টাঙ্গাইলে নৃশংসতা: ঘাতক জাহাঙ্গীর এখনও নিখোঁজ
স্ত্রী ও তিন মেয়েকে হারিয়ে পারিবারিকভাবে নিঃসঙ্গ মজিবর রহমান বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। নির্মম এ ঘটনায় তাকে সান্ত্বনা দেয়ার কোন ভাষা নেই এলাকাবাসী ও স্বজনদের। কিন্তু তাদের চোখে ও মুখে ক্ষোভ, কেন এখনও প্রধান আসামি ও নৃশংস এ ঘটনার হোতা বখাটে জাহাঙ্গীরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারছে না। এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বখাটে জাহাঙ্গীর আলমের ছোট ভাই হানিফ মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। ঘটনার পর পরই গ্রেপ্তারকৃত রিকশাচালক আলী হোসেন আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি দেবে বলে জানিয়েছেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। গ্রেফতারকৃত অপর আসামিরা হলো জাহাঙ্গীরের চাচী নাছিমা আক্তার, খালা রহিমা বেগম ও জাহাঙ্গীরের বন্ধু সুশান্ত। এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে ও জড়িতদের বিচার দাবিতে টাঙ্গাইল শহরের নিরালা মোড়ে গতকাল দুপুরে মানববন্ধন করেছে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন। মির্জাপুরের সোহাগপাড়া গ্রামে প্রবাসী মজিবর রহমানে বাড়িতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সান্ত্ব্তনা ও সমবেদনা জানাতে যান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। মজিবর রহমানের স্ত্রী হাসনা বেগম, তিনি মেয়ে মনিরা আক্তার (১৪), বাক প্রতিবন্ধী মীম আক্তার (১১) ও চার বছরের শিশু কন্যা মিলি আক্তারের নির্মম হত্যার খবর শুনে তাদের বাড়িতে ছুটে যান কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী ও নেতৃবৃন্দ, বিএনপি নেতা ও মির্জাপুরের সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান। এ সময় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী অবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেপ্তার দাবি করে বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির খারাপ হওয়ার কারণেই এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পুড়িয়ে মানুষ মারা হবে জানলে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করতাম না। বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ বলেন, মির্জাপুরে এত নির্মম ঘটনা এর আগে কখনও ঘটেনি। অপরাধীরা পার পেয়ে গেলে ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনা বারবারই ঘটবে। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন বলেছেন, ঘটনাটি জঘন্য, চিন্তার বাইরে এবং অমানবিক। ক্ষমার অযোগ্য আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জেলা প্রশাসক মঙ্গলবার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং নিহতদের দাফনের জন্য ৫ হাজার টাকা করে অর্থ প্রদান করেন। মজিবর রহমানের পিতা ফকিরচাঁন আক্ষেপ করে বলেন, তার তিন নাতনি কে সচ্ছলভাবে মানুষ করার জন্যে পুত্র মজিবর রহমান আট বছর আগে মালয়েশিয়া গিয়েছিল। আর্থিক অবস্থা অনেকটা ভাল হওয়ায় একতলা বাড়ি নির্মাণ করে। সেখানেই স্ত্রী ও কন্যারা বসবাস করতো। জাহাঙ্গীরের উত্ত্যক্তের কারণে মনিরাকে একই গ্রামের উত্তরপাড়ার নানা বাড়িতে রাখা হতো। সেখান থেকেই সে নিয়মিত স্কুলে যেতো। কিন্তু প্রতিদিনই স্কুলে যাওয়ার পথে জাহাঙ্গীর তাকে উত্ত্যক্ত করতো। মনিরার বান্ধবী মৌসুমী ও সেতু আক্তার বলেছে মনিরা খুবই ভাল ছাত্রী ছিল। ভালভাবে পড়াশোনা করে বড় হওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। ঈদের দিন দাদীর ইচ্ছা পূরণ করতেই মনিরার মা হাসনা বেগম মেয়েকে এক রাতের জন্য বাড়িতে নিয়ে আসেন। ওই রাতে তিন মেয়েকে নিয়ে মা একই বিছানায় ঘুমিয়েছিলেন। কিন্তু তারা জানতেন না এটাই ছিল তাদের জীবনের শেষ রাত।
No comments