নাহিদ, মাহফুজ, এ কে খন্দকার : অতঃপর by এহসানুল কবির
সাম্প্রতিককালে
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের মন্ত্রণালয়ের কোনো অধিদফতরের
কর্মকর্তাদের অনৈতিক আচরণসংক্রান্ত প্রদত্ত তার একটি বক্তব্যে সারা দেশে
ছোটখাটো এক ঝড় বয়ে গেল। এতে বুঝতে হবে, এ জাতির মধ্যে কারণে-অকারণে অযথা
মন্তব্যকারী, সাবেক সংসদ সদস্য জনৈক অবসরপ্রাপ্ত মেজরের মতো লোকের সংখ্যা
বৃদ্ধি পাচ্ছে অথবা ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের আশঙ্কাকে সত্যে পরিণত করে
‘ফেসবুকের’ কারণে আমরা অচিরেই স্থূলদর্শী, বিবেচনাহীন, অবিবেচক এক জাতিতে
রূপান্তরিত হচ্ছি। সপ্তদশ শতকে জেন অস্টিন নামে খ্যাতি অর্জনকারী এক ইংরেজ
মহিলা ঔপন্যাসিক তার অমর এক গ্রন্থে লিখেছিলেন- ‘His education didn’t
make him a sensible person’. আমাদের অফিস-আদালতসহ সমাজের বিভিন্ন স্থানে
বিরাজমান অনেকেই উচ্চশিক্ষিত বটে। শত বছর পরও মনে হয় জেন অস্টিন যেন আমাদের
দেশের মানুষের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো লিখেছিলেন। অস্থির সমাজে রাজনৈতিক
হঠকারিতার সাথে যুগের ধনলিপ্সা যুক্ত হয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া লোকগুলোর
কাছে ন্যায়নীতি, মানবতা, ইনসাফের বাণী একেবারেই নিরর্থক। শুধু অভাব মোচনের
জন্য নয়, স্বভাবগতভাবেই তারা একেকজন হলমার্ক, ডেসটিনি, বেসিক ব্যাংক,
সোনালী ব্যাংক কেলেঙ্কারির খলনায়কদের মতো দানবে পরিণত হতে চান। কিছু লোকের
অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব যে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক
সার্বভৌমত্বকে অর্থহীন করে দিতে পারে তা পৃথিবীতে বিরল নয়। আজ বাংলাদেশে
রাজনীতির এই বেদনার্ত পরিবেশে জনগণের চোখে সীমাহীন হতাশার চিহ্ন ছাড়া কিছুই
পরিলক্ষিত হয় না। চার দিকে আতঙ্ক ও অবসাদ এতটা সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে যে,
ঘৃণা প্রকাশের প্রয়োজনীয় শক্তিটুকুও অবশিষ্ট নেই। এমন পরিস্থিতিতে সৃষ্টি
হয় ঈর্ষা, বিদ্বেষ, হিংসা, উন্নাসিকতা প্রভৃতি।
নাহিদের বক্তব্য নিয়ে
গুঞ্জন বর্তমান পরিস্থিতিরই প্রতিফলন। তিনি আমাদের sensible হতে বলেছেন।
আমরা জাতি হিসেবে আজ অসহায়। আমাদের গন্তব্য কোথায়? বেচারা নাহিদের
মিনিস্ট্রি থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পত্রিকায় প্রকাশিত বাক্যাংশটি
তার বক্তব্যের অসম্পূর্ণ রূপ, তার কথা ‘যথাযথভাবে প্রকাশিত হয়নি।’ এখানেও
সেই সেন্সের প্রবলেম। কেউ যখন কোনো সংবাদের মর্মার্থ বুঝতে অক্ষম হন, তখন
কী বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে তার একটি উদাহরণ রয়েছে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে ’৭২-এর মার্চে খুলনায় এক জনসভায়
বলেন : ভুট্টো সাহেব, দেখে যান পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশে কী করেছে?
