স্যান্টোরামের কৌশল
যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পাওয়ার লড়াইয়ে বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে আছেন ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর মিট রমনি। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পেনসিলভানিয়ার সাবেক সিনেটর রিক স্যান্টোরাম।
কট্টরপন্থী স্যান্টোরামের অল্প কিছুদিন আগেও বিশেষ পরিচিতি ছিল না। কিন্তু মনোনয়ন লাভের দৌড়ে নেমে নজর কেড়েছেন ভালোভাবেই। ২১ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ২৮টি অঙ্গরাজ্যের প্রাইমারি ও ককাসের মধ্যে জিতেছেন ১০টিতে। রমনি ১৬টিতে জয়ী হয়েছেন। দুটিতে জয় পেয়েছেন নিউট গিংরিচ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে দুটি প্রক্রিয়ায় দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন করা হয়, তা প্রাইমারি ও ককাস নামে পরিচিত।
এ পর্যন্ত ককাস ও প্রাইমারি ভোটের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায় স্যান্টোরাম জিতেছেন অপেক্ষাকৃত প্রত্যন্ত অঞ্চলের কম জনবহুল অঙ্গরাজ্যগুলোতে। জানুয়ারিতে দক্ষিণ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে বড় নগরের বাসিন্দাদের সমালোচনা করেন স্যান্টোরাম। তিনি বলেছিলেন, ‘এদের জীবনযাপন একেবারেই অন্যরকম। তাঁরা ছোট শহরের জীবনযাত্রায় বিশ্বাসী নন। মূলধারার যুক্তরাষ্ট্র, ঈশ্বর বা তাঁর সৃষ্টির সঙ্গে তাঁদের যোগসূত্র নেই।’
গ্রামাঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে ফেলে আসা অতীতের সুখস্মৃতি জাগিয়ে তুলেও নির্বাচনী ফায়দা লোটার চেষ্টা করছেন স্যান্টোরাম।
বিশ্লেষকদের মতে, স্যান্টোরাম নিজের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য আরও অনেক কৌশল অবলম্বন করতে পারতেন। কিন্তু এখন যে কৌশল নিয়েছেন, তা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ বা রিপাবলিকান পার্টি—কারও জন্যই ইতিবাচক কিছু বয়ে আনবে না। অনেকের হয়তো মনে আছে, ২০০৮ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় বারাক ওবামা বলেছিলেন, গ্রামের মানুষ মানেই কিন্তু বন্দুক আর ধর্ম আঁকড়ে থাকা নয়।
স্যান্টোরামের কৌশলের প্রতিফলন দেখা যায় তাঁর নির্বাচনী অভিযান শুরুর স্থান বাছাই করা দেখেও। স্থানটি ছিল আইওয়া অঙ্গরাজ্য। প্রথাগতভাবে রাজ্যটি কৃষিপ্রধান।
ক্যানসাস অঙ্গরাজ্যের ককাসে জয়লাভের পর স্যান্টোরাম ভোটারদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমি বারবারই বলে আসছি, আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকুন, নিজের মূল্যবোধ ও বিশ্বাসকে সমর্থন দিন। এ কথা বলছি কারণ, আপনারা নিউইয়র্ক সিটি বা লস অ্যাঞ্জেলেসে থাকেন না। বেশির ভাগ মার্কিনির মতো আপনারা থাকেন এ দুই নগরের মাঝের গ্রাম ও শহরগুলোতে।’
অনেকে বলছেন, স্যান্টোরাম মূলত গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সারাহ পেলিনের কৌশল নিয়েছেন। যে কৌশলে বলা হয়, ছোট্ট শহরের মানুষেরা উপকূলীয় বড় নগরগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। উপকূলীয় শহরগুলোকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ ও ‘এলিট’ বলেও আখ্যা দেওয়া হয়।
স্যান্টোরাম কোনোভাবে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পেয়ে গেলে তা দলের জন্য বরং সমস্যার সৃষ্টি করবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ ভোটার বাস করে মেট্রোপলিটন শহরগুলোতেই। তাই মনোনয়ন লাভের জন্য ভোটারদের বড় অংশকে চটিয়ে চূড়ান্ত লড়াইয়ে বারাক ওবামার বিরুদ্ধে তেমন সুবিধা করা যাবে না, তা বোঝাই যায়।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র ১৬ শতাংশ মানুষ খামার বাড়ি বা ছোট ছোট গ্রামে বাস করে।
স্যান্টোরাম তাঁর প্রচারণায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কষ্টের জীবন তুলে ধরার কৌশল নিয়েছেন। কিন্তু কিছু কিছু ছোট বা পিছিয়ে পড়া শহর যে অর্থনৈতিক দিক থেকে এগিয়ে গিয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ছে, তা এক প্রকার অস্বীকার করছেন স্যান্টোরাম। ‘গ্রেট প্লেইনস’ এলাকায় অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক রেনেসাঁ শুরু হয়েছে। গত কয়েক দশকে এসব অঞ্চলে অনেক পরিবর্তন এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মানচিত্রের মাঝামাঝি উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত সুবিশাল এলাকা ‘গ্রেট প্লেইনস’ বলে পরিচিত। স্যান্টোরামের সমালোচকেরা বলছেন, তিনি নিজেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে নির্বাচনী প্রচারণার কৌশলে বৈশ্বিক অর্থনীতির বিষয়টি অবজ্ঞা করেছেন।
