দুর্ভোগের কপোতাক্ষ নদ-জরুরি ভিত্তিতে ড্রেজিং চাই
মেহেরপুর থেকে বৃহত্তর কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনার বিভিন্ন এলাকা হয়ে বঙ্গোপসাগরের কাছে ত্রিমোহনায় পড়েছে কপোতাক্ষ নদ। মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার কবিতায় এ নদকে অমরত্ব দান করে গেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, খোদ নদটিই হারিয়ে যেতে বসেছে! বাংলাদেশের পরিবেশ ও জনজীবনে নদ-নদীর গুরুত্ব অপরিসীম এবং কপোতাক্ষও ব্যতিক্রম নয়।
কিন্তু এ নদটি বহু বছর ধরেই তীরবর্তী লাখ লাখ মানুষ ও পরিবেশের জন্য পরিণত হয়েছে অসীম দুর্ভোগের উৎসে। রোববার সমকালে 'কপোতাক্ষ তীরে দুর্বিষহ জীবন' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'বৃষ্টির পানি ধারণ করে মানুষকে জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই দেওয়ার অবস্থা তার নেই। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে কপোতাক্ষ পাড়ের গ্রামগুলো ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ফসলের মাঠ, মাছের ঘের_ সবই পানিতে সয়লাব।' এ বর্ণনা খুলনা ও সাতক্ষীরা এলাকা দিয়ে প্রবাহিত অংশের। বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চলের চিত্রও ভিন্ন কিছু নয়। শুধু বৃষ্টির পানি নয়, অনেক এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকলেও তা বের হওয়ার পথ খুঁজে পায় না। কোথাও কোথাও নদের অংশ শুকিয়ে কার্যত ফসলের জমিতে পরিণত হয়েছে। কোথাও কচুরিপানা ঢেকে দিয়েছে পানি। দখলদাররাও সদা সক্রিয় অনেক এলাকায়। সরকার যেহেতু নদটির ব্যাপারে উদাসীন, সে কারণেই তাদের এ দৌরাত্ম্য। এ নদে এখন বড় নৌযান নয়, কেবল ছোট ছোট নৌকা চলাচল করতে পারে কিছু অংশে। সেচের জন্য এ নদের পানির ব্যবহার সীমিত হয়ে পড়েছে। মানুষ ও পরিবেশের দুর্ভাগ্যের অবসানে কী করণীয় তা সবার জানা। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কিছু এলাকায় ড্রেজিং হওয়ায় জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। সে সময় আরেকটি জলাবদ্ধ এলাকা ভবদহের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোও সম্ভব হয়। তাহলে নির্বাচিত সরকারের আমলে কেন এ নদটি ড্রেজিংয়ের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না? ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কপোতাক্ষ ও ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা হয়েছিল। সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতি বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি সড়কের সংস্কার কাজের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হলেও কাজ শুরু হয়নি। অপেক্ষা বৃষ্টি থামার। আমাদের দেশে বর্ষা প্রকৃতির আশীর্বাদ। কিন্তু ওই অঞ্চলের জন্য তা পরিণত হয়েছে অভিশাপে। সড়কপথ এবং শুকিয়ে যাওয়া নদ-নদীর জন্য তা ডেকে আনছে বিপর্যয়। এর পেছনে বিভিন্ন আমলে সরকারি অদূরদর্শিতা ও উপেক্ষাকে দায়ী করা যায়। বর্তমান মহাজোট সরকারও দায় এড়াতে পারে না। কপোতাক্ষ সংলগ্ন কয়েকটি জেলার মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির প্রত্যাশায় তাদের ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও কেবলই প্রতিশ্রুতি। জলাবদ্ধতার শিকার দুটি উপজেলা পাইকগাছা ও কয়রার জন্য ১০ টন চাল বরাদ্দ হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সাংসদ। হয়তো আরও কয়েকটি এলাকায় এ ধরনের খয়রাতি বরাদ্দ মিলবে, যা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মানুষের জন্য করুণা বৈ কিছু নয়। এতে জলাবদ্ধতা সমস্যারও সমাধান ঘটবে না, পূরণ হবে না কপোতাক্ষকে মেহেরপুর থেকে খুলনা হয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত স্রোতস্বিনী করার প্রত্যাশা। এলাকার মানুষ দাবি করছে, ৫০ কিলোমিটাজুড়ে কপোতাক্ষ নদের ড্রেজিং এবং আমরা চাইব যে, সরকার সে কাজই জরুরি ভিত্তিতে গ্রহণ করুক।
No comments