পরের দিন বাসসের সংবাদ পরিবেশিত হয়েছিল- Mujib invited Bhutto to visit
Bangladesh। সেদিন যিনি এই মিটিং কভার করেছিলেন, তিনি এখন একটি বাংলা
পত্রিকার সম্পাদক। এ খবরটি নতুন স্বাধীন দেশে নবগঠিত সরকারের জন্য কতটা
বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। ইংরেজি পত্রিকার
সম্পাদক মাহফুজ আনাম একটি সত্য কথা বলায় কিছু দিন আগে তার জীবন শঙ্কার কবলে
নিপতিত হয়েছিল। লর্ড মেকলে, ই এম ফস্টার ও জন টেইলর এ দেশকে ‘মিথ্যুকে ভরা
দেশ’ বলে অভিহিত করেছেন। ‘কপট বিনয়ী, চালিয়াতি ও জালিয়াতিতে ভরা এই মাটিতে
মাহফুজ সত্য কথা বলে প্রশংসা কুড়াতে পারেননি, বরং তার প্রাণ হয়ে উঠেছিল
ওষ্ঠাগত। তিনি বলেছিলেন : এক-এগারোর পর বিশেষ মহল থেকে পরিবেশিত অনেক
সংবাদের যথার্থতা যাচাই করার কোনো সুযোগ আমাদের ছিল না। কথাটি শতভাগ সত্য।
কিন্তু কথাটি বলার সাথে সাথে সারা দেশে একটি দলের কর্মীবাহিনী ঘর ছেড়ে
বেরিয়ে পড়ল। কৃত্রিম ভক্তি প্রদর্শনের মহড়া শুরু হয়ে গেল। কার আগে কে যায়।
সারা দেশে তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা রুজু হতে থাকে। বেচারার ঘরের
বাইরে বেরোনোর মতো পথ রইল না। এমন পরিস্থিতির ব্যাখ্যায় শর্মিলা বসুর
সাম্প্রতিককালের একটি উদ্ধৃতি অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য। বাঙালিদের সম্পর্কে
দু’জন বিদগ্ধ ব্যক্তির অভিমতকে পাশাপাশি একত্রে খাড়া করে তিনি দেখিয়েছেন,
একজনের বক্তব্যের সাথে অন্যজনের বক্তব্যের কোনো অমিল নেই। এই ব্যক্তি
দু’জনের একজন আমেরিকান, অন্যজন দক্ষিণ এশীয় এক সামরিক কর্মকর্তা। তারা
অভিমত প্রকাশ করেছেন, জাতি হিসেবে বাঙালিরা সংস্কৃতিমনা। তারা শিল্পকলার
প্রতি আকৃষ্ট। কিন্তু তারা যখন কোনো কিছুর বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে হামলা
চালায়, তখন তারা কে অপরাধী-নিরপরাধী কোনো বাছ-বিচার করে না। মৌমাছির মতো
আক্রমণ করে বসে। মাহফুজ আনামকে চার দিক থেকে মৌমাছির মতো আক্রমণ করা শুরু
হলো। তিনি কয়েক শ’ মামলা মোকাবেলা করে টিকে রইলেন। বাঙালির চরিত্রে কালো
পিপীলিকার চতুরতা আছে; কিন্তু মানব সঙ্ঘ গুণ নেই। বিদেশীদের চোখেও এই বিষয়
ধরা পড়েছে। এ দেশে সত্য কথা বলা এখন বড় বিপদ। সত্য বলতে গিয়ে কণ্ঠরোধ হয়ে
আসে। নির্দ্বিধায়, নির্বিচারে অনেকে মিথ্যা বলে যায়। হয়তো এ কারণেই শহীদ
সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন বলতেন, আমাদের দেশের মানুষের প্রিয় দু’টি জিনিস
হলো- কোনো কারণ ছাড়াই মিথ্যা কথা বলা এবং চোখের পানি ফেলা। মুক্তিযুদ্ধের
ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এ কে খন্দকার এক রাতেই ‘রাজাকার’ হয়ে গেলেন এবং তাকেও
