বিপর্যস্ত সুন্দরবনঃ কঠোর নজরদারি অপরিহার্য
বহুমুখী আক্রমণে বাংলাদেশের গৌরব ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ সুন্দরবন এখন অস্তিত্ব সঙ্কটে ভুগছে। ক্রমাগত নিঃস্ব-রিক্ত হয়ে পড়ছে পৃথিবীর এ বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। সুন্দরবনে নিরুপদ্রব পরিবেশ সৃষ্টিতে বন বিভাগ তথা সরকারের কোনো উদ্যোগই সফল হচ্ছে না। ফলে তস্কর ও অসচেতন মানুষের আক্রমণের পাশাপাশি প্রকৃতির বৈরিতার মুখে বদলে যাচ্ছে সুন্দরবনের ছিরিছাদ।
পরপর দুটি প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত এ বনভূমিকে সুরক্ষা দিতে এর আগে সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল যে, শুধু মাছ ও মধু আহরণ ছাড়া সবকিছু সংগ্রহ এবং আহরণ বন্ধ থাকবে এখানে। তাতে ক্ষয়ক্ষতির ধাক্কা অর্ধেক সামলে ওঠা সম্ভব হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, এ ক্ষতি পূরণ হতে সময় লাগবে অন্তত কুড়ি বছর। এতসবের পরও জেনেশুনে বনদস্যু, তস্কর ও অসচেতন মানুষের আক্রমণে সুন্দরবন ক্রমাগত মারাত্মক বিপর্যস্ত অবস্থায় পৌঁছেছে। সরকারি সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। দুর্বৃত্তরা সংযত হয়নি।
সুন্দরবনের মোট আয়তনে বন এলাকার পরিমাণ ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৫৩ একর। নদীনালা ও খাল এলাকা রয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৫৪২ একর। বিপুল জীববৈচিত্র্য ও বৃক্ষের সমাহারে সজ্জিত এ বনভূমির অন্তত ২৫-৩০ হাজার হেক্টর বন ঘূর্ণিঝড়ে সম্পূর্ণ এবং ৭০-৮০ হাজার হেক্টর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপরও প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠার জীবনীশক্তি শেষ হয়নি সুন্দরবনের। সময় ও সুযোগ দিলে স্বাভাবিক নিয়মে ক্ষয়ক্ষতির অনেকটাই পূরণ হতো এত দিনে। কিন্তু সে পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকারসহ সব মহল ব্যর্থ হয়েছে। উল্টো নির্বিচারে বন উজাড়, বনজপ্রাণী নিধনের আয়োজন চলছে নানাভাবে, নানাদিক থেকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন তথা জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে লোনা পানির জোয়ার ও ঢেউ সুন্দরবনকে আক্রমণ করছে প্রতিনিয়ত। কয়েক বছর ধরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় বনের নদী-খালে প্রবেশ করছে লোনা পানি। এতে টপডাইং বা আগামরা রোগের প্রকোপ বেড়েছে। মারা যাচ্ছে বনের প্রধান গাছ সুন্দরী। গত জুলাই মাসের এক জরিপ অনুসারে, সাড়ে চার কোটি সুন্দরী গাছ আগামরা রোগে আক্রান্ত। বনের পূর্বভাগে লবণাক্ততা বাড়ায় পশুপাখি পশ্চিমভাগে এসেও রক্ষা পাচ্ছে না চোরা-শিকারিদের হাত থেকে। জানা গেছে, প্রায় প্রতিদিন সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় শিকারিরা ফাঁদ পেতে শিকার করছে হরিণ ও পাখি। সেগুলো দেদার বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন হাট-বাজারে। সম্প্রতি সাতক্ষীরার শ্যামনগর এলাকা থেকে ২৫ কেজি মাংস ও ৭টি হরিণ উদ্ধার করে বন বিভাগের লোকজন। যার ছয়টি মারা গেছে উদ্ধারের পরদিন। এমনিতেই প্রাকৃতিক কারণে সুন্দরবনের জীবজন্তুর খাদ্যসঙ্কট দেখা দিয়েছে, হিংস্র