গণতন্ত্র কি মৃতপ্রায়?
যুক্তরাষ্ট্র
ও বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র কি মুমূর্ষ অবস্থা পার করছে? কেন কিংবা কেন নয়?
যদি সত্যিই বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের আবেদনে ভাটা পড়ে, তাহলে এ নিয়ে কী করা
যেতে পারে? বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট ফর
টেকনোলজি’র ক্যাম্পাসে সোমবার রাতে আয়োজিত এক ফোরাম আলোচনার
কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ঠিক এই প্রশ্নগুলো। এই আলোচনায় অংশ নিয়েছেন আমেরিকার
প্রথিতযশা কিছু শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিক। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে গণতান্ত্রিক
শাসনব্যবস্থার ভগ্নদশা নিয়ে আলাপ করেছেন তারা। গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে
রেখেছেন কিছু সুপারিশও। স্টাটা সেন্টারে আয়োজিত এই পাবলিক ফোরামে অংশ নিতে
হাজির হয়েছিলেন তিন শতাধিক শ্রোতা।
এমআইটি’র অর্থনীতির অধ্যাপক ও ‘হোয়াই ন্যাশন ফেইল’ নামে বিশ্বজুড়ে আলোচিত বইটির সহ-লেখক ড্যারন এইসমোগলু তার বক্তব্য শুরুই করেন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে।
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র কি এখন মুমূর্ষ দশা পার করছে? আসলে, আমি এই প্রশ্নের উত্তর জানি না। তবে এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, গণতন্ত্র এখন এক কঠিন সময় পার করছে।’
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক তত্ত্বের প্রভাষক ও ‘দ্য পিপল ভার্সাস ডেমোক্রেসি: হোয়াই আওয়ার ফ্রিডম ইজ ইন ডেঞ্জার অ্যান্ড হাউ টু সেইভ ইট’ বইয়ের লেখক ইয়াচা মৌঙ্ক বলেন, ‘উদারপন্থী গণতন্ত্রকে স্থিতিশীল রাখতে হলে যেসব নিয়মনীতি প্রয়োজন হয়, ঠিক তার ওপরেই আক্রমণ করা হচ্ছে।’
প্যানেল আলোচকরা এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন যে, গণতন্ত্রের এখন যে ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা, তা শুধু যুক্তরাষ্ট্রে নয়, বরং বিশ্বব্যাপী প্রতিভাত হচ্ছে। হাঙ্গেরি, কেনিয়া, পোল্যান্ড, রাশিয়া, তুরস্ক ও ভেনেজুয়েলা সহ বিভিন্ন দেশে গণতান্ত্রিক নিয়মনীতি ও অধিকার এখন মারাত্মকভাবে বিপন্ন। এছাড়া খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই সরকারী নিয়মনীতি ও ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে তিক্ত বিতর্ক চলছে।
ইউনিভিশন টিভি চ্যানেলে কর্মরত সাংবাদিক মারিয়া রামিরেজের কাজের ক্ষেত্র হলো মার্কিন রাজনীতি। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে অকার্যকর প্রমাণ করতে রাশিয়া যেসব তৎপরতা চালিয়েছে, সেই ব্যাপারে অনেক বিস্তারিত তথ্য এখন সহজেই পাওয়া যায়। এই বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি সমাজের যেসব দুর্বলতাকে বহিঃশক্তি পুঁজি করতে চায়, তা মানুষকে বুঝতে হবে।
অধ্যাপক এইসমোগলু জোর দিয়ে বলেন, অব্যাহত নাগরিক সংহতি ব্যতিত কোনো কিছু দিয়েই গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব নয়। তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, মার্কিন সংবিধানে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষমতা বলয়ের মধ্যে যেসব ভারসাম্যের (চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স) ব্যবস্থা সংযোজিত রয়েছে, সেসবও বাস্তবে অতটা শক্তিশালী নয়। তিনি বলেন, ‘ওই ব্যবস্থা অত শক্তিশালী নয়। গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখা ওই ব্যবস্থাসমূহ সংযোজনের উদ্দেশ্যও ছিল না। গণতন্ত্রকে একমাত্র সমাজই রক্ষা করতে পারে।’
কারণ: বৈষম্য ও আরও অনেক কিছু
স্টার ফোরাম শীর্ষক এই আলোচনা অনুষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে আয়োজন করে আসছে এমআইটি। এই অনুষ্ঠান পৃষ্ঠপোষকতা করে বিশ্ববিদ্যালয়টির আন্তর্জাতিক অধ্যয়ন কেন্দ্র। আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইস্যুতে এমন বহু আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করে এই কেন্দ্র।
