শিশু ও শিক্ষা দুটিরই বিশেষ যত্ন প্রয়োজন by মো. সিদ্দিকুর রহমান
শিশুশিক্ষা বা প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে কাজ করি। দীর্ঘদিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় জড়িত ছিলাম। হয়তো এ কারণেই এবারের নোবেল শান্তি পুরস্কার আমাকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছে। মেয়েদের শিক্ষা ও শিশু অধিকার আন্দোলনের স্বীকৃতি স্বরূপ এ বছর নির্বাচন করা হয়েছে নোবেল শান্তি পুরস্কার। কিশোরী মালালা ইউসুফজাই ও ৬০ বছর বয়সী কৈলাস সত্যার্থী তাদের ত্যাগ ও সাহসিকতার পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন নোবেল শান্তি পুরস্কার। পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকা, যেখানে মেয়েদের শিক্ষা মানে মৃত্যু অনিবার্য, সেই মৃত্যু ভয়কে উপেক্ষা করে, কঠিন বাস্তবতার কাছে হার না মেনে মালালা এগিয়ে নিয়ে গেছেন মেয়েদের শিক্ষার আন্দোলন। ২০১২ সালে তালেবান জঙ্গিদের গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত মালালা ব্রিটেনে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে সেরে ওঠেন। তার সাহসী কর্মকাণ্ড মেয়েদের, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েদের শিক্ষার অগ্রযাত্রাকে অনুপ্রাণিত করবে। মেয়েদের শিক্ষার চ্যালেঞ্জ দূর করার লক্ষ্যে অসীম সাহস ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার জন্য মালালা অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। মুক্তচিন্তার পক্ষে কাজ করার জন্য মালালা ২০১৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ‘শাখারভ’ মানবাধিকার পুরস্কার পেয়েছেন। মালালাকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেবেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপার। এর আগে যারা কানাডার সম্মানসূচক নাগরিকত্ব পেয়েছেন তারা হলেন- দালাইলামা, নেলসন ম্যান্ডেলা, অং সান সুচির মতো খ্যাতিমানরা।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশনে নিজের ১৬তম জন্মবার্ষিকী পালন অনুষ্ঠানে এক আবেগময় ভাষণ দেন মালালা। ভাষণে প্রতিটি শিশুর জন্য অবৈতনিক শিক্ষা চালুর আবেদন জানান তিনি। প্রতিটি শিশুর শিক্ষার অধিকারের পক্ষে জোরালো বক্তব্য দেন মালালা। জঙ্গিদের সম্পর্কে বলেন, ‘তারা ভেবেছিল বুলেট আমাকে স্তব্ধ করে দেবে, থামিয়ে দেবে। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়েছে। জঙ্গিরা ভেবেছিল তারা আমাকে লক্ষ্য ও আকাক্সক্ষা থেকে বিচ্যুত করবে। কিন্তু তারা আমার জীবনে কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি।’ মালালা বলেন, ‘বই ও কলমকে জঙ্গিরা ভয় পায়। আসুন আমরা প্রতিটি শিশুর হাতে তুলে দিই সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র বই ও কলম। একজন শিশু, একজন শিক্ষক আর একটি বই গোটা পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে।’ গুলিতে আহত হওয়ার পর জনসম্মুখে এটাই তার প্রথম ভাষণ। ভাষণে তিনি আরও বলেন, আগে নারী আন্দোলনকারীরা তাদের অধিকারের কথা তুলে ধরতে পুরুষের শরণাপন্ন হতেন, এখন আমরা মেয়েরাই সেই কাজ করব। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন মালালার জন্মদিনটিকে ‘মালালা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেন।
অপর নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী কৈলাস সত্যার্থীর সঙ্গে ফোনালাপ প্রসঙ্গে মালালা বলেন, আমরা দুজনই ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়তে চাই। আমি চাই দুই দেশই সংলাপে বসুক। পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বদলে শান্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে কথা বলুক। আমরা দুজনই চাই ভারত-পাকিস্তানের নেতারা নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকুক। আমরা সত্যিই শান্তিতে বিশ্বাস করি। দু’দেশের উন্নয়নের জন্য শান্তি ও দুই দেশের সুসম্পর্ক থাকা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।
