জুঁইয়ের হার না মানা কথা! by জাহিদুর রহমান ও ওমর ফারুক
মনে পড়ে হাওয়া আক্তার জুঁইয়ের কথা! নরসিংদী সরকারি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী সে। বেশীদিন আগের ঘটনা নয়। গত ৪ ডিসেম্বর বর্বরতার শিকার হয়ে সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছিলেন জুঁই। লেখাপড়া করতে চাওয়াই কাল হয়েছিলো তাঁর।
স্বামীর অসম্মতিতে কলেজে ভর্তি হওয়ায় কেটে নেওয়া হয়েছিলো তাঁর ডান হাতের চারটি আঙুল। লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকায় দুবাই প্রবাসী স্বামীকে না জানিয়েই নরসিংদী সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ায় স্বামী রফিকুল ইসলাম সারপ্রাইজ দেবার কথা বলে চোখ বেঁধে কেটে নেয় জুঁইয়ের ডান হাতের চারটি আঙ্গুল।
দেহের রক্তাক্ত ক্ষত মুছে এখন মনের ক্ষতও মুছে ফেলতে চান অদম্য এই নারী। কাটা আগুল নিয়েই শুরু করেছেন লেখাপড়া। মনোবলও বেশ দৃঢ়। যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্যে প্রস্ততও করেছেন নিজেকে।
‘আমার অবস্থা এখন আগের চেয়ে ভাল। আমি এখন ঠিকমত লিখতে পারছি। কোন সমস্যা হচ্ছেনা। বেশ দৃঢ় চিত্তে বললেন- আমি কোন হুমকিকে ভয় পাইনা। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ নিয়ে ওকে (স্বামী) বুঝিয়ে দিতে চাই আঙ্গুল না থাকলেও পড়াশোনা করা যায়। প্রমাণিত হবে ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়’- সোমবার সকালে এ ভাবেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন জুঁই।
ধারাবাহিক চিকিৎসার অংশ হিসেবে এদিন সকালে রাজধানীর শ্যামলীতে একটি প্রতিষ্ঠানে নেওয়ার পথে তার সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। চোখেমুখে তাঁর রঙিন স্বপ্ন। আবারো আঙ্গুল দিয়ে সে লিখবে!
সেই স্বপ্নই বাস্তবে রূপ দিতে পদক্ষেপ নিয়েছে একুশে পদকপ্রাপ্ত সাভারের সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান পক্ষঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি)। হাতে কৃত্রিম আঙ্গুল সংযোজনের দায়িত্ব নিয়েছে এ সংস্থাটি।
জুঁইয়ের বাবা ইউনুস মিয়া পেশায় তাঁত শ্রমিক। তিনি জানান, গত ৮ জানুয়ারি সিআরপির একটি প্রতিনিধিদল তাঁর বাড়িতে গিয়ে জুঁইয়ের হাতে কৃত্রিম আঙ্গুল প্রতিস্থাপনে তাদের আগ্রহের কথা জানায়।
এদিনই তাঁকে সাভারে ওই প্রতিষ্ঠানে নিয়ে শুরু হয় বিভিন্ন পর্যায়ের চিকিৎসা। আবেগজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, কৃত্রিম আঙ্গুল দিয়ে আমার মেয়ে লিখছে- জীবদ্দশায় এ দৃশ্য দেখে যেতে পারলে শান্তি পাবো। জু্ইঁ বর্তমানে সিআরপির অকুপেশনাল থেরাপি বিভাগের প্রধান মাহফুজুর রহমানের অধীনে রয়েছেন।
