ডা. শামারুখকে নিয়ে বড় স্বপ্ন ছিল বাবার
পুরো নাম তার শামারুখ মাহজাবীন। পরিবারের সবাই আদর করে ডাকে সুমী। তার স্বভাব, আচার, চলন, পড়াশোনা সবকিছুতেই সু বা ভালোর সমাহার। মেধাবী ছাত্রী, সদ্যই ডাক্তারি পাস করে ইন্টার্নশিপ করছিলেন। নম্রতা, ভদ্রতা, সৌন্দর্যে অনন্য। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অনেকবার পুরস্কৃত হয়েছেন। এমন মেয়েকে নিয়ে বাবা-মা গর্ববোধ করতেই পারেন।
ডা. শামারুখের বাবা নুরুল ইসলামও গর্ব করতেন। তাকে নিয়ে বড় স্বপ্নও দেখতেন- মেয়ে একদিন অনেক বড় ডাক্তার হবে। সারা দেশে নাম ছড়িয়ে পড়বে। দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেবে।কিন্তু তার সেই স্বপ্ন ভেঙে খানখান হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে মোবাইল ফোনে আসা একটি কল নুরুল ইসলামের বুক ভেঙে দিয়েছে। ওই ফোনে তাকে ডা. শামারুখের মৃত্যুর সংবাদ জানিয়েছিলেন তার (শামারুখ) শ্বশুর যশোরের সাবেক সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতান।ডা. শামারুখের বাবা নূরুল ইসলাম বলেন, বড় স্বপ্ন নিয়ে মেয়েকে এমবিবিএস পড়িয়েছি। কিন্তু মেয়েকে তার শ্বশুর-শাশুড়ি চাকরি করতে বাধা দেয়। এমবিবিএস শেষ করে এফসিপিএস করতেও বাধা দেয় তারা। বিসিএসের জন্য ফরম তুলতে চেয়েছিল, সেটাও করতে দেয়া হয়নি তাকে। টিপু সুলতান বলতেন, বাসা থেকে আলাদা হওয়ার জন্য, বিসিএস দিতে চাও তা হবে না। বিসিএসও দেয়া হবে না, এফসিপিএস করতে দেয়া হবে না। খান বাড়ির বউ চাকরি করতে পারবে না।শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ডা. শামারুখের লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে অ্যাম্বুলেন্সযোগে রাতে লাশ নেয়া হয় যশোরের আরোপপুর মোড়ে বাবার বাসায়। লাশ নেয়ার পর স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ডা. শামারুখের লাশ দেখতে আসে শত শত মানুষ। পুরো এলাকায় শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। রাত ৯টার দিকে স্থানীয় কারবালা কবরস্থানে ডা. শামারুখকে দাফন করা হয়।শামারুখের স্বজনরা অভিযোগ করেন, তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর আÍহত্যা বলে অপপ্রচার চালায় শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামী। তার শ্বশুর খান টিপু সুলতান যশোর-৫ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি। বর্তমান সরকারদলীয় সাবেক এমপি হওয়ায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না। প্রভাবশালী মহলের চাপে লাশের ময়নাতদন্ত রিপোর্টই পাল্টে দেয়ার চেষ্টা চলছে।ডা. শামারুখের বন্ধুরা জানান, তিনি ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। অনেকবার পুরস্কৃত হয়েছেন। এছাড়া আচার-আচরণে ভালো হওয়ায় হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে পড়ার সময়ই প্রফেসর ডা. জেসমিন আরা তাকে পুত্রবধূ হিসেবে পছন্দ করেন। ২০১৩ সালের এপ্রিলে পারিবারিকভাবে তার ছেলে হুমায়ুন সুলতানের সঙ্গে ডা. শামারুখের বিয়ে হয়। বিয়ের আগে খান টিপু সুলতান বলেছিলেন, তার ছেলে হুমায়ুন ব্যারিস্টার। কিন্তু বিয়ের পর শামারুখের বাবা জানতে পারেন, হুমায়ুন ব্যারিস্টার নয়। প্রতারণা করে ডা. শামারুখের সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের পর ওই প্রতারণাও মেনে নিয়েছিলেন শামারুখ ও পরিবারের স্বজনরা। কিন্তু বিয়ের কয়েক মাস যেতে না যেতেই ডা. শামারুখের সব স্বাধীনতা খর্ব করে নেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন।শামারুখের লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন ধানমণ্ডি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শরীফুল ইসলাম। রিপোর্টে তিনি বলেন, নিহতের গলার দুই পাশে হালকা নীল রঙের দাগ রয়েছে। বাম হাতের কব্জির নিচে হালকা কাটা দাগ।শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. হাবিবুজ্জামান চৌধুরী ও সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ ডা. শামারুখের লাশের ময়নাতদন্ত করেন। সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, হিস্টোপ্যাথলজি পরীক্ষার জন্য সব নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা শেষে সব জানা যাবে।গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে যখন ডা. শামারুখের লাশের ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে, তখন বড় ভাই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার শাহনুর শরিফ মর্গ চত্বরে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন। একমাত্র ছোট বোনকে হারিয়ে পাগলপ্রায় তিনি। নিকটাত্মীয়রা তাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। শরিফ কান্নাজড়িত কণ্ঠে যুগান্তরকে বলেন, প্রায় দুই বছর আগে মাকে হারিয়েছি। দুনিয়া থেকে বোনও চলে গেল। শামারুখ আমার কয়েক বছরের ছোট। বোন হলেও সে ছিল আমার বন্ধুর মতো। তার মৃত্যু আমি মানতে পারছি না।তিনি জানান, যৌতুকের জন্য দফায় দফায় শামারুখকে নির্যাতন করা হয়েছে। তার সুখের জন্য বাবা নুরুল ইসলাম কয়েক দফায় ঘরের আসবাবপত্র কিনে দেন। তার স্বামী ছিল বেকার। এ কারণে ঘর মোছা থেকে শুরু করে বাসার সব কাজ করতে হতো তাকে। ডাক্তারি পাস ও ইন্টার্নি শেষ করার পরও তাকে চাকরি করতে দেয়নি তারা। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাবাকে প্রায়ই বলত তাকে যশোরে নিয়ে যেতে।শামারুখের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ও সহপাঠী ডা. তানিয়া বলেন, ডা. শামারুখ খুব চাপা স্বভাবের ছিলেন। সব কষ্ট নিজের মধ্যে রাখতেন। অতি সহজে কারও সঙ্গে কথা শেয়ার করত না। তবে কিছু কিছু কথা জানাত আমাকে। তার স্বামী হুমায়ুন সুলতান তাকে প্রচণ্ডভাবে সন্দেহ করত। বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিত না। কোথাও একা যেতে দিত না তাকে। মোবাইল ফোনও চেক করত।তানিয়া বলেন, ইন্টার্নি করার সময় সাধারণত সবাইকেই রাতে ডিউটি করতে হয়। কিন্তু শামারুখের নাইট ডিউটি পড়লেই ঝামেলা করত শ্বশুরবাড়ির লোকজন। বলত নাইট ডিউটি করা যাবে না। আমরা অনেকে বিভিন্ন হাসপাতালে চাকরি করছি, প্র্যাকটিস করছি। অথচ তাকে কোথাও চাকরি ও প্র্যাকটিস করতে দেয়া হতো না। এতকিছুর পরও শামারুখ সব কম্প্রোমাইজ করে চলত। তারপরও তার এমন পরিণতি হল। তার শাশুড়ি আমাদের কলেজের প্রফেসর। একজন প্রফেসর হয়ে কিভাবে এসব করেছে? আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে স্বামী হুমায়ুন ও শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে থাকতেন শামারুখ। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে বাসা থেকে অচেতন অবস্থায় নেয়া হয় সেন্ট্রাল হাসপাতালে। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।নিহতের বাবা প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার রাতে ধানমণ্ডি থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় এক নম্বর আসামি ডা. শামারুখের শাশুড়ি ডা. জেসমিন আরা, দুই নম্বরে আছেন শ্বশুর খান টিপু সুলতান এবং তিন নম্বর আসামি স্বামী হুমায়ুন সুলতান সাদাব। ওই রাতেই হুমায়ুনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে এক ও দুই নম্বর অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেফতার করা হয়নি।ধানমণ্ডি থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক যুগান্তরকে বলেন, মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তে এজাহারভুক্ত এক নম্বর ও দুই নম্বর অভিযুক্ত আসামির সামান্যতম জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদেরও গ্রেফতার করা হবে।তাহলে এক ও দুই নম্বর অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে তিন নম্বর অভিযুক্তকে কোন তদন্তে গ্রেফতার করলেন- এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, যে কারণেই ডা. শামারুখের মৃত্যু হোক না কেন, সেটার জন্য দায়ী স্বামী হুমায়ুন সুলতান। তাদের দাম্পত্য কলহ ছিল বলে হুমায়ুন স্বীকার করেছেন। হুমায়ুন থানায় স্ত্রীর আত্মহত্যা করার খবর জানাতে এসেছিলেন, তাই তাকে থানায় রাখা হয়েছিল। রাতে হত্যা মামলা দায়ের করার পর তাকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার তাকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়। কিন্তু তার রিমান্ড শুনানি হয়নি। ফলে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
