স্মরণ : কথাশিল্পী সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর জন্ম চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহরে, ১৫ আগস্ট, ১৯২২ সালে। তাদের আদি নিবাস ফেনী জেলায়। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ আহমদউল্লাহ তার পিতা। পিতামহ ছিলেন একজন আলেম। ফেনী হাইস্কুলে পড়ার সময়ে সাহিত্য প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে। কুড়িগ্রাম হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯৩৯), ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ (১৯৪১), ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে ডিস্টিংশনসহ বিএ (১৯৪৩) পাস করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে এমএ কাস পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ১৯৪৫ সালে কলকাতার ইংরেজি দৈনিক স্টেটসম্যান পত্রিকার সহসম্পাদক পদে যোগ দেন। দেশ বিভাগের পর ঢাকা বেতার কেন্দ্রের সহকারী বার্তা সম্পাদক পদে নিযুক্ত হন। রেডিও পাকিস্তান করাচি কেন্দ্রের বার্তা সম্পাদক (১৯৫০-১৯৫১) এবং নয়াদিল্লি, সিডনি, জাকার্তা ও লন্ডনে পাকিস্তান দূতাবাসের প্রেস অ্যাটাশে (১৯৫১-১৯৬০) ছিলেন। প্যারিসে পাকিস্তান দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি (১৯৬০-১৯৬৭) এবং ইউনেস্কোর প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট ছিলেন। ফরাসি রমণী অ্যান মারিকে বিয়ে করেন (৩ অক্টোবর ১৯৫৬)। তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয় ছিলেন। বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার ব্যক্তিজীবন ও সমাজসমস্যার প্রেক্ষাপটে কুসংস্কার, মূল্যবোধের বিপর্যয় এবং স্খলন পতনের আলেখ্য এতে উজ্জ্বলভাবে পরিস্ফুট। প্রকাশিত গ্রন্থ : উপন্যাসÑ লালসালু (১৯৪৮), চাঁদের অমাবস্যা (১৯৬৪), কাঁদো নদী কাঁদো (১৯৬৮)। ছোটগল্পÑ নয়নচারা (১৯৫১), দুই তীর (১৯৬৫)। গল্পসমগ্র (১৯৭২)। নাটকÑ বহিপীর (১৯৬০), তরঙ্গভঙ্গ (১৩৭১), সুড়ঙ্গ (১৯৬৪)। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক খ্যাতি অর্জনে সক্ষম হন প্রথম উপন্যাস লালসালুকে কেন্দ্র করেই। উপন্যাসটির ফরাসি অনুবাদ L Arbre Sams Maeme প্রকাশিত হয় ১৯৬১ সালে এবং ইংরেজি অনুবাদ (Tree Without Roots) ১৯৬৭ সালে। বাংলাদেশের কথাসাহিত্যকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার ক্ষেত্রে তার পরিশ্রম, সাধনা ও সাফল্য বিপুল। আন্তর্জাতিক লেখক সংস্থা পিইএন পুরস্কার (১৯৫৫) ছাড়াও উপন্যাসে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬১), আদমজী পুরস্কার (১৯৬৫), একুশের পদক (১৯৮৩-মরণোত্তর) লাভ করেছেন। ১০ অক্টোবর ১৯৭১ সালে প্যারিসে ইন্তেকাল করেন। তিনি একজন বিশিষ্ট কারুশিল্পীও ছিলেন।
No comments