মৌমাছির ঝাঁকের মতো আক্রমণ করা হলো। তিনি ভেতরের কথার অর্থ বুঝতে না পেরে
বাইরে প্রকাশ করে ফেলেছিলেন- এ কারণে। খন্দকার সাহেবকে হয়তো প্রশ্ন করা
যাবে, তখনকার পাকিস্তানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে শেষের দিকে কী ছিল,
এটা কি জাতির জন্য আজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ? জিন্নাহর কাছে যখন পাকিস্তান নামক
পৃথক মুসলিম রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছিল, তখন তিনি এটাকে অসম্ভব বলে মন্তব্য
করেছিলেন। আমরা তাহলে কি পাকিস্তানিদের বলব, জিন্নাহকে ‘জাতির পিতা’র আসন
থেকে সরিয়ে ফেলতে? খন্দকার সাহেব যে কারণে মুক্তিযোদ্ধা থেকে একেবারে
‘রাজাকার’দের কাতারের কাছাকাছি এসে গেলেন, সে বিষয়টি তার পুস্তকে মুদ্রিত
হওয়ার আগে আরো তিন থেকে চারটি বইয়ে বিধৃত হয়েছিল। তিনি যে তথ্য দিয়ে বইটিকে
সমৃদ্ধ করেছেন তা তিনি তার পুস্তকের নামকরণেই বলেছেন, ’৭১-এর ভেতরে বাইরে।
আমাদের ইতিহাস তো শুধু ’৭১ সালেই সীমাবদ্ধ নয়। সুতরাং ’৭১-এর সব কিছু ঠেসে
দিয়ে একটি ইতিহাসসমৃদ্ধ পুস্তক রচনা করা থেকে আমাদের নিবৃত্ত থাকতে হবে।
৪৩ বছর পর বঙ্গবন্ধুর ভাষণের শেষাংশ সংযোজিত করার যৌক্তিকতা কী? একজন
বিদেশী লেখকের ভাষায় : তার রাজনীতির উত্থানের সময় থেকে স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু
হওয়া পর্যন্ত সবাই জানত এবং বুঝত (বরং ’৭৫-এ তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত-
নিবন্ধ লেখক) যে, তিনি স্বাধীনতার পক্ষেই কথা বলেছেন। এ কথাটি কি খন্দকার
সাহেবের বোধগম্য না হলে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন কিভাবে? একই লেখকের ভাষায়,
স্বাধীনতাযুদ্ধের বহু আগেই মুজিব ও ভাসানী পূর্ববঙ্গবাসীদের মনে সাফল্যের
সাথে এই বোধ সঞ্চারিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, তারা পশ্চিম পাকিস্তানিদের
আগ্রাসন ও অবিচারের শিকার। এর ফলে আন্দোলনরত বাঙালিরা সব সময় স্বাভাবিক এক
নৈতিক স্বস্তিতে থেকেছে যে, তারা নির্দোষ এবং যা করেছে তা ন্যায্য। এখানে
ইতিহাসের বড় একটি প্রশ্ন এসে হাজির হবে। বিচারপতি সিনহা তার রায়ে লিখেছেন,
‘কোনো বড় মাপের কাজ কোনো কালে একা কারো পক্ষে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।’
কথাটি সত্য। তবে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, কোনো মহৎ কাজের ধারণা
প্রথমে একজন, বড়জোর দু-একজনের মস্তিষ্ক থেকেই বেরিয়ে এসেছে। শত শত লোক
একসাথে প্রথমেই আওয়াজ তোলেনি।