ডা. শামারুখের বাবা নুরুল ইসলামও গর্ব করতেন। তাকে নিয়ে বড় স্বপ্নও দেখতেন- মেয়ে একদিন অনেক বড় ডাক্তার হবে। সারা দেশে নাম ছড়িয়ে পড়বে। দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেবে।কিন্তু তার সেই স্বপ্ন ভেঙে খানখান হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে মোবাইল ফোনে আসা একটি কল নুরুল ইসলামের বুক ভেঙে দিয়েছে। ওই ফোনে তাকে ডা. শামারুখের মৃত্যুর সংবাদ জানিয়েছিলেন তার (শামারুখ) শ্বশুর যশোরের সাবেক সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতান।ডা. শামারুখের বাবা নূরুল ইসলাম বলেন, বড় স্বপ্ন নিয়ে মেয়েকে এমবিবিএস পড়িয়েছি। কিন্তু মেয়েকে তার শ্বশুর-শাশুড়ি চাকরি করতে বাধা দেয়। এমবিবিএস শেষ করে এফসিপিএস করতেও বাধা দেয় তারা। বিসিএসের জন্য ফরম তুলতে চেয়েছিল, সেটাও করতে দেয়া হয়নি তাকে। টিপু সুলতান বলতেন, বাসা থেকে আলাদা হওয়ার জন্য, বিসিএস দিতে চাও তা হবে না। বিসিএসও দেয়া হবে না, এফসিপিএস করতে দেয়া হবে না। খান বাড়ির বউ চাকরি করতে পারবে না।শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ডা. শামারুখের লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে অ্যাম্বুলেন্সযোগে রাতে লাশ নেয়া হয় যশোরের আরোপপুর মোড়ে বাবার বাসায়। লাশ নেয়ার পর স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ডা. শামারুখের লাশ দেখতে আসে শত শত মানুষ। পুরো এলাকায় শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। রাত ৯টার দিকে স্থানীয় কারবালা কবরস্থানে ডা. শামারুখকে দাফন করা হয়।শামারুখের স্বজনরা অভিযোগ করেন, তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর আÍহত্যা বলে অপপ্রচার চালায় শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামী। তার শ্বশুর খান টিপু সুলতান যশোর-৫ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি। বর্তমান সরকারদলীয় সাবেক এমপি হওয়ায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না। প্রভাবশালী মহলের চাপে লাশের ময়নাতদন্ত রিপোর্টই পাল্টে দেয়ার চেষ্টা চলছে।ডা. শামারুখের বন্ধুরা জানান, তিনি ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। অনেকবার পুরস্কৃত হয়েছেন। এছাড়া আচার-আচরণে ভালো হওয়ায় হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে পড়ার সময়ই প্রফেসর ডা. জেসমিন আরা তাকে পুত্রবধূ হিসেবে পছন্দ করেন। ২০১৩ সালের এপ্রিলে পারিবারিকভাবে তার ছেলে হুমায়ুন সুলতানের সঙ্গে ডা. শামারুখের বিয়ে হয়। বিয়ের আগে খান টিপু সুলতান বলেছিলেন, তার ছেলে হুমায়ুন ব্যারিস্টার। কিন্তু বিয়ের পর শামারুখের বাবা জানতে পারেন, হুমায়ুন ব্যারিস্টার নয়। প্রতারণা করে ডা. শামারুখের সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের পর ওই প্রতারণাও মেনে নিয়েছিলেন শামারুখ ও পরিবারের স্বজনরা। কিন্তু বিয়ের কয়েক মাস যেতে না যেতেই ডা. শামারুখের সব স্বাধীনতা খর্ব করে নেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন।শামারুখের লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন ধানমণ্ডি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শরীফুল ইসলাম। রিপোর্টে তিনি বলেন, নিহতের গলার দুই পাশে হালকা নীল রঙের দাগ রয়েছে। বাম হাতের কব্জির নিচে হালকা কাটা দাগ।শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. হাবিবুজ্জামান চৌধুরী ও সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ ডা. শামারুখের লাশের ময়নাতদন্ত করেন। সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, হিস্টোপ্যাথলজি পরীক্ষার জন্য সব নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা শেষে সব জানা যাবে।গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে যখন ডা. শামারুখের লাশের ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে, তখন বড় ভাই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার শাহনুর শরিফ মর্গ চত্বরে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন। একমাত্র ছোট বোনকে হারিয়ে পাগলপ্রায় তিনি। নিকটাত্মীয়রা তাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। শরিফ কান্নাজড়িত কণ্ঠে যুগান্তরকে বলেন, প্রায় দুই বছর আগে মাকে হারিয়েছি। দুনিয়া থেকে বোনও চলে গেল। শামারুখ আমার কয়েক বছরের ছোট। বোন হলেও সে ছিল আমার বন্ধুর মতো। তার মৃত্যু আমি মানতে পারছি না।তিনি জানান, যৌতুকের জন্য দফায় দফায় শামারুখকে নির্যাতন করা হয়েছে। তার সুখের জন্য বাবা নুরুল ইসলাম কয়েক দফায় ঘরের আসবাবপত্র কিনে দেন। তার স্বামী ছিল বেকার। এ কারণে ঘর মোছা থেকে শুরু করে বাসার সব কাজ করতে হতো তাকে। ডাক্তারি পাস ও ইন্টার্নি শেষ করার পরও তাকে চাকরি করতে দেয়নি তারা। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাবাকে প্রায়ই বলত তাকে যশোরে নিয়ে যেতে।শামারুখের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ও সহপাঠী ডা. তানিয়া বলেন, ডা. শামারুখ খুব চাপা স্বভাবের ছিলেন। সব কষ্ট নিজের মধ্যে রাখতেন। অতি সহজে কারও সঙ্গে কথা শেয়ার করত না। তবে কিছু কিছু কথা জানাত আমাকে। তার স্বামী হুমায়ুন সুলতান তাকে প্রচণ্ডভাবে সন্দেহ করত। বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিত না। কোথাও একা যেতে দিত না তাকে। মোবাইল ফোনও চেক করত।তানিয়া বলেন, ইন্টার্নি করার সময় সাধারণত সবাইকেই রাতে ডিউটি করতে হয়। কিন্তু শামারুখের নাইট ডিউটি পড়লেই ঝামেলা করত শ্বশুরবাড়ির লোকজন। বলত নাইট ডিউটি করা যাবে না। আমরা অনেকে বিভিন্ন হাসপাতালে চাকরি করছি, প্র্যাকটিস করছি। অথচ তাকে কোথাও চাকরি ও প্র্যাকটিস করতে দেয়া হতো না। এতকিছুর পরও শামারুখ সব কম্প্রোমাইজ করে চলত। তারপরও তার এমন পরিণতি হল। তার শাশুড়ি আমাদের কলেজের প্রফেসর। একজন প্রফেসর হয়ে কিভাবে এসব করেছে? আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে স্বামী হুমায়ুন ও শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে থাকতেন শামারুখ। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে বাসা থেকে অচেতন অবস্থায় নেয়া হয় সেন্ট্রাল হাসপাতালে। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।নিহতের বাবা প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার রাতে ধানমণ্ডি থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় এক নম্বর আসামি ডা. শামারুখের শাশুড়ি ডা. জেসমিন আরা, দুই নম্বরে আছেন শ্বশুর খান টিপু সুলতান এবং তিন নম্বর আসামি স্বামী হুমায়ুন সুলতান সাদাব। ওই রাতেই হুমায়ুনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে এক ও দুই নম্বর অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেফতার করা হয়নি।ধানমণ্ডি থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক যুগান্তরকে বলেন, মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তে এজাহারভুক্ত এক নম্বর ও দুই নম্বর অভিযুক্ত আসামির সামান্যতম জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদেরও গ্রেফতার করা হবে।তাহলে এক ও দুই নম্বর অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে তিন নম্বর অভিযুক্তকে কোন তদন্তে গ্রেফতার করলেন- এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, যে কারণেই ডা. শামারুখের মৃত্যু হোক না কেন, সেটার জন্য দায়ী স্বামী হুমায়ুন সুলতান। তাদের দাম্পত্য কলহ ছিল বলে হুমায়ুন স্বীকার করেছেন। হুমায়ুন থানায় স্ত্রীর আত্মহত্যা করার খবর জানাতে এসেছিলেন, তাই তাকে থানায় রাখা হয়েছিল। রাতে হত্যা মামলা দায়ের করার পর তাকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার তাকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়। কিন্তু তার রিমান্ড শুনানি হয়নি। ফলে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
No comments