ভাষা আন্দোলনের একজন নায়কের বিদায় by মীযানুল করীম
সময়টা ১৯৭২ সালের শেষ দিক সম্ভবত। ফেনী শহরে আমাদের বাসা থেকে বেরিয়েছিলাম মর্নিং ওয়াকে। কলেজে আমার সিনিয়র ছাত্র, বাংলা ছাত্র ইউনিয়নের সংগঠক মহী ভাইয়ের সাথে পথে দেখা। জানালেন, ‘মতিন সাহেব গ্রেফতার হয়েছেন’। রাজশাহীর দিকে কোনো এক জায়গায় তাকে রক্ষীবাহিনী আটক করেছিল। এরপর কারাগারে কেটেছে তার পাঁচটি বছর।
‘মতিন সাহেব’ মানে কমরেড আবদুল মতিন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার অব্যবহিত পরবর্তী সেই অস্থির সময়ে তিনি চীনপন্থী কমিউনিস্টদের আন্ডারগ্রাউন্ড ‘মতিন-আলাউদ্দিন’ গ্রুপের নেতা। দু’জনই সুদীর্ঘ গোপন রাজনৈতিক তৎপরতা এবং সশস্ত্র আন্দোলনের কারণে তত দিনে কিংবদন্তি। তখন আমাদের মতো নবীন প্রজন্ম তার ‘ভাষা মতিন’ পরিচিতি সম্পর্কে বেশি কিছু জানত না।
সেই অকুতোভয় ভাষা সেনাপতি, আজীবন সংগ্রামী, মেহনতি মানুষের শোষণ মুক্তির অন্যতম প্রবক্তা, পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদের বিরোধী আন্দোলনের একজন অগ্রসেনা আবদুল মতিন গত বুধবার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত গুরুতর অসুস্থতায় ভুগছিলেন।
মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে আবদুল মতিন বিশেষত কৃষকদের সংগঠিত করার কাজ করেছেন। ১৯৫৭ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে আলাদা হয়ে পৃথক দল গঠন করেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা ভাসানী। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নামের দলটি গঠনের শুরু থেকে ভাসানীর সাথে সক্রিয় ছিলেন আবদুল মতিন। ১৯৫৮ সালের গাইবান্ধার ফুলছড়ি ঘাটে মওলানা ভাসানী আহূত বিশাল কৃষক সমাবেশে গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতি। মতিন এর যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব নেন।
বিশিষ্ট কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ ১৯৬৮-৬৯ সালে চীনপন্থী মতিন-আলাউদ্দিন গ্রুপের কর্মী ছিলেন। তখন তাদের ‘নকশালপন্থী’ নীতি তার ভালো না লাগলেও তিনি মতিন সাহেবের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত স্মৃতিচারণে আবুল মকসুদ বলেছেন, নিজের ভুল স্বীকার করতে তিনি সঙ্কোচ বোধ করতেন না। তার কমিউনিস্ট সহকর্মীদের বেশির ভাগ কপট, সুবিধাবাদী ও ক্ষমতালোভী বলে মকসুদ অভিযোগ করেছেন। বলেছেন, ‘আবদুল মতিনের কোনো তুলনা চলে না এদের সাথে’।
আবদুল মতিন শুধু ভাষাসৈনিক নন, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সেনাপতিদের একজন ছিলেন। কিন্তু ছিলেন বরাবর প্রচারবিমুখ। তা ছাড়া ভাষা আন্দোলনের অবদানকে রাজনৈতিক স্বার্থে অপব্যবহারের চিন্তা করেননি কোনো দিন। এ অবস্থায় আবদুল মতিনের সে অবদান সম্পর্কে অনেকেই বিশদ জানেন না এবং তিনি যথেষ্ট স্বীকৃতি ও মর্যাদা পাননি। ১৯৪৮ সালে প্রথমবার বিস্ফোরিত এবং ’৫২ সালে তুঙ্গে ওঠা মহান ভাষা আন্দোলনের এই গোটা সময়েই মতিন সামনের সারিতে থেকে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন। তখনকার