কিডনি প্রতিস্থাপনে বছরে বিদেশে চলে যায় ৫০০ কোটি টাকা by হামিম উল কবির
দেশে
৮ লাখ মানুষের কিডনি বিকল। প্রতি বছর নতুন করে ৩০ হাজার মানুষের কিডনি
বিকল হয়। প্রয়োজনীয় এ অঙ্গটি বিকল হলে সুস্থ থাকার জন্য কিডনি প্রতিস্থাপন
অথবা ডায়ালাইসিস অত্যাবশ্যক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, কিডনি প্রতিস্থাপন
অথবা ডায়ালাইসিস কোনোটাই সহজ ও সুলভ না। ফলে বাংলাদেশে বছরে ৪০ হাজার
মানুষের মৃত্যু ঘটে। তারা বলছেন, এ দেশে কিডনি চিকিৎসা ও প্রতিস্থাপনের
জন্য অভিজ্ঞ সার্জন থাকলেও আইনি জটিলতায় এত দিন খুবই সীমিত সংখ্যক
প্রতিস্থাপন হয়েছে। এ সুযোগে বিদেশী হাসপাতালগুলোর এজেন্টরা বাংলাদেশ থেকে
রোগী নিয়ে গেছে অথবা অনেক রোগী স্বেচ্ছায় চলে গেছেন বিদেশে। বেশির ভাগ রোগী
যান পাশের দেশে। এ বাবদ এ দেশ থেকে বছরে ৫০০ কোটি টাকার মূল্যমানের
বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, বাংলাদেশে উন্নতমানের
চিকিৎসার ব্যবস্থা হলে খরচ ৫০০ কোটি টাকা থেকে ১০০ কোটি টাকায় নেমে আসতে
পারত। বিশিষ্ট কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: হারুন অর রশীদ বলেন, বাংলাদেশে
কিডনি সংক্রান্ত একটি আইন হয়েছে। এর আগে আইনি জটিলতায় আমাদের সামর্থ্য থাকা
সত্তে¡ও আমরা কিডনি প্রতিস্থাপনে পিছিয়ে ছিলাম। এখন হয়তো এ সমস্যা কেটে
যাবে। এখানেও কিডনি প্রতিস্থাপন বাড়বে।
তিনি বলেন, উন্নত দেশে ৯০ শতাংশের
বেশি কিডনি প্রতিস্থাপিত হয় মৃত ব্যক্তির দেহ থেকে নিয়ে। নেদারল্যান্ডসের
(হল্যান্ড) আইন অনুসারে মৃত ব্যক্তি রাষ্ট্রের সম্পদ। এমনকি সৌদি আরব ও
ইরানের মতো দেশগুলোতে মৃত ব্যক্তির দেহ থেকে কিডনি নিয়ে প্রতিস্থাপন করে
মানুষকে বাঁচানো হয়। আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়লে কিডনি দান
বাড়বে। এটা হলে কিডনি বিকল রোগীরা বেঁচে থাকতে পারবেন। কিডনি বিশেষজ্ঞ
অধ্যাপক ডা: এম এ সামাদ বলেন, মেডিক্যাল ট্যুরিজম খাতে প্রতি বছর বাংলাদেশ
থেকে অনেক অর্থ চলে যাচ্ছে। এর মধ্যে ৫০০ কোটি টাকার বেশি চলে যাচ্ছে কিডনি
চিকিৎসা ও প্রতিস্থাপনে। মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন করা হয়েছিল
১৯৯৯ সালে। সে আইনে অল্প কয়েকজন নিকটজন ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে কিডনি নেয়া
যেত না। আইনটি সংশোধন করে নতুন একটি আইন হয়েছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে
কিডনি প্রতিস্থাপন বাড়বে। নতুন আইনে পুত্র, কন্যা, স্বামী-স্ত্রী,
পিতা-মাতা, ভাই-বোন এবং রক্ত সম্পর্কিত আপন চাচা, ফুফু, মামা, খালা ও তাদের
স্ত্রী বা স্বামী, চাচাতো ভাই-বোন, ফুফাতো ভাই-বেন, মামাতো ভাই-বোন,
খালাতো ভাই-বোন এবং তাদের স্ত্রী বা স্বামী এবং সন্তানাদি কিডনি দান করতে
পারবেন। এর বাইরে ব্রেইন ডেথ (জীবিত কিন্তু মস্তিষ্ক কাজ করছে না এমন)
ঘোষিত ব্যক্তির দেহ থেকে তার আইনানুগ উত্তরাধিকারীদের ইচ্ছানুসারে অথবা ২৪
ঘণ্টার মধ্যে কোনো মৃত ব্যক্তির দেহ কেউ দাবি না করলে তার দেহ থেকে
প্রয়োজনীয় অঙ্গ নেয়া যাবে। বাংলাদেশ থেকে সাধারণত ভারত, থাইল্যান্ড,
সিঙ্গাপুর এমনকি পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা গিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করে আসেন
রোগীরা। এ বাবদ প্রতিটি প্রতিস্থাপনের পেছনে ১০ থেকে ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হয়।
ক্ষেত্রবিশেষে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য দুই কোটি টাকাও ব্যয় হয়
যুক্তরাষ্ট্র অথবা ব্রিটেন গেলে।
কিন্তু এর বিপরীতে কেবল বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কিডনি প্রতিস্থাপনে ব্যয় হয় মাত্র দেড় লাখ
টাকা। এ কথা জানিয়েছেন মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা: কামরুল
হাসান খান। কিছু বেসরকারি হাসপাতালও কিডনি প্রতিস্থাপন করে থাকে। সেখানে
ব্যয় হয় আড়াই লাখ থেকে চার লাখ টাকা। প্রতিস্থাপন করতে না পারলে প্রতি
সপ্তাহে কিডনি ডায়ালাইসিস করেও বেঁচে থাকা যায়। কিন্তু বাংলাদেশে
ডায়ালাইসিসও সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নেই। বেঁচে থাকতে হলে সপ্তাহে
তিনটি ডায়ালাইসিস করতেই হয়। একটি ডায়ালাইসিসে খরচ হয়ে থাকে কমপক্ষে প্রায়
চার হাজার টাকা। তবে অল্প খরচে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, পুরনো
সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটে ডায়ালাইসিস করা যায়।
নগরীতে সবচেয়ে কম মূল্যে ডায়ালাইসিস করছে মিরপুর রোডের গণস্বাস্থ্য
ডায়ালাইসিস সেন্টার। এখানে ১০০টি ডায়ালাইসিস মেশিন বসানো হয়েছে। এ
ডায়ালাইসিস সেন্টারটি গত বছর মার্চে শুরু হয়। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের
ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানান, এখান থেকে অতি দরিদ্র মানুষ বিনা
পয়সায় ডায়ালাইসিস করতে পারছেন। দরিদ্র মানুষ এক হাজার এক শ’ টাকায়
ডায়ালাইসিস করতে পারেন। এখানে উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মানুষ তিন হাজার টাকায়
(অথবা তাদের ইচ্ছা মতো এর বেশিও দিতে পারেন, তা দান হিসেবে গ্রহণ করা হবে)
ডায়ালাইসিস করতে পারেন। তিনি বলেন, আমরা সামনের দিনগুলোতে এখানে কিডনি
প্রতিস্থাপন করব সুলভমূল্যে। অতি দরিদ্রদের বিনামূল্যে প্রতিস্থাপন করা
হবে।
No comments