মান্ধাতা ব্যবস্থাপনার গ্রন্থাগার by এম জিয়াউল হক সরকার
আমরা মূলত জ্ঞানের পিপাসা মেটানোর জন্য দ্বারস্থ হই গ্রন্থাগারে। শিক্ষার্থী, গবেষকসহ সর্বস্তরের পাঠকপিপাসুদের পড়ালেখার পরিবেশ উপযোগী ব্যবস্থা তথা বইয়ের তালিকা প্রণয়ন ও সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং সর্বোপরি পাঠকের সেবা প্রদান গ্রন্থাগারের মূল উদ্দেশ্য। শিক্ষান্বেষী মানুষের কাছে গ্রন্থাগার এক চিরকাঙ্ক্ষিত জ্ঞান-তীর্থ, সেখানে সে তার মুক্তির
সন্ধান পায়। খুুঁজে পায় এক দুর্লভ ঐশ্বর্যের খনি। দেশে দেশে মানব হৃদয়ে রচিত হয় অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের সেতুবন্ধ।
সেই ধারায় বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬৪ সালে অর্জিত শিক্ষার সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি, সামাজিক ও গণতান্ত্রিক চেতনা এবং মূল্যবোধের বিকাশ, অবক্ষয় ও অপসংস্কৃতি রোধে 'কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার' প্রতিষ্ঠিত হয়।
এ গ্রন্থাগারের কাজ হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করা ও তাদের যুগোপযোগী শিক্ষা ও আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা দিয়ে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করা। এছাড়া দেশি-বিদেশি জার্নাল, দুষ্প্রাপ্য ডকুমেন্ট, সাময়িকীসহ নানা ধরনের বই ও গবেষণার উপকরণ সরবরাহ করা। কিন্তু দেশের অন্যতম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গ্রন্থাগারটি কি একুশ শতকের উপযোগী? সেই প্রতিষ্ঠাকালীন মান্ধাতা ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়েই এটি চলছে। এখানে দুর্লভ ও দুষ্প্রাপ্য অনেক পুরনো বই, পুরনো দৈনিক, সাময়িকী, ডকুমেন্ট ইত্যাদি পাওয়া গেলেও সমসাময়িক বই, জার্নাল-সাময়িকী ইত্যাদি অনেকটাই অপ্রতুল। আবার অনেক বই ক্যাটালগের তালিকায় থাকলেও শেলফে পাওয়া যায় না। এমনকি প্রশাসনও অনেক বইয়ের হদিস জানে না। বই সংরক্ষণের দীর্ঘস্থায়ী ও সঠিক পদ্ধতি ব্যবহারের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অনেক দুর্লভ বই, পুরনো দৈনিক, সাময়িকী, ডকুমেন্ট ইত্যাদি। তাছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও নেই।
একুশ শতকের এই বিশ্বায়নের যুগে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে তথ্যপ্রযুক্তিতে শিক্ষার্থীদের দক্ষ হয়ে ওঠা খুবই জরুরি। আর এখন অনেক কিছুই ইন্টারনেট থেকে শেয়ার করতে হয়। কিন্তু গ্রন্থাগারটিতে এসব সুবিধা হতাশাজনক। মাত্র একটি কক্ষে স্বল্পসংখ্যক কম্পিউটার রয়েছে, যা প্রয়োজন অনুপাতে অতি নগণ্য।
বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। এখন সবকিছুই ইন্টারনেটভিত্তিক। বিশ্বের অনেক দেশে অনেক আগেই গ্রন্থাগারগুলো ই-লাইব্রেরিতে পরিণত করা হয়েছে। এমনকি অনেক উন্নয়নশীল দেশেও এই আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সংবলিত ইন্টিগ্রেটেড লাইব্রেরি সিস্টেম (আইএলএস) ব্যবহার করে আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। তাছাড়া গ্রন্থাগারের বই, তথ্যাদি, সাময়িকী, জার্নাল ইত্যাদি বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারগুলো এসবের ধারেকাছেও নেই। এই গ্রন্থাগারগুলো আইএলএসে পরিণত করা গেলে একদিকে যেমন একজন ব্যবহারকারী স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের ডিজিটাল আইডি কার্ড ব্যবহার করে বই সম্পর্কিত খোঁজখবর, আদান-প্রদান ইত্যাদি করতে পারবে, অন্যদিকে বই চুরি রোধ ও গ্রন্থাগার পরিচালনার ক্ষেত্রে জনবলও কম লাগবে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গ্রন্থাগারের আসন সংখ্যা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য এগারোশ'র মতো আসন রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য। এটা শিক্ষার্থীদের গ্রন্থাগারবিমুখ হওয়ার অন্যতম একটি কারণ। প্রশাসন কি এ বিষয়টি নিয়ে ভেবেছে? মান্ধাতা আমলের এই গ্রন্থাগারটি আজ শিক্ষার্থীদের আকর্ষিত করতে পারছে না। কারণ শিক্ষার্থীরা তাদের চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজন মেটাতে পারছে না। এতে করে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এই খাতটির দিকে ঊর্ধ্বতন মহলের কোনো নজর নেই। বই পাঠে শিক্ষার্থীদের কী করে আগ্রহী করা যায় তা নিয়ে কেউ ভাবছে না।
মোদ্দাকথা, আধুনিক এই বিশ্বায়নের যুগে গোটা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আমাদের জনশক্তিকেই যুগোপযোগী শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ করে তুলতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে গ্রন্থাগার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারসহ দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারগুলোকে অতিসত্বর ই-লাইব্রেরিতে পরিণত করতে হবে। এ জন্য সরকার ও ইউজিসিকে অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, বিশেষজ্ঞ, দক্ষ আইটি টিম ও লোকবল নিয়োগ দেওয়া দরকার। যাতে করে এসব গ্রন্থাগার অল্প সময়ের মধ্যে ডিজিটালাইজ ও আইএলএসে পরিণত করা যায়।