দেশী-বিদেশী লেখকদের অভিমত : বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ও তার ইতিহাস অনুসন্ধানে দেখা যাবে, ওই মহান দ্ইু ব্যক্তির সারা জীবনের কর্মধারা একত্রে মিলেমিশে আমাদের জাতীয় জীবনের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল প্রোজ্জ্বল কালান্তরের সূচনা করেছে। ’৬০-এর দশকে রাজনীতিতে বামপন্থীদের দ্বারা সাময়িক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হলেও ’৬৫ সালের পরে শেখ মুজিব ছয় দফা ঘোষণা করলে স্বাধীনতার প্রশ্নটি ক্রমাগত সামনে এগিয়ে আসতে থাকে। এর পরে জিন্দাবাদ-মুর্দাবাদের মধ্যে আঁকাবাঁকা পথে রাজনীতি নিজস্ব গতিতে অবধারিত লক্ষ্যে পৌঁছে গেল। সৃষ্টি হলো বাংলাদেশ নামক নতুন রাষ্ট্রের। খুচরা কোনো উক্তি দিয়ে ইতিহাসের রায়কে খণ্ডন করা যায় না। কোনো আত্মকথা প্রামাণ্য ইতিহাস হিসেবে স্বীকৃত নয়। মওলানা ভাসানী মুজিবের মৃত্যুর পর জিয়া ও মশিউরকে বলেছিলেন মুজিবের বিরুদ্ধে কোনো কথা না বলতে। কথা রেখেছিলেন জিয়া ও মশিউর। সেই মহান নেতার আহ্বানে ইতিহাস গড়ার দায়িত্ব পড়েছিল তাদের ওপর। তারা মুজিবের বিরুদ্ধে কোনো বিরূপ মন্তব্য কখনো করেননি।
দেশী-বিদেশী লেখকদের অভিমত : বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ও তার ইতিহাস অনুসন্ধানে দেখা যাবে, ওই মহান দ্ইু ব্যক্তির সারা জীবনের কর্মধারা একত্রে মিলেমিশে আমাদের জাতীয় জীবনের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল প্রোজ্জ্বল কালান্তরের সূচনা করেছে। ’৬০-এর দশকে রাজনীতিতে বামপন্থীদের দ্বারা সাময়িক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হলেও ’৬৫ সালের পরে শেখ মুজিব ছয় দফা ঘোষণা করলে স্বাধীনতার প্রশ্নটি ক্রমাগত সামনে এগিয়ে আসতে থাকে। এর পরে জিন্দাবাদ-মুর্দাবাদের মধ্যে আঁকাবাঁকা পথে রাজনীতি নিজস্ব গতিতে অবধারিত লক্ষ্যে পৌঁছে গেল। সৃষ্টি হলো বাংলাদেশ নামক নতুন রাষ্ট্রের। খুচরা কোনো উক্তি দিয়ে ইতিহাসের রায়কে খণ্ডন করা যায় না। কোনো আত্মকথা প্রামাণ্য ইতিহাস হিসেবে স্বীকৃত নয়। মওলানা ভাসানী মুজিবের মৃত্যুর পর জিয়া ও মশিউরকে বলেছিলেন মুজিবের বিরুদ্ধে কোনো কথা না বলতে। কথা রেখেছিলেন জিয়া ও মশিউর। সেই মহান নেতার আহ্বানে ইতিহাস গড়ার দায়িত্ব পড়েছিল তাদের ওপর। তারা মুজিবের বিরুদ্ধে কোনো বিরূপ মন্তব্য কখনো করেননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলতেন : মহান ব্যক্তি হওয়ার জন্য
অনন্যসাধারণ হওয়ার দরকার আছে, এমন মনে হয় না। সাধারণ মানুষের মধ্যে সঠিক
মানুষটিই মহান। শেখ মুজিবের জন্য এ কথাটি একান্তভাবে সত্য। ’৭১-এর ২৬ মার্চ
মুজিবের জন্য দু’টি পথ খোলা ছিল- একটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে ধরা
দেয়া, আরেকটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়া। ’৬০-এর দশকে মুজিব যেমন
সঠিক ছিলেন; ’৭১-এর ২৬ মার্চও সঠিক ছিলেন। এ কারণেই বলতে হয়- তিনি যখন
