বিদ্যুতের দাম বাড়ছে, বাড়ছে লোডশেডিংও by অরুণ কর্মকার
‘দেশে এখন সবচেয়ে নিয়ম মেনে চলে লোডশেডিং। এতটা সময় মেনে আর কোনো কাজই হচ্ছে না, হওয়া সম্ভবও নয়। রাত ঠিক ১২টায় গেল তো ঠিক একটায় এল। আবার ঠিক দুইটায় গিয়ে একেবারে তিনটায় আগমন। এইভাবে সকাল সাতটা পর্যন্ত চলার পর একটু ব্যত্যয় ঘটল।
যাওয়ার কথা আটটায়, কিন্তু গেল তার আধা ঘণ্টা পরে। হেরফের ওইটুকুই। তার পর থেকে আবার ঘড়ির কাঁটা ধরে এক ঘণ্টা অন্তর চলছে।’
এই অভিজ্ঞতা ঢাকার মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বি ব্লকের ১ নম্বর রোডের বাসিন্দা আমিনুল ইসলামের। গতকাল বুধবার বিকেল চারটায় তিনি প্রথম আলোকে এই অভিজ্ঞতার কথা জানান। তাঁর আবাসিক এলাকাটি ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ডেসকো) আওতাভুক্ত।
তবে সমস্যা শুধু ডেসকোর এলাকায় সীমাবদ্ধ নয়। ডিপিডিসি, আরইবি, ওজোপাডিকো, এমনকি পিডিবির বিতরণ অঞ্চলে একই পরিস্থিতি। তবে রাতের বেলা ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত ভালো থাকে। লোডশেডিং কিছুটা কম হয়। কিন্তু ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে লোডশেডিংয়ের কোনো রাত-দিন নেই। সমানতালে চলছে। আর দিনের বেলা ঢাকার বাইরের পরিস্থিতিও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে পাইকারি (বাল্ক) এবং গ্রাহক পর্যায়ে খুচরা—দুই ধরনের দামই বাড়ানো হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এই দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিতে পারে। আগামী রোববার (১ এপ্রিল) থেকে তা কার্যকর হওয়ার কথা।
সংশ্লিষ্ট সরকারি সূত্র জানায়, এবার যে হারে দাম বাড়ানো হতে পারে, তাতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের পাইকারি দাম গড়ে প্রায় চার টাকা এবং গ্রাহক পর্যায়ে গড় দাম পাঁচ টাকা হওয়ার কথা।
এন্তার অভিযোগ: ঢাকার প্রায় প্রতিটি এলাকা থেকে গতকাল প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিংয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কল্যাণপুর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, শাহআলীবাগ, পল্লবীসহ মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে ধানমন্ডি, গুলশানের মতো অভিজাত এলাকাও। রয়েছে লালবাগ, ওয়ারী, বাসাবো, উত্তরা, মোহাম্মদপুর প্রভৃতি বিস্তীর্ণ এলাকা।
ঢাকার বাইরে খুলনা, বরিশাল, ঝালকাঠি, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, কুড়িগ্রাম প্রভৃতি এলাকা থেকে একই রকম লোডশেডিং-পরিস্থিতির কথা জানা গেছে। তবে এসব এলাকায় ঢাকার মতো গভীর রাতে লোডশেডিং থাকে না।
এত লোডশেডিং কেন: লোডশেডিংয়ের প্রধানতম কারণ চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়া। তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) চাহিদা ও উৎপাদনের যে হিসাব দেয়, তাতে এত লোডশেডিং হওয়ার কথা নয়। পিডিবির হিসাব অনুযায়ী, এখন চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে ঘাটতি ৮০০ মেগাওয়াটের মতো। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, সারা দেশে ৮০০ মেগাওয়াট ঘাটতি ভাগ করে দিলে দেশের কোনো জায়গায় প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিং হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না।
