কিডনি ব্যবসা-বন্ধ হোক অমানবিকতা
হাসপাতালগুলোতে রক্ত বিক্রেতাদের তৎপরতার কথা সবারই জানা। জরুরি রক্তের প্রয়োজনে মুমূর্ষু রোগীদের নিকটাত্মীয়দের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাকে পুঁজি করে এক সময় রমরমা ব্যবসা গড়ে উঠেছিল রক্ত বিক্রেতাদের। কিন্তু গণমাধ্যমের প্রচারণা, স্বেচ্ছাসেবী রক্ত সংগ্রাহক প্রতিষ্ঠান ও মানুষের সচেতনতার কারণে রক্ত ব্যবসায়ীদের প্রকোপ অনেকটাই কমেছে।
সাধারণ চোখে রক্তদাতাদের দোষ খুঁজে পাওয়া না গেলেও অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছিল রক্তদাতাদের অনেকেই নেশাগ্রস্ত। অভাবগ্রস্ত কিছু মানুষও পেটের দায়ে রক্ত বিক্রিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিল। জানা গিয়েছিল, অধিকাংশ রক্তদাতাই নানা রোগে আক্রান্ত। ফলে এমন দাতাদের কাছ থেকে রক্ত নিয়ে প্রাথমিকভাবে রোগী সুস্থ হলেও আখেরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। রক্ত বিক্রেতাদের তৎপরতা কমলেও কিডনি বিক্রেতাদের যে সংবাদ সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে, তা সবাইকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন নিয়ে সুনির্দিষ্ট আইন আছে দেশে। তাতে নিকটাত্মীয় ছাড়া কেউ কাউকে কিডনি দিতে পারেন না। চিকিৎসকদের মতে, কিডনির মতো স্পর্শকাতর অঙ্গ ট্রান্সপ্লান্টেশনের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। নিকটাত্মীয় ছাড়া অন্য কারও কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন করলে অধিকাংশ সময় তা ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। চিকিৎসকদের মতে, আইন কিছুতেই রুখতে পারেনি কিডনি ব্যবসায়ীদের। মানুষের দারিদ্র্যকে পুঁজি করে তারা গড়ে তুলেছে কিডনি বিক্রির এক ভয়াবহ ব্যবস্থা। ঘটা করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে কিডনিদাতাদের সংগ্রহ করেছে তারা। জনে জনে গিয়ে লোভ দেখিয়ে কিডনি বিক্রয়ে প্রলুব্ধ করেছে। এভাবেই দীর্ঘদিন চালিয়ে এসেছে তারা কিডনি ব্যবসা। কিছু ট্রান্সপ্লান্টেশন সফল হয়েছে। কেউ কেউ নতুন জীবন পেয়েছেন। কিন্তু যারা অভাবে পড়ে অর্থের লোভে কিডনি দিয়েছেন, তারা নানা জটিল রোগের শিকার হয়েছেন। আর সেসব রোগীর মাধ্যমেই জানা গেছে অমানবিক ও ভয়াবহ এ ব্যবসার কথা। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে, দেশে বড় ও নামি হাসপাতাল ছাড়া কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের ব্যবস্থা নেই। তাহলে বড় হাসপাতাল ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সহযোগিতা ছাড়াই কি এ ব্যবসা চলেছে এতদিন? তা চলতে পারে না। পুলিশের হাতে আটক কিডনি ব্যবসায়ীও বলেছেন নামি হাসপাতাল ও ডাক্তারদের জড়িত থাকার কথা। একজন কিডনিদাতা কিডনি গ্রহীতার নিকটাত্মীয় কি-না তা ডাক্তারদের না জানা থাকার কথা নয়। কাগজপত্র চাইলে এমনকি পরিস্থিতি বিচার করলেও তা বোঝার কথা। ডাক্তাররা যদি পরিচয় যাচাই না করে, পরিস্থিতি না বুঝে কিডনি স্থানান্তর করে থাকেন তবে বুঝতে হবে, তারা ভীষণ অসচেতনামূলক কাজ করেছেন। আর যদি জেনেশুনে করে থাকেন তবে সুস্পষ্টভাবে আইন লঙ্ঘন করেছেন। দুটিই দণ্ডনীয় অপরাধ। কিছু কিডনি ব্যবসায়ী নিজেদের উদ্যোগে ডাক্তার ও হাসপাতালের সহায়তা ছাড়া এমন একটি সংগঠিত অপরাধ চালিয়ে যেতে পারল_ তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এক্ষেত্রে হাসপাতাল ও ডাক্তারদের যথেষ্ট দায় আছে। যদিও এ সংক্রান্ত খবরে হাসপাতালগুলো যথারীতি দায় এড়িয়ে গিয়েছে। নাগরিকরা মনে করেন, সমাজে অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তি না হলে সে সমাজ অবিচারের দায়ে অভিযুক্ত হয়। অবৈধ কিডনি ব্যবসার সঙ্গে যদি কোনো হাসপাতাল ও ডাক্তারের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে তবে তার সঠিক তদন্ত হওয়া দরকার। যদি কেউ অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকেন তার উপযুক্ত শাস্তিও নিশ্চিত হওয়া দরকার। মানুষের দুর্বলতাকে জিম্মি করে এতদিন ধরে চলে আসা অমানবিক এ ব্যবসাই বলে দিচ্ছে, এ দেশের হাসপাতালগুলোকে বিশেষ তদারকির অধীনে আনা উচিত।
No comments