আমিনবাজারে ছাত্র খুন-দোষীদের কঠোর দণ্ড চাই
আমিনবাজারে পবিত্র শবেবরাতের রাতে 'গণপিটুনিতে' নিহত ছয়জন ছাত্র ছিল নির্দোষ_ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির এ অভিমতসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে। অথচ ঘটনার পরপরই পুলিশের করা মামলায় বলা হয়েছিল, ডাকাত সন্দেহে ওই ছয়জন ছাত্রকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়।
সেখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিতরা হতভাগ্য ছাত্রদের রক্ষার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেনি, বরং তাদের কাজে প্রকৃত অপরাধীরাই আশকারা পায়_ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সেটা তুলে ধরার পরও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিতে তেমন আগ্রহী হয়নি। একজন ডিআইজির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি কাজ করলেও তারা ঘটনার মোড় কোনদিকে ঘুরিয়ে দেবে, সে বিষয়ে সংশয় ছিলই। এ ঘটনায় সর্বস্তরে ক্ষোভ ছিল ব্যাপক। সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে ঘরে ঘরে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত আইনজীবী তাজুল ইসলামের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ দেন। এ রিপোর্টের আংশিক দেশবাসী জানতে পেরেছে। এটাও শোনা যাচ্ছে, পুলিশের ডিআইজির নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটিও মনে করছে, আমিনবাজারে শবেবরাতের রাতে কর্তব্যরত পুলিশের গাফিলতি ছিল। এ ধরনের প্রতিবেদন নিহত ছয় তরুণের পরিবারগুলোর শোক-তাপ ও যন্ত্রণার বিন্দুমাত্র উপশম ঘটাবে না। তাদের কেবল এটুকুই সান্ত্বনা যে ডাকাতির কলঙ্কমোচন ঘটল। তাতে অবশ্য পুলিশের অপরাধ বিন্দুমাত্র স্খলন হবে না। আমরা আশা করব, এ গুরুতর অপরাধ সংঘটন এবং তা চাপা দেওয়ার সঙ্গে জড়িত সবাইকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হবে এবং কঠোর দণ্ড নিশ্চিত করা হবে। এ ক্ষেত্রেও পুলিশের ওপর ভরসা রাখা কঠিন। শুক্রবার প্রথম আলোর প্রতিবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার সিরাজুল ইসলামের বরাত দিয়ে বলা হয় : 'নিহতদের সম্পর্কে আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, তারা ডাকাত। তবে নিহতদের পরিবার বলছে, তারা ছয়জনই ছাত্র। ছাত্র হলেই যে সবাই ভালো হবে সেটাও ঠিক নয়।' তার এ বক্তব্য থেকে ধারণা হতেই পারে তিনি পুলিশ ও আমিনবাজারের ঘাতকদের প্রতি কিছুটা হলেও সহানুভূতিশীল। তিনি বলছেন যে, ছাত্র হলেই ভালো হবে এমন কথা নেই, কিন্তু যারা ছয় ছাত্রকে খুন করেছে তাদের ব্যাপারে কোনো বিরূপ মন্তব্য তার নেই। মামলাটি যখন বিচারের জন্য আদালতে উঠবে তখন এ ধরনের কর্মকর্তারা দায়িত্বে থাকলে তার পরিণতি নিয়ে গুরুতর সংশয় থাকবেই। কথায় বলে, পুলিশের পাল্লায় পড়লে তা বাঘের হিংস্র থাবার মুখে পড়ার চেয়েও ভয়াবহ। শুধু আমিনবাজার নয়, অনেক ঘটনায় তার প্রমাণ মিলেছে। আগস্টের প্রথমদিকে নোয়াখালীতে ১৬ বছরের এক কিশোরকে পুলিশের গাড়ি থেকে নামিয়ে পুলিশেরই প্ররোচনায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়। কয়েকদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্র কাদেরকে রাতে হলে ফেরার সময় পুলিশ আটক করে নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায় এবং তাকে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হিসেবে প্রমাণ করার জন্য নানাভাবে অপচেষ্টা চলে। র্যাবের গুলিতে ঝালকাঠির কলেজছাত্র লিমনের পা হারানোর বেদনার্ত স্মৃতি এখনও জ্বলজ্বলে। একের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা ক্রমে কমে যাচ্ছে এবং এতে সরকারের প্রতিও জনমত বিরূপ হচ্ছে। এতসব কাণ্ডের পরও কারও কি টনক নড়বে না?
No comments