পরবর্তী নির্বাচন কি অনিশ্চিত by এ এম এম শওকত আলী
রাষ্ট্রপতি সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। আলাপ-আলোচনা কতটুকু ফলপ্রসূ হয়েছে তার সঠিক মূল্যায়ন এখনই করা সম্ভব নয়। কারণ অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে কেয়ারটেকার সরকার প্রথার পুনঃ প্রবর্তনের বিষয়টিও ছিল মতবিনিময়ের অন্যতম অংশ। এ কথা কারো অজানা নয় যে কেয়ারটেকার সরকার প্রথার বিলুপ্তির পর পরই রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে পড়ে।
জানুয়ারির ১৪ তারিখে একটি ইংরেজি দৈনিক মতবিনিময় সমাপ্তির পর বিশ্লেষণধর্মী এক সংবাদ প্রকাশ করে। এতে কয়টি রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে মতবিনিময় করে তা জানা যায়। সংখ্যা ছিল ২৩টি। এর মধ্যে ১৫টি দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃ প্রবর্তনের পক্ষে মত প্রকাশ করে। বাকি আটটি এ বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেনি। পরিসংখ্যানে মনে হতে পারে, দেশের সিংহভাগ রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার সমর্থন করে। অর্থাৎ এ মতই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবে বিষয়টি অত সহজ নয়। কারণ দলভিত্তিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়। এতে জাতীয় সংসদে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়, সে দল বা জোটই সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পায়। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিই এ দল বা জোটকে সরকার গঠনের জন্য শপথ প্রদান করেন।
বর্তমানে মহাজোটের বৃহত্তম অংশীদার হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে। এ দলটি মতবিনিময়ের বহু আগেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন-সম্পর্কিত সাংবিধানিক ধারার বিলুপ্তি করেছে। এদের রাজনৈতিক অবস্থান এখন পর্যন্ত স্পষ্ট। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, বরং নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর শক্তিশালী করেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভব। মতবিনিময়ের প্রাক্কালে জানা গিয়েছিল, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনসহ শক্তিশালীকরণের বিষয় সম্পর্কেই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। কিন্তু মতবিনিময়ের সময় দেখা যায়, বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল আলোচনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুনঃ প্রবর্তনের বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেয়। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির প্রতিক্রিয়া কী ছিল তা প্রকাশ্যে জানা যায়নি। কিছু দল নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে আলোচনাকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের জন্য কিছু নামও প্রস্তাব করে। এর একমাত্র কারণ ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যবর্তী সময়েই বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। আশু নিয়োগের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু এ বিষয়ে সরকার কি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তা এখনো অজানা। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণে বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন না পেলে এ নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হবে।
যে যুক্তির ভিত্তিতে ক্ষমতাসীন দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথার বিলুপ্তি ঘটায়, তা ছিল সামরিক শাসনামলের কয়েকটি বিতর্কিত বিষয়। ওই আমলে এসব বিষয় সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সংযোজন করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট এ ধরনের কিছু সংশোধন বাতিল ঘোষণা করে। পরবর্তী পর্যায়ে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার এর ওপর ভিত্তি করেই যে পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তা নিয়ে প্রধান বিরোধী দল আন্দোলন শুরু করে, যা এখনো চলমান। এ ক্ষেত্রে যে বিষয়টি দৃশ্যমান, তা হলো ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারসহ বিরোধী চারদলীয় জোট কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। মহাজোটভুক্ত একাধিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ অন্য কিছু বিষয়ে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছে। বিরোধী জোটভুক্ত অন্যান্য দলের মতভেদ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। এদের কারণটি ভিন্নতর। এরা সাংগঠনিক দুর্বলতার সম্মুখীন হয়েছে। দলভিত্তিক অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাও রয়েছে। এ জোটের প্রধান অংশীদার এ সত্ত্বেও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
রাষ্ট্রপতির মতবিনিময়ের উদ্যোগের বিষয়টিকেও কিছু ব্যক্তি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বলা হয়েছে যে এ উদ্যোগ সংবিধানসম্মত নয়। তবে এ কথা বলা যায়, সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতিই ক্ষমতাবান। তবে এ ক্ষমতা হয়তো নিরঙ্কুশ নয়। কারণ সংবিধান অনুযায়ী সব ধরনের নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের এ ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ ব্যতীত করা যায় না। এ ক্ষেত্রে দুটি ব্যতিক্রম রয়েছে। এক. প্রধান বিচারপতির নিয়োগ। দুই. প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ। তবে শেষোক্ত ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাকেই রাষ্ট্রপতি সরকার গঠনের জন্য অনুরোধ জানান। নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ গ্রহণ করাও বাধ্যতামূলক।
নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির মতবিনিময় কতটা ফলপ্রসূ? সর্বশেষ সংবাদে জানা যায়, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে রাষ্ট্রপতি প্রস্তাব দেবেন। অর্থাৎ সরকার প্রধানের কাছেই এ প্রস্তাব দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, মতবিনিময়ে অংশগ্রহণকারী বেশ কিছু দল এ বিষয়টিই উল্লেখ করে। কমিটির প্রধান হবেন আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি। পিএসসির চেয়ারম্যান, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং দুদক চেয়ারম্যান কমিটিতে সদস্য হিসেবে কাজ করবেন। সংবাদমাধ্যম ১৫ জানুয়ারি এ বিষয়টিই প্রকাশ করেছে। এ কারণে বলা যায় যে আংশিক হলেও আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আংশিক বলার কারণ হলো, নির্বাচন কমিশন গঠনসংক্রান্ত বিষয়ে একটি আইন করার বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। এ প্রস্তাব মতবিনিময়ে অংশগ্রহণকারী কিছু দল দিয়েছিল। তবে বড় কথা হলো, সংবিধানেও এটা বলা আছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও জাতীয় সংসদ এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বর্তমান ক্ষেত্রে বলা যায় যে ক্ষমতাসীন দল এ উদ্যোগ গ্রহণ করলে সবাই একে স্বাগত জানাবে। এ ছাড়া এর মাধ্যমে দলটি একটি সাংবিধানিক দায়িত্বও পালন করবে। এ দলটি ২০০৮-এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে ওই সময় থেকেই সরকার পরিচালনা করছে। আইন প্রণয়নে বাধা কোথায়?
এ পর্যন্ত প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে বলা সম্ভব যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃ প্রবর্তনের বিষয়ে হয়তো রাষ্ট্রপতি কোনো প্রস্তাব দেবেন না। এ কথাও জানা যায় যে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। তবে এখন পর্যন্ত অনুসন্ধান কমিটি গঠন ব্যতীত অন্য কোনো সুপারিশের বিষয় জানা যায়নি। চারদলীয় জোটের অবস্থান হলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃ প্রবর্তন করা না হলে তারা পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। মহাজোটভুক্ত অন্তত একটি রাজনৈতিক দল ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে যে পরবর্তী নির্বাচন তারা এককভাবে করবে। এ দলটি বর্তমান সংসদে তৃতীয় বৃহত্তম দল। অর্থাৎ পরবর্তী নির্বাচনে এ দলটি হয়তো প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালনে আশাবাদী। আশঙ্কার কথা, এ অবস্থা হলেও রাজনৈতিক অঙ্গনের অস্থিরতা দূর হবে না। তবে রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠিত হলে কী হবে? মূল সমস্যা হবে নির্বাচনের সময় ক্ষমতাসীন সরকারের হস্তক্ষেপের বিষয়টি। এ বিষয়ে বলা যায় যে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে যে কয়টি নির্বাচন এখন পর্যন্ত হয়েছে, তা নিয়ে কারো মতবিরোধ নেই। সরকারি হস্তক্ষেপের কোনো প্রমাণও পাওয়া যায়নি। এ বিষয়টির ওপর ভিত্তি করে ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা সম্প্রতি যুক্তি প্রদর্শন করেছেন, এ কারণেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা পুনঃ প্রবর্তনের কোনো প্রয়োজনই নেই। এর বিপক্ষে অন্যরা বহু আগেই যুক্তি দিয়েছেন, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথার বিকল্প হতে পারে না। শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে এ ধরনের বিতর্ক বারবার উচ্চারিত হয়। স্মরণ করা যেতে পারে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনের সময় এ বিষয়ে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার কমিশন প্রস্তাবিত আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনও করা হয়। অথচ এ বিষয়টি পুনরায় উত্থাপিত হচ্ছে। আইনের কোন কোন ধারায় পরিবর্তন আনতে হবে, সে কথা কেউ বলছে না। তবে নির্বাচন কমিশন কোনো একসময় এ বিষয়ে কিছু প্রস্তাব দিয়েছিল বলে জানা যায়। এসব প্রস্তাবে খোলামেলা আলোচনা করা উচিত। অন্যথায় জনগণ এ বিষয়ে কিছুই জানতে পারবে না।
অন্যদিকে প্রস্তাবিত অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে যেসব ব্যক্তিকে কমিশনে নিয়োগ দেওয়া হবে, তাদের যোগ্যতা প্রশ্নাতীত না হলেই হবে সমস্যা। মনে রাখা প্রয়োজন, যেকোনো প্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনে যদি সুযোগ্য ব্যক্তি নিয়োগ করা না হয়, তাহলে আইনের মাধ্যমে অধিকতর ক্ষমতা প্রদানই যথেষ্ট হবে না। আইনগত ক্ষমতা কোন পরিস্থিতিতে কতটুকু ব্যবহার করতে হবে, সে বিষয়টিই হবে মুখ্য। এর জন্য প্রয়োজন হবে সৎসাহস ও বিচক্ষণতা। রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালীকরণ-প্রক্রিয়ায় অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় অঙ্গ যেন দুর্বল না হয়, সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।
লেখক : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক
উপদেষ্টা ও কলামিস্ট
