চারদিক-মুক্তিযোদ্ধা চত্বর ঘিরে পুনর্মিলনী by গাজীউল হক
‘সময়টা ছিল ১৯৫৮ সালের আগস্ট মাস। তখন বাবার কর্মসূত্রে কুমিল্লা জিলা স্কুলে ভর্তি হই। ১৯৬০ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। এরপর আর স্কুলে আসা হয়নি। ৫১ বছর পর নিজ বিদ্যালয়ে এসে ভালো লাগছে। মনে পড়ছে সহপাঠী-বন্ধু মফিজের কথা।
সেই বিদ্যালয়সংলগ্ন ধর্মসাগর, একচালা টিনশেড ভবন, প্রধান শিক্ষক আবদুর রশিদ, সহকারী শিক্ষক নূর হোসেন, আশরাফ হোসেন, আবদুর রহমান আর জয়নাল আবেদীন স্যারের কথা। এমন বিদ্যালয়ের চত্বরে এসে নতুন-পুরোনো শিক্ষার্থীদের দেখে ভালো লাগছে।’ ৭ মে কুমিল্লা জিলা স্কুলের ‘মুক্তিযোদ্ধা চত্বর’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে এসে এমন স্মৃতিচারণা করলেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। তাঁর সঙ্গে স্মৃতিচারণায় মেতে উঠলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান গোলাম রহমানও। তিনি এই বিদ্যালয়ের ১৯৬০ সালের ছাত্র। অনুষ্ঠানে এসেছিলেন ১৯৪১ সালে এন্ট্রান্স পাস করা দেওয়ান আবদুল মতিনও। শুধু তাঁরা নন, বিভিন্ন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় ওই দিন বিদ্যালয় আঙিনা মুখর হয়ে ওঠে। পুরোনোদের কাছে পেয়ে নবীন শিক্ষার্থীরা উজ্জীবিত হয়।
মুক্তিযোদ্ধা চত্বর বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক নাজমুল হাসান জানিয়েছেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লা জিলা স্কুলের ১১৪ জন ছাত্র অংশ নেন। এর মধ্যে সম্মুখযুদ্ধে লড়াই করে শহীদ হন পাঁচজন, যুদ্ধের পর বিভিন্ন সময়ে মারা গেছেন ২০ জন এবং বিদেশে অবস্থান করছেন ১৫ জন। অন্যরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করছেন। সেই প্রয়াত ও জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে কুমিল্লা জিলা স্কুল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন বিদ্যালয় আঙিনায় ‘মুক্তিযোদ্ধা চত্বর’ স্থাপন করার উদ্যোগ নেয়।
বিদ্যালয়ের ’৭৩ ব্যাচের ছাত্র শাহ মো. সেলিম জানান, এ জন্য প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ৩০ লাখ টাকা খরচ করে ওই চত্বর নির্মাণ করবেন। এর নকশা করেছেন এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র স্থপতি আবু সাইদ মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ। আগামী ডিসেম্বরে এর কাজ শেষ হবে। এ উপলক্ষে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে প্রাণের আনন্দে মিলিত হন, যা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুনর্মিলনীতে রূপ নেয়।
এদিকে ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় বিদ্যালয়ের শহীদ আবু জাহিদ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠান হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেন, ‘কুমিল্লা জিলা স্কুল যুগে যুগে অসংখ্য মেধাবী ছাত্র তৈরি করেছে, যাঁরা এখন দেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছেন। শিক্ষকদের গুণ ও আশীর্বাদের জন্য আমরা আজ নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়ে কাজ করছি। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে বছর বছর মিলিত হলে সবার মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি হবে।’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর) আসনের সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল আহসান, মুক্তিযোদ্ধা চত্বর বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক নাজমুল হাসান, অনুষ্ঠান উপকমিটির আহ্বায়ক শাহ মো. সেলিম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার ফারুক এবং কুমিল্লা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক বেগম রাশেদা আকতার।
কুমিল্লা জিলা স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র ফারহান আতিক অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলে, ‘আমরা যেন আপনাদের যোগ্য উত্তরসূরি হতে পারি। এ জন্য আমাদের চেষ্টা, পরিশ্রম ও অধ্যবসায় আছে। আমাদের মাঝে আপনাদের পেয়ে আমরা ধন্য।’
দুদকের চেয়ারম্যান নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘দেশের আমলাতন্ত্রের প্রধান কেবিনেট সচিব মো. আবদুল আজিজ এই স্কুলের ছাত্র। প্রধান বিচারপতি এখানকার ছাত্র। বর্তমান আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ এই স্কুলের ছাত্র। এ রকম অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব আমাদের রয়েছেন।’
ওই অনুষ্ঠানের পর বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে মুক্তিযোদ্ধা চত্বরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধান বিচারপতি। ওই সময়ে জিলা স্কুলের রোভার স্কাউট দলের সদস্যরা প্রধান বিচারপতিকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময় জাতীয় সংগীত বেজে ওঠে।
প্রাক্তন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ভাষাসৈনিক, ব্যারিস্টার ও বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, সাবেক কেবিনেট সচিব আ ন ম ইউসুফ, সাংসদ এ বি এম গোলাম মোস্তফা, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এ টি এম শামসুল হক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আফতাব উল ইসলাম মঞ্জু, পোল্যান্ডের কনস্যুলেট জেনারেল ওমর ফারুক, কবি মোফাজ্জল করিম, দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন এখানকার ছাত্র।
বিদ্যালয়ের ’৬৮ ব্যাচের ছাত্র, মুক্তিযোদ্ধা ও চিকিৎসক আবু আয়ুব হামিদ ও কুমিল্লার অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি গোলাম ফারুক বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের চত্বরটি নির্মাণ একটি বড় ধরনের উদ্যোগ। এর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারবে।
