মুসলিম অভিবাসীর চাঞ্চল্যকর বই : ট্রাম্পকেও শেখাতে পারে দেশপ্রেম by মঈনুল আলম
যুক্তরাষ্ট্রে
অভিবাসী মুসলিম আমেরিকান নাগরিক খিজির খান ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের
নির্বাচনী প্রচারণা কালে ট্রাম্পের প্রতি ‘আপনি কি কখনো যুক্তরাষ্ট্রের
সংবিধান পড়েছেন?’ প্রশ্ন রেখে বিরাট চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিলেন।
এখন তার
‘অ্যান অ্যামেরিকান ফ্যামিলি : অ্যা মেমোয়ার অব হোপ অ্যান্ড স্যাক্রিফাইস’
নামের সদ্য প্রকাশিত বইটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কপচানো দেশপ্রেমের বুলি,
অভিবাসীবিরোধিতা এবং চরম মুসলিম বিদ্বেষের সমুচিত জওয়াব হিসেবে চাঞ্চল্যের
সৃষ্টি করেছে। ‘খিজির খানের এই বই আমাদের সবাইকে, এমনকি প্রেসিডেন্ট
ট্রাম্পকেও শেখাতে পারে প্রকৃত আমেরিকান দেশপ্রেম কেমন দেখতে হতে হবে’,
লিখেছেন প্রেসিডেন্ট রিগ্যানের জনসংযোগ ডিরেক্টর এবং প্রখ্যাত লেখিকা
লিন্ডা চ্যাভেজ নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত পর্যালোচনায়।
খিজির খানের বই An
American Family : A Memoir of Hope and Sacrifice (এক আমেরিকান পরিবার :
আশা ও আত্মদানের স্মৃতিকথা) যুক্তরাষ্ট্রে আগত অভিবাসী, বিশেষ করে মুসলিম
অভিবাসী পরিবারগুলো কী ধরনের বাধা-বিঘ্নের মধ্য দিয়ে নিজেদের গড়ে তুলছে এবং
যুক্তরাষ্ট্রকে গড়ে তুলছে, তারই চিত্র তুলে ধরেছে একটি অভিবাসী পরিবারের
কাহিনীর মাধ্যমে। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণাকালে
ফিলাডেলফিয়ায় ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশনের সমাপ্তি রজনীতে খিজির খান
এবং তার পত্নী গাজালা খানকে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। খিজির খানের
পুত্র মার্কিন সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন হুমায়ুন খান ২০০৪ সালে ইরাকে যুদ্ধরত
থাকাকালে গাড়িবোমা বিস্ফোরণে নিহত হন। হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী
প্রচারণায় হুমায়ুন খানের জীবন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তার ইরাকে যুদ্ধরত থাকা
এবং নিহত হওয়ার ওপর নির্মিত ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
চলচ্চিত্রটিতে মার্কিন সেনাবাহিনীর মুসলিম ক্যাপ্টেনের প্রাণদানের পাশাপাশি
প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণার শুরু হতে মুসলিমদের
প্রতি তার চরম অবমাননাকর বিষোদ্গার এবং অশ্বেতাঙ্গদের প্রতি দারুণ উষ্মা
তুলে ধরা হয়। নির্বাচনী প্রচারণায় ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি
প্রেসিডেন্ট হলে মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেবেন।
ট্রাম্প মেক্সিকো হতে আগত অভিবাসীদের ‘ধর্ষণকারী’ বলে অভিহিত করেন।
কনভেনশন
মঞ্চে স্ত্রী গাজালাকে পাশে নিয়ে খিজির খান তার ভাষণের এক পর্যায়ে পকেট
থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান শীর্ষক ছোট্ট পুস্তিকাটি বের করে মাথার ওপর
তুলে ধরে বজ্রনির্ঘোষে প্রশ্ন করেন : ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প, আপনি আমেরিকানদের
আহ্বান জানাচ্ছেন আমাদের ভবিষ্যৎ আস্থার সাথে আপনার হাতে তুলে দিতে। প্রশ্ন
করছি, আপনি কি কখনো যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান পড়ে দেখেছেন? আনন্দের সাথে
