চারদিক-আলোর মিছিল থেকে দৃপ্ত শপথে
২৫ মার্চ। বিকেল পাঁচটা। শাহবাগ থেকে হেঁটে মিলন চত্বর। চোখে পড়ল ডিজিটাল প্রিন্টের কালো রঙের ব্যানারটা। ব্যানারের বাঁ পাশে ফাঁসির দড়ি আর রক্তের চিহ্ন। নিচে লেখা ‘যুদ্ধাপরাধ বিচারমঞ্চ’। ব্যানার লক্ষ করে এগিয়ে যাই স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে। মঞ্চে আলোচনা আর কবিতাপাঠ চলছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ‘যুদ্ধাপরাধ বিচারমঞ্চ’-এর আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। ২৫ মার্চ ছিল এই আয়োজনের ২৫তম দিন। সেদিনই আমি হাজির হই সেখানে। যারা সেখানে ছিল তারা
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির এ ভিন্নমাত্রার আয়োজনে মুগ্ধ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে বেশ কিছু কার্টুন চিত্র প্রদর্শন করা হয়েছে। সেগুলোতে যুদ্ধাপরাধের অপরাধে যাদের বিচার হচ্ছে, তাদের নিয়ে আছে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন আর ছবি। স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন উক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে সেখানে। নিচে লেখা রয়েছে ‘জাতি অনতিবিলম্বে এই জানোয়ারদের ফাঁসি চায়।’
মূল মঞ্চে চলছে আলোচনা আর আবৃত্তি। আলোচনা করছেন ওয়ার্ল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবদুল মান্নান চৌধুরী, ছড়াকার আসলাম সানী, কবি নাজমুন নেসা ও জাতীয় কবিতা পরিষদের আলোচকেরা। আলোচকদের কথায় বারবার ফিরে ফিরে আসছে একটি বিশ্বাসের কথা, ‘এই মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই’।
জাতীয় কবিতা পরিষদ এই আয়োজনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে অনুষ্ঠান করেছে ২৫ মার্চ। এর আগে গত ২৫ দিনে অনেকে এই মঞ্চে সংহতি প্রকাশ করেছে। প্রজন্ম ’৭১, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, খেলাঘরসহ প্রায় ৩০টি সংগঠন এ কার্যক্রমে সংহতি জানিয়েছে। এ মঞ্চে প্রতিবাদের কথা বলতে এসেছেন অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বেলাল মোহাম্মদ, শাহীন রেজা নূর, বুলবুল মহলানবীশ, মাহফুজা খানম, আবুল আহসান চৌধুরী, নির্মলেন্দু গুণ, নূহ-উল-আলম লেনিন, ফাল্গুনী হামিদসহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি। তাঁদের শপথে ‘যুদ্ধাপরাধ বিচারমঞ্চ’ অনুপ্রাণিত হয়েছে।
সময়টা বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার কোলে। মঞ্চে তখন প্রস্তুতি চলছে। ঢাকা ড্রামার প্রযোজনায় জয় বাংলা নাটক প্রদর্শনের। দর্শক বেড়েছে অনেক। চেয়ারে আর কুলাচ্ছে না। তাই দর্শক কেউ বসে আর কেউ দাঁড়িয়ে দেখছে নাটক।
নাটক শেষ হতেই শুরু হলো তথ্যচিত্র সেই রাতের কথা বলতে এসেছি। তথ্যচিত্রটি দর্শকদের মন বিহ্বল করে রাখল। সত্যিই তো, আজ আমরা গণহত্যার প্রামাণ্যচিত্র দেখছি স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে বসে! এখান থেকে জগন্নাথ হল আর ইকবাল হলের দূরত্ব কতটুকু? ৪১ বছর আগে এই দিনে, রাত নয়টায় কী হচ্ছিল সেখানে? পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কি এই সময় ট্যাংকগুলোকে প্রস্তুত করছিল? কোথায় কোথায় হামলা চালাবে, তার নিশানা ঠিক করছিল?
তথ্যচিত্র শেষ হতেই সবার হাতে জ্বলন্ত মোমবাতি ধরিয়ে দিলেন আয়োজকেরা। তারপর সেই কালো ব্যানারটা সঙ্গী করে গন্তব্যে চলল জনতা। মৃদু বাতাস ছিল। তাই সবাই আলোমাখা মোমবাতিটা বুকের কাছে নিয়ে সাবধানে হাঁটছিল। যদি নিভে যায়! আজও তো ৪১ বছর আগের অশুভ বাতাসের আনাগোনা চলছে!