বর্তমানে মহাজোটের বৃহত্তম অংশীদার হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে। এ দলটি মতবিনিময়ের বহু আগেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন-সম্পর্কিত সাংবিধানিক ধারার বিলুপ্তি করেছে। এদের রাজনৈতিক অবস্থান এখন পর্যন্ত স্পষ্ট। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, বরং নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর শক্তিশালী করেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভব। মতবিনিময়ের প্রাক্কালে জানা গিয়েছিল, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনসহ শক্তিশালীকরণের বিষয় সম্পর্কেই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। কিন্তু মতবিনিময়ের সময় দেখা যায়, বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল আলোচনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুনঃ প্রবর্তনের বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেয়। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির প্রতিক্রিয়া কী ছিল তা প্রকাশ্যে জানা যায়নি। কিছু দল নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে আলোচনাকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের জন্য কিছু নামও প্রস্তাব করে। এর একমাত্র কারণ ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যবর্তী সময়েই বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। আশু নিয়োগের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু এ বিষয়ে সরকার কি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তা এখনো অজানা। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণে বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন না পেলে এ নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হবে।
যে যুক্তির ভিত্তিতে ক্ষমতাসীন দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথার বিলুপ্তি ঘটায়, তা ছিল সামরিক শাসনামলের কয়েকটি বিতর্কিত বিষয়। ওই আমলে এসব বিষয় সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সংযোজন করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট এ ধরনের কিছু সংশোধন বাতিল ঘোষণা করে। পরবর্তী পর্যায়ে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার এর ওপর ভিত্তি করেই যে পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তা নিয়ে প্রধান বিরোধী দল আন্দোলন শুরু করে, যা এখনো চলমান। এ ক্ষেত্রে যে বিষয়টি দৃশ্যমান, তা হলো ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারসহ বিরোধী চারদলীয় জোট কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। মহাজোটভুক্ত একাধিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ অন্য কিছু বিষয়ে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছে। বিরোধী জোটভুক্ত অন্যান্য দলের মতভেদ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। এদের কারণটি ভিন্নতর। এরা সাংগঠনিক দুর্বলতার সম্মুখীন হয়েছে। দলভিত্তিক অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাও রয়েছে। এ জোটের প্রধান অংশীদার এ সত্ত্বেও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
রাষ্ট্রপতির মতবিনিময়ের উদ্যোগের বিষয়টিকেও কিছু ব্যক্তি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বলা হয়েছে যে এ উদ্যোগ সংবিধানসম্মত নয়। তবে এ কথা বলা যায়, সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতিই ক্ষমতাবান। তবে এ ক্ষমতা হয়তো নিরঙ্কুশ নয়। কারণ সংবিধান অনুযায়ী সব ধরনের নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের এ ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ ব্যতীত করা যায় না। এ ক্ষেত্রে দুটি ব্যতিক্রম রয়েছে। এক. প্রধান বিচারপতির নিয়োগ। দুই. প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ। তবে শেষোক্ত ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাকেই রাষ্ট্রপতি সরকার গঠনের জন্য অনুরোধ জানান। নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ গ্রহণ করাও বাধ্যতামূলক।
নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির মতবিনিময় কতটা ফলপ্রসূ? সর্বশেষ সংবাদে জানা যায়, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে রাষ্ট্রপতি প্রস্তাব দেবেন। অর্থাৎ সরকার প্রধানের কাছেই এ প্রস্তাব দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, মতবিনিময়ে অংশগ্রহণকারী বেশ কিছু দল এ বিষয়টিই উল্লেখ করে। কমিটির প্রধান হবেন আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি। পিএসসির চেয়ারম্যান, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং দুদক চেয়ারম্যান কমিটিতে সদস্য হিসেবে কাজ করবেন। সংবাদমাধ্যম ১৫ জানুয়ারি এ বিষয়টিই প্রকাশ করেছে। এ কারণে বলা যায় যে আংশিক হলেও আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আংশিক বলার কারণ হলো, নির্বাচন কমিশন গঠনসংক্রান্ত বিষয়ে একটি আইন করার বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। এ প্রস্তাব মতবিনিময়ে অংশগ্রহণকারী কিছু দল দিয়েছিল। তবে বড় কথা হলো, সংবিধানেও এটা বলা আছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও জাতীয় সংসদ এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বর্তমান ক্ষেত্রে বলা যায় যে ক্ষমতাসীন দল এ উদ্যোগ গ্রহণ করলে সবাই একে স্বাগত জানাবে। এ ছাড়া এর মাধ্যমে দলটি একটি সাংবিধানিক দায়িত্বও পালন করবে। এ দলটি ২০০৮-এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে ওই সময় থেকেই সরকার পরিচালনা করছে। আইন প্রণয়নে বাধা কোথায়?