মালালার তুলনায় কৈলাসের নাম ভারত ছাড়া বিশ্ববাসীর কাছে অতটা পরিচিত নয়। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর বিভিন্ন গণমাধ্যম কৈলাসকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কৈলাস সত্যার্থীর জন্ম ১৯৫৪ সালে ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের বিদিশা শহরে। সত্যার্থী পেশায় একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হলেও ১৯৮৩ সালে গড়ে তোলেন ‘বাচপন বাঁচাও’ আন্দোলন বা শৈশব রক্ষা আন্দোলন নামের একটি সংস্থা। শৈশব রক্ষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিন দশক আগে কৈলাস তার প্রকৌশল জীবনের সমাপ্তি ঘটান। বর্তমানে অলাভজনক এ সংস্থাটি ভারতে শিশু পাচার ও শিশুশ্রম বন্ধে কাজ করে যাচ্ছে। ভারতজুড়ে এ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি ৩০ বছর ধরে পাচার হয়ে যাওয়া শিশুদের উদ্ধারে কাজ করছে। চার মাস আগে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি শিশুদের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে বলেছেন, ‘আমি শিশুদের বন্ধু- এটাই আমার দর্শন। আমার মনে হয় না কারও উচিত তাদের করুণাকে অজ্ঞতা বা মূর্খতার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা। এ ধরনের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। শিশুরা নিষ্পাপ, তারা সরাসরি কথা বলে। তাদের কোনো পক্ষপাত নেই। শিশুদের সরলতাই আমাকে বেশি টানে। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব অন্য অনেক কিছুর চেয়ে আমার কাছে বেশি অর্থপূর্ণ।’ বিদিশার পর উড়িষ্যা ও মধ্যপ্রদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দিল্লি ও মুম্বাইয়ের মতো শহরে শিশু পাচার, শিশুশ্রম ও শিশু শিক্ষার অভাবের বিরুদ্ধে কৈলাস নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলন করেছেন। রক্ত ঝরেছে, তবু কৈলাসকে কেউ দমাতে পারেনি। যার ফলে স্বীকৃতি মিলেছে দেশ-বিদেশে। নানা দেশে সক্রিয় ‘গ্লোবাল মার্চ এগেইনস্ট চাইল্ড লেবার’ তার তৈরি। তিনি ডিফেন্ডারস অব ডেমোক্রেসি, মেডেল অব দি ইতালিয়ান সিনেট, রবার্ট এফ কেনেডি ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ার্ডের মতো একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন। তার ব্যক্তিত্ব শিশুর মতো সরল। কৈলাসের নেতৃত্বে ভারতের ৮০ হাজার শিশু শ্রমদাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছে। শিশুশ্রম বন্ধের দাবিতে তিনি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ৫ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৯৯৮ সালে ১০০টি দেশে ৮০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ পদযাত্রা সংগঠিত করেন।
এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ বহু দেশে নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিক্ষা বিস্তার ও শিশুশ্রম বন্ধের পদক্ষেপ নেয়া হয়। শিশুদের শ্রমদাসত্ব ও অশিক্ষার অভিশাপের দায় যেন শোধ করতে চান কৈলাস। তিনি ও তার সহকর্মীরা নিয়মিত হানা দেন কারখানায়, শিশু পাচারের আস্তানায় ও বাল্যবিবাহের ঘাঁটিতে। নানা অত্যাচারের পরও কৈলাসের একজন সহকর্মীকে গুলি করে এবং অন্যজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। অনুজ সহকর্মীরা বেশিরভাগই প্রহৃত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দাসত্ব কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। আমি শিশু অধিকার খর্ব হোক এটা কোনোভাবেই মানতে পারি না।’ নোবেল পুরস্কার ঘোষণার আগের সপ্তাহেও তিনি ছুটে গেছেন শিশুশ্রম ব্যবহারকারী এক কারখানায়। শিশুশ্রম দাসত্ব পাচারের বিরুদ্ধে শিশুশ্রম আন্দোলন অনেক তরুণকে অনুপ্রাণিত করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি জোর দেন রাষ্ট্রের ভূমিকার ওপর। সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে, শিক্ষা মৌলিক মানবাধিকার। এটা দান খয়রাতের বিষয় নয়, এটা কেবল উদারতার ব্যাপার নয়, এটা কেবল উন্নয়ন প্রকল্প নয়। যদি আমরা শিক্ষাকে পণ্য করে তুলি, তাহলে সবচেয়ে ভালো মানের শিক্ষা কিনবে উচ্চ মধ্যবিত্তরা, আর যদি দয়ার ব্যাপার মনে করি, তাহলে জনগণ নিুমানের শিক্ষা পাবে। শিক্ষার অধিকার সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের, অন্য কারও নয়। মালালা ও কৈলাস উভয়ই শিশু ও মেয়েদের অধিকার প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তাদের লক্ষ্য এক ও অভিন্ন।
