সময়ের চাদর থামিয়ে দেবে ঘড়ি?

খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হলেও একটা ঘটনাকে সম্পূর্ণ আড়াল করার কৌশল উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই কৌশল ব্যবহার করে ঘটনাকে সনাক্ত অযোগ্য করা সম্ভব হবে। গত বুধবার পেন্টাগনের পৃষ্ঠপোষকতায় এক দল পদার্থ বিজ্ঞানীরা এই দাবি করেছেন।

বিজ্ঞান সাময়িকী ন্যাচারে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা বলছেন, পরীক্ষাগারে উদ্ভাবিত এই বিশেষ কৌশল আলোর প্রবাহকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত করবে যে, সেকেন্ডের একটি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশের জন্য একটি ঘটনাকে অদৃশ্য করে দেওয়া যাবে।

এই প্রতিবেদনে পরবর্তী প্রজন্মের একটি বিশেষ ছদ্মবেশ কৌশল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা এমন এক ধরনের পোশাক বা আবরণ যা নির্দিষ্ট রংকে মানুষের দৃষ্টির গোচরের বাইরে রাখতে সক্ষম হবে।

গবেষক দলের প্রধান নিউইয়র্কে করনেল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মোটি ফ্রিডম্যান এ ব্যাপারে বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষার ফলাফল স্থান-কালে সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কৌশল উদ্ভাবনের পথে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নির্দেশ করে।’

বিভিন্ন গতিতে আলোক কণার কম্পনহারের ভিন্নতার চরিত্রের ভিত্তিতে এই যুগান্তকারী পরীক্ষাটি করা হয়েছে।

এই তথাকথিত স্থান-কাল সময়চাদর উদ্ভাবন কৌশলটি হলো- একটি ফাইবার অপটিকস ক্যাবলের ভেতর রক্ষিত একটি বিশেষ লেন্সের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত করা হয় যার ফলে দুটি আলাদা কম্পন হার নিয়ে নীল ও লালচে বর্ণের দুটি আলাদা আলোক রশ্মি বের হয়ে যায়। এখানে স্বাভাবিকভাবেই লালচে আলোর চেয়ে নীল আলোর গতি বেশি থাকে।

গতির ক্ষুদ্র পার্থক্যের এই দুই বর্ণের আলোক রশ্মির সামনে একটি স্বচ্ছ বাধা রেখে এদের আরও উদ্দীপিত করা হয়।

ফলাফল যা দাঁড়ায় তা হলো, অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় দুই বর্ণের আলাদা গতির দুই আলোক রশ্মি ভ্রমণকালে সময়ের পার্থক্য হয়। তবে এই পার্থক্য খুবই কম- এক সেকেন্ডর ১০ লাখ ভাগের মাত্র ৫০ ভাগ বা ৫০ পিকো সেকেন্ড।

কিন্তু একটি সিস্টেমের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত আলো থেকে আলাদা কম্পনহারের আলোকে লেজারের (এক বর্ণের আলো) একটি পালসের মধ্যে একীভূত করার জন্য এই সময়টুকুই যথেষ্ট।

এর পর লাল এবং নীল আলোক রশ্মি দু’টিকে আগের ঠিক উল্টো সিস্টেমে নেওয়া হয়। এরা আরেকটি বাধার মধ্য দিয়ে যায় এবং আগের লেন্সের বিপরীত বৈশিষ্ট্যের লেন্সের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত করার ফলে দুটো মিলে আবার সবুজ আলোতে রূপান্তরিত হয়।

এখন এই ৪০ পিকোসেকেন্ডের জন্য লেজারের যে প্রবাহ হয় তা মূল ফোটনের প্রবাহের অংশ নয়। এ কারণে এই সময়টার মধ্যে সংঘটিত ঘটনা সনাক্ত করা সম্ভব হবে না।

এর ব্যাখ্যায় নিউইয়র্কের রচেস্টার ইউনিভার্সিটির রবার্ট বয়েড এবং ঝিমিন শি এই পরীক্ষণকে একটি ব্যস্ত রাস্তায় লেভেল ক্রসিংয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

তারা বলেন, যখন ট্রেন আসে তখন অন্য সব গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। আর এ কারণে গাড়ি চলাচলে নির্দিষ্ট সমেয়র জন্য একটা
শূন্যতা তৈরি হয়।

ট্রেন চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়িগুলো আবার চলতে শুরু করে পরবর্তী সিগনাল না পড়া পর্যন্ত। পর্যবেক্ষকরা একে কিন্তু খুব স্বাভাবিক মনে করে, দেখে মনে হয় যেনো ক্রসিংয়ে একটি ট্রেন পেরিয়ে গেছে তার কোনও প্রমাণই নেই।

এই বিষয়টিও ঠিক সেরকম।

No comments

Powered by Blogger.