তিনি জানান, উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের ব্যাপারে জুঁই মানসিকভাবে প্রস্তুত। ক্ষতিগ্রস্ত হাতের সাহায্যে লেখা, চামচ দিয়ে খাওয়া, চুল বাঁধা, ও দাঁত ব্রাশ করানোর বিভিন্ন কাজের জন্যে তাকে উপযোগী করা হচ্ছে। চেষ্টা চলছে ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে হাতের কবজির জোর বাড়ানোর পাশাপাশি পরীক্ষায় অংশ নিতে বাঁ হাতে লেখারও অভ্যাস করছেন জুঁই।
অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, ফিজিও থেরাপিস্ট, কাউন্সিলিংসহ ৫টি বিভাগের অধীনে চিকিৎসা চলছে জুঁইয়ের।
অকুপেশনাল থেরাপি বিভাগের প্রধান মাহফুজুর রহমান জানান, আমাদের পাঁচটি ইউনিট মিলে চিকিৎসা করছি। তার অবস্থার ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। এখন তার লেখার স্পিড ৮ মিনিটে ১ পৃষ্ঠা। তার মানসিক অবস্থারও উন্নতি হয়েছে।
আরও ১০ দিনের মত আমরা তাকে বিভিন্ন থেরাপি দিয়ে সম্পূর্ণরুপে সুস্থ করে তুলতে পারবো। এ ছাড়াও কাউন্সিলরা তাঁকে ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তোলার ব্যাপারে সাহায্য করছে।
সংশ্লিষ্ট বিভাগ তার হাতের ৪টি কৃত্রিম আঙ্গুল স্থাপনের কাজ করছে। তাঁকে রাইটিং প্র্যাকটিস করাচ্ছে অকুপেশনাল থেরাপিস্ট বিভাগ। তার হাতে একটি বেল্ট স্থাপন করে চামচ দিয়ে খাওয়া, চিরুণি দিয়ে মাথা আচড়ানোসহ প্রয়োজনীয় কাজ করতে শেখাচ্ছে।
ফিজিও থেরাপিস্টরা তার হাতের কব্জির জোড় বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এবং চিকিৎসকরা পর্যবেক্ষণ করছেন তার স্বাস্থ্যের অবস্থা। এসএসসি পরীক্ষার ‘এ গ্রেড’ পান জুঁই। গেলো এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন তিনি।
২০০৮ সালের ৩০ জানুয়ারি নরসিংদী সদর উপজেলার ভেলানগরের হাওয়ার সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার নূরজাহানপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের বিয়ে হয়। ওই বছরের শেষ দিকে রফিক হাওয়াকে তাঁর বাবার বাড়িতে রেখে দুবাই চলে যান।
লেখাপড়ার প্রতি হাওয়ার প্রবল আগ্রহ থাকলেও রফিক চাননি তাঁর স্ত্রী আর পড়াশোনায় এগিয়ে থাকুক। রফিককে না জানিয়েই জুঁইকে নরসিংদী সরকারি কলেজে ভর্তি করিয়ে দেন তাঁর বাবা ইউনূস মিয়া। এই খবর জানতে পেরে রফিক গোপনে দুবাই থেকে দেশে ফিরে আসে।
গত ২৭ নভেম্বর দুবাই থেকে জুঁইকে ফোন করে রফিক জানান, তিনি তাঁর জন্য মুঠোফোনের একটি সেট, কিছু স্বর্ণালংকার ও কসমেটিকস রফিকের বোনের বাসায় পাঠিয়েছেন। এগুলো তিনি তাঁর বোন নাঈমা বেগমের ঢাকার বাসা থেকে নিয়ে যেতে বলেন। জুঁই ১ ডিসেম্বর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার জিয়া কলোনিতে তাঁর ননদের বাসায় যান।
৪ ডিসেম্বর সকালে ঘুম থেকে জেগে নিজের স্বামীকে দেখে বিস্মিত হন জুঁই। তুমি কখন এলে- উত্তরে রফিক বলে, এই তো কিছুক্ষণ হলো দুবাই থেকে এলাম। তোমাকে চমকে দেব বলে জানাইনি। এ সময় রফিক রুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয়।