তাঁরা বলেন, পিডিবি চাহিদা ও উৎপাদনের যে হিসাব দেয়, তা সঠিক নয়। বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা আট হাজার ৩০০ মেগাওয়াটেরও বেশি। চাহিদা সাড়ে সাত হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু পিডিবি উৎপাদন করে কম। গত ২২ মার্চ এশিয়া কাপ ক্রিকেটের ফাইনাল খেলার দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় পিডিবি ছয় হাজার ৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছিল। সেদিন বিশেষভাবে কোথাও লোডশেডিং ছিল না বলে তাদের দাবি। তবে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এখন আর পিডিবি ছয় হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করছে না।
সরকারি সূত্রগুলো জানায়, এর কারণ হচ্ছে জ্বালানি সাশ্রয়। এমনিতে জ্বালানির সংকট আছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস দেওয়া যাচ্ছে না। তেলচালিত যেসব কেন্দ্র করা হয়েছে, সেগুলোতেও উৎপাদন কম করা হচ্ছে জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য। সর্বোচ্চ চাহিদার সময় ছাড়া তেলচালিত কেন্দ্রগুলো কমই চালানো হয়।
দাম বাড়লে লোডশেডিং কমবে?: ধানমন্ডির জিগাতলা থেকে টেলিফোন করে একজন গ্রাহক বলেন, ‘বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে লোডশেডিং কমানোর জন্য। কিন্তু এখন তো দেখছি দামও বাড়বে, লোডশেডিংও বাড়বে। এর কারণ কী।’
সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, দাম বাড়ানো হলেও লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে আসার সম্ভাবনা আপাতত নেই। কারণ, জ্বালানি-সংকট ও সাশ্রয়ের কারণে সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা যেটুকু আছে, সেটুকুর পুরোপুরি ব্যবহার হবে না। যদিও দাম বাড়ানো হচ্ছে বেশি দামের তেলচালিত কেন্দ্রের উৎপাদন খরচ বেশি বলে।
লোডশেডিং আপাতত সহনীয় পর্যায়ে না আসার আরেকটি কারণ—সেচ ও গ্রীষ্মের কারণে চাহিদা ও ব্যবহার বৃদ্ধি। কোনো কোনো এলাকায় বিতরণব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা থাকায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায় না। এ ছাড়া সরকারের অগ্রাধিকার পাওয়া কিছু স্থাপনা ও এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে গিয়েও সাধারণ গ্রাহকের বঞ্চনা বাড়ানো হয়।
এই অভিজ্ঞতা ঢাকার মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বি ব্লকের ১ নম্বর রোডের বাসিন্দা আমিনুল ইসলামের। গতকাল বুধবার বিকেল চারটায় তিনি প্রথম আলোকে এই অভিজ্ঞতার কথা জানান। তাঁর আবাসিক এলাকাটি ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ডেসকো) আওতাভুক্ত।
তবে সমস্যা শুধু ডেসকোর এলাকায় সীমাবদ্ধ নয়। ডিপিডিসি, আরইবি, ওজোপাডিকো, এমনকি পিডিবির বিতরণ অঞ্চলে একই পরিস্থিতি। তবে রাতের বেলা ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত ভালো থাকে। লোডশেডিং কিছুটা কম হয়। কিন্তু ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে লোডশেডিংয়ের কোনো রাত-দিন নেই। সমানতালে চলছে। আর দিনের বেলা ঢাকার বাইরের পরিস্থিতিও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে পাইকারি (বাল্ক) এবং গ্রাহক পর্যায়ে খুচরা—দুই ধরনের দামই বাড়ানো হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এই দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিতে পারে। আগামী রোববার (১ এপ্রিল) থেকে তা কার্যকর হওয়ার কথা।
সংশ্লিষ্ট সরকারি সূত্র জানায়, এবার যে হারে দাম বাড়ানো হতে পারে, তাতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের পাইকারি দাম গড়ে প্রায় চার টাকা এবং গ্রাহক পর্যায়ে গড় দাম পাঁচ টাকা হওয়ার কথা।