বাংলাদেশের অগণিত শিশু তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। শিশুদের জন্য আজও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হয়নি। ইদানীং বিদ্যালয়ের ভূমি দখল, প্রভাবশালীদের নানা কর্মকাণ্ড স্কুলের পরিবেশ বিনষ্ট করছে। বহু শিশু খোলা আকাশের নিচে লেখাপড়া করছে। শিশু শিক্ষাক্ষেত্রে এ অবস্থার শিগগির অবসান হওয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে এবারের নোবেল শান্তি পুরস্কার আমাদের আশাবাদী করে। আমরা যেন সব শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে তাদের জন্য সুখী ও সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে পারি।
মো. সিদ্দিকুর রহমান : সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি
নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশনে নিজের ১৬তম জন্মবার্ষিকী পালন অনুষ্ঠানে এক আবেগময় ভাষণ দেন মালালা। ভাষণে প্রতিটি শিশুর জন্য অবৈতনিক শিক্ষা চালুর আবেদন জানান তিনি। প্রতিটি শিশুর শিক্ষার অধিকারের পক্ষে জোরালো বক্তব্য দেন মালালা। জঙ্গিদের সম্পর্কে বলেন, ‘তারা ভেবেছিল বুলেট আমাকে স্তব্ধ করে দেবে, থামিয়ে দেবে। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়েছে। জঙ্গিরা ভেবেছিল তারা আমাকে লক্ষ্য ও আকাক্সক্ষা থেকে বিচ্যুত করবে। কিন্তু তারা আমার জীবনে কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি।’ মালালা বলেন, ‘বই ও কলমকে জঙ্গিরা ভয় পায়। আসুন আমরা প্রতিটি শিশুর হাতে তুলে দিই সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র বই ও কলম। একজন শিশু, একজন শিক্ষক আর একটি বই গোটা পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে।’ গুলিতে আহত হওয়ার পর জনসম্মুখে এটাই তার প্রথম ভাষণ। ভাষণে তিনি আরও বলেন, আগে নারী আন্দোলনকারীরা তাদের অধিকারের কথা তুলে ধরতে পুরুষের শরণাপন্ন হতেন, এখন আমরা মেয়েরাই সেই কাজ করব। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন মালালার জন্মদিনটিকে ‘মালালা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেন।
অপর নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী কৈলাস সত্যার্থীর সঙ্গে ফোনালাপ প্রসঙ্গে মালালা বলেন, আমরা দুজনই ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়তে চাই। আমি চাই দুই দেশই সংলাপে বসুক। পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বদলে শান্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে কথা বলুক। আমরা দুজনই চাই ভারত-পাকিস্তানের নেতারা নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকুক। আমরা সত্যিই শান্তিতে বিশ্বাস করি। দু’দেশের উন্নয়নের জন্য শান্তি ও দুই দেশের সুসম্পর্ক থাকা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।
মালালার তুলনায় কৈলাসের নাম ভারত ছাড়া বিশ্ববাসীর কাছে অতটা পরিচিত নয়। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর বিভিন্ন গণমাধ্যম কৈলাসকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কৈলাস সত্যার্থীর জন্ম ১৯৫৪ সালে ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের বিদিশা শহরে। সত্যার্থী পেশায় একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হলেও ১৯৮৩ সালে গড়ে তোলেন ‘বাচপন বাঁচাও’ আন্দোলন বা শৈশব রক্ষা আন্দোলন নামের একটি সংস্থা। শৈশব রক্ষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিন দশক আগে কৈলাস তার প্রকৌশল জীবনের সমাপ্তি ঘটান। বর্তমানে অলাভজনক এ সংস্থাটি ভারতে শিশু পাচার ও শিশুশ্রম বন্ধে কাজ করে যাচ্ছে। ভারতজুড়ে এ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি ৩০ বছর ধরে পাচার হয়ে যাওয়া শিশুদের উদ্ধারে কাজ করছে। চার মাস আগে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি শিশুদের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে বলেছেন, ‘আমি শিশুদের বন্ধু- এটাই আমার দর্শন। আমার মনে হয় না কারও উচিত তাদের করুণাকে অজ্ঞতা বা মূর্খতার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা। এ ধরনের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। শিশুরা নিষ্পাপ, তারা সরাসরি কথা বলে। তাদের কোনো পক্ষপাত নেই। শিশুদের সরলতাই আমাকে বেশি টানে। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব অন্য অনেক কিছুর চেয়ে আমার কাছে বেশি অর্থপূর্ণ।’ বিদিশার পর উড়িষ্যা ও মধ্যপ্রদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দিল্লি ও মুম্বাইয়ের মতো শহরে শিশু পাচার, শিশুশ্রম ও শিশু শিক্ষার অভাবের বিরুদ্ধে কৈলাস নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলন করেছেন। রক্ত ঝরেছে, তবু কৈলাসকে কেউ দমাতে পারেনি। যার ফলে স্বীকৃতি মিলেছে দেশ-বিদেশে। নানা দেশে সক্রিয় ‘গ্লোবাল মার্চ এগেইনস্ট চাইল্ড লেবার’ তার তৈরি। তিনি ডিফেন্ডারস অব ডেমোক্রেসি, মেডেল অব দি ইতালিয়ান সিনেট, রবার্ট এফ কেনেডি ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ার্ডের মতো একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন। তার ব্যক্তিত্ব শিশুর মতো সরল। কৈলাসের নেতৃত্বে ভারতের ৮০ হাজার শিশু শ্রমদাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছে। শিশুশ্রম বন্ধের দাবিতে তিনি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ৫ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৯৯৮ সালে ১০০টি দেশে ৮০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ পদযাত্রা সংগঠিত করেন।
এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ বহু দেশে নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিক্ষা বিস্তার ও শিশুশ্রম বন্ধের পদক্ষেপ নেয়া হয়। শিশুদের শ্রমদাসত্ব ও অশিক্ষার অভিশাপের দায় যেন শোধ করতে চান কৈলাস। তিনি ও তার সহকর্মীরা নিয়মিত হানা দেন কারখানায়, শিশু পাচারের আস্তানায় ও বাল্যবিবাহের ঘাঁটিতে। নানা অত্যাচারের পরও কৈলাসের একজন সহকর্মীকে গুলি করে এবং অন্যজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। অনুজ সহকর্মীরা বেশিরভাগই প্রহৃত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দাসত্ব কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। আমি শিশু অধিকার খর্ব হোক এটা কোনোভাবেই মানতে পারি না।’ নোবেল পুরস্কার ঘোষণার আগের সপ্তাহেও তিনি ছুটে গেছেন শিশুশ্রম ব্যবহারকারী এক কারখানায়। শিশুশ্রম দাসত্ব পাচারের বিরুদ্ধে শিশুশ্রম আন্দোলন অনেক তরুণকে অনুপ্রাণিত করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি জোর দেন রাষ্ট্রের ভূমিকার ওপর। সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে, শিক্ষা মৌলিক মানবাধিকার। এটা দান খয়রাতের বিষয় নয়, এটা কেবল উদারতার ব্যাপার নয়, এটা কেবল উন্নয়ন প্রকল্প নয়। যদি আমরা শিক্ষাকে পণ্য করে তুলি, তাহলে সবচেয়ে ভালো মানের শিক্ষা কিনবে উচ্চ মধ্যবিত্তরা, আর যদি দয়ার ব্যাপার মনে করি, তাহলে জনগণ নিুমানের শিক্ষা পাবে। শিক্ষার অধিকার সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের, অন্য কারও নয়। মালালা ও কৈলাস উভয়ই শিশু ও মেয়েদের অধিকার প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তাদের লক্ষ্য এক ও অভিন্ন।
বাংলাদেশের অগণিত শিশু তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। শিশুদের জন্য আজও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হয়নি। ইদানীং বিদ্যালয়ের ভূমি দখল, প্রভাবশালীদের নানা কর্মকাণ্ড স্কুলের পরিবেশ বিনষ্ট করছে। বহু শিশু খোলা আকাশের নিচে লেখাপড়া করছে। শিশু শিক্ষাক্ষেত্রে এ অবস্থার শিগগির অবসান হওয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে এবারের নোবেল শান্তি পুরস্কার আমাদের আশাবাদী করে। আমরা যেন সব শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে তাদের জন্য সুখী ও সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে পারি।
মো. সিদ্দিকুর রহমান : সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি
No comments