আমি নিষেধ করা সত্বেও তুমি ঠিকই পরীক্ষা দিয়েছ, তোমার জন্য একটা পুরস্কার আছে। চোখটা বন্ধ করো। এ সময় আচমকা সে ওড়না দিয়ে জু্ইঁয়ের দুই চোখ টাইট করে বেঁধে ফেলে। মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে বলে, একদম চুপ। এরপর আমার ডান হাত টেনে ধারালো চাপাতি দিয়ে আঙুলে কোপ দেয়। রফিক বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।
দেহের রক্তাক্ত ক্ষত মুছে এখন মনের ক্ষতও মুছে ফেলতে চান অদম্য এই নারী। কাটা আগুল নিয়েই শুরু করেছেন লেখাপড়া। মনোবলও বেশ দৃঢ়। যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্যে প্রস্ততও করেছেন নিজেকে।
‘আমার অবস্থা এখন আগের চেয়ে ভাল। আমি এখন ঠিকমত লিখতে পারছি। কোন সমস্যা হচ্ছেনা। বেশ দৃঢ় চিত্তে বললেন- আমি কোন হুমকিকে ভয় পাইনা। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ নিয়ে ওকে (স্বামী) বুঝিয়ে দিতে চাই আঙ্গুল না থাকলেও পড়াশোনা করা যায়। প্রমাণিত হবে ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়’- সোমবার সকালে এ ভাবেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন জুঁই।
ধারাবাহিক চিকিৎসার অংশ হিসেবে এদিন সকালে রাজধানীর শ্যামলীতে একটি প্রতিষ্ঠানে নেওয়ার পথে তার সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। চোখেমুখে তাঁর রঙিন স্বপ্ন। আবারো আঙ্গুল দিয়ে সে লিখবে!
সেই স্বপ্নই বাস্তবে রূপ দিতে পদক্ষেপ নিয়েছে একুশে পদকপ্রাপ্ত সাভারের সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান পক্ষঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি)। হাতে কৃত্রিম আঙ্গুল সংযোজনের দায়িত্ব নিয়েছে এ সংস্থাটি।
জুঁইয়ের বাবা ইউনুস মিয়া পেশায় তাঁত শ্রমিক। তিনি জানান, গত ৮ জানুয়ারি সিআরপির একটি প্রতিনিধিদল তাঁর বাড়িতে গিয়ে জুঁইয়ের হাতে কৃত্রিম আঙ্গুল প্রতিস্থাপনে তাদের আগ্রহের কথা জানায়।
এদিনই তাঁকে সাভারে ওই প্রতিষ্ঠানে নিয়ে শুরু হয় বিভিন্ন পর্যায়ের চিকিৎসা। আবেগজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, কৃত্রিম আঙ্গুল দিয়ে আমার মেয়ে লিখছে- জীবদ্দশায় এ দৃশ্য দেখে যেতে পারলে শান্তি পাবো। জু্ইঁ বর্তমানে সিআরপির অকুপেশনাল থেরাপি বিভাগের প্রধান মাহফুজুর রহমানের অধীনে রয়েছেন।
তিনি জানান, উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের ব্যাপারে জুঁই মানসিকভাবে প্রস্তুত। ক্ষতিগ্রস্ত হাতের সাহায্যে লেখা, চামচ দিয়ে খাওয়া, চুল বাঁধা, ও দাঁত ব্রাশ করানোর বিভিন্ন কাজের জন্যে তাকে উপযোগী করা হচ্ছে। চেষ্টা চলছে ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে হাতের কবজির জোর বাড়ানোর পাশাপাশি পরীক্ষায় অংশ নিতে বাঁ হাতে লেখারও অভ্যাস করছেন জুঁই।
অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, ফিজিও থেরাপিস্ট, কাউন্সিলিংসহ ৫টি বিভাগের অধীনে চিকিৎসা চলছে জুঁইয়ের।
