দেশে কেউ একনায়কতন্ত্র বা রাজতন্ত্র চায় না : ড. কামাল হোসেন
গণফোরাম
সভাপতি, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড.
কামাল হোসেন বলেছেন, ২০১৪’র মত আরেকটি নির্বাচন জনগণ চায় না। আমরাও চাই
না। সবাই চায় একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। একই সাথে দেশে
কেউ একদলীয় শাসন, একনায়কতন্ত্র বা রাজতন্ত্র চায় না। স্বাধীনতার পতাকা
উত্তোলন দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আলোচনা সভায়
তিনি একথা বলেন। ড. কামাল হোসেন বলেন, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক
নির্বাচনের জন্য অবশ্যই জনগণকে সচেতন হতে হবে। কারণ তারাই ক্ষমতার মালিক।
সে মালিক যদি সচেতন না হয় তাহলে কোনো কিছুই করা সম্ভব নয়। তিনি দেশের মালিক
হিসাবে পাড়ায় পাড়ায় ঐক্যবদ্ধ হতে জনগণকে আহবান জানান। তিনি জানান, সহসা
জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে তাদের কথা শুনতে তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে যাবেন।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বা সুষ্ঠু নির্বাচন
হওয়ার ব্যাপারে কারো দ্বিমত থাকতে পারে না। তিনি বলেন, দেশের জনগণের মধ্যে
গণজাগরণ সৃষ্টি করে জনগণের দাবি আদায় করে নেয়া হবে। তিনি প্রশ্ন করেন,
দেশের টাকা কেন প্রাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশে কি বিনিয়োগের পরিস্থিতি নেই?
স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন দিবস জাতীয় উদযাপন কমিটির উদ্যোগে এ আলোচনা সভায়
প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা
চৌধুরী। স্মৃতিচারণ করেন, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবসহ নাগরিক ঐক্যের
আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট
সুব্রত চৌধুরী, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব:) আবদুল মান্নান,
জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, গণসামাজিক রাজনৈতিক আন্দোলনের
সমন্বয়ক অধ্যাপক হুমায়ুন কবির হীরু, ইসলামী আন্দোলন ঢাকা মহানগর সভাপতি এটি
এম হেমায়েত উদ্দিন প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন দিবস
জাতীয় উদযাপন কমিটির আহবায়ক ডা: জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা
করেন স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন দিবস জাতীয় উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব শহীদ
উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন,
গণতান্ত্রিক শক্তি যারাই আছে সবার সাথে ঐক্য হবে। কোনো বাছ বিচার চলবে না।
তবে তিনি সর্তক করে দিয়ে বলেন, এভাবে কেউ লেবেলপ্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দেবে
না। জনগণকে এটা আদায় করে নিতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা চাই একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন, নিরপেক্ষ নির্বাচন। ডা: জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার
সবচেয়ে বড় আশা ছিল দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, গণতন্ত্র থাকবে। তিনি বলেন,
দেশের মানুষ একটি পরিবর্তন চায়। যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে।
একপক্ষ বিজয়ী হলে আরেক পক্ষকে ঘায়েল করবে না।
তিনি বলেন, আমরা নিশ্চয়তা চাই যে এক পক্ষ হেরে গেলে তার ১০ হাজার
নেতা-কর্মী প্রাণ হারাবে না। অপরপক্ষে যে জিতবে সে গণতন্ত্রেও টুটি চেপে
ধররেব না। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশের মানুষ অনেক কষ্টে আছে। তারা
গণতন্ত্র পেতে কষ্ট করছে। ২০১৪ সালে একটি ফোর-টুয়েন্টি মার্কা নির্বাচন
হয়েছে। এধরণের নির্বাচন আর কেউ চায় না। ২ মার্চ স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন
দিবসের আলোচনা সভায় স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আ স ম আবদুর রব বলেন, নির্বাচন
গ্রহণযোগ্য না হলে জাতি মহাসংকটে পড়বে। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে হলে এখন
থেকেই তার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কিন্তু সরকারের বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড দেশকে
কার্যত একপাক্ষিক নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রী, এমপিরা সরকারি
কোষাগারের টাকা খরচ করে, সরকারি যানবাহন, হেলিকপ্টার ব্যবহার করে জনসভা করে
ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন অথচ বিরোধী দলকে রাস্তায় দাঁড়াতেও দিচ্ছে না। এ
ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনও নীরব। এ ধরনের আচরণ নির্বাচনী লেভেল প্লেয়িং
ফিল্ডের ব্যবস্থা আগে থেকেই বিনষ্ট করছে। এতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ
রুদ্ধ করে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরনার্থীদের আগমন দেশের জন্য
ক্রমাগত সংকট বৃদ্ধি করছে। সমস্যা সমাধানের জন্য বহু পাক্ষিক আলোচনার
পরিবর্তে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা তেমন ফলদায়ক হয়নি।
No comments