যশোরে দুই যুবককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গুলি
যশোরে গভীর রাতে দুই যুবককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পায়ে গুলি করে ছিনতাইকারী বানানোর নাটক সাজিয়েছে পুলিশ। গুলিবিদ্ধ দুই যুবক মিজানুর রহমান মিজান ও হাফিজুর রহমান এখন যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুই যুবকের পরিবারের দাবি, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মিজান ও হাফিজুরকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান কোতোয়ালি থানার এসআই সোয়েবের নেতৃত্বে এক দল পুলিশ। এরপর শহরের কালেক্টরেট ভবনের পশ্চিম পাশের নার্সারি পট্টিতে নিয়ে তাদের পায়ে গুলি করা হয়। তবে পুলিশ বলছে তারা দু’জন ছিনতাইকারী।গুলিতে আহত মিজান সদর উপজেলার বাহাদুরপুর পশ্চিমপাড়ার ইকবাল হোসেন বাবুর ছেলে। অপর গুলিবিদ্ধ যুবক হাফিজুর শহরের বারান্দিপাড়া এলাকার হারুন মিস্ত্রির ছেলে।কান্নাজড়িত কণ্ঠে মিজানুরের বাবা অ্যাম্বুল্যান্স চালক ইকবাল হোসেন বাবু যুগান্তরকে জানান, এসআই সোয়েবের নেতৃত্বে ১০-১২ জন পুলিশ গভীর রাতে তার বাড়িতে হানা দেয়। তারা প্রাচীর টপকে বাড়িতে প্রবেশ করে। এরপর দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে পুলিশ তার ছেলে মিজানকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়।তিনি বলেন, মিজানের অপরাধ কী জানতে চাইলে পুলিশ আমাকে হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। পুলিশ বাড়ি থেকে ৪টি মোবাইল ও আমার স্ত্রীর ভ্যানেটি ব্যাগ নিয়ে যায় এবং আসবাবপত্র ভাংচুর করে। প্রায় এক ঘণ্টা পর পুলিশের এক সদস্য আমাকে জানায়, মিজান হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে দেখি মিজানের ডান পায়ের হাঁটুতে গুলি করা হয়েছে।মিজানের বাবা বলেন, আমার ছেলে ছিনতাইকারী নয়। পুলিশ দায় এড়াতে আমার ছেলেকে ছিনতাইকারী বানানোর নাটক করছে। আমার ছেলের নামে কোনো মামলা নেই। তিনি জানান, মিজান এসএসসির নির্বাচনী পরীক্ষায় ফেল করার পর তার সঙ্গে গাড়িতে কাজ করছে।হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মিজান বলেন, দরজা ভাঙ্গার শব্দে আমাদের ঘুম ভাঙে। পুলিশ আমাকে খালি গায়ে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় এবং রাস্তায় নিয়ে চোখ বেঁধে ফেলে। অন্যদিকে হাফিজুরের পরিবারের দাবি, একই রাতে একই স্থানে হাফিজুরকেও গুলি করা হয়। রাত আড়াইটার দিকে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর পুলিশ প্রচার করে বন্দুকযুদ্ধে দুই ছিনতাইকারী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। দুই পরিবারের স্বজনরা এ ঘটনায় জড়িত পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায়।আহত হাফিজুর ইজিবাইকের মিস্ত্রি। তিনি বলেন, পুলিশের ওই দল প্রথমে আমার বাড়িতে আসে। তারা আমার স্ত্রীকে বলে অস্ত্র কই? আমার স্ত্রী বলে, কিসের অস্ত্র। এরপর তারা তাকে গালিগালাজ করে। পরে আমাকে কলেজছাত্র সাইফুল্লাহ হত্যায় জড়িত বলে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তারা মিজানের বাসায় যায়।এ বিষয়ে এসআই সোয়েবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে যা বলার জেলা পুলিশের মুখপাত্র বলবেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও সহকারী পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন যুগান্তরকে বলেন, মিজান ও হাফিজুর ছিনতাইকারী। তারা ছিনতাইয়ের উদ্দেশে ওই এলাকায় অবস্থান করছিল। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তারা বোমা নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশের গুলিতে তারা আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র, গুলি ও মোবাইল সিম উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তবে স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে কোনো বোমা বা গোলাগুলি হওয়ার খবর পাননি।মানবাধিকার সংগঠন রাইট যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, পুলিশ বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গুলি করে থাকলে এটি খুবই দুঃখজনক। যারা এমন বিচারবর্হিভূত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
No comments