এমন আয়োজনকে ঘিরে মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক, শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের উচ্ছ্বাস ছিল দিনভর। প্রাজ্ঞজনদের কাছে পেয়ে নবীন শিক্ষার্থীরা গর্বিত। তাদের কণ্ঠে বেজে ওঠে ‘যেতে নাহি দেব হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়...’ কিংবা ‘পুরানো সেই দিনের কথা...’। এভাবেই শেষ হয় পুনর্মিলনী উৎসব। এমন উৎসবে মুখর থাকুক প্রিয় বিদ্যাপীঠ—এই অঙ্গীকার সবার।
গাজীউল হক
মুক্তিযোদ্ধা চত্বর বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক নাজমুল হাসান জানিয়েছেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লা জিলা স্কুলের ১১৪ জন ছাত্র অংশ নেন। এর মধ্যে সম্মুখযুদ্ধে লড়াই করে শহীদ হন পাঁচজন, যুদ্ধের পর বিভিন্ন সময়ে মারা গেছেন ২০ জন এবং বিদেশে অবস্থান করছেন ১৫ জন। অন্যরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করছেন। সেই প্রয়াত ও জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে কুমিল্লা জিলা স্কুল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন বিদ্যালয় আঙিনায় ‘মুক্তিযোদ্ধা চত্বর’ স্থাপন করার উদ্যোগ নেয়।
বিদ্যালয়ের ’৭৩ ব্যাচের ছাত্র শাহ মো. সেলিম জানান, এ জন্য প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ৩০ লাখ টাকা খরচ করে ওই চত্বর নির্মাণ করবেন। এর নকশা করেছেন এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র স্থপতি আবু সাইদ মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ। আগামী ডিসেম্বরে এর কাজ শেষ হবে। এ উপলক্ষে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে প্রাণের আনন্দে মিলিত হন, যা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুনর্মিলনীতে রূপ নেয়।
এদিকে ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় বিদ্যালয়ের শহীদ আবু জাহিদ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠান হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেন, ‘কুমিল্লা জিলা স্কুল যুগে যুগে অসংখ্য মেধাবী ছাত্র তৈরি করেছে, যাঁরা এখন দেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছেন। শিক্ষকদের গুণ ও আশীর্বাদের জন্য আমরা আজ নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়ে কাজ করছি। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে বছর বছর মিলিত হলে সবার মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি হবে।’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর) আসনের সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল আহসান, মুক্তিযোদ্ধা চত্বর বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক নাজমুল হাসান, অনুষ্ঠান উপকমিটির আহ্বায়ক শাহ মো. সেলিম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার ফারুক এবং কুমিল্লা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক বেগম রাশেদা আকতার।
কুমিল্লা জিলা স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র ফারহান আতিক অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলে, ‘আমরা যেন আপনাদের যোগ্য উত্তরসূরি হতে পারি। এ জন্য আমাদের চেষ্টা, পরিশ্রম ও অধ্যবসায় আছে। আমাদের মাঝে আপনাদের পেয়ে আমরা ধন্য।’
দুদকের চেয়ারম্যান নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘দেশের আমলাতন্ত্রের প্রধান কেবিনেট সচিব মো. আবদুল আজিজ এই স্কুলের ছাত্র। প্রধান বিচারপতি এখানকার ছাত্র। বর্তমান আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ এই স্কুলের ছাত্র। এ রকম অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব আমাদের রয়েছেন।’
ওই অনুষ্ঠানের পর বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে মুক্তিযোদ্ধা চত্বরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধান বিচারপতি। ওই সময়ে জিলা স্কুলের রোভার স্কাউট দলের সদস্যরা প্রধান বিচারপতিকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময় জাতীয় সংগীত বেজে ওঠে।
প্রাক্তন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ভাষাসৈনিক, ব্যারিস্টার ও বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, সাবেক কেবিনেট সচিব আ ন ম ইউসুফ, সাংসদ এ বি এম গোলাম মোস্তফা, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এ টি এম শামসুল হক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আফতাব উল ইসলাম মঞ্জু, পোল্যান্ডের কনস্যুলেট জেনারেল ওমর ফারুক, কবি মোফাজ্জল করিম, দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন এখানকার ছাত্র।
বিদ্যালয়ের ’৬৮ ব্যাচের ছাত্র, মুক্তিযোদ্ধা ও চিকিৎসক আবু আয়ুব হামিদ ও কুমিল্লার অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি গোলাম ফারুক বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের চত্বরটি নির্মাণ একটি বড় ধরনের উদ্যোগ। এর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারবে।
এমন আয়োজনকে ঘিরে মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক, শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের উচ্ছ্বাস ছিল দিনভর। প্রাজ্ঞজনদের কাছে পেয়ে নবীন শিক্ষার্থীরা গর্বিত। তাদের কণ্ঠে বেজে ওঠে ‘যেতে নাহি দেব হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়...’ কিংবা ‘পুরানো সেই দিনের কথা...’। এভাবেই শেষ হয় পুনর্মিলনী উৎসব। এমন উৎসবে মুখর থাকুক প্রিয় বিদ্যাপীঠ—এই অঙ্গীকার সবার।
গাজীউল হক
No comments