছিলাম ‘বদলে যাও বদলে দাও মিছিল’ ব্লগে শ্রদ্ধেয় জাফর ইকবাল স্যারের সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে একটা লেখা পড়ে। লেখাটায় তিনি এক মন্ত্রী মহোদয়ের নাম উল্লেখ করে তাঁর কিছু দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন। আমি স্যারের মতো এভাবে লিখতে পারব না। আর তাঁদের মতো ব্যক্তিরা লিখেও তো কোনো পরিবর্তন করতে পারছেন না। সরকার তো এসবের কোনো ধারই ধারে না। পৃথিবীতে এমন বিস্ময়কর রাষ্ট্রপ্রশাসন আর কোথায় আছে, জানতে পারছি না। কিন্তু আমার খুব ইচ্ছা, অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু মানুষ যদি একবার জানত পাঁচ দিন পানিতে ভেসে থাকা গলিত একটা লাশ কফিনে ঢোকানো যে কত কঠিন! এমন ধরনের একটা লাশ ছাইয়ের মতো কালো হয়ে যায়, কতটা অস্বাভাবিক ফুলে ওঠে! এটাও তো অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানেন না।
কিন্তু আমরা যারা স্বজন হারিয়েছি, তারা জানি। আমরা আরও অনেক কিছু জানি। জানি, একটা মানুষ মরে গেলে তাঁর সঙ্গে সঙ্গে কতগুলো মানুষ বেঁচে থেকেও মরে যায়, কত মানুষের জীবন থেকে লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, গোলাপি সব রং মুছে যায়। নিক্ষেপিত হয় নিকষ কালো অন্ধকারে।
আমরা জানি, বিধবা একটি মেয়ের জীবন সাদা রঙের হয়ে যায়, কোনো গান কোনো মধুর সুর তাকে আর স্পর্শ করে না। এই সুন্দর অপরূপ পৃথিবী তার জীবনে কত বিবর্ণ হয়ে ওঠে। আমি চাই, কাল থেকে আমার জীবনটা ঠিক তত দিনের হোক, যত দিনের মধ্যে আমার কোনো স্বজন হারানো লাশ আমাকে দেখতে হবে না। আমি এতটা সাহসী নই, আমি পারব না মৃত্যুসম বেদনার্ত জীবন কাটাতে। ১৫ মার্চের মামার সেই লাশ দেখার পর আমি জেনে গেছি, আমি পারব না প্রাণপ্রিয় স্বজন হারিয়ে প্রতিদিন মৃত্যুর মুখোমুখি হতে।
আমি জানি না, দুঃখের রং কালো কি না? যদি তা-ই হয়, তাহলে শুধু শোক দিবসে নয়, প্রতিদিনই আমাদের কালো ব্যাজ বুকে লাগানো উচিত। আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থাপনা অন্তত এইটুকুু নিশ্চিত করতে পেরেছে অভাগা নাগরিকদের জন্য। আমি জানি না, ‘পৃথিবীতে সবচেয়ে ভারী বস্তু মা-বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ’ কথাটা চিরসত্য কি না! যদি সত্য হয়, তবে ছোট্ট মেঘের মনের ওপর তার বাবা-মায়ের লাশ দুটো কতটুকু ভারী? তারচেয়ে কম, না আরও বেশি? আমরা জানি না, আমাদের কোথায় নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব, জায়গাটা যদি বেডরুম না-ও হয়, তাহলে সেটা কোথায়? রাস্তায়, নদীপথে, না রেলপথে? কোথায় সেই নিরাপদ স্থান। যদি জানতাম তাহলে অন্তত আমাদের স্বজনদের সেই জায়গাগুলোতেই অবস্থান নিতে বলতাম, তার বাইরে যেতে দিতাম না। আমরা এখনো জানি না, আর কত বিকৃত লাশ উদ্ধার হলে নৌপুলিশ নামক প্রচেষ্টার অব্যাহতি হবে। পৃথিবীটা গোল, এই গোলকের বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। এই গোল পৃথিবীর মধ্যে আমাদের দেশটা অনেক ছোট্ট একটা জায়গা নিয়ে। এত ছোট্ট জায়গায় নিরাপত্তা দেওয়া কেন অসম্ভব! এই প্রশ্নের উত্তর আমরা জানি না।
লিখতে গিয়ে আজ আমার হাত দুটো খুব ভারী লাগছে, চোখ ভিজে যাচ্ছে। কী অদ্ভুত করুণ এক কষ্ট! বুক ভেঙে আসে। প্রিয় পাঠক, আমার মামার মৃত্যুর খবর সংবাদপত্রে আসেনি, কোনো চ্যানেল দেখায়নি। সরকারের অপমৃত্যুর ডায়েরিতেও হয়তো ওঠেনি। এই মৃত্যুর দায়ভার নৌ মন্ত্রণালয় নেবে না, তা-ও জানি। যেখানে মেঘনায় লঞ্চডুবিতে দেড় শতাধিক মৃত্যুর দায়ভার নিল না, সেখানে একটি মৃত্যুর দায় নেওয়ার কল্পনা করাটাই তো অপরাধ! আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ, আমার সদা হাস্যোজ্জ্বল মামার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করবেন।
লেখক: ফারহানা হোসাইন। বদলে যাও বদলে দাও মিছিল ব্লগের নিয়মিত লেখক।
No comments