অ্যাডিলেড টেস্ট-লজ্জাতেই শেষ ভারতের

আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতে পঞ্চম দিনে লাগল মাত্র ১৩.৪ ওভার এবং ৫৯ মিনিট। ২৯৮ রানে হেরে অস্ট্রেলিয়ার হাতে ৪-০ ধবলধোলাই সম্পন্ন ভারতের। ইংল্যান্ডের কাছে ৪-০ হারের পর দেশের বাইরে তাদের টানা দ্বিতীয় ধবলধোলাই এবং একইভাবে যা টানা অষ্টম হার। টেস্ট শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় যে ভারত ইংল্যান্ডে গিয়েছিল গত বছর, তারা নামল র‌্যাঙ্কিংয়ের তিনে।


উমেশ যাদব আউট হতেই অ্যাডিলেডে কাল উল্লাসে মাতল অস্ট্রেলিয়া। উল্লাসটা হতে পারত বুনো, কিন্তু ক্লার্কের দলকে সংযত দেখাল যথেষ্টই। ভারতকে চার টেস্টেই গুঁড়িয়ে দিয়েও যে তারা এখনো ভগ্নাংশ ব্যবধানে পিছিয়ে চারে! কণ্ঠে জাগরণের গান, কিন্তু ভয়াবহ পতন থেকে আবারও শীর্ষে ফিরতে এখনও হাঁটতে হবে অনেকটা।
৬ উইকেটে ১৬৬ রান নিয়ে দিন শুরু করা ভারত সারা দিন ব্যাট করবে, কিংবা ৩৩৪ রান তুলে নতুন ইতিহাস গড়বে, এ ছিল স্বপ্নাতীত। ম্যাচ বাঁচাতে ভারত চাইতে পারত বৃষ্টির আশীর্বাদ কিংবা হারের ব্যবধান কমাতে শেষ প্রহরে কারও বীরত্ব। আগের দিন আবহাওয়া দিয়েছিল ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস। কিন্তু ঝড় ওঠেনি, বৃষ্টি নামেনি। ঋদ্ধিমান, অশ্বিন, জহির বা ইশান্তদের ব্যাটও অপ্রত্যাশিত বীরত্ব দেখায়নি। প্রথমে বিদায় আগের দিনে অপরাজিত ইশান্ত শর্মার, রায়ান হ্যারিসের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। পরপরই ঋদ্ধিমান সাহা যান পিটার সিডলের বলে। রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও জহির খান কয়েকটি বাউন্ডারি মেরে রান বাড়াতে থাকলেও প্রশ্নটা ছিল, কোন বোলার তাদের উইকেট তুলবে! জহির হিলফেনহসকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলেছেন আকাশে। উমেশ যাদব অফ স্পিনার নাথান লায়নের বলে আউট হতেই ভারত শেষ ২০১ রানে। ৬৩ রানে লায়নের শিকার ৪ উইকেট। অথচ স্পিনের বিপক্ষে দুর্দান্ত ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে এই লায়নই সবচেয়ে কম প্রভাববিস্তারকারী। ৪১ রানে ৩ উইকেট রায়ান হ্যারিসের। ম্যান অব দ্য ম্যাচ পিটার সিডলের উইকেট একটি। চার বোলারই অন্তত একটি করে উইকেট পেয়েছেন!
সিরিজ শুরুর আগে ভারতের ব্যাটিংয়ের দিকে তাকিয়ে অনভিজ্ঞ এই বোলিংকে বেশ দুর্বল লাগছিল। তাই প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল ভারত। কিন্তু এই বোলিংই চূর্ণ করল টেন্ডুলকার-দ্রাবিড়-লক্ষ্মণ-শেবাগদের শক্তিমত্ত্ব ব্যাটিংকে। শেষ টেস্টে বিরাট কোহলির সেঞ্চুরিটাই করে মান রেখেছে ‘বিশ্বসেরা’ ব্যাটিংয়ের। এই কোহলিই ৩৭.৫০ গড়ে সর্বোচ্চ ৩০০ রান করেছেন। যেখানে ভিভিএস লক্ষ্মণের গড় ১৯.৩৭, বীরেন্দর শেবাগের ২৪.৭৫, রাহুল দ্রাবিড়ের ২৪.২৫, গৌতম গম্ভীরের ২২.৬২ এবং শততম সেঞ্চুরির দেখা না পাওয়া শচীন টেন্ডুলকারের ৩৫.৮৭।
ভারতকে ভুগিয়েছে তাদের বোলিংও। ৩১.৮০ গড়ে ১৫ উইকেট নিয়ে জহির খান ও ৩৯.৩৫ গড়ে ১৪ উইকেট নিয়ে নতুন পেসার উমেশ যাদবই যা একটু করেছেন। অন্যদিকে হিলফেনহস ও সিডলের নেতৃত্বে পুরো সিরিজেই অস্ট্রেলিয়ার বোলিং ছিল প্রায় নিখুঁত। ব্যাট হাতে ম্যান অব দ্য সিরিজ অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক ও রিকি পন্টিং ছিলেন অসাধারণ। একটা দল এর চেয়ে পূর্ণাঙ্গ পারফরম্যান্স আর কী চাইতে পারে? বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি হাতে তুলে মাইকেল ক্লার্ক তাই দলের জয়গানই গেয়েছেন, ‘একটা মাস ধরে যে কাজটি আমরা করেছি, তা অসাধারণ। ৪-০ জিতেছি, তবে কাজটা সহজ ছিল না। আমরা যা করেছি, সে জন্য অবশ্যই আমরা গর্বিত।’
ভারতের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক শেবাগ তাদের পারফরম্যান্সে বড় কোনো পার্থক্য দেখছেন না। হোয়াইটওয়াশের প্রসঙ্গটা উঠতেই তিনি ফিরে গেলেন দুই বছর আগে, ‘আমরাও ভারতে ২-০ তে জিতেছি।’ সূত্র: এএফপি, রয়টার্স।

৫১.১১
সিরিজে ভারতীয়দের বোলিং গড়। চার বা তার বেশি ম্যাচের সিরিজে তাদের পঞ্চম সর্বোচ্চ বোলিং গড়।

No comments

Powered by Blogger.