শিক্ষা পরিবেশের বিপর্যয় by মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী
গৃহশিক্ষকের টোল থেকে প্রাইভেট টিউশনির সরু পথ বেয়ে কোচিং ব্যবসা থেকে কোচিং সিন্ডিকেট, অতঃপর তা কোচিং শিল্পের অপ্রতিরোধ্য, অনিরাময়যোগ্য অবয়ব লাভ করেছে। নব্বইয়ের দশকে বেসরকারি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপক বিস্তৃতিতে এ ব্যবসায় ঊর্ধ্বমুখী হাওয়া লাগে। এটি কোচিং থেকে কোচিং সিন্ডিকেটে রূপান্তরিত হয়।
একই স্থানে বিভিন্ন বিষয়ে পড়ার, জানার, পরীক্ষা দেওয়ার অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করে তারা স্বস্তিবোধ করতে থাকেন। বাড়তে থাকে কোচিং সেন্টারের সংখ্যা, বাড়তে থাকে এসবের ঘনত্ব ও বিস্তৃতি। একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক শেষ করে আমরা দেখি কোচিং সিন্ডিকেটে শিক্ষা এখন অন্যতম প্রধান একটি অর্থকরী পণ্য।
শিক্ষাকে অন্যতম অর্থকরী পণ্য এবং তা থেকে শিল্পে রূপ দেওয়ার এ কর্মকাণ্ডে জড়িতরা সবাই কিন্তু শিক্ষক নন। দেশে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ছাড়াও যেমন চিকিৎসা, অপারেশন, কিডনি স্থানান্তর করার খবর আমরা শুনি; তেমনি শিক্ষাশিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। তারা সাবেক অধ্যাপক, শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ যেমন আছেন, তেমনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী, তথাকথিত থিঙ্কট্যাঙ্ক, সদস্য, সমর্থক, বেকার যুবক, বেকার ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ছাত্র-যুব-জনতা প্রভৃতি স্তরের লোকজন। এ সিন্ডিকেট শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে বিজ্ঞাপন, ব্যানার, ফেস্টুন, লিফলেট, প্রচার-প্রচারণা, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে।
শিক্ষাকে সামাজিক পণ্যে রূপান্তর করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে হয়তো কোনো দিনও বিবেচিত হবে না। তবে একটি শ্রেণীকে, একটি সমাজকে অকার্যকর যন্ত্রে পরিণত করার যে অপপ্রয়াস এ প্রক্রিয়াতে যুক্ত আছে তা সমাজকে মুক্তিও দেবে না। এভাবে চলতে পারে না। চলতে দেওয়া যায় না। বহু ত্যাগ ও বিসর্জনের রক্তস্নাত দেশ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। পৃথিবীতে এত রক্ত বিসর্জন দিয়ে স্বাধীনতাকে নিজের করে পায়নি কোনো দেশ। এমন একটি দেশের ভবিষ্যৎ স্বপ্নগুলোকে তিলতিল করে নির্মূল করার যে কোনো প্রয়াস রুখে দেওয়া যে স্বাধীনতারই শপথ। পৃথিবীতে আরেকটিও দেশ কি পাওয়া যাবে যেখানে শিক্ষাকে সিন্ডিকেট ব্যবসার পণ্য বানিয়ে তিলতিল করে একটি সমাজকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়? যে অনৈতিক কর্মকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে নীরব স্বীকৃতি দেওয়া হয়?
আমরা শিক্ষা সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাত থেকে বাঁচতে চাই। আমাদের বোধের জাগরণ দরকার, বিবেকের সংস্কার দরকার। আমাদের রীতি-নীতি, বিবেকবোধকে শানিত করা প্রয়োজন। সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার কোচিং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। শিক্ষক সমাজের কলঙ্ক ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের বিধিবদ্ধ নিয়মে এনে সমাজকে বিকশিত হওয়ার পথ উন্মুক্ত করে দেওয়া প্রয়োজন আজ ও ভবিষ্যতের জন্য। বর্তমান সময়ের শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষস্থান অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত। তারপরও যদি সামাজিক এ ব্যাধির বিকাশ আমাদের তারুণ্যকে গ্রাস করে, তাদের বিকাশের পথ পিচ্ছিল ও নির্ভরশীল করে দেয়, তবে দুর্ভাগ্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের, দুর্ভাগ্য আমাদের।
সহকারী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম কলেজ
edrischem48@yahoo.com
শিক্ষাকে অন্যতম অর্থকরী পণ্য এবং তা থেকে শিল্পে রূপ দেওয়ার এ কর্মকাণ্ডে জড়িতরা সবাই কিন্তু শিক্ষক নন। দেশে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ছাড়াও যেমন চিকিৎসা, অপারেশন, কিডনি স্থানান্তর করার খবর আমরা শুনি; তেমনি শিক্ষাশিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। তারা সাবেক অধ্যাপক, শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ যেমন আছেন, তেমনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী, তথাকথিত থিঙ্কট্যাঙ্ক, সদস্য, সমর্থক, বেকার যুবক, বেকার ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ছাত্র-যুব-জনতা প্রভৃতি স্তরের লোকজন। এ সিন্ডিকেট শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে বিজ্ঞাপন, ব্যানার, ফেস্টুন, লিফলেট, প্রচার-প্রচারণা, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে।
শিক্ষাকে সামাজিক পণ্যে রূপান্তর করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে হয়তো কোনো দিনও বিবেচিত হবে না। তবে একটি শ্রেণীকে, একটি সমাজকে অকার্যকর যন্ত্রে পরিণত করার যে অপপ্রয়াস এ প্রক্রিয়াতে যুক্ত আছে তা সমাজকে মুক্তিও দেবে না। এভাবে চলতে পারে না। চলতে দেওয়া যায় না। বহু ত্যাগ ও বিসর্জনের রক্তস্নাত দেশ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। পৃথিবীতে এত রক্ত বিসর্জন দিয়ে স্বাধীনতাকে নিজের করে পায়নি কোনো দেশ। এমন একটি দেশের ভবিষ্যৎ স্বপ্নগুলোকে তিলতিল করে নির্মূল করার যে কোনো প্রয়াস রুখে দেওয়া যে স্বাধীনতারই শপথ। পৃথিবীতে আরেকটিও দেশ কি পাওয়া যাবে যেখানে শিক্ষাকে সিন্ডিকেট ব্যবসার পণ্য বানিয়ে তিলতিল করে একটি সমাজকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়? যে অনৈতিক কর্মকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে নীরব স্বীকৃতি দেওয়া হয়?
আমরা শিক্ষা সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাত থেকে বাঁচতে চাই। আমাদের বোধের জাগরণ দরকার, বিবেকের সংস্কার দরকার। আমাদের রীতি-নীতি, বিবেকবোধকে শানিত করা প্রয়োজন। সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার কোচিং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। শিক্ষক সমাজের কলঙ্ক ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের বিধিবদ্ধ নিয়মে এনে সমাজকে বিকশিত হওয়ার পথ উন্মুক্ত করে দেওয়া প্রয়োজন আজ ও ভবিষ্যতের জন্য। বর্তমান সময়ের শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষস্থান অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত। তারপরও যদি সামাজিক এ ব্যাধির বিকাশ আমাদের তারুণ্যকে গ্রাস করে, তাদের বিকাশের পথ পিচ্ছিল ও নির্ভরশীল করে দেয়, তবে দুর্ভাগ্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের, দুর্ভাগ্য আমাদের।
সহকারী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম কলেজ
edrischem48@yahoo.com
No comments