চোখ by ফারহানা সুলতানা
সায়মা অপলক এক জোড়া চোখের দিকে চেয়ে আছে। স্থির, অচঞ্চল চোখ। ঘরভর্তি মানুষের কান্নায় পুরো পরিবেশটা থমথমে হয়ে আছে। এখন রাত প্রায় ১০টা। এই ঘণ্টাখানেক আগে মেয়েটা মারা গেছে। ত্রয়ীÑ বছর দশেক হবে। সায়মাদের বাসার মুখোমুখি বিল্ডিংয়ের দোতলায় থাকত ত্রয়ীরা। সায়মা সারা দিন বাসায় না থাকলেও বিষণœœ বারান্দাটা তার চোখেও পড়ত। একরাশ মেঘ জমে থাকত পুরো দোতলায়। আজ জানতে পারল তার কারণ। ত্রয়ী ওর বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে। চার বছর আগে ওর ক্যান্সার ধরা পড়ে। সবভাবেই মেয়েটাকে বাঁচাতে চেয়েছেন তারা, তবু চলেই গেল। সায়মার স্বামী কায়সার পেশায় ডাক্তার বলে এই রাতে ডেকে পাঠিয়েছে। হঠাৎ চমকে ওঠে সায়মাÑ নতুন একদল এসেছেন লাশ দেখতে। সায়মা লক্ষ্য করল এত কান্না-অশ্রুর মাঝে সবচেয়ে শান্ত আছে ত্রয়ীর বাবা-মা। জীবনে বহু চড়াই-উৎরাই মেয়ের জন্য পার করে আজ তারা কান্ত। কেউ একজন লাশকে গোসল করানোর কথা বলছেন, যাতে দ্রুত দাফন সম্পন্ন করা যায়Ñ কেউ বা রাতটা কাটাতে বলছেন। কায়সার এসে দাঁড়ায়-
চলো সায়মা, রাত বাড়ছে। এ সময় তোমার এখানে থাকা ঠিক নয়। সায়মাও তাই ভাবছিল। ত্রয়ীর চোখ জোড়া দেখে কেমন একটা অস্বস্তি ক্রমেই সায়মাকে পেয়ে বসছে। ত্রয়ীর চোখের মণিতে তিলের মতো দুচোখেই দুটো চোখ যেন চিৎকার করে বলছে, আমি আছি... আছি।
আপন গতিতে সময় বয়ে যায়। ত্রয়ীর মৃত্যুর ক’মাস পরই সায়মার কোলজুড়ে আসে এক মেয়েসন্তান। কায়সার নাম রেখেছে মুগ্ধ। ওর চেহারায় সত্যি কী একটা যেন আছে, যা সবাইকেই আকর্ষণ করে। সায়মা মুগ্ধকে দেখে আঁৎকে উঠেছিল- মুগ্ধর চোখ যেন সেই ত্রয়ীর চোখ। সেই এক গড়ন, একই আকার, আর... দুচোখে দুটো তিল। ভয়ে, আতঙ্কে এতটুকু হয়ে যায় সায়মা। কায়সারকে বলি বলি করে বলেছেও কিছুটা। কায়সার শুনে পাত্তাই দেয়নি। সায়মার কেবল মনে হতে থাকে মুগ্ধও থাকবে না। সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে ও। তাই সায়মা তার স্নেহভালোবাসা যেন আরো উজাড় করে দেয় মেয়ের জন্য। চাকরি ছেড়ে মেয়ের প্রতিটা পদক্ষেপে সাক্ষী হতে চায়। মুগ্ধ কিসে আনন্দে থাকবে, তাই তার একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। মনের গভীরে যে ভয় সে লালন করছে তাও বড় হতে থাকে মুগ্ধর সাথে। ত্রয়ী মারা গিয়েছিল দশ বছরের মাথায়। এখন মুগ্ধর বয়স নয় চলছে। সায়মার আচরণ এতটাই অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে যে কায়সার আজকাল প্রায়ই সায়মাকে মনোরোগবিশেষজ্ঞ দেখাতে বলছে। কেউ বুঝতে চায় না... সায়মাও মাঝে মাঝে ভাবে... ঠিক তো, হতেই পারে তার ধারণা ভুলÑ যদি ভুল হয় তবে তার চেয়ে বেশি খুশি আর কেউই হবে না। আর কিছু দিন পরই মুগ্ধর দশম জন্মদিন। সায়মার দৃঢ় বিশ্বাসÑ এই দিনটা যদি মুগ্ধ জয় করতে পারে তবে মুগ্ধকে নিয়ে তার আর ভয় থাকবে না।
