মস্তিস্ক ঠিক রাখার ৪০ উপায় by সালেহা চৌধুরী
পৃথিবীর
সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটার আমাদের ব্রেন। কিন্তু শরীরের মতো আমাদের
মস্তিস্কেরও ব্যায়াম দরকার। এখানে ৪০টি বিভিন্ন ব্যায়ামের কথা বলা হলো, যার
ফলে আমাদের মস্তিস্ক দীর্ঘকাল সক্রিয় থাকতে পারে। মায়েদের কাছে অনুরোধ
রচনাটি পড়ার। কারণ এই রচনা কেবল বড়দের নয়, এটি ছোটদের জন্যও বটে।
১. ড. রাচেল ভিকার্স বলেছেন, আমাদের প্রচুর মাছ খেতে হবে। মাছের দেশের লোকের জন্য এ সংবাদ অবশ্যই সুখবর। তৈলাক্ত ছোট মাছ মস্তিস্কের জন্য সবচেয়ে উপকারী। এখানে আছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা তিন ফ্যাটি এসিড আছে, যা আমাদের মস্তিস্ককে তাজা ও সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। তাতে আমাদের মনোসংযোগ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এখানে ছোট শিশুদের ওপর ওমেগা তিনের পরীক্ষা করা হয়েছে। ছয় সপ্তাহ তাদের ওমেগা তিন দেওয়ার পর দেখা গেছে, তাদের মনে রাখার ক্ষমতা বেড়ে গেছে।
২. সবচেয়ে দরকারি খাবার হলো সকালের খাবার; যা আমাদের মস্তিস্কের জন্য অত্যন্ত ভালো। দশ-বারো ঘণ্টা না খেয়ে থাকার পর মস্তিস্ক ও শরীরে জ্বালানির দরকার হয়। সকালের খাবার না খাওয়া কেবল আমাদের মেটাবলিজমের জন্যই খারাপ নয়, তা আমাদের মস্তিস্ককে একেবারে ভোঁতা বানিয়ে দিতে পারে। যে শিশু সকালে নাশতা খেয়ে স্কুলে যায়, সে খুব ভালো মনোসংযোগ করতে পারে।
৩. সবকিছু একরকম নয়, অন্যরকম করে করতে হবে। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বাঁ হাত দিয়ে দাঁত মাজার চেষ্টা করা উচিত। কম্পিউটার মাউস বাঁ হাত দিয়ে ধরা। টেবিলের খাবারগুলো একটু অন্যরকম করে সাজানো। বাড়ি ফিরতে গিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে বাড়িতে আসা। হাঁটতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলা। তাতে আমাদের ব্রেনের সেলগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে।
৪. তরকারিতে যে হলুদ আছে তা আমাদের আলঝেইমার থেকে বাঁচায়। কাজেই দেখা গেছে, পশ্চিমের লোকেরা আলঝেইমারে ভোগে বেশি। পশ্চিমে 'কারি' এবং হলুদের ট্যাবলেট এখন অত্যন্ত জনপ্রিয়। শিশুরা ছোট থেকে হলুদ দেওয়া তরকারি খাবে, ভালো কথা।
৫. আমাদের নতুন কিছু শেখা প্রয়োজন। শেখার কোনো বয়স থাকে না। নতুন ভাষা, নতুন মিউজিক, বাদ্যযন্ত্র, নাটক বা যে কোনো বিষয়ে শেখা আমাদের ব্রেন সেলগুলোকে সক্রিয় রাখে। কাজেই গান শেখা বা শোনা, ভাষা শেখা, অরিগামি, ইকিবানার সঙ্গে আমাদের হাঁটাচলার গতিও বাড়িয়ে দিতে হবে। শিশুরা অনায়াসে দুই-তিনটি ভাষা শিখতে পারে।
৬. লাল মদ নাকি আমাদের ব্রেনের জন্য ভালো। এটা হারাম। তাই পাকা টমেটোর রস একই ফল দেবে।
