তুষারপাতে স্থবির যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপঃ জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল
টানা ১২ ঘণ্টার তুষার ঝড়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিসহ ১০টি অঙ্গরাজ্যের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার ‘গরম’ খবর আমাদেরকে গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবে জলবায়ুতে চরমভাবাপন্ন প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ব্রিটেন, ফ্রান্স, হল্যান্ড, বেলজিয়াম, জার্মানিসহ ইউরোপের একটি বড় অংশ তুষারের চাদরে ঢাকা পড়ে যাওয়ায় কী রকম জবুথবু অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তার বিবরণও আমরা মিডিয়ায় হররোজ পাচ্ছি। ইংল্যান্ডে দু’শ’র মতো স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ইংলিশ চ্যানেলের নিচ দিয়ে ফ্রান্স ও ব্রিটেনের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী সুড়ঙ্গে অস্বাভাবিক ঠাণ্ডার কারণে আটকে গিয়েছিল তিনটি যাত্রীবাহী ট্রেন। দেড় দিন হদ্দমদ্দ চেষ্টা করে প্রায় ২ হাজার যাত্রীসহ ট্রেন তিনটিকে সুড়ঙ্গের বাইরে আনা সম্ভব হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকায় শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া তুষারপাত শনিবার তুষার ঝড়ে রূপ নেয়। এ দুর্যোগে গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৪ হাজার। তাতে মারা গেছেন ৫ জন। সর্বশেষ ১৯৬২ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে তুষারপাত হয়েছিল ২৪ ঘণ্টায় ১৬ দশমিক ২ ইঞ্চি। এবার সে রেকর্ড ভঙ্গ করে ওয়াশিংটন ডিসি, ভার্জিনিয়া, নর্থ ক্যারলিনা, মেরিল্যান্ড প্রভৃতি এলাকায় তুষারপাত হয়েছে ২০ ইঞ্চিরও বেশি। ক্যাপিটল হিলের আশপাশে ২৪ ইঞ্চি পর্যন্ত তুষার জমে। তুষারপাতের সময় কোথাও কোথাও ঘণ্টায় ৪৫ মাইল বেগে ঝড় বইছিল। ফলে অনেক গাছ উপড়ে পড়েছে। বিদ্যুতের তার লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়ায় বিদ্যুিবহীন অবস্থায় পড়েছে ৫০ লাখ মানুষ। স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ওবামা এ বিপর্যয়ের শিকার হয়েছেন। কোপেনহেগেন থেকে ফেরার পথে তাকে বহনকারী বিমানটি ওয়াশিংটনে নামতে পারেনি। ভার্জিনিয়ায় বিমান থেকে অবতরণ করার পর তাকে সড়ক পথে হোয়াইট হাউসে পৌঁছতে হয়েছে। তুষার ঝড়ে ব্যতিব্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি রাজ্যে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা।
আগাম শীতের প্রচণ্ড তাণ্ডবে ইউরোপ-আমেরিকার এই বেহাল দশা এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন কোপেনহেগেনে এ দেশগুলোর স্বার্থপরতা ও একগুঁয়েমির জন্য বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন সবেমাত্র নিষম্ফল হয়ে গেছে। ইউরোপ-আমেরিকার শিল্পজাত সমৃদ্ধি জলবায়ুর স্বাভাবিক চরিত্রকে গুরুতরভাবে এলোমেলো করে দেয়ার পরিণতিতেই বিশ্বব্যাপী অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, গরম এবং ঠাণ্ডা বাড়ছে। ফলে খরা, বন্যা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, অসহনীয় তাপদাহ, অস্বাভাবিক তুষারপাত ইত্যাদি আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, এসবের প্রকোপ দিন দিনই বাড়ছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, ইউরোপ-আমেরিকায় শীতকালে তুষার পড়বে— এতো নতুন কিছু নয়। অবশ্যই নয়। কিন্তু শীত শুরু হতে না হতে তুষারের পুরো চাদরে বিস্তীর্ণ এলাকা ঢেকে ফেলে জীবনযাত্রা অচল করে দেয়া, গ্রীষ্মে ইউরোপের দেশে দেশে বন্যার তাণ্ডব, প্রাচ্যে-পাশ্চাত্যে ক্রমবর্ধমান হারে ঘূর্ণিঝড়ের ছোবল ইত্যাদি কিন্তু একেবারে নতুন প্রকৃতিগত বিপর্যয়ের লক্ষণ। এসব লক্ষণ প্রমাণ করে, জলবায়ুতে বিপর্যয়ে শুধু তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, শিল্পোন্নত দেশগুলোও রক্ষা পাবে না এর প্রভাব থেকে। বরং শিল্পোন্নত দেশগুলো অধিক সমৃদ্ধ বিধায় তাদের ক্ষতির মাত্রাও হবে অনেক বেশি। বাস্তবে হচ্ছেও তাই।