এ পৃথিবীটা বড় বিচিত্র। বিচিত্র তার বিশ্বাস। কোনোটা হয়তো অলৌকিকভাবে মানুষের মিলে যায়। কিন্তু সায়মার বিশ্বাস ভুল প্রমাণ করে মুগ্ধ তার দশম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করল। জন্মদিনের আগের কয়েকটা দিন মুগ্ধ যা চাইল তাই কেনা হলো। যা যা সায়মার মন চাইল তাই বানাল। সারা রাত বসে মেয়েকে দেখত সায়মা। অবশেষে সেদিন আসলÑ সারা বাড়ি হইচই। সব আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, সায়মার বন্ধুরাÑ হৈহট্টগোলে কেটে গেল দিন। প্রতিমুহূর্তে সায়মার সজাগ দৃষ্টি মুগ্ধর প্রতি। এই বুঝি মেয়ে মাথা ঘুরে পড়ে। এই বুঝি কেউ ব্যথা দেয়। সবার অজান্তে বাড়ির নিচে গলির মুখে একটি অ্যাম্বুলেন্স সারা দিনের জন্য ভাড়া করে রাখে সায়মা। কোনো কিছুই ঘটে না। অ্যাম্বুলেন্স চলে যায়। চলে যায় সব আগত মেহমান। সায়মা এই প্রথম যেন মন খুলে হাসছে। কত দিন যে একটা পাগলামিকে প্রশ্রয় দিয়েছেÑ এই ভেবে লজ্জাও পেল খানিকটা। সত্যিই কায়সারের তুলনা নেই। এত কিছুর পরও কত সুখ ওর সারা আঙ্গিনাজুড়ে। এখন রাত ১০টা বাজে। কায়সারের আজ নাইট ডিউটি আছে হাসপাতালে। কায়সার বেরিয়ে গেলে মা মেয়েতে বসে উপহার দেখতে শুরু করে। দেখতে দেখতে ঘুমের হাতছানি রাত কেটে সকাল।
মুগ্ধ স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। এই কিছু গুণ হলো কায়সার বাসায় এসেছে। মনটা বেশ বিষণœ। রাতে নাকি একটা ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়েছে। ছেলের বাবা-মা দু’জনেই মারা গেছে! ছেলেটা বেঁচে আছে। তবে একটা হাত ও চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মারাত্মকভাবে। সায়মা আজ এত কিছু শুনেও অস্থির হয় না।
সায়মা কায়সারকে বলল, তাহলে মুগ্ধকে নিয়ে আমি যাই। তুমি বিশ্রাম করো।
ওকে স্কুলে দিয়ে আসি। তুমি গিয়ে নিয়ে এসো। সম্মতি জানায় কায়সার।
রিকশায় মা-মেয়েতে নানা গল্প হয়। বান্ধবীর গল্প, স্কুলের মিমদের গল্প। কে কিভাবে পড়া ফাঁকি দেয় সেই গল্প। কোনো কিছু বোঝার আগেই একটি দ্রুতগামী বাস আঘাত করে ওদের রিকশাকে। সায়মার যখন জ্ঞান ফেরে তখন সে নিজেকে হাসপাতালের বিছানায় আবিষ্কার করে। কায়সার নেই... পাশে সায়মার মা বসে। আরো বহু চেনা মুখ দেখতে পায় সে।
মা, মুগ্ধ কই। ও ভালো আছে তো?
মায়ের মুখ থমথমে। উঠে চলে যান তিনি। উঠে বসে সায়মা। নার্স... না-র্স... ডা: কায়সারকে, আর আমার মেয়েকে ডাকুন। জলদি... নার্স মেয়েটি চলে যায়। কিছুক্ষণ পর কায়সার আসে।
কায়সার, মুগ্ধ কোথায়?
আছে তুমি শোও।
আছে তো... কোথায়? ও কি বেশি ব্যথা পেল। ইস... বলো না কত নম্বর বেডে? বলো? আমি যাই ও একা...
সত্যি যেতে চাও!
চলো তো...
কায়সার সায়মাকে নিয়ে যায়... ওটির মুখে একটি স্ট্রেচারের সামনে। দেখো...