এন্তার অভিযোগ: ঢাকার প্রায় প্রতিটি এলাকা থেকে গতকাল প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিংয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কল্যাণপুর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, শাহআলীবাগ, পল্লবীসহ মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে ধানমন্ডি, গুলশানের মতো অভিজাত এলাকাও। রয়েছে লালবাগ, ওয়ারী, বাসাবো, উত্তরা, মোহাম্মদপুর প্রভৃতি বিস্তীর্ণ এলাকা।
ঢাকার বাইরে খুলনা, বরিশাল, ঝালকাঠি, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, কুড়িগ্রাম প্রভৃতি এলাকা থেকে একই রকম লোডশেডিং-পরিস্থিতির কথা জানা গেছে। তবে এসব এলাকায় ঢাকার মতো গভীর রাতে লোডশেডিং থাকে না।
এত লোডশেডিং কেন: লোডশেডিংয়ের প্রধানতম কারণ চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়া। তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) চাহিদা ও উৎপাদনের যে হিসাব দেয়, তাতে এত লোডশেডিং হওয়ার কথা নয়। পিডিবির হিসাব অনুযায়ী, এখন চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে ঘাটতি ৮০০ মেগাওয়াটের মতো। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, সারা দেশে ৮০০ মেগাওয়াট ঘাটতি ভাগ করে দিলে দেশের কোনো জায়গায় প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিং হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না।
তাঁরা বলেন, পিডিবি চাহিদা ও উৎপাদনের যে হিসাব দেয়, তা সঠিক নয়। বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা আট হাজার ৩০০ মেগাওয়াটেরও বেশি। চাহিদা সাড়ে সাত হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু পিডিবি উৎপাদন করে কম। গত ২২ মার্চ এশিয়া কাপ ক্রিকেটের ফাইনাল খেলার দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় পিডিবি ছয় হাজার ৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছিল। সেদিন বিশেষভাবে কোথাও লোডশেডিং ছিল না বলে তাদের দাবি। তবে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এখন আর পিডিবি ছয় হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করছে না।
সরকারি সূত্রগুলো জানায়, এর কারণ হচ্ছে জ্বালানি সাশ্রয়। এমনিতে জ্বালানির সংকট আছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস দেওয়া যাচ্ছে না। তেলচালিত যেসব কেন্দ্র করা হয়েছে, সেগুলোতেও উৎপাদন কম করা হচ্ছে জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য। সর্বোচ্চ চাহিদার সময় ছাড়া তেলচালিত কেন্দ্রগুলো কমই চালানো হয়।
দাম বাড়লে লোডশেডিং কমবে?: ধানমন্ডির জিগাতলা থেকে টেলিফোন করে একজন গ্রাহক বলেন, ‘বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে লোডশেডিং কমানোর জন্য। কিন্তু এখন তো দেখছি দামও বাড়বে, লোডশেডিংও বাড়বে। এর কারণ কী।’
সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, দাম বাড়ানো হলেও লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে আসার সম্ভাবনা আপাতত নেই। কারণ, জ্বালানি-সংকট ও সাশ্রয়ের কারণে সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা যেটুকু আছে, সেটুকুর পুরোপুরি ব্যবহার হবে না। যদিও দাম বাড়ানো হচ্ছে বেশি দামের তেলচালিত কেন্দ্রের উৎপাদন খরচ বেশি বলে।
লোডশেডিং আপাতত সহনীয় পর্যায়ে না আসার আরেকটি কারণ—সেচ ও গ্রীষ্মের কারণে চাহিদা ও ব্যবহার বৃদ্ধি। কোনো কোনো এলাকায় বিতরণব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা থাকায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায় না। এ ছাড়া সরকারের অগ্রাধিকার পাওয়া কিছু স্থাপনা ও এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে গিয়েও সাধারণ গ্রাহকের বঞ্চনা বাড়ানো হয়।
No comments