বাঘ খাদ্যের সন্ধানে চলে আসছে লোকালয়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক প্রজাতির প্রজনন ক্ষমতাও হ্রাস পেয়েছে। এমতাবস্থায় বনরক্ষী থাকা সত্ত্বেও শিকারিদের উত্পাত বন্ধ না হলে তার পরিণাম কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। সবচেয়ে মর্মান্তিক অভিযোগ হচ্ছে, সুন্দরবনে এখন গড়ে প্রতিদিন শিকারিদের হাতে শতাধিক মায়াবি হরিণ ধরা পড়ে। এসব হরিণ বিক্রির টাকার ভাগ বনবিভাগের কর্মকর্তারাও পান।
সুন্দরবনের আরেক সর্বনাশ করছে কাঠপাচারকারী ও তাদের সহযোগী একশ্রেণীর কর্মকর্তা ও কর্মচারী। বিশেষ করে বনের পূর্ব বিভাগ থেকে প্রতিদিন পাচার হচ্ছে হাজার হাজার ঘনফুট কাঠ পশুর ও শিবসা নদী দিয়ে। খুলনা রেঞ্জের টহল ফাঁড়ির কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় এগুলো যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। বছরের পর বছর ধরে এই বন বিধ্বংসের কাজ অব্যাহত রয়েছে। অর্থাত্ রক্ষক ভক্ষকের ভূমিকা নিয়ে কাঠ পাচার ও প্রাণী শিকারে মদত দিয়ে আসছে। কাজেই বনরক্ষা আইন আদতেই কোনো কাজে আসছে না। ফায়দা হচ্ছে না পাচার প্রতিরোধে বিভিন্ন ব্যবস্থাসহ জনবল বাড়িয়েও। কোস্টগার্ডের নিয়মিত টহলও অবস্থার উন্নতি করতে সক্ষম হচ্ছে না। শক্তিশালী নৌযান ব্যবহারকারী দেশি-বিদেশি বনদস্যুদের সঙ্গে সার্বিক সুরক্ষা ব্যবস্থা পেরে উঠছে না বলেও শোনা যাচ্ছে।
না, নামসর্বস্ব অভয়ারণ্য নয়, সুন্দরবন পরিণত করতে হবে প্রাণীদের নিরুপদ্রব বিচরণক্ষেত্রে। বন্য ও জলজ প্রাণী সংরক্ষণসহ বৃক্ষরাজির সম্প্রসারণ, রোগবালাই প্রতিরোধ, শিকারি দমন এবং কাঠ পাচার যে কোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে। এছাড়া বনের সার্বিক ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলার জন্য গড়ে তুলতে হবে সুন্দরবনভিত্তিক কার্যকর গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এজন্য প্রকৃতিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণও জরুরি। বস্তুত সুন্দরবন রক্ষায় মূল দায়দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকেই। অর্থাত্ কঠোর নজরদারি ছাড়া সুন্দরবনের অস্তিস্ত সঙ্কট মোকাবিলা সম্ভব নয়।
সুন্দরবনের মোট আয়তনে বন এলাকার পরিমাণ ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৫৩ একর। নদীনালা ও খাল এলাকা রয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৫৪২ একর। বিপুল জীববৈচিত্র্য ও বৃক্ষের সমাহারে সজ্জিত এ বনভূমির অন্তত ২৫-৩০ হাজার হেক্টর বন ঘূর্ণিঝড়ে সম্পূর্ণ এবং ৭০-৮০ হাজার হেক্টর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপরও প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠার জীবনীশক্তি শেষ হয়নি সুন্দরবনের। সময় ও সুযোগ দিলে স্বাভাবিক নিয়মে ক্ষয়ক্ষতির অনেকটাই পূরণ হতো এত দিনে। কিন্তু সে পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকারসহ সব মহল ব্যর্থ হয়েছে। উল্টো নির্বিচারে বন উজাড়, বনজপ্রাণী নিধনের আয়োজন চলছে নানাভাবে, নানাদিক থেকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন তথা জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে লোনা পানির