৭. বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, গান করার ক্ষমতা আমাদের ব্রেনের শক্তি বাড়িয়ে দেয়। গান আমাদের ব্রেনে অনেক বেশি অক্সিজেন বহন করে নিয়ে যায়। আর যখন গান বা কবিতার চরণ আমরা মুখস্থ করি, তা মস্তিস্কের একটি ভালো ব্যায়ামের কাজ করে।
৮. প্রোটিন ব্রেনের জন্য ভালো। এসব ভালো প্রোটিনের ভেতর বরবটি, ডিম, চর্বিবিহীন মাংস, বাদাম, ডাল এবং মাছ প্রধান। অনেক প্রোটিনে আছে আমিনো এসিড এবং টিপটোফ্যান, যা আমাদের 'নিউরোট্রানফিটার' বাড়াতে সাহায্য করে। এই নিউরোট্রানফিটার আমাদের মুড ভালো করে দেয়।
৯. অল্পবিস্তর ক্যাফিন আমাদের ব্রেনের জন্য ভালো। দিনে তিন কাপ চা বা কফি আমাদের ব্রেনকে জাগিয়ে রাখতে পারে। এর মধ্যে যে নিউরোট্রানফিটার বিরাজ করে, তা ডোপামাইন নামে পরিচিত। এ জিনিস আমাদের জাগায়।
১০. সঙ্গীত বিশেষত ধ্রুপদী সঙ্গীত আমাদের মস্তিস্কের কাজ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। বিদেশে এর অনেক পরীক্ষা হয়েছে। অল্প বয়স থেকে যে শিশু গান শোনে, তার মনোসংযোগ ক্ষমতা বেড়ে যায় ও সে ধীরস্থির হয়।
১১. একটা হবি থাকা ভালো। দেখা গেছে, যেসব বয়স্ক মানুষ মধ্য বয়সেও একটি হবি নিয়ে ভাবছে, তাদের আলঝেইমারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে গেছে। টিকিট জমানো, সেলাই, জিগস, ক্রশওয়ার্ড পাজল, বাগান করা এসব থাকতে পারে।
১২. যে কোনো হার্বস বা গাছগাছড়া মানুষের জন্য অত্যন্ত উপকারী। যুগ যুগ ধরে স্মরণশক্তি বাড়ানোর জন্য এসব গাছগাছড়া ব্যবহার করা হয়। ধনে পাতা, পুদিনা পাতা, লেটুস পাতা, নিমপাতা, সেজ, মিন্ট এবং আরও যাবতীয় গাছগাছড়া আমাদের খাদ্য তালিকায় সংযুক্ত করা প্রয়োজন।
১৩. বারবার বলা হয়েছে টেলিভিশন কম দেখতে। যখন টেলিভিশন দেখা হয়, ব্রেনের তেমন কিছু করার থাকে না। তখন ব্রেন চলে যায় নিউট্রাল অবস্থায়। ক্লিভল্যান্ডের ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিন পরীক্ষা করে দেখেছে, ব্রেন হেলথের জন্য টেলিভিশনের চেয়ে বাজে জিনিস আর কিছু নেই।
১৪. বাড়ির পুরনো অ্যালবাম দেখা এই কারণে ভালো, যা আমাদের দীর্ঘদিনের নানা স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়; যা ব্রেনের জন্য উপকারী। এর ফলে ব্রেনের মধ্যে অনেক বেশি উপকারী 'সেরোটিন' উৎপাদিত হতে পারে।
১৫. হাঁটা ও দৌড়ানো ব্রেনের জন্য অত্যন্ত ভালো। কারণ হাঁটা ব্রেনের গ্লুকোস এবং অক্সিজেন বাড়িয়ে দেয়। বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা ঘরে বসে থাকেন আর টেলিভিশন দেখেন। দেখা যায়, বুড়ো বয়সের সমস্ত রোগ এতে বেড়ে গেছে। হাঁটার বিকল্প নেই। কেবল একটু আলস্য ত্যাগ। তাতে যা লাভ হয় তা হাজার হাজার টাকার ওষুধেও হয় না।