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ziamcj@gmail.comসেই ধারায় বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬৪ সালে অর্জিত শিক্ষার সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি, সামাজিক ও গণতান্ত্রিক চেতনা এবং মূল্যবোধের বিকাশ, অবক্ষয় ও অপসংস্কৃতি রোধে 'কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার' প্রতিষ্ঠিত হয়।
এ গ্রন্থাগারের কাজ হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করা ও তাদের যুগোপযোগী শিক্ষা ও আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা দিয়ে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করা। এছাড়া দেশি-বিদেশি জার্নাল, দুষ্প্রাপ্য ডকুমেন্ট, সাময়িকীসহ নানা ধরনের বই ও গবেষণার উপকরণ সরবরাহ করা। কিন্তু দেশের অন্যতম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গ্রন্থাগারটি কি একুশ শতকের উপযোগী? সেই প্রতিষ্ঠাকালীন মান্ধাতা ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়েই এটি চলছে। এখানে দুর্লভ ও দুষ্প্রাপ্য অনেক পুরনো বই, পুরনো দৈনিক, সাময়িকী, ডকুমেন্ট ইত্যাদি পাওয়া গেলেও সমসাময়িক বই, জার্নাল-সাময়িকী ইত্যাদি অনেকটাই অপ্রতুল। আবার অনেক বই ক্যাটালগের তালিকায় থাকলেও শেলফে পাওয়া যায় না। এমনকি প্রশাসনও অনেক বইয়ের হদিস জানে না। বই সংরক্ষণের দীর্ঘস্থায়ী ও সঠিক পদ্ধতি ব্যবহারের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অনেক দুর্লভ বই, পুরনো দৈনিক, সাময়িকী, ডকুমেন্ট ইত্যাদি। তাছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও নেই।
একুশ শতকের এই বিশ্বায়নের যুগে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে তথ্যপ্রযুক্তিতে শিক্ষার্থীদের দক্ষ হয়ে ওঠা খুবই জরুরি। আর এখন অনেক কিছুই ইন্টারনেট থেকে শেয়ার করতে হয়। কিন্তু গ্রন্থাগারটিতে এসব সুবিধা হতাশাজনক। মাত্র একটি কক্ষে স্বল্পসংখ্যক কম্পিউটার রয়েছে, যা প্রয়োজন অনুপাতে অতি নগণ্য।
বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। এখন সবকিছুই ইন্টারনেটভিত্তিক। বিশ্বের অনেক দেশে অনেক আগেই গ্রন্থাগারগুলো ই-লাইব্রেরিতে পরিণত করা হয়েছে। এমনকি অনেক উন্নয়নশীল দেশেও এই আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সংবলিত ইন্টিগ্রেটেড লাইব্রেরি সিস্টেম (আইএলএস) ব্যবহার করে আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। তাছাড়া গ্রন্থাগারের বই, তথ্যাদি, সাময়িকী, জার্নাল ইত্যাদি বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারগুলো এসবের ধারেকাছেও নেই। এই গ্রন্থাগারগুলো আইএলএসে পরিণত করা গেলে একদিকে যেমন একজন ব্যবহারকারী স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের ডিজিটাল আইডি কার্ড ব্যবহার করে বই সম্পর্কিত খোঁজখবর, আদান-প্রদান ইত্যাদি করতে পারবে, অন্যদিকে বই চুরি রোধ ও গ্রন্থাগার পরিচালনার ক্ষেত্রে জনবলও কম লাগবে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গ্রন্থাগারের আসন সংখ্যা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য এগারোশ'র মতো আসন রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য। এটা শিক্ষার্থীদের গ্রন্থাগারবিমুখ হওয়ার অন্যতম একটি কারণ। প্রশাসন কি এ বিষয়টি নিয়ে ভেবেছে? মান্ধাতা আমলের এই গ্রন্থাগারটি আজ শিক্ষার্থীদের আকর্ষিত করতে পারছে না। কারণ শিক্ষার্থীরা তাদের চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজন মেটাতে পারছে না। এতে করে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এই খাতটির দিকে ঊর্ধ্বতন মহলের কোনো নজর নেই। বই পাঠে শিক্ষার্থীদের কী করে আগ্রহী করা যায় তা নিয়ে কেউ ভাবছে না।
মোদ্দাকথা, আধুনিক এই বিশ্বায়নের যুগে গোটা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আমাদের জনশক্তিকেই যুগোপযোগী শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ করে তুলতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে গ্রন্থাগার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারসহ দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারগুলোকে অতিসত্বর ই-লাইব্রেরিতে পরিণত করতে হবে। এ জন্য সরকার ও ইউজিসিকে অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, বিশেষজ্ঞ, দক্ষ আইটি টিম ও লোকবল নিয়োগ দেওয়া দরকার। যাতে করে এসব গ্রন্থাগার অল্প সময়ের মধ্যে ডিজিটালাইজ ও আইএলএসে পরিণত করা যায়।
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
No comments