জোয়ার ও ঢেউ সুন্দরবনকে আক্রমণ করছে প্রতিনিয়ত। কয়েক বছর ধরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় বনের নদী-খালে প্রবেশ করছে লোনা পানি। এতে টপডাইং বা আগামরা রোগের প্রকোপ বেড়েছে। মারা যাচ্ছে বনের প্রধান গাছ সুন্দরী। গত জুলাই মাসের এক জরিপ অনুসারে, সাড়ে চার কোটি সুন্দরী গাছ আগামরা রোগে আক্রান্ত। বনের পূর্বভাগে লবণাক্ততা বাড়ায় পশুপাখি পশ্চিমভাগে এসেও রক্ষা পাচ্ছে না চোরা-শিকারিদের হাত থেকে। জানা গেছে, প্রায় প্রতিদিন সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় শিকারিরা ফাঁদ পেতে শিকার করছে হরিণ ও পাখি। সেগুলো দেদার বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন হাট-বাজারে। সম্প্রতি সাতক্ষীরার শ্যামনগর এলাকা থেকে ২৫ কেজি মাংস ও ৭টি হরিণ উদ্ধার করে বন বিভাগের লোকজন। যার ছয়টি মারা গেছে উদ্ধারের পরদিন। এমনিতেই প্রাকৃতিক কারণে সুন্দরবনের জীবজন্তুর খাদ্যসঙ্কট দেখা দিয়েছে, হিংস্র বাঘ খাদ্যের সন্ধানে চলে আসছে লোকালয়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক প্রজাতির প্রজনন ক্ষমতাও হ্রাস পেয়েছে। এমতাবস্থায় বনরক্ষী থাকা সত্ত্বেও শিকারিদের উত্পাত বন্ধ না হলে তার পরিণাম কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। সবচেয়ে মর্মান্তিক অভিযোগ হচ্ছে, সুন্দরবনে এখন গড়ে প্রতিদিন শিকারিদের হাতে শতাধিক মায়াবি হরিণ ধরা পড়ে। এসব হরিণ বিক্রির টাকার ভাগ বনবিভাগের কর্মকর্তারাও পান।
সুন্দরবনের আরেক সর্বনাশ করছে কাঠপাচারকারী ও তাদের সহযোগী একশ্রেণীর কর্মকর্তা ও কর্মচারী। বিশেষ করে বনের পূর্ব বিভাগ থেকে প্রতিদিন পাচার হচ্ছে হাজার হাজার ঘনফুট কাঠ পশুর ও শিবসা নদী দিয়ে। খুলনা রেঞ্জের টহল ফাঁড়ির কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় এগুলো যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। বছরের পর বছর ধরে এই বন বিধ্বংসের কাজ অব্যাহত রয়েছে। অর্থাত্ রক্ষক ভক্ষকের ভূমিকা নিয়ে কাঠ পাচার ও প্রাণী শিকারে মদত দিয়ে আসছে। কাজেই বনরক্ষা আইন আদতেই কোনো কাজে আসছে না। ফায়দা হচ্ছে না পাচার প্রতিরোধে বিভিন্ন ব্যবস্থাসহ জনবল বাড়িয়েও। কোস্টগার্ডের নিয়মিত টহলও অবস্থার উন্নতি করতে সক্ষম হচ্ছে না। শক্তিশালী নৌযান ব্যবহারকারী দেশি-বিদেশি বনদস্যুদের সঙ্গে সার্বিক সুরক্ষা ব্যবস্থা পেরে উঠছে না বলেও শোনা যাচ্ছে।
না, নামসর্বস্ব অভয়ারণ্য নয়, সুন্দরবন পরিণত করতে হবে প্রাণীদের নিরুপদ্রব বিচরণক্ষেত্রে। বন্য ও জলজ প্রাণী সংরক্ষণসহ বৃক্ষরাজির সম্প্রসারণ, রোগবালাই প্রতিরোধ, শিকারি দমন এবং কাঠ পাচার যে কোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে। এছাড়া বনের সার্বিক ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলার জন্য গড়ে তুলতে হবে সুন্দরবনভিত্তিক কার্যকর গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এজন্য প্রকৃতিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণও জরুরি। বস্তুত সুন্দরবন রক্ষায় মূল দায়দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকেই। অর্থাত্ কঠোর নজরদারি ছাড়া সুন্দরবনের অস্তিস্ত সঙ্কট মোকাবিলা সম্ভব নয়।
No comments