১৬. ঘুম আমাদের সেই জিনিস, যা আমাদের শরীরের ব্যাটারিগুলোকে চার্জ করে তাকে সক্রিয় করে তোলে। এক রাত ভালো ঘুমের বিকল্প নেই। এতে আমাদের মনোসংযোগ ও শেখার ক্ষমতা বেড়ে যায়। যে ছাত্র পরীক্ষার আগের রাতে ভালো করে ঘুমোয়, তার পরীক্ষা ভালো হতে বাধ্য। কারণ, সে তখন অনেক বেশি মনোসংযোগ করতে পারছে।
১৭. প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি ও ফল আমাদের ব্রেনের জন্য ভালো। কেবল ব্রেনের জন্যই ভালো নয়, শরীরের জন্যও ভালো। এ হলো 'আন্টিওক্সাইডান্ট' নামের প্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহকারী। এ শরীরের টক্সিন বা বিষ বের করে দিতে সাহায্য করে। যেসব বিষ বা টক্সিন আমাদের ব্রেনকে ড্যামেজ করে দেয়।
১৮. নানা জায়গায় ঘোরা এবং এক্সপ্লোর করা আমাদের ব্রেনের জন্য ভালো। নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষ সবকিছুই ব্রেনের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। পশ্চিমে হলিডের যে নিয়ম আছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের মাঝে মাঝে 'স্টাডিটুরে' যাওয়া জরুরি।
১৯. ক্রশওয়ার্ড পাজল আমাদের ব্রেনের একটি উপকারী ব্যায়াম। এ ব্রেনের ক্ষমতা বাড়ায় ও আমাদের ভাষার শব্দভাণ্ডারকেও সমৃদ্ধ করে।
২০. সুডোকো নামের যে খেলা এখন বাজারে, বিশেষজ্ঞের অভিমত- এ আমাদের ব্রেনের জন্য উপকারী। এ হলো সমস্যা সমাধানের গেম বা কঠিন ভাবনার গেম।
২১. বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মেলামেশা ও কথা বলা আমাদের ব্রেনের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। যে লোক সমাজের নানা লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করে, দেখা যায় তাদের স্মরণশক্তি অনেকখানি বেড়ে গেছে। যে শিশু বাড়িতে একা বড় হয়, তার সঙ্গে যারা স্কুলে যায় তার পার্থক্য থাকে।
২২. কোনো একটি নতুন ইলেকট্রিক গ্যাজেট সম্বন্ধে জানা ভালো। ইন্টারনেট জানা ও বোঝা ভালো। কম্পিউটার, সার্ফিং সব ভালো। যারা মনে করে, এই বয়সে এসব শিখে আর কী হবে, তারাই নিজের ক্ষতি করে বেশি।
২৩. নাচ একটি ভালো জিনিস। ঘরের দরজা বন্ধ করে গান ছেড়ে দিয়ে নাচতে থাকুন। যদি মনে করেন, নাচটাচ আমাকে দিয়ে হবে না, হাঁটুন।
২৪. প্রচুর পানি পান করতে হবে। যখন শরীর শুকিয়ে যায় পানির অভাবে, তা গিয়ে মাথায় আঘাত করে। আমাদের ব্রেন তৈরি হয়েছে আশিভাগ পানি দিয়ে। কাজেই খুব কম করে হলেও আমাদের প্রতিদিন দুই লিটার পানি পান করতে হবে।
২৫. গিংকোবিলোবা নামের যে জিনিসটি ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়, তা আমাদের সারা শরীরের রক্ত চলাচল ভালো রাখে। ভালো রক্ত চলাচল ক্ষমতা আমাদের ব্রেনের জন্য অত্যন্ত দরকারি।