আপনাকে আমার যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান বইটি ধার দেবো।’ উপস্থিত জনতা তার
সমর্থনে করতালি ও হর্ষধ্বনিতে ফেটে পড়ে।
খিজির খানের এই চ্যালেঞ্জিং প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে ট্রাম্প প্রত্যুত্তরে খিজির খানের স্ত্রীকে আক্রমণ করলেন এই বলে, ‘কেন উনি আপনার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন যদি উনার বলার কিছু না থাকে?’ ট্রাম্প আরো বল্লেন, ‘সম্ভবত : হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী প্রচারক খিজির খানের ভাষণটি লিখে দিয়েছে’। এটিও সম্ভবত একটা প্রমাণ যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকৃতই যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান পড়ে দেখেননি।
খিজির খানের বইয়ের পর্যালোচনায় লিন্ডা চ্যাভেজ লিখেছেন : ‘খিজির খান যথেষ্ট কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। পাকিস্তানে জন্মগ্রহণকারী খিজির যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়ে এসে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে আইনে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন। তিনি একজন মুসলিম; কিন্তু সব চেয়ে বড় কথা, তিনি একজন অভিবাসী দেশপ্রেমিক আমেরিকান, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানকে অত্যন্ত সমীহ করেন। তিনি ফিলাডেলফিয়ায় ডেমোক্র্যাটিক কনভেনশনে উপস্থিত হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি শিক্ষা দিতে।’
লিন্ডা আরো লিখেছেন : খানের বইটিতে ফুটে উঠেছে একটি পরিবারের ধর্মবিশ্বাস এবং গড়ে ওঠার কাহিনী, যা বর্ণিত হয়েছে অনেকটা কাব্যিক আবেগে। খানের স্ত্রী গাজালা খান মঞ্চে স্বামীর পাশে নীরবে দাঁড়িয়েছিলেন সম্ভবত : তার সন্তান হারানোর বেদনায়। খানের বইয়ের বর্ণনায় উঠে এসেছে গাজালা একজন সুশিক্ষিতা নারী যিনি ইরানের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। খিজির ও গাজালা পরস্পরের সাথে পরিচয় ও প্রণয়ের পরিণতিতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। নিহত ক্যাপ্টেন হুমায়ুন খান ছাড়াও তাদের দু’টি পুত্র রয়েছে। ‘খিজির খান যখন প্রাক-যুবা বয়সে, তখন লাহোরে বইয়ের দোকানে একটি পুস্তকে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রস্তাবনা ‘আমরা এই সত্যগুলোকে সপ্রকাশিত বলে বিশ্বাস করি যে, সব মানুষ সমানভাবে সৃষ্টি হয়েছে এবং সব মানুষ তাদের সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে কতগুলো অধিকার প্রদত্ত হয়েছে যা হতে তাদের কোনোভাবেই বঞ্চিত করা যায় না’ পাঠ করে তার শরীর রোমাঞ্চিত হয়ে উঠে। তিনি শিক্ষা গ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গমনের সিদ্ধান্ত নেন। এ ভাবেই শুরু হয় খিজির খানের দীর্ঘ যাত্রা যার ফলে তিনি একজন গর্বিত অভিবাসী ও আমেরিকান নাগরিক হয়েছেন।’ লিন্ডা চ্যাভেজ আরো লিখেছেন, ‘খিজির খানের পরিবারের সব দৈনন্দিন কাজকর্মে তাদের ধর্মবিশ্বাস প্রতিফলিত হয়; তাদের ধর্ম হচ্ছে আধুনিক ও সহনশীল ইসলাম যা পালন করছে যুক্তরাষ্ট্রের এবং সারা বিশ্বের মুসলিম জনগণ।’ যুক্তরাষ্ট্রের পত্রপত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে খিজির খানের বইটি ব্যাপক প্রচার পাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঘরে ঘরে ‘খিজির খান’ এখন একটি পরিচিত নাম।