অকুপেশনাল থেরাপি বিভাগের প্রধান মাহফুজুর রহমান জানান, আমাদের পাঁচটি ইউনিট মিলে চিকিৎসা করছি। তার অবস্থার ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। এখন তার লেখার স্পিড ৮ মিনিটে ১ পৃষ্ঠা। তার মানসিক অবস্থারও উন্নতি হয়েছে।
আরও ১০ দিনের মত আমরা তাকে বিভিন্ন থেরাপি দিয়ে সম্পূর্ণরুপে সুস্থ করে তুলতে পারবো। এ ছাড়াও কাউন্সিলরা তাঁকে ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তোলার ব্যাপারে সাহায্য করছে।
সংশ্লিষ্ট বিভাগ তার হাতের ৪টি কৃত্রিম আঙ্গুল স্থাপনের কাজ করছে। তাঁকে রাইটিং প্র্যাকটিস করাচ্ছে অকুপেশনাল থেরাপিস্ট বিভাগ। তার হাতে একটি বেল্ট স্থাপন করে চামচ দিয়ে খাওয়া, চিরুণি দিয়ে মাথা আচড়ানোসহ প্রয়োজনীয় কাজ করতে শেখাচ্ছে।
ফিজিও থেরাপিস্টরা তার হাতের কব্জির জোড় বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এবং চিকিৎসকরা পর্যবেক্ষণ করছেন তার স্বাস্থ্যের অবস্থা। এসএসসি পরীক্ষার ‘এ গ্রেড’ পান জুঁই। গেলো এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন তিনি।
২০০৮ সালের ৩০ জানুয়ারি নরসিংদী সদর উপজেলার ভেলানগরের হাওয়ার সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার নূরজাহানপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের বিয়ে হয়। ওই বছরের শেষ দিকে রফিক হাওয়াকে তাঁর বাবার বাড়িতে রেখে দুবাই চলে যান।
লেখাপড়ার প্রতি হাওয়ার প্রবল আগ্রহ থাকলেও রফিক চাননি তাঁর স্ত্রী আর পড়াশোনায় এগিয়ে থাকুক। রফিককে না জানিয়েই জুঁইকে নরসিংদী সরকারি কলেজে ভর্তি করিয়ে দেন তাঁর বাবা ইউনূস মিয়া। এই খবর জানতে পেরে রফিক গোপনে দুবাই থেকে দেশে ফিরে আসে।
গত ২৭ নভেম্বর দুবাই থেকে জুঁইকে ফোন করে রফিক জানান, তিনি তাঁর জন্য মুঠোফোনের একটি সেট, কিছু স্বর্ণালংকার ও কসমেটিকস রফিকের বোনের বাসায় পাঠিয়েছেন। এগুলো তিনি তাঁর বোন নাঈমা বেগমের ঢাকার বাসা থেকে নিয়ে যেতে বলেন। জুঁই ১ ডিসেম্বর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার জিয়া কলোনিতে তাঁর ননদের বাসায় যান।
৪ ডিসেম্বর সকালে ঘুম থেকে জেগে নিজের স্বামীকে দেখে বিস্মিত হন জুঁই। তুমি কখন এলে- উত্তরে রফিক বলে, এই তো কিছুক্ষণ হলো দুবাই থেকে এলাম। তোমাকে চমকে দেব বলে জানাইনি। এ সময় রফিক রুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয়।
আমি নিষেধ করা সত্বেও তুমি ঠিকই পরীক্ষা দিয়েছ, তোমার জন্য একটা পুরস্কার আছে। চোখটা বন্ধ করো। এ সময় আচমকা সে ওড়না দিয়ে জু্ইঁয়ের দুই চোখ টাইট করে বেঁধে ফেলে। মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে বলে, একদম চুপ। এরপর আমার ডান হাত টেনে ধারালো চাপাতি দিয়ে আঙুলে কোপ দেয়। রফিক বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।
No comments