২৬. সঠিক ওষুধ খেতে হবে। ডাক্তারদের অভিমত, ডোনেপেজিল নামের যে ওষুধটি আলঝেইমার সারাতে ব্যবহার করা হয়, তা একটি ভালো ওষুধ। এ হলো স্মৃতিশক্তি, শেখার ক্ষমতা, মনোসংযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। আমপাকিনসও আর একটি ভালো ওষুধ। একটি নতুন ঘুমের ওষুধ বের হয়েছে, যার নাম ওরেকসিন আর-এ-ওয়ান, যা আমাদের ঘুমের ভেতর নানা স্বপ্ন এনে আমাদের স্মৃতিশক্তিকে প্রখর করে। (চেষ্টা করিনি) এসব শিশুদের জন্য নয়।
২৭. ধূমপান একেবারে বর্জন করতে হবে। ভালোবেসে কেউ কাউকে সিগারেট উপহার দেবেন না। বিদেশে এখন লুকিয়ে এ কাজ করে, যে করতে চায়।
২৮. ব্লাডপ্রেসারের সমস্যা না থাকলে লেবু চিপে শরবত, মিছরির শরবত, আখের গুড়ের শরবত আমাদের জন্য অত্যন্ত ভালো। কারণ আমাদের ব্রেনের মাঝে মাঝে মিষ্টির দরকার হয়।
২৯. স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম খাওয়া ভালো। স্যাচুরেটেড ফ্যাট আমাদের কলেস্টেরোল লেভেল বাড়িয়ে দেয়। বেশি কলেস্টেরোল হার্টের সমস্যা।
৩০. মদ ভালো নয়। আমাদের ধর্মে নেই। ওকে ফিরিয়ে আনার দরকার নেই।
৩১. লবণ বেশি খাবেন না। বিশেষ করে যারা পাতে লবণ খান, তা বাদ দিতে হবে। লবণে 'ভাসকুলার ডিমেনশিয়া' বাড়ে। মানে হাত জানে না বা ভুলে গেছে, তাকে কী করতে হবে আর পা জানে না, তাকে কী করতে হবে।
৩২. বিয়ে করুন। শোনা গেছে, যারা বিবাহিত ও সুখী, তাদের ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিশক্তি লোপ কম হয়।
৩৩. ব্লাডপ্রেসার এবং আমাদের শরীরের গ্লুকোস কেমন আছে, তার পরীক্ষা করা প্রয়োজন। অনেকে বুঝতেও পারে না তার রক্তে ব্লাড সুগার লেভেল বেড়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে প্রচুর 'চাইল্ড ডায়াবেটিক' দেখেছি।
৩৪. প্রচুর হাসুন। প্রাণ খুলে হাহা করে। শরীর ও মনের জন্য ভালো।
৩৫. মাথায় যেন কোনো আঘাত না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মাথায় হঠাৎ করে আঘাত লাগলে তা ভালো করে পরীক্ষা করাতে হবে। আজ যা কিছু না, পরে তা ব্রেনের কঠিন সমস্যা।
৩৬. স্ট্রেস বা চাপ থাকা ভালো। মানে স্বাস্থ্যকর চাপ। তবে খুব বেশি চাপ ক্ষতিকর।
৩৭. হরমোন খাবার আগে সাবধান। ওসট্রেজন বা টেসটসটেরোন আলঝেইমার থেকে রক্ষা করে, এমন কথা অনেকে বলে থাকেন। কিন্তু ভালো ফল পেতে হলে একজনের জন্য সঠিক ডোজ খেতে হবে।
৩৮. ভালোমতো ধর্মচর্চা আমাদের আত্মশক্তি বাড়িয়ে দেয়। তবে অন্ধত্ব আমাদের জন্য ভয়াবহ ফল আনতে পারে। হরমোনের মতো ধর্মের সঠিক ডোজ কতটুকু হবে, জানা দরকার।
৩৯. কিছু জটিল গেম চর্চা ভালো। কনট্রাক্ট ব্রিজ, দাবা, ব্যাকগেমন এমন কোনো খেলা আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতাকে বাড়ায়। ফলে নতুন ব্রেন সেল জেগে ওঠে।