এমআইটির মানবিক, শিল্প ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক মেলিসা নোবলস এই অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি বলেন, গণতন্ত্রের অবস্থা এখন কী, এই প্রশ্ন এখন যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই, বিশ্বব্যাপী অনেককেই ভাবাচ্ছে।
অধ্যাপক এইসমগলু বলেন, গণতন্ত্রের বেহাল দশার নেপথ্যে রয়েছে একাধিক ফ্যাক্টর। এর মধ্যে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদী আয়-বৈষম্য, বিশ্বব্যাপী কর্তৃত্বপরায়ণ নেতাদের হাতে সংবাদমাধ্যমের অপব্যবহার এবং উৎপাদনমুখী খাত ও শ্রমিক ইউনিয়নের পড়তি। শ্রমিক ইউনিয়নের আদর্শগত অবস্থান এখানে বড় প্রভাব ফেলেনি। কিন্তু এসব ইউনিয়ন একসময় নাগরিকদেরকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিল। কিন্তু এখন নাগরিক সম্পৃক্ততা কমছে।
অর্থনৈতিক বৈষম্য ও এর ফলে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর মানুষের যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়, তা এখানে বড় ফ্যাক্টর। তবে এইসমগলুর ভাষায়, গণতন্ত্রের এই পড়তি দশার জন্য শুধু অর্থনৈতিক দুর্দশাকে দায়ী করলে ভুল হবে। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্পর্ক নিয়ে অনেক লেখালেখি করা এই অধ্যাপক আরও বলেন, এই মুহূর্তে খারাপ সময় পার করলেও, গণতন্ত্রের পতন ঘটানো অত সহজ নয়। কারণ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজের অধিকার ও স্বাধীনতা নিয়ে মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন।
প্রভাষক মৌঙ্ক বলেন, গণতন্ত্রের ক্ষয়িষ্ণুতার সঙ্গে সঙ্গে, গোটা একটি প্রজন্মের মধ্যে কর্তৃত্বপরায়ণ ও সামরিক শাসন সহ্য করার প্রবণতা দেখা গেছে। যেমন, বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে যে, ত্রিশ ও চল্লিশের দশকের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষই মনে করতেন, গণতন্ত্র অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আশির দশক ও তার পরে জন্ম নেওয়া মানুষের মধ্যে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ এই ধারণা পোষণ করেন। তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিককালেও রাজনীতি বিজ্ঞানীরা হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ডকে গণতান্ত্রিক সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করতেন। এসব দেশের নাগরিকদের আয় বেড়েছে। একাধিকবার শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর ঘটেছে। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা ভেবেছিলেন, এসব দেশ স্থিতিশীলতার একটি মাত্রায় পৌঁছেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে, এসব দেশে জনগণের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে।
মৌঙ্ক আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার রেকর্ড আশ্চর্য্যজনক। কিন্তু অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। এক্ষেত্রে তিনি রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত নর্থ ক্যারোলাইনা আইনসভার নেওয়া পদক্ষেপের কথা উদাহরণ হিসেবে টেনে আনেন। ২০১৬ সালে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী রয় কুপার রাজ্যের গভর্নর নির্বাচিত হলেও, রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত আইনসভা তার কিছু ক্ষমতা রদ করে দেয়।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের ইতিহাস বেশ পোক্ত। কিন্তু আমরা এখনও জানি না, বহুজাতিক দেশে দীর্ঘমেয়াদে গণতন্ত্র কিভাবে পরিচালিত হবে এবং সেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। কারণ, এ ধরণের গণতন্ত্র তুলনামূলকভাবে কম সময় ধরে স্থায়ী হয়েছিল।
গণতান্ত্রিক মানদ- বজায় রাখা
দর্শকদের প্রশ্নের জবাবে আলোচকরা বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রকে পুনরায় সুদৃঢ় করতে কিছু সুপারিশ রাখেন। সাংবাদিক রেমিরেজ যেমন বলছিলেন, আমার বার্তা হলো, সাংবাদিকদের সমর্থন দিন। তার মতে, ভালো সাংবাদিকতা একটি জনসেবা, যা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি জরুরী।