কিন্তু এতো কিছুর পরও শিল্পোন্নত দেশগুলোর চরিত্র পাল্টানোর আশা করা বৃথা। মুনাফার উদগ্র বাসনা যখন সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান করে নেয় তখন সুস্থ বিবেচনাবোধ অন্তর্হিত হয়। অবশ্য তাতে প্রলয় ঠেকানো যায় না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ঘুরপথে নিজের সরকারি বাসভবনে আসতে হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী দেশটির রাজধানী কয়েকদিন ধরে প্রকৃতির রোষানলে পড়ে অচল। ইউরোপের এক বড় অংশ জমে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এরপরও যদি শিল্পোন্নত দেশগুলোর নেতৃবৃন্দ কর্পোরেট স্বার্থের বরকন্দাজগিরি না ছাড়েন তবে অবশ্যম্ভাবী মহাবপির্যয় থেকে তারাও রক্ষা পাবেন না।
আগাম শীতের প্রচণ্ড তাণ্ডবে ইউরোপ-আমেরিকার এই বেহাল দশা এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন কোপেনহেগেনে এ দেশগুলোর স্বার্থপরতা ও একগুঁয়েমির জন্য বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন সবেমাত্র নিষম্ফল হয়ে গেছে। ইউরোপ-আমেরিকার শিল্পজাত সমৃদ্ধি জলবায়ুর স্বাভাবিক চরিত্রকে গুরুতরভাবে এলোমেলো করে দেয়ার পরিণতিতেই বিশ্বব্যাপী অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, গরম এবং ঠাণ্ডা বাড়ছে। ফলে খরা, বন্যা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, অসহনীয় তাপদাহ, অস্বাভাবিক তুষারপাত ইত্যাদি আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, এসবের প্রকোপ দিন দিনই বাড়ছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, ইউরোপ-আমেরিকায় শীতকালে তুষার পড়বে— এতো নতুন কিছু নয়। অবশ্যই নয়। কিন্তু শীত শুরু হতে না হতে তুষারের পুরো চাদরে বিস্তীর্ণ এলাকা ঢেকে ফেলে জীবনযাত্রা অচল করে দেয়া, গ্রীষ্মে ইউরোপের দেশে দেশে বন্যার তাণ্ডব, প্রাচ্যে-পাশ্চাত্যে ক্রমবর্ধমান হারে ঘূর্ণিঝড়ের ছোবল ইত্যাদি কিন্তু একেবারে নতুন প্রকৃতিগত বিপর্যয়ের লক্ষণ। এসব লক্ষণ প্রমাণ করে, জলবায়ুতে বিপর্যয়ে শুধু তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, শিল্পোন্নত দেশগুলোও রক্ষা পাবে না এর প্রভাব থেকে। বরং শিল্পোন্নত দেশগুলো অধিক সমৃদ্ধ বিধায় তাদের ক্ষতির মাত্রাও হবে অনেক বেশি। বাস্তবে হচ্ছেও তাই।
কিন্তু এতো কিছুর পরও শিল্পোন্নত দেশগুলোর চরিত্র পাল্টানোর আশা করা বৃথা। মুনাফার উদগ্র বাসনা যখন সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান করে নেয় তখন সুস্থ বিবেচনাবোধ অন্তর্হিত হয়। অবশ্য তাতে প্রলয় ঠেকানো যায় না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ঘুরপথে নিজের সরকারি বাসভবনে আসতে হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী দেশটির রাজধানী কয়েকদিন ধরে প্রকৃতির রোষানলে পড়ে অচল। ইউরোপের এক বড় অংশ জমে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এরপরও যদি শিল্পোন্নত দেশগুলোর নেতৃবৃন্দ কর্পোরেট স্বার্থের বরকন্দাজগিরি না ছাড়েন তবে অবশ্যম্ভাবী মহাবপির্যয় থেকে তারাও রক্ষা পাবেন না।
No comments