মিছিলটা যখন গোবিন্দচন্দ্র দেবের স্মৃতিস্তম্ভের কাছে এল, একজন চিৎকার করল ‘বাতাসটা একটু কম আছে ভাই, মোমবাতিগুলো উঁচু করে ধরেন।’
সত্যি সময় এসেছে, কালরাতের কাল কাটিয়ে দেবার। এই আলোতে সেই শক্তিটুকু আছে। সমবেত জনতা ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ড. মনিরুজ্জামান, ড. গোবিন্দচন্দ্র দেবের স্মৃতির মিনারে মোমবাতিগুলো জ্বালিয়ে দিলেন। তারপর এক মিনিট নীরবতা। তারপর আবার জগন্নাথ হল গণসমাধি আর স্মরণস্তম্ভের দিকে যাত্রা।
ফেরার পথে কথা হলো ‘যুদ্ধাপরাধ বিচারমঞ্চ’-এর প্রধান সমন্বয়কারী খালেদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, অনলাইনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলাম। উপলব্ধি করলাম, মাঠে আন্দোলনও জরুরি। তাই প্রয়োজনের তাগিদে ২৬ ফেব্রুয়ারি ‘যুদ্ধাপরাধ বিচারমঞ্চ’ গঠন করি।
১৯৭৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের যে তালিকা হয়েছিল, তাদের প্রত্যেকের বিচার করতে হবে এ মতামত ব্যক্ত করেন তিনি।
সুচিত্রা সরকার
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির এ ভিন্নমাত্রার আয়োজনে মুগ্ধ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে বেশ কিছু কার্টুন চিত্র প্রদর্শন করা হয়েছে। সেগুলোতে যুদ্ধাপরাধের অপরাধে যাদের বিচার হচ্ছে, তাদের নিয়ে আছে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন আর ছবি। স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন উক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে সেখানে। নিচে লেখা রয়েছে ‘জাতি অনতিবিলম্বে এই জানোয়ারদের ফাঁসি চায়।’
মূল মঞ্চে চলছে আলোচনা আর আবৃত্তি। আলোচনা করছেন ওয়ার্ল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবদুল মান্নান চৌধুরী, ছড়াকার আসলাম সানী, কবি নাজমুন নেসা ও জাতীয় কবিতা পরিষদের আলোচকেরা। আলোচকদের কথায় বারবার ফিরে ফিরে আসছে একটি বিশ্বাসের কথা, ‘এই মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই’।
জাতীয় কবিতা পরিষদ এই আয়োজনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে অনুষ্ঠান করেছে ২৫ মার্চ। এর আগে গত ২৫ দিনে অনেকে এই মঞ্চে সংহতি প্রকাশ করেছে। প্রজন্ম ’৭১, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, খেলাঘরসহ প্রায় ৩০টি সংগঠন এ কার্যক্রমে সংহতি জানিয়েছে। এ মঞ্চে প্রতিবাদের কথা বলতে এসেছেন অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বেলাল মোহাম্মদ, শাহীন রেজা নূর, বুলবুল মহলানবীশ, মাহফুজা খানম, আবুল আহসান চৌধুরী, নির্মলেন্দু গুণ, নূহ-উল-আলম লেনিন, ফাল্গুনী হামিদসহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি। তাঁদের শপথে ‘যুদ্ধাপরাধ বিচারমঞ্চ’ অনুপ্রাণিত হয়েছে।
সময়টা বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার কোলে। মঞ্চে তখন প্রস্তুতি চলছে। ঢাকা ড্রামার প্রযোজনায় জয় বাংলা নাটক প্রদর্শনের। দর্শক বেড়েছে অনেক। চেয়ারে আর কুলাচ্ছে না। তাই দর্শক কেউ বসে আর কেউ দাঁড়িয়ে দেখছে নাটক।
নাটক শেষ হতেই শুরু হলো তথ্যচিত্র সেই রাতের কথা বলতে এসেছি। তথ্যচিত্রটি দর্শকদের মন বিহ্বল করে রাখল। সত্যিই তো, আজ আমরা গণহত্যার প্রামাণ্যচিত্র দেখছি স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে বসে! এখান থেকে জগন্নাথ হল আর ইকবাল হলের দূরত্ব কতটুকু? ৪১ বছর আগে এই দিনে, রাত নয়টায় কী হচ্ছিল সেখানে? পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কি এই সময় ট্যাংকগুলোকে প্রস্তুত করছিল? কোথায় কোথায় হামলা চালাবে, তার নিশানা ঠিক করছিল?
তথ্যচিত্র শেষ হতেই সবার হাতে জ্বলন্ত মোমবাতি ধরিয়ে দিলেন আয়োজকেরা। তারপর সেই কালো ব্যানারটা সঙ্গী করে গন্তব্যে চলল জনতা। মৃদু বাতাস ছিল। তাই সবাই আলোমাখা মোমবাতিটা বুকের কাছে নিয়ে সাবধানে হাঁটছিল। যদি নিভে যায়! আজও তো ৪১ বছর আগের অশুভ বাতাসের আনাগোনা চলছে!
মিছিলটা যখন গোবিন্দচন্দ্র দেবের স্মৃতিস্তম্ভের কাছে এল, একজন চিৎকার করল ‘বাতাসটা একটু কম আছে ভাই, মোমবাতিগুলো উঁচু করে ধরেন।’
সত্যি সময় এসেছে, কালরাতের কাল কাটিয়ে দেবার। এই আলোতে সেই শক্তিটুকু আছে। সমবেত জনতা ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ড. মনিরুজ্জামান, ড. গোবিন্দচন্দ্র দেবের স্মৃতির মিনারে মোমবাতিগুলো জ্বালিয়ে দিলেন। তারপর এক মিনিট নীরবতা। তারপর আবার জগন্নাথ হল গণসমাধি আর স্মরণস্তম্ভের দিকে যাত্রা।
ফেরার পথে কথা হলো ‘যুদ্ধাপরাধ বিচারমঞ্চ’-এর প্রধান সমন্বয়কারী খালেদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, অনলাইনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলাম। উপলব্ধি করলাম, মাঠে আন্দোলনও জরুরি। তাই প্রয়োজনের তাগিদে ২৬ ফেব্রুয়ারি ‘যুদ্ধাপরাধ বিচারমঞ্চ’ গঠন করি।
১৯৭৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের যে তালিকা হয়েছিল, তাদের প্রত্যেকের বিচার করতে হবে এ মতামত ব্যক্ত করেন তিনি।
সুচিত্রা সরকার
No comments