কেনিয়ার নারীদের খৎনা আতঙ্ক
কেনিয়ার কতিপয় আদিবাসী গোষ্ঠী এখনও মেনে চলেছে ঝুঁকিপূর্ণ এক চর্চা। তা হলো নারীদের খৎনা প্রথা। তিন বছর আগে এ চর্চা নিষিদ্ধ করে দেয়া হলেও কেনিয়ার এক-চতুর্থাংশেরও বেশি নারীকে ভয়ঙ্কর এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। কেনিয়ার পোকোট উপজাতি গোষ্ঠীর চার তরুণীর খৎনা উপলক্ষে সেখানে আয়োজিত অনুষ্ঠান উঠে এসেছে ডেইলি মেইলের সচিত্র প্রতিবেদনে। অনেক আদিবাসী গোষ্ঠী এ খৎনা প্রক্রিয়াকে মেয়েদের নারী হয়ে রূপান্তর হওয়ার পন্থা হিসেবে বিবেচনা করে। আর শুধু এ প্রক্রিয়ার পরই তারা বিবাহযোগ্য হয় বলে তাদের বিশ্বাস। আইনিভাবে নিষিদ্ধ হলেও এসব আদিবাসীর কাছে আইনের থেকে ঐতিহ্যই বেশি গুরুত্ব বহন করে। কেনিয়ার বারিঙ্গে কাউন্টির পোকোট আদিবাসী গোত্রে চার তরুণীর খৎনা অনুষ্ঠানের আবহ ক্যামেরায় ধারণ করেছেন রয়টার্সের ফটোগ্রাফার সিগফ্রিড মোডোলা। এসব ছবিতে ভীতসন্ত্রস্ত মেয়েদের খৎনা প্রক্রিয়ায় আগে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। খৎনা সম্পন্ন হওয়ার পর পশুর চামড়ায় আবৃত এবং সাদা কালিতে অঙ্কিত অবস্থায় তীব্র যন্ত্রণায় কাতর মেয়েরা বসে থাকে বড় আকৃতির পাথরের ওপর। খৎনা হওয়া চার তরুণীর একজনের পিতা বলেন, এটা একটা ঐতিহ্য যা চিরকাল ধরে চলে আসছে। বিয়ে করবার জন্য মেয়েদের খৎনা করানো হচ্ছে। কেনিয়ার মারিগাট শহর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত গ্রামে বাস বিচ্ছিন্ন এ জনগোষ্ঠীর। রাতের বেলা উজ্জ্বল রঙয়ের চাদর পেঁচিয়ে মেয়েরা কুঁড়েঘরের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে চারপাশে বসে থাকে। স্থানীয় নারীরা নেচে-গেয়ে তাদের সমর্থন যোগায়। পোকোট সম্প্রদায়ে মেয়েদের খৎনার চর্চাটা নিয়মিত হয়ে থাকে। মেয়েদের একজনের মায়ের বিশ্বাস এটা শক্তির প্রতীক। তিনি বলেন, এ যন্ত্রণা তাকে আরও শক্তিশালী বানাবে। সে এখন সম্প্রদায়ের বাকিদের দেখাতে পারবে যে সেও এটা সহ্য করতে পারে। আমি এজন্য আমার মেয়েকে নিয়ে গর্বিত। নিজের মেয়ের খৎনা সম্পন্ন হওয়ার পর তিনি এসব কথা বলেন। নারীদের এ খৎনা প্রক্রিয়ায় গোপনাঙ্গের বাইরের অংশ কেটে ফেলে দেয়া হয় এবং যোনিপথ সেলাই করে দেয়া হয়, যেন যৌন চাহিদা কমে যায়। আর প্রাণঘাতী এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় ভাঙা কাচ থেকে শুরু করে কাঁচি এবং ধারালো ব্লেড দিয়ে। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মোট ২৯টি দেশে ১২ কোটি ৫০ লক্ষাধিক নারীর খৎনা করা হয়েছে। কেনিয়ার বর্তমান আইন অনুযায়ী খৎনা দিতে গিয়ে কোন মেয়ের মৃত্যু হলে যাবজ্জীবন সাজার বিধান রয়েছে। নির্মম এ প্রক্রিয়ায় মেয়েদের শুধু অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে তা-ই নয়, এর সঙ্গে থাকে রক্তক্ষরণ, ভবিষ্যতে সন্তান জন্মদানে জটিলতা এমনকি মৃত্যুর আশঙ্কা। মার্চ মাসে কেনিয়া একটি প্রসিকিউশন ইউনিট স্থাপন করে, যারা বর্তমানে ৫০টি মামলা তদন্ত করছে। কর্মকর্তারা এ প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসীদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে পারবেন বলে আত্মবিশ্বাসী। তবে একইসঙ্গে তারা অবগত যে এটা বড় একটি চ্যালেঞ্জ।
No comments