সংকটটা খুব গভীর by মো. মইনুল ইসলাম
সাম্প্রতিক
এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। একে
বেশকিছু পণ্ডিত ব্যক্তি শিক্ষার সর্বনাশ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আমার মতে যা
শিক্ষার সর্বনাশ, তা দেশেরও সর্বনাশ। যা হোক, শিক্ষামন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত
করেছিলেন যে, এবার এমন কড়া ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে যে প্রশ্ন ফাঁসের আশঙ্কা
মোটেই নেই। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সব কটি পরীক্ষারই
প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। গত ৯ বছর ধরেই বিচ্ছিন্নভাবে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে
বলে অভিযোগ আছে। কিন্তু এবার ব্যাপারটি মহামারী আকার ধারণ করেছে। এ জন্য
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা বোর্ডগুলোর অদক্ষতা এবং ব্যর্থতাকেই বহুলাংশে
দায়ী করতে হয়। কারণ এ ধরনের পাবলিক পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের দায়িত্ব
তাদেরই। প্রশ্ন ফাঁস কেন ঘটে এবং ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি কীভাবে রোধ করা
যায়- এ বিষয়গুলো দেশবাসীকে তাদের জানানো উচিত। অন্তত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ
বিষয় জাতীয় সংসদে আলাপ-আলোচনা হবে এবং শিক্ষামন্ত্রী এ ব্যাপারে একটি
বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবেন, এটা আমাদের খুবই কাম্য ছিল। বিভিন্ন গণমাধ্যমের
কল্যাণে দেখা গেল, বেশকিছু অসাধু শিক্ষক এবং কিছুসংখ্যক প্রতারক এই মহা
অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। দেশে মহামারী আকারে বিরাজমান দুর্নীতির সঙ্গে
পরীক্ষায় জালিয়াতির মতো দুর্নীতিও ভালোভাবেই যুক্ত হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত
হয়ে পড়েছে একদল শিক্ষক, যারা মানুষ গড়ার কারিগর বলে সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত।
বাস্তবে তারা মানুষ ধ্বংসের কারিগর হিসেবে জনসমক্ষে আবির্ভূত হয়েছে। একদিকে
তারা শ্রেণীকক্ষে শিক্ষা দিচ্ছে না, অন্যদিকে পরীক্ষার ব্যাপারে তরুণ
বয়সের ছাত্র-ছাত্রীদের অসৎ-অন্যায় কর্মে দীক্ষা দিচ্ছে। কিছুদিন আগে দ্য
ডেইলি স্টারে (১৪.০২.১৮) দেখা গেল, পরীক্ষা শেষে চট্টগ্রাম শহরের একটি
কেন্দ্রে ফটোসাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে একদল ছাত্রী লজ্জায় মুখ ঢেকে
নিচ্ছে। এ লজ্জা দেশের।
এর দায়ভার শিক্ষা ও পরীক্ষার সঙ্গে জড়িত সবাইকে
নিতে হবে। পরীক্ষার ক্ষেত্রে এ ধরনের দুর্নীতির ফলে অসংখ্য সৎ, পরিশ্রমী
এবং মেধাবী ছাত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের পাবলিক পরীক্ষা ব্যবস্থাটি
প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অভিভাবকরা হতাশ হয়েছে এবং দুঃখ পেয়েছে। এমনই দেশের
অসংখ্য অভিভাবকের হতাশার অভিব্যক্তি প্রকাশ পেল গত মাসের ১৪ তারিখে বিবিসির
বাংলার প্রবাহ অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়ার এক মহিলা অভিভাবকের কণ্ঠে। দেশব্যাপী
দুর্নীতির যে বাড়বাড়ন্ত চলছে, তা শিক্ষা ক্ষেত্রেও এত বিপুলভাবে বিস্তার
লাভ করবে তা আমাদের প্রত্যাশিত ছিল না। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের আমলে
অর্জিত উন্নয়ন নিয়ে আমরা যখন গর্ববোধ করি, তখন এই প্রশ্ন ফাঁসের মহামারী
আমাদের দারুণভাবে হতাশ করে। শিক্ষা ক্ষেত্রে যদি সত্য এবং সততা পরিত্যক্ত
এবং বর্জিত হয়, তাহলে শিক্ষার মৌলিক উদ্দেশ্যটিই নষ্ট হয়। কারণ শিক্ষার
উদ্দেশ্যই হল সৎ, শিক্ষিত ও মেধাবী মানুষ তৈরি করা। ফাঁসকৃত প্রশ্ন এবং
নকলবাজির মাধ্যমে পাস করা একদল নকল এবং তস্কর মানুষ দেশের সম্পদ না হয়ে
বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু এ প্রশ্ন ফাঁস এবং পরীক্ষায় দুর্নীতি রোধ করা কি
একটি সরকারের পক্ষে খুবই দুরূহ কাজ? সরকার জঙ্গিদের যে কঠিন হাতে দমন
করেছে, একই কঠোরতার সঙ্গে প্রশ্ন ফাঁসসহ পাবলিক পরীক্ষার সর্বপ্রকার
দুর্নীতি দমন করতেও সক্ষম বলে আমাদের বিশ্বাস। এ ব্যাপারে পাবলিক সার্ভিস
কমিশন (পিএসসি) যেভাবে পরীক্ষা নেয়, সেই প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করা যেতে পারে।
No comments