আরেক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক এইসমগলু বলেন, আমেরিকায় নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণে কারচুপি কমানো, মার্কিন রাজনীতিতে অর্থের প্রভাব কমানো ও মার্কিন সরকারী চাকুরিতে রাজনৈতিক প্রভাব হ্রাস করা গেলে গণতন্ত্রের জন্যই মঙ্গলজনক হবে। তবে তিনি তারপরও মনে করেন, সামাজিক সংহতিই হলো গণতন্ত্রের আসল সুরক্ষাকবচ।
(এমআইটি নিউজ থেকে অনূদিত।)
এমআইটি’র অর্থনীতির অধ্যাপক ও ‘হোয়াই ন্যাশন ফেইল’ নামে বিশ্বজুড়ে আলোচিত বইটির সহ-লেখক ড্যারন এইসমোগলু তার বক্তব্য শুরুই করেন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে।
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র কি এখন মুমূর্ষ দশা পার করছে? আসলে, আমি এই প্রশ্নের উত্তর জানি না। তবে এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, গণতন্ত্র এখন এক কঠিন সময় পার করছে।’
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক তত্ত্বের প্রভাষক ও ‘দ্য পিপল ভার্সাস ডেমোক্রেসি: হোয়াই আওয়ার ফ্রিডম ইজ ইন ডেঞ্জার অ্যান্ড হাউ টু সেইভ ইট’ বইয়ের লেখক ইয়াচা মৌঙ্ক বলেন, ‘উদারপন্থী গণতন্ত্রকে স্থিতিশীল রাখতে হলে যেসব নিয়মনীতি প্রয়োজন হয়, ঠিক তার ওপরেই আক্রমণ করা হচ্ছে।’
প্যানেল আলোচকরা এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন যে, গণতন্ত্রের এখন যে ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা, তা শুধু যুক্তরাষ্ট্রে নয়, বরং বিশ্বব্যাপী প্রতিভাত হচ্ছে। হাঙ্গেরি, কেনিয়া, পোল্যান্ড, রাশিয়া, তুরস্ক ও ভেনেজুয়েলা সহ বিভিন্ন দেশে গণতান্ত্রিক নিয়মনীতি ও অধিকার এখন মারাত্মকভাবে বিপন্ন। এছাড়া খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই সরকারী নিয়মনীতি ও ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে তিক্ত বিতর্ক চলছে।
ইউনিভিশন টিভি চ্যানেলে কর্মরত সাংবাদিক মারিয়া রামিরেজের কাজের ক্ষেত্র হলো মার্কিন রাজনীতি। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে অকার্যকর প্রমাণ করতে রাশিয়া যেসব তৎপরতা চালিয়েছে, সেই ব্যাপারে অনেক বিস্তারিত তথ্য এখন সহজেই পাওয়া যায়। এই বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি সমাজের যেসব দুর্বলতাকে বহিঃশক্তি পুঁজি করতে চায়, তা মানুষকে বুঝতে হবে।
অধ্যাপক এইসমোগলু জোর দিয়ে বলেন, অব্যাহত নাগরিক সংহতি ব্যতিত কোনো কিছু দিয়েই গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব নয়। তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, মার্কিন সংবিধানে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষমতা বলয়ের মধ্যে যেসব ভারসাম্যের (চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স) ব্যবস্থা সংযোজিত রয়েছে, সেসবও বাস্তবে অতটা শক্তিশালী নয়। তিনি বলেন, ‘ওই ব্যবস্থা অত শক্তিশালী নয়। গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখা ওই ব্যবস্থাসমূহ সংযোজনের উদ্দেশ্যও ছিল না। গণতন্ত্রকে একমাত্র সমাজই রক্ষা করতে পারে।’
কারণ: বৈষম্য ও আরও অনেক কিছু
স্টার ফোরাম শীর্ষক এই আলোচনা অনুষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে আয়োজন করে আসছে এমআইটি। এই অনুষ্ঠান পৃষ্ঠপোষকতা করে বিশ্ববিদ্যালয়টির আন্তর্জাতিক অধ্যয়ন কেন্দ্র। আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইস্যুতে এমন বহু আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করে এই কেন্দ্র।
এমআইটির মানবিক, শিল্প ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক মেলিসা নোবলস এই অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি বলেন, গণতন্ত্রের অবস্থা এখন কী, এই প্রশ্ন এখন যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই, বিশ্বব্যাপী অনেককেই ভাবাচ্ছে।