৪০. একটু সৃষ্টিশীল হোন। কল্পনাশক্তি বাড়ূক। তাতে আপনার ব্রেনের জন্য ভালো। মায়েরা খেয়াল রাখবেন, সকালে বাচ্চারা যেন নাশতা খেয়ে স্কুলে যায়। আর যেসব কথা লেখা হয়েছে মন দিয়ে পড়া এবং শিশুদের বড় করে তোলা।
ব্রিটেন প্রবাসী কথাসাহিত্যিক
১. ড. রাচেল ভিকার্স বলেছেন, আমাদের প্রচুর মাছ খেতে হবে। মাছের দেশের লোকের জন্য এ সংবাদ অবশ্যই সুখবর। তৈলাক্ত ছোট মাছ মস্তিস্কের জন্য সবচেয়ে উপকারী। এখানে আছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা তিন ফ্যাটি এসিড আছে, যা আমাদের মস্তিস্ককে তাজা ও সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। তাতে আমাদের মনোসংযোগ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এখানে ছোট শিশুদের ওপর ওমেগা তিনের পরীক্ষা করা হয়েছে। ছয় সপ্তাহ তাদের ওমেগা তিন দেওয়ার পর দেখা গেছে, তাদের মনে রাখার ক্ষমতা বেড়ে গেছে।
২. সবচেয়ে দরকারি খাবার হলো সকালের খাবার; যা আমাদের মস্তিস্কের জন্য অত্যন্ত ভালো। দশ-বারো ঘণ্টা না খেয়ে থাকার পর মস্তিস্ক ও শরীরে জ্বালানির দরকার হয়। সকালের খাবার না খাওয়া কেবল আমাদের মেটাবলিজমের জন্যই খারাপ নয়, তা আমাদের মস্তিস্ককে একেবারে ভোঁতা বানিয়ে দিতে পারে। যে শিশু সকালে নাশতা খেয়ে স্কুলে যায়, সে খুব ভালো মনোসংযোগ করতে পারে।
৩. সবকিছু একরকম নয়, অন্যরকম করে করতে হবে। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বাঁ হাত দিয়ে দাঁত মাজার চেষ্টা করা উচিত। কম্পিউটার মাউস বাঁ হাত দিয়ে ধরা। টেবিলের খাবারগুলো একটু অন্যরকম করে সাজানো। বাড়ি ফিরতে গিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে বাড়িতে আসা। হাঁটতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলা। তাতে আমাদের ব্রেনের সেলগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে।
৪. তরকারিতে যে হলুদ আছে তা আমাদের আলঝেইমার থেকে বাঁচায়। কাজেই দেখা গেছে, পশ্চিমের লোকেরা আলঝেইমারে ভোগে বেশি। পশ্চিমে 'কারি' এবং হলুদের ট্যাবলেট এখন অত্যন্ত জনপ্রিয়। শিশুরা ছোট থেকে হলুদ দেওয়া তরকারি খাবে, ভালো কথা।
৫. আমাদের নতুন কিছু শেখা প্রয়োজন। শেখার কোনো বয়স থাকে না। নতুন ভাষা, নতুন মিউজিক, বাদ্যযন্ত্র, নাটক বা যে কোনো বিষয়ে শেখা আমাদের ব্রেন সেলগুলোকে সক্রিয় রাখে। কাজেই গান শেখা বা শোনা, ভাষা শেখা, অরিগামি, ইকিবানার সঙ্গে আমাদের হাঁটাচলার গতিও বাড়িয়ে দিতে হবে। শিশুরা অনায়াসে দুই-তিনটি ভাষা শিখতে পারে।
৬. লাল মদ নাকি আমাদের ব্রেনের জন্য ভালো। এটা হারাম। তাই পাকা টমেটোর রস একই ফল দেবে।
৭. বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, গান করার ক্ষমতা আমাদের ব্রেনের শক্তি বাড়িয়ে দেয়। গান আমাদের ব্রেনে অনেক বেশি অক্সিজেন বহন করে নিয়ে যায়। আর যখন গান বা কবিতার চরণ আমরা মুখস্থ করি, তা মস্তিস্কের একটি ভালো ব্যায়ামের কাজ করে।