লেখক : প্রবীণ সাংবাদিক, প্রবাসী
খিজির খানের এই চ্যালেঞ্জিং প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে ট্রাম্প প্রত্যুত্তরে খিজির খানের স্ত্রীকে আক্রমণ করলেন এই বলে, ‘কেন উনি আপনার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন যদি উনার বলার কিছু না থাকে?’ ট্রাম্প আরো বল্লেন, ‘সম্ভবত : হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী প্রচারক খিজির খানের ভাষণটি লিখে দিয়েছে’। এটিও সম্ভবত একটা প্রমাণ যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকৃতই যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান পড়ে দেখেননি।
খিজির খানের বইয়ের পর্যালোচনায় লিন্ডা চ্যাভেজ লিখেছেন : ‘খিজির খান যথেষ্ট কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। পাকিস্তানে জন্মগ্রহণকারী খিজির যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়ে এসে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে আইনে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন। তিনি একজন মুসলিম; কিন্তু সব চেয়ে বড় কথা, তিনি একজন অভিবাসী দেশপ্রেমিক আমেরিকান, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানকে অত্যন্ত সমীহ করেন। তিনি ফিলাডেলফিয়ায় ডেমোক্র্যাটিক কনভেনশনে উপস্থিত হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি শিক্ষা দিতে।’
লিন্ডা আরো লিখেছেন : খানের বইটিতে ফুটে উঠেছে একটি পরিবারের ধর্মবিশ্বাস এবং গড়ে ওঠার কাহিনী, যা বর্ণিত হয়েছে অনেকটা কাব্যিক আবেগে। খানের স্ত্রী গাজালা খান মঞ্চে স্বামীর পাশে নীরবে দাঁড়িয়েছিলেন সম্ভবত : তার সন্তান হারানোর বেদনায়। খানের বইয়ের বর্ণনায় উঠে এসেছে গাজালা একজন সুশিক্ষিতা নারী যিনি ইরানের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। খিজির ও গাজালা পরস্পরের সাথে পরিচয় ও প্রণয়ের পরিণতিতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। নিহত ক্যাপ্টেন হুমায়ুন খান ছাড়াও তাদের দু’টি পুত্র রয়েছে। ‘খিজির খান যখন প্রাক-যুবা বয়সে, তখন লাহোরে বইয়ের দোকানে একটি পুস্তকে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রস্তাবনা ‘আমরা এই সত্যগুলোকে সপ্রকাশিত বলে বিশ্বাস করি যে, সব মানুষ সমানভাবে সৃষ্টি হয়েছে এবং সব মানুষ তাদের সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে কতগুলো অধিকার প্রদত্ত হয়েছে যা হতে তাদের কোনোভাবেই বঞ্চিত করা যায় না’ পাঠ করে তার শরীর রোমাঞ্চিত হয়ে উঠে। তিনি শিক্ষা গ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গমনের সিদ্ধান্ত নেন। এ ভাবেই শুরু হয় খিজির খানের দীর্ঘ যাত্রা যার ফলে তিনি একজন গর্বিত অভিবাসী ও আমেরিকান নাগরিক হয়েছেন।’ লিন্ডা চ্যাভেজ আরো লিখেছেন, ‘খিজির খানের পরিবারের সব দৈনন্দিন কাজকর্মে তাদের ধর্মবিশ্বাস প্রতিফলিত হয়; তাদের ধর্ম হচ্ছে আধুনিক ও সহনশীল ইসলাম যা পালন করছে যুক্তরাষ্ট্রের এবং সারা বিশ্বের মুসলিম জনগণ।’ যুক্তরাষ্ট্রের পত্রপত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে খিজির খানের বইটি ব্যাপক প্রচার পাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঘরে ঘরে ‘খিজির খান’ এখন একটি পরিচিত নাম।
লেখক : প্রবীণ সাংবাদিক, প্রবাসী
No comments