এ পর্যন্ত প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে বলা সম্ভব যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃ প্রবর্তনের বিষয়ে হয়তো রাষ্ট্রপতি কোনো প্রস্তাব দেবেন না। এ কথাও জানা যায় যে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। তবে এখন পর্যন্ত অনুসন্ধান কমিটি গঠন ব্যতীত অন্য কোনো সুপারিশের বিষয় জানা যায়নি। চারদলীয় জোটের অবস্থান হলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃ প্রবর্তন করা না হলে তারা পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। মহাজোটভুক্ত অন্তত একটি রাজনৈতিক দল ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে যে পরবর্তী নির্বাচন তারা এককভাবে করবে। এ দলটি বর্তমান সংসদে তৃতীয় বৃহত্তম দল। অর্থাৎ পরবর্তী নির্বাচনে এ দলটি হয়তো প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালনে আশাবাদী। আশঙ্কার কথা, এ অবস্থা হলেও রাজনৈতিক অঙ্গনের অস্থিরতা দূর হবে না। তবে রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠিত হলে কী হবে? মূল সমস্যা হবে নির্বাচনের সময় ক্ষমতাসীন সরকারের হস্তক্ষেপের বিষয়টি। এ বিষয়ে বলা যায় যে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে যে কয়টি নির্বাচন এখন পর্যন্ত হয়েছে, তা নিয়ে কারো মতবিরোধ নেই। সরকারি হস্তক্ষেপের কোনো প্রমাণও পাওয়া যায়নি। এ বিষয়টির ওপর ভিত্তি করে ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা সম্প্রতি যুক্তি প্রদর্শন করেছেন, এ কারণেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা পুনঃ প্রবর্তনের কোনো প্রয়োজনই নেই। এর বিপক্ষে অন্যরা বহু আগেই যুক্তি দিয়েছেন, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথার বিকল্প হতে পারে না। শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে এ ধরনের বিতর্ক বারবার উচ্চারিত হয়। স্মরণ করা যেতে পারে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনের সময় এ বিষয়ে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার কমিশন প্রস্তাবিত আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনও করা হয়। অথচ এ বিষয়টি পুনরায় উত্থাপিত হচ্ছে। আইনের কোন কোন ধারায় পরিবর্তন আনতে হবে, সে কথা কেউ বলছে না। তবে নির্বাচন কমিশন কোনো একসময় এ বিষয়ে কিছু প্রস্তাব দিয়েছিল বলে জানা যায়। এসব প্রস্তাবে খোলামেলা আলোচনা করা উচিত। অন্যথায় জনগণ এ বিষয়ে কিছুই জানতে পারবে না।
অন্যদিকে প্রস্তাবিত অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে যেসব ব্যক্তিকে কমিশনে নিয়োগ দেওয়া হবে, তাদের যোগ্যতা প্রশ্নাতীত না হলেই হবে সমস্যা। মনে রাখা প্রয়োজন, যেকোনো প্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনে যদি সুযোগ্য ব্যক্তি নিয়োগ করা না হয়, তাহলে আইনের মাধ্যমে অধিকতর ক্ষমতা প্রদানই যথেষ্ট হবে না। আইনগত ক্ষমতা কোন পরিস্থিতিতে কতটুকু ব্যবহার করতে হবে, সে বিষয়টিই হবে মুখ্য। এর জন্য প্রয়োজন হবে সৎসাহস ও বিচক্ষণতা। রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালীকরণ-প্রক্রিয়ায় অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় অঙ্গ যেন দুর্বল না হয়, সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।
লেখক : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক
উপদেষ্টা ও কলামিস্ট
No comments