৮. প্রোটিন ব্রেনের জন্য ভালো। এসব ভালো প্রোটিনের ভেতর বরবটি, ডিম, চর্বিবিহীন মাংস, বাদাম, ডাল এবং মাছ প্রধান। অনেক প্রোটিনে আছে আমিনো এসিড এবং টিপটোফ্যান, যা আমাদের 'নিউরোট্রানফিটার' বাড়াতে সাহায্য করে। এই নিউরোট্রানফিটার আমাদের মুড ভালো করে দেয়।
৯. অল্পবিস্তর ক্যাফিন আমাদের ব্রেনের জন্য ভালো। দিনে তিন কাপ চা বা কফি আমাদের ব্রেনকে জাগিয়ে রাখতে পারে। এর মধ্যে যে নিউরোট্রানফিটার বিরাজ করে, তা ডোপামাইন নামে পরিচিত। এ জিনিস আমাদের জাগায়।
১০. সঙ্গীত বিশেষত ধ্রুপদী সঙ্গীত আমাদের মস্তিস্কের কাজ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। বিদেশে এর অনেক পরীক্ষা হয়েছে। অল্প বয়স থেকে যে শিশু গান শোনে, তার মনোসংযোগ ক্ষমতা বেড়ে যায় ও সে ধীরস্থির হয়।
১১. একটা হবি থাকা ভালো। দেখা গেছে, যেসব বয়স্ক মানুষ মধ্য বয়সেও একটি হবি নিয়ে ভাবছে, তাদের আলঝেইমারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে গেছে। টিকিট জমানো, সেলাই, জিগস, ক্রশওয়ার্ড পাজল, বাগান করা এসব থাকতে পারে।
১২. যে কোনো হার্বস বা গাছগাছড়া মানুষের জন্য অত্যন্ত উপকারী। যুগ যুগ ধরে স্মরণশক্তি বাড়ানোর জন্য এসব গাছগাছড়া ব্যবহার করা হয়। ধনে পাতা, পুদিনা পাতা, লেটুস পাতা, নিমপাতা, সেজ, মিন্ট এবং আরও যাবতীয় গাছগাছড়া আমাদের খাদ্য তালিকায় সংযুক্ত করা প্রয়োজন।
১৩. বারবার বলা হয়েছে টেলিভিশন কম দেখতে। যখন টেলিভিশন দেখা হয়, ব্রেনের তেমন কিছু করার থাকে না। তখন ব্রেন চলে যায় নিউট্রাল অবস্থায়। ক্লিভল্যান্ডের ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিন পরীক্ষা করে দেখেছে, ব্রেন হেলথের জন্য টেলিভিশনের চেয়ে বাজে জিনিস আর কিছু নেই।
১৪. বাড়ির পুরনো অ্যালবাম দেখা এই কারণে ভালো, যা আমাদের দীর্ঘদিনের নানা স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়; যা ব্রেনের জন্য উপকারী। এর ফলে ব্রেনের মধ্যে অনেক বেশি উপকারী 'সেরোটিন' উৎপাদিত হতে পারে।
১৫. হাঁটা ও দৌড়ানো ব্রেনের জন্য অত্যন্ত ভালো। কারণ হাঁটা ব্রেনের গ্লুকোস এবং অক্সিজেন বাড়িয়ে দেয়। বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা ঘরে বসে থাকেন আর টেলিভিশন দেখেন। দেখা যায়, বুড়ো বয়সের সমস্ত রোগ এতে বেড়ে গেছে। হাঁটার বিকল্প নেই। কেবল একটু আলস্য ত্যাগ। তাতে যা লাভ হয় তা হাজার হাজার টাকার ওষুধেও হয় না।
১৬. ঘুম আমাদের সেই জিনিস, যা আমাদের শরীরের ব্যাটারিগুলোকে চার্জ করে তাকে সক্রিয় করে তোলে। এক রাত ভালো ঘুমের বিকল্প নেই। এতে আমাদের মনোসংযোগ ও শেখার ক্ষমতা বেড়ে যায়। যে ছাত্র পরীক্ষার আগের রাতে ভালো করে ঘুমোয়, তার পরীক্ষা ভালো হতে বাধ্য। কারণ, সে তখন অনেক বেশি মনোসংযোগ করতে পারছে।