কই? মুগ্ধ কোথায়?
কায়সার কাপড় সরিয়ে দেখায় মুগ্ধকে, রক্তে ভেসে গেছে ছোট্ট শরীর। চেয়ে আছে এক জোড়া চোখ... সায়মা শোনে সেই কণ্ঠÑ আমি আছি... আছি।
কয়েকটি ঘণ্টা পার হয়েছে মাত্র। সায়মার মনে হয় কয়েক যুগ। বারান্দায় বসে আছে সে। একটু আগে জ্ঞান ফিরেছে। কায়সার খুবই ব্যস্ত। আত্মীয়রা লাশ হস্তান্তরের কাজে আছে। কায়সারকে সেই ছেলেটির অপারেশন করতে হবে। এত কিছুর মাঝে কায়সার একটি কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলে। মুগ্ধর চোখ ছেলেটির চোখে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয় সে। একটা জীবন বাঁচবে। ডাক্তার হয়ে নিজের মেয়েকে তো বাঁচাতে পারেনি সে।
তিন বছর পর। সায়মা বারান্দায় বসে। কলিংবেল বাজে... কায়সার দেখো তো কে? ওই ঘটনার পর সায়মা কেমন শান্ত হয়ে গেছে। কোনো কিছুই যে তার আর হারানোর নেই। কায়সার দরজা খুলে দেখে সীমান্ত দাঁড়িয়ে। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর ওর অনেকটা দায়িত্ব কায়সার বহন করছে। চেম্বারে গিয়ে দেখা করলেও বাসায় কখনো আসেনি ছেলেটি।
কী, সীমান্ত? কেমন আছো, বাবা?
এই তো আঙ্কেল, ভালো আছি। একটা খবর দিতে আসলাম। চেম্বারে যেতাম কিন্তু আজ তো আপনি বসবেন না তাই নানুকে নিয়ে আসলাম। ওহ, তাই? বলো তো কী ব্যাপার?
আজ আমার জন্মদিন। কখনো তো পালন করা হয় না। বন্ধুরা খুব ধরল, আর নানুও রাজি হয়ে গেলÑ
কে, কায়সার?
সীমান্ত... এসো না সায়মা... বসো এখানে একটু। সায়মা এই প্রথম সীমান্তকে দেখল। দেখেই ওর সারা শরীর কেঁপে উঠল। সেই চোখ। সায়মার হাতে একটা বই ছিল, খসে পড়ল। দ্রুত চলে গেল ভেতরে।
সীমান্তরা চলে গেলে সায়মা কায়সারকে অবাক স্বরে জিজ্ঞেস করল, ওর চোখ দু’টি!
গলাটা কাঁপল কায়সারের। ওই চোখ দুটো মুগ্ধর ।
কী বলছ? কেন? কেন তুমি এমন করলে? ওই চোখ অভিশপ্ত? কেন করলে? কেন? অস্থির হয়ে উঠেছে সায়মা... আজ ছেলেটার জন্মদিন বললেÑ কততম?
জানি না তো... ভয়ে-আতঙ্কে জবাব দিলো কায়সার!
