চিৎকার করে বাঘ তাড়ানো জামাল
জীবনের কোনো না কোনো সময় বাঘের মুখোমুখি হননি—এমন শ্রমজীবী মানুষ সুন্দরবন এলাকায় খুব বেশি নেই। পশুর নদীতীরবর্তী জয়মণি গ্রামে এ ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেকেরই। বছর কয়েক আগে একবার মধ্যরাতে একটি বাঘ কুঁড়েঘরে ঢুকে ৮৩ বছর বয়সী এক বৃদ্ধাকে টেনে নিয়ে যায়। সে রাতের ভয়াবহ স্মৃতি এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় বৃদ্ধার ছেলে প্রায় ৬০ বছর বয়সী কৃষ্ণপদ মণ্ডলকে। কৃষ্ণপদ সম্প্রতি ওই এলাকায় যাওয়া এক বিবিসির সাংবাদিককে বলেন, তাঁর মায়ের মাথায় থাবা মেরেছিল বাঘটি। তিনি গুরুতর জখম অবস্থায় ঘরের বাইরে মাটিতে পড়ে ছিলেন। ওই ঘটনার পর আতঙ্কিত কৃষ্ণপদ সপরিবারে গ্রাম ছেড়ে দূরে একটি পাকা বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। সুন্দরবনসংলগ্ন জনপদগুলোর অধিকাংশ মানুষ জীবিকা অর্জনের জন্য মধু আহরণ, গোলপাতা সংগ্রহ বা মাছ ধরে থাকেন। এ জন্য তাঁদের গভীর জঙ্গলে যেতে হয়। জামাল মোহাম্মদ এ রকমই একজন মানুষ। ১৯৯৭ সালে জামাল মাছ শিকার করতে গিয়ে পড়ে যান তাঁর চেয়েও বড় ও শক্তিশালী শিকারির সামনে। বাঘটি থাবা দিয়ে আঘাত করলেও তিনি ডুবসাঁতার দিয়ে প্রাণে বেঁচে যান।
এলাকার একমাত্র লোক হিসেবে তিনবার বাঘের মুখ থেকে ফিরে আসতে পেরেছেন জামাল। এ কারণে তাঁর নাম লোকজনের মুখে মুখে। সর্বশেষ জামাল বাঘের সামনে পড়েন ২০০৭ সালে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে। দৌড়ে পালাতে গেলে রক্ষা নেই তা ভালোই জানতেন। তখন তিনি স্থিরভাবে প্রাণীটির সামনা-সামনি দাঁড়িয়ে মুখ যতটা সম্ভব বিকৃত করে চিৎকার করতে থাকেন। এতে কাজ হয়। বাঘটি থমকে গিয়ে নিজেও গর্জন করতে থাকে। এর মধ্যে জামালের স্ত্রী গ্রামের লোকজনকে ডেকে আনলে সবাই মিলে শোরগোল তোলে। এত মানুষের সম্মিলিত চেঁচামেচিতে ভড়কে গিয়ে বাঘটি চলে যেতে বাধ্য হয়। জামাল মোহাম্মদ এখনো জঙ্গলে যান। তবে তিনি আগের চেয়ে অনেক বেশি সতর্ক। সুন্দরবনের বাঘেরা অন্যান্য জঙ্গলের বাঘের চেয়ে বেশি আগ্রাসী স্বভাবের। মানুষের হাতে আবাস ধ্বংস হওয়া এবং শিকারের অভাবের কারণেই তাদের আচরণ এ রকম বলে ধারণা করা হয়। সূত্র: বিবিসি
No comments