চাই সহিষ্ণু রাজনৈতিক সংস্কৃতি-সংঘাত পরিহার করুন

রাজধানী ঢাকায় দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের সংঘাত এড়ানো সম্ভব হয়েছে। পুলিশ এ জন্য সাধুবাদ পেতে পারে। তবে আসল ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার উভয় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কারণ তাঁরা সহনশীল না হলে বা দলের উচ্ছৃঙ্খল কর্মীদের রাশ টেনে না ধরলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাধ্য কী শান্তি বজায় রাখে।


আমরা আশা করব, সংঘাত পরিহার করার এই সদিচ্ছা সব সময়ই তারা পোষন করবে। এ প্রসঙ্গে এটা উল্লেখ না করলেই নয়, দৃশ্যত গায়ে পড়ে সরকারি দল পাল্টা কর্মসূচি দেওয়ার কারনেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি হঠাৎ তপ্ত হয়ে ওঠে।
যদি সহনশীলতা ও পারস্পরিক ন্যূনতম শ্রদ্ধার সম্পর্ক বজায় রাখে, তাহলে একই দিনে এমনকি একই স্থানে নির্বিঘ্নে দুই দলের কর্মসূচি পালন কঠিন কিছু নয়। বস্তুত এটাই গণতন্ত্রের দাবি।
পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে ঘিরে রাজধানীতে সৃষ্ট উত্তেজনা প্রশমিত হলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে দুই দিনে তিন শহরে পাঁচজন মানুষের জীবনপ্রদীপ নিভে গেল। আবার এই হিংসাত্মক ঘটনাবলি কেন্দ্র করে পুলিশ বিভাগ নিরীহ মানুষসহ বিপুলসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নির্বিচারে মামলা দায়ের করেছে। এসব ক্ষেত্রে পুলিশ বরাবর নিজের পাতে ঝোল টানতেই তৎপর থাকে। কেবল ক্ষমতার পালাবদলে আসামির তালিকা বদলে যায়। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উচিত হবে, এ ধরনের হাজার হাজার নাগরিকের নামে মামলা দায়েরের পর পুলিশি তৎপরতার দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা। কারণ এটা নিরীহ মানুষকে হয়রানি করার পাশাপাশি উৎকোচ আদায়ের হাতিয়ার ছাড়া কিছু নয়। ১৩ হাজার নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। আজকাল ভিডিও ক্যামেরার সাহায্যে অপরাধী শনাক্তকরণ কোনোভাবেই জটিল কোনো কাজ নয়।
সামনে আরও কর্মসূচি আসছে। বিশেষ করে আগামী মার্চে বিএনপির ‘ঢাকা চলো’ কর্মসূচি রয়েছে। সরকারি দলের উচিত হবে না কোনো ঠুনকো অজুহাতে এটা বাধাগ্রস্ত করা। মেয়াদের আগে নির্বাচিত সরকারকে রাজপথের কর্মসূচি পালন করে যে পতন ঘটানো যায় না, বিরোধী দলকে সেই সত্য বুঝতে হবে। সংবিধান ও সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হলে তাদের উচিত হবে দাবিদাওয়া সংসদে গিয়েই পেশ করা। এ ব্যাপারে সরকারি দলও ইতিবাচক মনোভাব দেখালে রাজনীতিকে রাজপথ থেকে সংসদমুখী করা অসম্ভব নয়।
আমরা আশা করব, দলীয় কর্মসূচি পালনে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ সহিষ্ণুতা ও সংযম দেখাবে। রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে জনদুর্ভোগের বিষয়টিও তাদের মাথায় রাখতে হবে। সড়ক আটকিয়ে সভা-সমাবেশ, মিছিল, ট্রাক ও বাসভর্তি মানুষ ভাড়া করে গ্রাম থেকে শহরে আনা ১৯৭৬ সালে প্রণীত পুলিশ আইনের পরিপন্থী। প্রায়ই নাগরিক দুর্ভোগ ও ভীতির বিনিময়ে জনগণ ‘শান্তিপূর্ণ’ কর্মসূচি পেয়ে থাকে। সরকারি দল পাল্টা কর্মসূচি নিলে জনদুর্ভোগ ও নিরাপত্তাহীনতা চরম পর্যায়ে পৌঁছে, ২৯-৩০ জানুয়ারি ঘটনাই তার প্রমাণ।
সংবিধান নাগরিকের বাকস্বাধীনতা এবং সভা-সমাবেশ করার অধিকার ‘যুক্তিসংগত বাধানিষেধ’ সাপেক্ষে নিশ্চিত করেছে। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিজ দলের কর্মীদের সেই শিক্ষা দিতে এবং নিজেরাও তা প্রতিপালনে কতটা আগ্রহী সে ব্যাপারে যথেষ্ট সংশয় আছে।

No comments

Powered by Blogger.