পাকিস্তানে গিয়েছেন, ওটাও আমাদের স্বাধীনতা, আর যেদিন ফিরে এসেছেন, ওটাও
আমাদের স্বাধীনতা। যারা দেশের ভেতর থেকে যুদ্ধের কথা বলেন তারা না বোঝেন
সমরবিদ্যা, না বোঝেন বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান। সামগ্রিকভাবে বর্তমান
পরিস্থিতিতে কোনো মহৎ কাজের উদাহরণ আমাদের আর প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে
না। আজ বাংলাদেশ আছে, মুজিব নেই। রাজপথ আছে, ভাসানী নেই। দেশ ও জাতির
তাগিদে মেধা ও সঙ্কল্পে মরিয়া হয়ে ওঠার কোনো লক্ষণ নেই। যেখানে দেয়ার কথা
ছিল, সেখানে যত পারো নিয়ে নাও- এমন মন্ত্রে দীক্ষিত, শিষ্টাচারবহির্র্ভূত,
শিক্ষার মর্মবাণী ও মানববিদ্যা-বিবর্জিত একদল জাঁকজমকপূর্ণ লোক রাজনীতি
থেকে অর্থনীতি, শিক্ষাঙ্গন থেকে শিল্পাঙ্গন- সবখানে জেঁকে বসে আছে। এর ফলে
রাজনীতিতে সৃষ্টি হয়নি কোনো উন্নত দর্শন, কালচার বা শিক্ষার; বরং সৃষ্টি
হয়েছে লালসা, মোসাহেবি, পরশ্রীকাতরতা আর অপ্রকাশ্য গুরুমনোবাঞ্ছা পূরণের
কদর্যতার। ‘বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলনের পেছনে জনগণের আকাক্সক্ষা থাকে
আকাশছোঁয়া; কিন্তু তার পরিসমাপ্তি ঘটে আশাভঙ্গের বেদনায়।’ চার দিকে
সীমাহীন আতঙ্কে সমাজ ও জনজীবন বেদনায় জর্জরিত। এমন অবস্থায় বাংলাদেশের একজন
সাধারণ কৃষকও আমাদের নেতানেত্রীদের বলতে পারেন, ‘আমরা মানুষ হিসেবে
জন্মেছি। আমাদের মানুষ হিসেবে মরতে দিন।’ আমরা আর গণতন্ত্রের নামে ঘৃণ্য
চক্রের খেলার শিকার হতে চাই না। আমরা কেউই পাপমুক্ত নই। কেউই না।’ এমন
প্রশ্নের উত্তর আমাদের নেতানেত্রীদের জানা নেই। নিজের স্বার্থ উদ্ধারে
দক্ষ; কিন্তু সমষ্টির স্বার্থ বিসর্জনে পারঙ্গম- এমন ব্যক্তিদের হাতে রুদ্ধ
হয়ে আছে বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। দেশ ও জাতির বিপন্নতা এ মুহূর্তে
পবিত্র কুরআন থেকেই উদ্ধৃত করে বলতে হয় : গলিয়াথের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে
একদা ইসরাইলবাসী হজরত মুসা:-এর পরে আগত নবী শামিউল আ:-এর কাছে গিয়ে বলেছিল-
‘হে নবী! তুমি এ জাতির প্রয়োজনে আল্লাহর কাছে এমন একজন নেতার জন্য
প্রার্থনা করো, যে নেতার পেছনে আমরা যুদ্ধ করতে পারি।’ আজ বাংলাদেশের
গ্রামগঞ্জে, নগর-বন্দরে হতাশার প্রতিচ্ছবির মতো জনগণের মনের দাবাগ্নি যেন
আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানিয়ে বলছে- হে আল্লাহ, তুমি আমাদের এমন একজন নেতা
দাও, যে নেতার পেছনে আমরা দেশ গড়তে পারি, যুদ্ধ করতে পারি।
লেখক : সাবেক ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, সাপ্তাহিক রোববার
লেখক : সাবেক ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, সাপ্তাহিক রোববার
No comments