চলো সায়মা, রাত বাড়ছে। এ সময় তোমার এখানে থাকা ঠিক নয়। সায়মাও তাই ভাবছিল। ত্রয়ীর চোখ জোড়া দেখে কেমন একটা অস্বস্তি ক্রমেই সায়মাকে পেয়ে বসছে। ত্রয়ীর চোখের মণিতে তিলের মতো দুচোখেই দুটো চোখ যেন চিৎকার করে বলছে, আমি আছি... আছি।
আপন গতিতে সময় বয়ে যায়। ত্রয়ীর মৃত্যুর ক’মাস পরই সায়মার কোলজুড়ে আসে এক মেয়েসন্তান। কায়সার নাম রেখেছে মুগ্ধ। ওর চেহারায় সত্যি কী একটা যেন আছে, যা সবাইকেই আকর্ষণ করে। সায়মা মুগ্ধকে দেখে আঁৎকে উঠেছিল- মুগ্ধর চোখ যেন সেই ত্রয়ীর চোখ। সেই এক গড়ন, একই আকার, আর... দুচোখে দুটো তিল। ভয়ে, আতঙ্কে এতটুকু হয়ে যায় সায়মা। কায়সারকে বলি বলি করে বলেছেও কিছুটা। কায়সার শুনে পাত্তাই দেয়নি। সায়মার কেবল মনে হতে থাকে মুগ্ধও থাকবে না। সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে ও। তাই সায়মা তার স্নেহভালোবাসা যেন আরো উজাড় করে দেয় মেয়ের জন্য। চাকরি ছেড়ে মেয়ের প্রতিটা পদক্ষেপে সাক্ষী হতে চায়। মুগ্ধ কিসে আনন্দে থাকবে, তাই তার একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। মনের গভীরে যে ভয় সে লালন করছে তাও বড় হতে থাকে মুগ্ধর সাথে। ত্রয়ী মারা গিয়েছিল দশ বছরের মাথায়। এখন মুগ্ধর বয়স নয় চলছে। সায়মার আচরণ এতটাই অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে যে কায়সার আজকাল প্রায়ই সায়মাকে মনোরোগবিশেষজ্ঞ দেখাতে বলছে। কেউ বুঝতে চায় না... সায়মাও মাঝে মাঝে ভাবে... ঠিক তো, হতেই পারে তার ধারণা ভুলÑ যদি ভুল হয় তবে তার চেয়ে বেশি খুশি আর কেউই হবে না। আর কিছু দিন পরই মুগ্ধর দশম জন্মদিন। সায়মার দৃঢ় বিশ্বাসÑ এই দিনটা যদি মুগ্ধ জয় করতে পারে তবে মুগ্ধকে নিয়ে তার আর ভয় থাকবে না।
এ পৃথিবীটা বড় বিচিত্র। বিচিত্র তার বিশ্বাস। কোনোটা হয়তো অলৌকিকভাবে মানুষের মিলে যায়। কিন্তু সায়মার বিশ্বাস ভুল প্রমাণ করে মুগ্ধ তার দশম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করল। জন্মদিনের আগের কয়েকটা দিন মুগ্ধ যা চাইল তাই কেনা হলো। যা যা সায়মার মন চাইল তাই বানাল। সারা রাত বসে মেয়েকে দেখত সায়মা। অবশেষে সেদিন আসলÑ সারা বাড়ি হইচই। সব আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, সায়মার বন্ধুরাÑ হৈহট্টগোলে কেটে গেল দিন। প্রতিমুহূর্তে সায়মার সজাগ দৃষ্টি মুগ্ধর প্রতি। এই বুঝি মেয়ে মাথা ঘুরে পড়ে। এই বুঝি কেউ ব্যথা দেয়। সবার অজান্তে বাড়ির নিচে গলির মুখে একটি অ্যাম্বুলেন্স সারা দিনের জন্য ভাড়া করে রাখে সায়মা। কোনো কিছুই ঘটে না। অ্যাম্বুলেন্স চলে যায়। চলে যায় সব আগত মেহমান। সায়মা এই প্রথম যেন মন খুলে হাসছে। কত দিন যে একটা পাগলামিকে প্রশ্রয় দিয়েছেÑ এই ভেবে লজ্জাও পেল খানিকটা। সত্যিই কায়সারের তুলনা নেই। এত কিছুর পরও কত সুখ ওর সারা আঙ্গিনাজুড়ে। এখন রাত ১০টা বাজে। কায়সারের আজ নাইট ডিউটি আছে হাসপাতালে। কায়সার বেরিয়ে গেলে মা মেয়েতে বসে উপহার দেখতে শুরু করে। দেখতে দেখতে ঘুমের হাতছানি রাত কেটে সকাল।
মুগ্ধ স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। এই কিছু গুণ হলো কায়সার বাসায় এসেছে। মনটা বেশ বিষণœ। রাতে নাকি একটা ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়েছে। ছেলের বাবা-মা দু’জনেই মারা গেছে! ছেলেটা বেঁচে আছে। তবে একটা হাত ও চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মারাত্মকভাবে। সায়মা আজ এত কিছু শুনেও অস্থির হয় না।
সায়মা কায়সারকে বলল, তাহলে মুগ্ধকে নিয়ে আমি যাই। তুমি বিশ্রাম করো।
ওকে স্কুলে দিয়ে আসি। তুমি গিয়ে নিয়ে এসো। সম্মতি জানায় কায়সার।
রিকশায় মা-মেয়েতে নানা গল্প হয়। বান্ধবীর গল্প, স্কুলের মিমদের গল্প। কে কিভাবে পড়া ফাঁকি দেয় সেই গল্প। কোনো কিছু বোঝার আগেই একটি দ্রুতগামী বাস আঘাত করে ওদের রিকশাকে। সায়মার যখন জ্ঞান ফেরে তখন সে নিজেকে হাসপাতালের বিছানায় আবিষ্কার করে। কায়সার নেই... পাশে সায়মার মা বসে। আরো বহু চেনা মুখ দেখতে পায় সে।
মা, মুগ্ধ কই। ও ভালো আছে তো?