১৭. প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি ও ফল আমাদের ব্রেনের জন্য ভালো। কেবল ব্রেনের জন্যই ভালো নয়, শরীরের জন্যও ভালো। এ হলো 'আন্টিওক্সাইডান্ট' নামের প্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহকারী। এ শরীরের টক্সিন বা বিষ বের করে দিতে সাহায্য করে। যেসব বিষ বা টক্সিন আমাদের ব্রেনকে ড্যামেজ করে দেয়।
১৮. নানা জায়গায় ঘোরা এবং এক্সপ্লোর করা আমাদের ব্রেনের জন্য ভালো। নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষ সবকিছুই ব্রেনের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। পশ্চিমে হলিডের যে নিয়ম আছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের মাঝে মাঝে 'স্টাডিটুরে' যাওয়া জরুরি।
১৯. ক্রশওয়ার্ড পাজল আমাদের ব্রেনের একটি উপকারী ব্যায়াম। এ ব্রেনের ক্ষমতা বাড়ায় ও আমাদের ভাষার শব্দভাণ্ডারকেও সমৃদ্ধ করে।
২০. সুডোকো নামের যে খেলা এখন বাজারে, বিশেষজ্ঞের অভিমত- এ আমাদের ব্রেনের জন্য উপকারী। এ হলো সমস্যা সমাধানের গেম বা কঠিন ভাবনার গেম।
২১. বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মেলামেশা ও কথা বলা আমাদের ব্রেনের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। যে লোক সমাজের নানা লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করে, দেখা যায় তাদের স্মরণশক্তি অনেকখানি বেড়ে গেছে। যে শিশু বাড়িতে একা বড় হয়, তার সঙ্গে যারা স্কুলে যায় তার পার্থক্য থাকে।
২২. কোনো একটি নতুন ইলেকট্রিক গ্যাজেট সম্বন্ধে জানা ভালো। ইন্টারনেট জানা ও বোঝা ভালো। কম্পিউটার, সার্ফিং সব ভালো। যারা মনে করে, এই বয়সে এসব শিখে আর কী হবে, তারাই নিজের ক্ষতি করে বেশি।
২৩. নাচ একটি ভালো জিনিস। ঘরের দরজা বন্ধ করে গান ছেড়ে দিয়ে নাচতে থাকুন। যদি মনে করেন, নাচটাচ আমাকে দিয়ে হবে না, হাঁটুন।
২৪. প্রচুর পানি পান করতে হবে। যখন শরীর শুকিয়ে যায় পানির অভাবে, তা গিয়ে মাথায় আঘাত করে। আমাদের ব্রেন তৈরি হয়েছে আশিভাগ পানি দিয়ে। কাজেই খুব কম করে হলেও আমাদের প্রতিদিন দুই লিটার পানি পান করতে হবে।
২৫. গিংকোবিলোবা নামের যে জিনিসটি ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়, তা আমাদের সারা শরীরের রক্ত চলাচল ভালো রাখে। ভালো রক্ত চলাচল ক্ষমতা আমাদের ব্রেনের জন্য অত্যন্ত দরকারি।
২৬. সঠিক ওষুধ খেতে হবে। ডাক্তারদের অভিমত, ডোনেপেজিল নামের যে ওষুধটি আলঝেইমার সারাতে ব্যবহার করা হয়, তা একটি ভালো ওষুধ। এ হলো স্মৃতিশক্তি, শেখার ক্ষমতা, মনোসংযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। আমপাকিনসও আর একটি ভালো ওষুধ। একটি নতুন ঘুমের ওষুধ বের হয়েছে, যার নাম ওরেকসিন আর-এ-ওয়ান, যা আমাদের ঘুমের ভেতর নানা স্বপ্ন এনে আমাদের স্মৃতিশক্তিকে প্রখর করে। (চেষ্টা করিনি) এসব শিশুদের জন্য নয়।