বেশির ভাগ আন্দোলনকারী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কিংবা সঙ্কীর্ণ দলীয় স্বার্থে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি জানাননি। এটা ছিল তাদের দেশপ্রেম ও জাতিসত্তার তাগিদ। আবদুল মতিন তখনো বামপন্থী রাজনীতির দীক্ষা নেননি। ১৯৫২ সালে গ্রেফতার হয়ে মতিন জেলে যান। কারাগারে বেশ কয়েকজন বামপন্থী নেতার সান্নিধ্যে এসে তিনি পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে পার্টির দ্বিধাবিভক্তি ঘটলে তিনি ভাসানীর ঘনিষ্ঠ তথা চীনপন্থী অংশে শামিল হন। এরা মতাদর্শগতভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নকে সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ এবং ভারতকে আগ্রাসী সম্প্রসারণবাদ বলে বিশ্বাস করতেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আবদুল মতিনরা এক দিকে পাকিস্তানি জান্তার বিরুদ্ধে লড়েছেন, অপর দিকে ভারতের ভূমিকাকেও মেনে নেননি। তখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে এবং বাংলাদেশ আমলে রক্ষীবাহিনীর হাতে তার আপনজন নিহত হয়েছেন। আবদুল মতিন তার দীর্ঘ দিনের সহযোদ্ধাদের অনেকের নীতিবিচ্যুতি, আদর্শিক পদস্খলন, সুবিধাবাদী প্রবণতা দেখেছেন। নিজে কখনো সে পথে পা বাড়াননি। দলীয় অহমিকা বা সঙ্কীর্ণতার বাইরে থেকে তিনি দেশ-জাতির দুর্দিনে সাহসী বক্তব্য দিয়েছেন। সরকার কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে কিংবা বামপন্থীদের বড় অংশ কী ভাববে, এসব তার বিবেচনায় ছিল না। এ দেশে সমাজতন্ত্রের প্রবক্তাদের একটা বড় অংশ বিশেষ দেশ, গোষ্ঠী বা দলের কাছে আত্মবিক্রীত। আবদুল মতিন এমন অবমাননাকর প্রবণতা থেকে ছিলেন মুক্ত।
আবদুল মতিন বিশেষত গত কয়েক বছরে গণতন্ত্রহীনতা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, দলীয়করণ, শোষণসহ জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ইস্যুতে সৎ ও সাহসী অভিমত দিয়ে দেশপ্রেমিক মহলের সবিশেষ শ্রদ্ধেয় হয়ে উঠেছিলেন। জাতির স্বার্থে তিক্ত কঠোর সত্য উচ্চারণে পিছপা হননি বার্ধক্যের নিদারুণ রুগ্ণতার মাঝেও। তিনি একাধারে লুটেরা পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র, সাম্প্রদায়িকতা, উগ্র জাতীয়তাবাদ, নির্বাচিত স্বৈরাচারÑ সবার তীব্র সমালোচনা করেছেন।
আশির দশকের গোড়ার দিকে সাংবাদিক মোস্তফা কামাল অনেক ভাষাসৈনিকের বিস্তারিত সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। এগুলো ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয়েছিল (অধুনালুপ্ত) মাসিক ঢাকা ডাইজেস্টে। আবদুল মতিনের সাক্ষাৎকারও ছিল এর মধ্যে। তিনি বলেছিলেন অনেক অজানা কথা। তখনই প্রথম তার সম্পর্কে বিশদভাবে জানার সুযোগ ঘটে আমার মতো অনেকের। তার মৃত্যুর পর এখন ভাষাসৈনিকদের যে ক’জন জীবিত আছেন, তারা প্রায় সবাই বার্ধক্যের ভারে অসুস্থ।
ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার উদ্যোগে কয়েকজন ভাষাসৈনিকের নামে সড়কের নামকরণ হয়েছে। ধানমন্ডিতে আবদুল মতিন সড়কের মাথায় শোভা পাচ্ছে তার প্রতিকৃতি এবং ভাষা আন্দোলনে অবদানের সংক্ষিপ্ত তথ্য। তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান দেখানো এখন সময়ের দাবি।
‘মতিন সাহেব’ মানে কমরেড আবদুল মতিন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার অব্যবহিত পরবর্তী সেই অস্থির সময়ে তিনি চীনপন্থী কমিউনিস্টদের আন্ডারগ্রাউন্ড ‘মতিন-আলাউদ্দিন’ গ্রুপের নেতা। দু’জনই সুদীর্ঘ গোপন রাজনৈতিক তৎপরতা এবং সশস্ত্র আন্দোলনের কারণে তত দিনে কিংবদন্তি। তখন আমাদের মতো নবীন প্রজন্ম তার ‘ভাষা মতিন’ পরিচিতি সম্পর্কে বেশি কিছু জানত না।
সেই অকুতোভয় ভাষা সেনাপতি, আজীবন সংগ্রামী, মেহনতি মানুষের শোষণ মুক্তির অন্যতম প্রবক্তা, পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদের বিরোধী আন্দোলনের একজন অগ্রসেনা আবদুল মতিন গত বুধবার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত গুরুতর অসুস্থতায় ভুগছিলেন।
মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে আবদুল মতিন বিশেষত কৃষকদের সংগঠিত করার কাজ করেছেন। ১৯৫৭ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে আলাদা হয়ে পৃথক দল গঠন করেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা ভাসানী। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নামের দলটি গঠনের শুরু থেকে ভাসানীর সাথে সক্রিয় ছিলেন আবদুল মতিন। ১৯৫৮ সালের গাইবান্ধার ফুলছড়ি ঘাটে মওলানা ভাসানী আহূত বিশাল কৃষক সমাবেশে গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতি। মতিন এর যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব নেন।
বিশিষ্ট কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ ১৯৬৮-৬৯ সালে চীনপন্থী মতিন-আলাউদ্দিন গ্রুপের কর্মী ছিলেন। তখন তাদের ‘নকশালপন্থী’ নীতি তার ভালো না লাগলেও তিনি মতিন সাহেবের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত স্মৃতিচারণে আবুল মকসুদ বলেছেন, নিজের ভুল স্বীকার করতে তিনি সঙ্কোচ বোধ করতেন না। তার কমিউনিস্ট সহকর্মীদের বেশির ভাগ কপট, সুবিধাবাদী ও ক্ষমতালোভী বলে মকসুদ অভিযোগ করেছেন। বলেছেন, ‘আবদুল মতিনের কোনো তুলনা চলে না এদের সাথে’।
আবদুল মতিন শুধু ভাষাসৈনিক নন, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সেনাপতিদের একজন ছিলেন। কিন্তু ছিলেন বরাবর প্রচারবিমুখ। তা ছাড়া ভাষা আন্দোলনের অবদানকে রাজনৈতিক স্বার্থে অপব্যবহারের চিন্তা করেননি কোনো দিন। এ অবস্থায় আবদুল মতিনের সে অবদান সম্পর্কে অনেকেই বিশদ জানেন না এবং তিনি যথেষ্ট স্বীকৃতি ও মর্যাদা পাননি। ১৯৪৮ সালে প্রথমবার বিস্ফোরিত এবং ’৫২ সালে তুঙ্গে ওঠা মহান ভাষা আন্দোলনের এই গোটা সময়েই মতিন সামনের সারিতে থেকে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন। তখনকার বেশির ভাগ আন্দোলনকারী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কিংবা সঙ্কীর্ণ দলীয় স্বার্থে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি জানাননি। এটা ছিল তাদের দেশপ্রেম ও জাতিসত্তার তাগিদ। আবদুল মতিন তখনো বামপন্থী রাজনীতির দীক্ষা নেননি। ১৯৫২ সালে গ্রেফতার হয়ে মতিন জেলে যান। কারাগারে বেশ কয়েকজন বামপন্থী নেতার সান্নিধ্যে এসে তিনি পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে পার্টির দ্বিধাবিভক্তি ঘটলে তিনি ভাসানীর ঘনিষ্ঠ তথা চীনপন্থী অংশে শামিল হন। এরা মতাদর্শগতভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নকে সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ এবং ভারতকে আগ্রাসী সম্প্রসারণবাদ বলে বিশ্বাস করতেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আবদুল মতিনরা এক দিকে পাকিস্তানি জান্তার বিরুদ্ধে লড়েছেন, অপর দিকে ভারতের ভূমিকাকেও মেনে নেননি। তখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে এবং বাংলাদেশ আমলে রক্ষীবাহিনীর হাতে তার আপনজন নিহত হয়েছেন। আবদুল মতিন তার দীর্ঘ দিনের সহযোদ্ধাদের অনেকের নীতিবিচ্যুতি, আদর্শিক পদস্খলন, সুবিধাবাদী প্রবণতা দেখেছেন। নিজে কখনো সে পথে পা বাড়াননি। দলীয় অহমিকা বা সঙ্কীর্ণতার বাইরে থেকে তিনি দেশ-জাতির দুর্দিনে সাহসী বক্তব্য দিয়েছেন। সরকার কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে কিংবা বামপন্থীদের বড় অংশ কী ভাববে, এসব তার বিবেচনায় ছিল না। এ দেশে সমাজতন্ত্রের প্রবক্তাদের একটা বড় অংশ বিশেষ দেশ, গোষ্ঠী বা দলের কাছে আত্মবিক্রীত। আবদুল মতিন এমন অবমাননাকর প্রবণতা থেকে ছিলেন মুক্ত।
আবদুল মতিন বিশেষত গত কয়েক বছরে গণতন্ত্রহীনতা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, দলীয়করণ, শোষণসহ জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ইস্যুতে সৎ ও সাহসী অভিমত দিয়ে দেশপ্রেমিক মহলের সবিশেষ শ্রদ্ধেয় হয়ে উঠেছিলেন। জাতির স্বার্থে তিক্ত কঠোর সত্য উচ্চারণে পিছপা হননি বার্ধক্যের নিদারুণ রুগ্ণতার মাঝেও। তিনি একাধারে লুটেরা পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র, সাম্প্রদায়িকতা, উগ্র জাতীয়তাবাদ, নির্বাচিত স্বৈরাচারÑ সবার তীব্র সমালোচনা করেছেন।
আশির দশকের গোড়ার দিকে সাংবাদিক মোস্তফা কামাল অনেক ভাষাসৈনিকের বিস্তারিত সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। এগুলো ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয়েছিল (অধুনালুপ্ত) মাসিক ঢাকা ডাইজেস্টে। আবদুল মতিনের সাক্ষাৎকারও ছিল এর মধ্যে। তিনি বলেছিলেন অনেক অজানা কথা। তখনই প্রথম তার সম্পর্কে বিশদভাবে জানার সুযোগ ঘটে আমার মতো অনেকের। তার মৃত্যুর পর এখন ভাষাসৈনিকদের যে ক’জন জীবিত আছেন, তারা প্রায় সবাই বার্ধক্যের ভারে অসুস্থ।
ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার উদ্যোগে কয়েকজন ভাষাসৈনিকের নামে সড়কের নামকরণ হয়েছে। ধানমন্ডিতে আবদুল মতিন সড়কের মাথায় শোভা পাচ্ছে তার প্রতিকৃতি এবং ভাষা আন্দোলনে অবদানের সংক্ষিপ্ত তথ্য। তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান দেখানো এখন সময়ের দাবি।
No comments