মায়ের মুখ থমথমে। উঠে চলে যান তিনি। উঠে বসে সায়মা। নার্স... না-র্স... ডা: কায়সারকে, আর আমার মেয়েকে ডাকুন। জলদি... নার্স মেয়েটি চলে যায়। কিছুক্ষণ পর কায়সার আসে।
কায়সার, মুগ্ধ কোথায়?
আছে তুমি শোও।
আছে তো... কোথায়? ও কি বেশি ব্যথা পেল। ইস... বলো না কত নম্বর বেডে? বলো? আমি যাই ও একা...
সত্যি যেতে চাও!
চলো তো...
কায়সার সায়মাকে নিয়ে যায়... ওটির মুখে একটি স্ট্রেচারের সামনে। দেখো...
কই? মুগ্ধ কোথায়?
কায়সার কাপড় সরিয়ে দেখায় মুগ্ধকে, রক্তে ভেসে গেছে ছোট্ট শরীর। চেয়ে আছে এক জোড়া চোখ... সায়মা শোনে সেই কণ্ঠÑ আমি আছি... আছি।
কয়েকটি ঘণ্টা পার হয়েছে মাত্র। সায়মার মনে হয় কয়েক যুগ। বারান্দায় বসে আছে সে। একটু আগে জ্ঞান ফিরেছে। কায়সার খুবই ব্যস্ত। আত্মীয়রা লাশ হস্তান্তরের কাজে আছে। কায়সারকে সেই ছেলেটির অপারেশন করতে হবে। এত কিছুর মাঝে কায়সার একটি কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলে। মুগ্ধর চোখ ছেলেটির চোখে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয় সে। একটা জীবন বাঁচবে। ডাক্তার হয়ে নিজের মেয়েকে তো বাঁচাতে পারেনি সে।
তিন বছর পর। সায়মা বারান্দায় বসে। কলিংবেল বাজে... কায়সার দেখো তো কে? ওই ঘটনার পর সায়মা কেমন শান্ত হয়ে গেছে। কোনো কিছুই যে তার আর হারানোর নেই। কায়সার দরজা খুলে দেখে সীমান্ত দাঁড়িয়ে। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর ওর অনেকটা দায়িত্ব কায়সার বহন করছে। চেম্বারে গিয়ে দেখা করলেও বাসায় কখনো আসেনি ছেলেটি।
কী, সীমান্ত? কেমন আছো, বাবা?
এই তো আঙ্কেল, ভালো আছি। একটা খবর দিতে আসলাম। চেম্বারে যেতাম কিন্তু আজ তো আপনি বসবেন না তাই নানুকে নিয়ে আসলাম। ওহ, তাই? বলো তো কী ব্যাপার?
আজ আমার জন্মদিন। কখনো তো পালন করা হয় না। বন্ধুরা খুব ধরল, আর নানুও রাজি হয়ে গেলÑ
কে, কায়সার?
সীমান্ত... এসো না সায়মা... বসো এখানে একটু। সায়মা এই প্রথম সীমান্তকে দেখল। দেখেই ওর সারা শরীর কেঁপে উঠল। সেই চোখ। সায়মার হাতে একটা বই ছিল, খসে পড়ল। দ্রুত চলে গেল ভেতরে।
সীমান্তরা চলে গেলে সায়মা কায়সারকে অবাক স্বরে জিজ্ঞেস করল, ওর চোখ দু’টি!
গলাটা কাঁপল কায়সারের। ওই চোখ দুটো মুগ্ধর ।
কী বলছ? কেন? কেন তুমি এমন করলে? ওই চোখ অভিশপ্ত? কেন করলে? কেন? অস্থির হয়ে উঠেছে সায়মা... আজ ছেলেটার জন্মদিন বললেÑ কততম?
জানি না তো... ভয়ে-আতঙ্কে জবাব দিলো কায়সার!
No comments