কারাগারে তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযুক্ত এমপি’র আত্মহত্যার চেষ্টা
পশ্চিমবঙ্গে সারদা চিট ফান্ড সংস্থার আমানত কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত তৃণমূল কংগ্রেসের সাসপেন্ড হওয়া এমপি কুনাল ঘোষ শুক্রবার ভোরের দিকে অতিরিক্ত ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে কারাগারে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে জানা গেছে। তার একটি সুইসাইড নোটও পাওয়া গেছে। তাতে তিনি জানিয়েছেন, ৫৮টি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। শুক্রবার ভোর পৌনে তিনটা নাগাদ তাকে প্রেসিডেন্সি সেলের মধ্যে অচেতন অবস্থায় শুয়ে থাকতে দেখা যায়। সঙ্গে সঙ্গেই তাকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে তার চিকিৎসা চলছে। এসএসকেএম হাসপাতালের সুপার প্রদীপ মিত্র জানিয়েছেন, কুনাল ঘোষের অবস্থা সঙ্কটমুক্ত। তিনি স্থিতিশীল রয়েছেন। গত বৃহস্পতিবারই আদালতে বিচারকের কাছে লেখা একটি চিঠিকে তার মৃত্যুকালীন জবানবন্দি হিসেবে গ্রহণ করার আরজি জানিয়েছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক কারা কর্তৃপক্ষকে কুনাল ঘোষের নিরাপত্তার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই মতো তাকে নজরে রাখার জন্য একজন ওয়ার্ডেনকে নিযুক্ত করা হয়েছিল। তবে কর্তব্যে গাফিলতির দায়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে কারাগারের সুপার, চিকিৎসক ও কুনালের সেলের দায়িত্বে থাকা কারারক্ষীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। গত সোমবারই আদালতে দাঁড়িয়ে কুনাল ঘোষ সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার না করা হলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন। কুনাল ঘোষের অভিযোগ, সিবিআই তদন্তকে প্রভাবিত করা হচ্ছে। আর তাই সারদা কেলেঙ্কারিতে অনেক রাঘব বোয়াল জড়িত থাকা সত্ত্বেও তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। গত বৃহস্পতিবারই তার সেই সময়সীমা শেষ হয়েছিল। কুনাল বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছেন, সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত অনেক মন্ত্রী এবং তৃণমূল নেতা। এর আগেই তিনি তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। কুনাল ঘোষ সারদা চিট ফান্ড পরিচালিত মিডিয়া গোষ্ঠীর সিইও ছিলেন। তার দাবি তিনি বেতনবুক কর্মচারী ছিলেন। তবে মোটা অঙ্কের বেতন পেতেন। গত সপ্তাহে সিবিআই আদালতে সারদা তদন্তের যে প্রথম চার্জশিট দাখিল করেছে তাতে বড় কোন প্রভাবশালীর নাম নেই। বরং সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন, কুনাল ঘোষ এবং সারদার অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায় এবং সারদার ৫টি কোম্পানিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে অর্থ তছরুপ, ষড়যন্ত্র ও অর্থ নয়ছয়ের গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। কুনাল ঘোষ গত নভেম্বর থেকে কারাগারে রয়েছেন। এদিকে কারাগারে সেলের মধ্যে কুনাল ঘোষের আত্মহত্যার চেষ্টা নিয়ে প্রবল শোরগোল তৈরি হয়েছে। কুনালের পরিবার দাবি করেছেন, তাদের কিছুই জানানো হয়নি। তারা টিভিতে সংবাদ দেখে সব জেনেছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও এ ঘটনা নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলা শুরু হয়েছে। কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান অভিযোগ করেছেন, কুনাল ঘোষ যেভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে সারদার অর্থ নেয়ার অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন তাতে অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর তাই কুনালের মুখ বন্ধ করে দেয়ার চক্রান্ত হতে পারে এটি। না হলে কারাগারের মধ্যে তার হাতে এতো ঘুমের ট্যাবলেট এলো কি করে সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। কুনালকে চাপ দিয়েও এসব করানো হতে পারে বলে অভিযোগ করেছেন ঐ কংগ্রেস নেতা। তবে জানা গেছে, সিবিআই কারা কর্তৃপক্ষকে জেরা করবে বলে ঠিক করেছে।
No comments