অধ্যাপক এইসমগলু বলেন, গণতন্ত্রের বেহাল দশার নেপথ্যে রয়েছে একাধিক ফ্যাক্টর। এর মধ্যে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদী আয়-বৈষম্য, বিশ্বব্যাপী কর্তৃত্বপরায়ণ নেতাদের হাতে সংবাদমাধ্যমের অপব্যবহার এবং উৎপাদনমুখী খাত ও শ্রমিক ইউনিয়নের পড়তি। শ্রমিক ইউনিয়নের আদর্শগত অবস্থান এখানে বড় প্রভাব ফেলেনি। কিন্তু এসব ইউনিয়ন একসময় নাগরিকদেরকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিল। কিন্তু এখন নাগরিক সম্পৃক্ততা কমছে।
অর্থনৈতিক বৈষম্য ও এর ফলে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর মানুষের যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়, তা এখানে বড় ফ্যাক্টর। তবে এইসমগলুর ভাষায়, গণতন্ত্রের এই পড়তি দশার জন্য শুধু অর্থনৈতিক দুর্দশাকে দায়ী করলে ভুল হবে। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্পর্ক নিয়ে অনেক লেখালেখি করা এই অধ্যাপক আরও বলেন, এই মুহূর্তে খারাপ সময় পার করলেও, গণতন্ত্রের পতন ঘটানো অত সহজ নয়। কারণ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজের অধিকার ও স্বাধীনতা নিয়ে মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন।
প্রভাষক মৌঙ্ক বলেন, গণতন্ত্রের ক্ষয়িষ্ণুতার সঙ্গে সঙ্গে, গোটা একটি প্রজন্মের মধ্যে কর্তৃত্বপরায়ণ ও সামরিক শাসন সহ্য করার প্রবণতা দেখা গেছে। যেমন, বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে যে, ত্রিশ ও চল্লিশের দশকের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষই মনে করতেন, গণতন্ত্র অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আশির দশক ও তার পরে জন্ম নেওয়া মানুষের মধ্যে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ এই ধারণা পোষণ করেন। তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিককালেও রাজনীতি বিজ্ঞানীরা হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ডকে গণতান্ত্রিক সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করতেন। এসব দেশের নাগরিকদের আয় বেড়েছে। একাধিকবার শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর ঘটেছে। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা ভেবেছিলেন, এসব দেশ স্থিতিশীলতার একটি মাত্রায় পৌঁছেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে, এসব দেশে জনগণের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে।
মৌঙ্ক আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার রেকর্ড আশ্চর্য্যজনক। কিন্তু অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। এক্ষেত্রে তিনি রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত নর্থ ক্যারোলাইনা আইনসভার নেওয়া পদক্ষেপের কথা উদাহরণ হিসেবে টেনে আনেন। ২০১৬ সালে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী রয় কুপার রাজ্যের গভর্নর নির্বাচিত হলেও, রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত আইনসভা তার কিছু ক্ষমতা রদ করে দেয়।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের ইতিহাস বেশ পোক্ত। কিন্তু আমরা এখনও জানি না, বহুজাতিক দেশে দীর্ঘমেয়াদে গণতন্ত্র কিভাবে পরিচালিত হবে এবং সেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। কারণ, এ ধরণের গণতন্ত্র তুলনামূলকভাবে কম সময় ধরে স্থায়ী হয়েছিল।
গণতান্ত্রিক মানদ- বজায় রাখা
দর্শকদের প্রশ্নের জবাবে আলোচকরা বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রকে পুনরায় সুদৃঢ় করতে কিছু সুপারিশ রাখেন। সাংবাদিক রেমিরেজ যেমন বলছিলেন, আমার বার্তা হলো, সাংবাদিকদের সমর্থন দিন। তার মতে, ভালো সাংবাদিকতা একটি জনসেবা, যা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি জরুরী।
আরেক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক এইসমগলু বলেন, আমেরিকায় নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণে কারচুপি কমানো, মার্কিন রাজনীতিতে অর্থের প্রভাব কমানো ও মার্কিন সরকারী চাকুরিতে রাজনৈতিক প্রভাব হ্রাস করা গেলে গণতন্ত্রের জন্যই মঙ্গলজনক হবে। তবে তিনি তারপরও মনে করেন, সামাজিক সংহতিই হলো গণতন্ত্রের আসল সুরক্ষাকবচ।
(এমআইটি নিউজ থেকে অনূদিত।)
No comments