ছাত্র-ব্যবসায়ী সংঘর্ষ-জুলুম চলতেই থাকবে?
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে আশপাশের ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ নতুন নয়। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজিসহ নানা উপলক্ষে ব্যবসায়ীদের প্রতি জুলুম করে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির জন্ম দেয়। বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনাটিও এই জুলুমের পরিণতি।
ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলীর নুরুল হক টাওয়ারের নূর অপটিকসের কর্মচারীর সঙ্গে চশমার দাম কম দিতে চায়। এ নিয়ে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে ওই কর্মচারীসহ দু'জনকে ছুরিকাঘাত করার জেরে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করতে হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে পথচারী এক ব্যাংক কর্মকর্তা মৃত্যুবরণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে তিন ছাত্রলীগ কর্মীসহ ছয় ছাত্রকে বহিষ্কার করেছে। এসবই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা। কিন্তু এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের সঙ্গে আশপাশের ব্যবসায়ীদের বৈরী সম্পর্কের অবসান হবে, এটা মনে করা ভুল হবে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় চাঁদা আদায় থেকে শুরু করে বাড়তি সুবিধা লাভের যে কুপ্রথা দীর্ঘকাল ধরে বজায় রয়েছে তা সমূলে উৎপাটন করা ছাড়া ছাত্র-ব্যবসায়ী সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা কম। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা হিসেবে জড়িতদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে সুবিবেচনার পরিচয় দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই এলাকার ব্যবসায়ী সমাজের সঙ্গে ছাত্রদের সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তাদের উদ্যোগী ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মী ও সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনাটি ক্ষমতা দর্পের বল্গাহীন প্রকাশ। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতৃত্বের সমর্থন পেয়ে ছাত্রনেতা ও কর্মীদের মধ্যে ধরাকে সরা জ্ঞান করার এক সর্বনাশা প্রবণতা সর্বত্রই লক্ষ্য করা যায়। তারই উলঙ্গ প্রকাশ দেখা গেল বুধবারের ছাত্র-ব্যবসায়ী সংঘর্ষের ঘটনায়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটতে পারে তার জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা যায়। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজসহ সুশীল সমাজও ভূমিকা রাখতে পারে।
No comments