২৭. ধূমপান একেবারে বর্জন করতে হবে। ভালোবেসে কেউ কাউকে সিগারেট উপহার দেবেন না। বিদেশে এখন লুকিয়ে এ কাজ করে, যে করতে চায়।
২৮. ব্লাডপ্রেসারের সমস্যা না থাকলে লেবু চিপে শরবত, মিছরির শরবত, আখের গুড়ের শরবত আমাদের জন্য অত্যন্ত ভালো। কারণ আমাদের ব্রেনের মাঝে মাঝে মিষ্টির দরকার হয়।
২৯. স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম খাওয়া ভালো। স্যাচুরেটেড ফ্যাট আমাদের কলেস্টেরোল লেভেল বাড়িয়ে দেয়। বেশি কলেস্টেরোল হার্টের সমস্যা।
৩০. মদ ভালো নয়। আমাদের ধর্মে নেই। ওকে ফিরিয়ে আনার দরকার নেই।
৩১. লবণ বেশি খাবেন না। বিশেষ করে যারা পাতে লবণ খান, তা বাদ দিতে হবে। লবণে 'ভাসকুলার ডিমেনশিয়া' বাড়ে। মানে হাত জানে না বা ভুলে গেছে, তাকে কী করতে হবে আর পা জানে না, তাকে কী করতে হবে।
৩২. বিয়ে করুন। শোনা গেছে, যারা বিবাহিত ও সুখী, তাদের ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিশক্তি লোপ কম হয়।
৩৩. ব্লাডপ্রেসার এবং আমাদের শরীরের গ্লুকোস কেমন আছে, তার পরীক্ষা করা প্রয়োজন। অনেকে বুঝতেও পারে না তার রক্তে ব্লাড সুগার লেভেল বেড়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে প্রচুর 'চাইল্ড ডায়াবেটিক' দেখেছি।
৩৪. প্রচুর হাসুন। প্রাণ খুলে হাহা করে। শরীর ও মনের জন্য ভালো।
৩৫. মাথায় যেন কোনো আঘাত না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মাথায় হঠাৎ করে আঘাত লাগলে তা ভালো করে পরীক্ষা করাতে হবে। আজ যা কিছু না, পরে তা ব্রেনের কঠিন সমস্যা।
৩৬. স্ট্রেস বা চাপ থাকা ভালো। মানে স্বাস্থ্যকর চাপ। তবে খুব বেশি চাপ ক্ষতিকর।
৩৭. হরমোন খাবার আগে সাবধান। ওসট্রেজন বা টেসটসটেরোন আলঝেইমার থেকে রক্ষা করে, এমন কথা অনেকে বলে থাকেন। কিন্তু ভালো ফল পেতে হলে একজনের জন্য সঠিক ডোজ খেতে হবে।
৩৮. ভালোমতো ধর্মচর্চা আমাদের আত্মশক্তি বাড়িয়ে দেয়। তবে অন্ধত্ব আমাদের জন্য ভয়াবহ ফল আনতে পারে। হরমোনের মতো ধর্মের সঠিক ডোজ কতটুকু হবে, জানা দরকার।
৩৯. কিছু জটিল গেম চর্চা ভালো। কনট্রাক্ট ব্রিজ, দাবা, ব্যাকগেমন এমন কোনো খেলা আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতাকে বাড়ায়। ফলে নতুন ব্রেন সেল জেগে ওঠে।
৪০. একটু সৃষ্টিশীল হোন। কল্পনাশক্তি বাড়ূক। তাতে আপনার ব্রেনের জন্য ভালো। মায়েরা খেয়াল রাখবেন, সকালে বাচ্চারা যেন নাশতা খেয়ে স্কুলে যায়। আর যেসব কথা লেখা হয়েছে মন দিয়ে পড়া এবং শিশুদের বড় করে তোলা।
ব্রিটেন প্রবাসী কথাসাহিত্যিক
No comments