বিদেশি বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যন্ত অঞ্চলকেও লাভবান করেছে। কেবল ২০০৯ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে এসব অঞ্চলে তিন হাজার কোটি ডলারের শিল্প বিনিয়োগ এসেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চল সবদিক দিয়ে সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। ইন্টারনেট দূরকে নিকট করেছে। কিন্তু নিছক রাজনীতির জন্যই এসব ইতিবাচক বিষয় এড়িয়ে যেতে চাচ্ছেন স্যান্টোরাম।
মাহফুজার রহমান
সূত্র: দ্য ডেইলি বিস্ট
এ পর্যন্ত ককাস ও প্রাইমারি ভোটের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায় স্যান্টোরাম জিতেছেন অপেক্ষাকৃত প্রত্যন্ত অঞ্চলের কম জনবহুল অঙ্গরাজ্যগুলোতে। জানুয়ারিতে দক্ষিণ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে বড় নগরের বাসিন্দাদের সমালোচনা করেন স্যান্টোরাম। তিনি বলেছিলেন, ‘এদের জীবনযাপন একেবারেই অন্যরকম। তাঁরা ছোট শহরের জীবনযাত্রায় বিশ্বাসী নন। মূলধারার যুক্তরাষ্ট্র, ঈশ্বর বা তাঁর সৃষ্টির সঙ্গে তাঁদের যোগসূত্র নেই।’
গ্রামাঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে ফেলে আসা অতীতের সুখস্মৃতি জাগিয়ে তুলেও নির্বাচনী ফায়দা লোটার চেষ্টা করছেন স্যান্টোরাম।
বিশ্লেষকদের মতে, স্যান্টোরাম নিজের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য আরও অনেক কৌশল অবলম্বন করতে পারতেন। কিন্তু এখন যে কৌশল নিয়েছেন, তা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ বা রিপাবলিকান পার্টি—কারও জন্যই ইতিবাচক কিছু বয়ে আনবে না। অনেকের হয়তো মনে আছে, ২০০৮ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় বারাক ওবামা বলেছিলেন, গ্রামের মানুষ মানেই কিন্তু বন্দুক আর ধর্ম আঁকড়ে থাকা নয়।
স্যান্টোরামের কৌশলের প্রতিফলন দেখা যায় তাঁর নির্বাচনী অভিযান শুরুর স্থান বাছাই করা দেখেও। স্থানটি ছিল আইওয়া অঙ্গরাজ্য। প্রথাগতভাবে রাজ্যটি কৃষিপ্রধান।
ক্যানসাস অঙ্গরাজ্যের ককাসে জয়লাভের পর স্যান্টোরাম ভোটারদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমি বারবারই বলে আসছি, আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকুন, নিজের মূল্যবোধ ও বিশ্বাসকে সমর্থন দিন। এ কথা বলছি কারণ, আপনারা নিউইয়র্ক সিটি বা লস অ্যাঞ্জেলেসে থাকেন না। বেশির ভাগ মার্কিনির মতো আপনারা থাকেন এ দুই নগরের মাঝের গ্রাম ও শহরগুলোতে।’
অনেকে বলছেন, স্যান্টোরাম মূলত গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সারাহ পেলিনের কৌশল নিয়েছেন। যে কৌশলে বলা হয়, ছোট্ট শহরের মানুষেরা উপকূলীয় বড় নগরগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। উপকূলীয় শহরগুলোকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ ও ‘এলিট’ বলেও আখ্যা দেওয়া হয়।
স্যান্টোরাম কোনোভাবে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পেয়ে গেলে তা দলের জন্য বরং সমস্যার সৃষ্টি করবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ ভোটার বাস করে মেট্রোপলিটন শহরগুলোতেই। তাই মনোনয়ন লাভের জন্য ভোটারদের বড় অংশকে চটিয়ে চূড়ান্ত লড়াইয়ে বারাক ওবামার বিরুদ্ধে তেমন সুবিধা করা যাবে না, তা বোঝাই যায়।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র ১৬ শতাংশ মানুষ খামার বাড়ি বা ছোট ছোট গ্রামে বাস করে।
স্যান্টোরাম তাঁর প্রচারণায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কষ্টের জীবন তুলে ধরার কৌশল নিয়েছেন। কিন্তু কিছু কিছু ছোট বা পিছিয়ে পড়া শহর যে অর্থনৈতিক দিক থেকে এগিয়ে গিয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ছে, তা এক প্রকার অস্বীকার করছেন স্যান্টোরাম। ‘গ্রেট প্লেইনস’ এলাকায় অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক রেনেসাঁ শুরু হয়েছে। গত কয়েক দশকে এসব অঞ্চলে অনেক পরিবর্তন এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মানচিত্রের মাঝামাঝি উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত সুবিশাল এলাকা ‘গ্রেট প্লেইনস’ বলে পরিচিত। স্যান্টোরামের সমালোচকেরা বলছেন, তিনি নিজেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে নির্বাচনী প্রচারণার কৌশলে বৈশ্বিক অর্থনীতির বিষয়টি অবজ্ঞা করেছেন।
বিদেশি বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যন্ত অঞ্চলকেও লাভবান করেছে। কেবল ২০০৯ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে এসব অঞ্চলে তিন হাজার কোটি ডলারের শিল্প বিনিয়োগ এসেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চল সবদিক দিয়ে সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। ইন্টারনেট দূরকে নিকট করেছে। কিন্তু নিছক রাজনীতির জন্যই এসব ইতিবাচক বিষয় এড়িয়ে যেতে চাচ্ছেন স্যান্টোরাম।
মাহফুজার রহমান
সূত্র: দ্য ডেইলি বিস্ট
No comments