শেষ দেখতে চান সুলতান by কাজল ঘোষ
রাজনীতির বাইরে আট বছর। সময় কাটাতেন
ব্যক্তিগত আলাপচারিতাতেই। কখনও সখনও ফেসবুক স্ট্যাটাস। এতটুকুই। হঠাৎ আলোর
ঝলকানি। নড়েচড়ে বসেছেন। জানান দিয়েছেন। আর অপেক্ষা নয়। মাঠে নামবেন। ঘুণে
ধরা রাজনীতির শেষ দেখবেন। কুলাউড়ার গোবিন্দপুরে নিজ বাড়িতে ঈদ ছুটি
কাটিয়েছেন। সেখানেই কথা হলো নীরবতার নানা প্রসঙ্গ নিয়ে। এক সন্ধ্যায় হাজির
হই গোবিন্দপুরের সেই বাড়িতে। বাড়ির বাইরে-ভেতরে সব মিলিয়ে শতাধিক
নেতাকর্মীর ভিড়। এদের বেশির ভাগই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের।
সন্ধ্যা ঘিরে ছিল কোজাগরি পূর্ণিমা। চায়ের বাগানে জোনাকি পোকার মেলা। সেই
পূর্ণিমার মিষ্টি আলোতে উঠোনে বসেই সুলতান মনসুর জানালেন, মৌলিক রাজনীতি
থেকে সরবেন না। বঙ্গবন্ধু ও জয় বাংলার আদর্শ থেকে একচুলও নড়বেন না। দেশ ও
জাতির সঙ্কটে যা যা প্রয়োজন তা-ই করবেন। দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির বিরুদ্ধে
জাতীয় ঐক্য গড়তে কাজ শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবেই নয়া
ফ্রন্টে প্রতিনিধিত্ব করবেন।
সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। সুলতান মনসুর নামেই রাজনীতির মাঠে আলোচিত। ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি। স্বাধীনতাউত্তর ডাকসু’র ভিপি। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে তুখোড় ছাত্রনেতা। ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকও। বাইরে আলোচনা অনেক, কিন্তু ভেতরের কারণ কি? বললেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পাবো না এমনটা ভাবনাতেই ছিল না। তৃণমূল থেকে নেতাকর্মীরা আমাকে মনোনয়ন দিলেও কেন্দ্রীয়ভাবে বাদ দেয়া হয়। সেবার মহাজোটের মনোনীত প্রার্থী এখানে মাত্র ১০১৯ ভোট পায়। যা ছিল মৌলভীবাজার-২ আসনে আওয়ামী লীগের ভোটের ইতিহাসে সর্বনিম্ন রেকর্ড। এখানেই শেষ নয়। বাদ দেয়া হয় কেন্দ্রীয় কমিটি থেকেও। ভিন্ন ভিন্ন ভাবে দু’গ্রুপ থেকেই আমার নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় কমিটিতে। কিন্তু শেখ হাসিনা নিজ হাতে আমার নাম কেটে দিয়েছিলেন। তৃণমূলের মতামতকে তিনি আমলে নেয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। বলাবলি আছে, ওয়ান ইলেভেন পরবর্তীতে সংস্কারপন্থি মনে করেই আপনার ব্যাপারে দল এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে? সুলতান মনসুর খানিকটা থেমে উড়িয়ে দিলেন এমন অভিযোগকে। বললেন, যদি তাই হবে তাহলে এখন দলে অনেক সংস্কারপন্থিই কিভাবে জায়গা পেলেন? আসল বিষয় হচ্ছে, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত আক্রোশ। দ্বন্দ্বটা ওখানেই। যে কারণে আমাকে দলের পদ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমি নীরবে অপেক্ষা করেছি। পর্যবেক্ষণ করেছি গণতন্ত্রহীনতার এই সংস্কৃতিকে। দলে নেই কিন্তু আবার আওয়ামী লীগের হয়েই নয়াফ্রন্টের সঙ্গে থাকছেন- বিষয়টি স্পষ্ট হলো না? এমন প্রশ্নে বলেন, আমি তো এখনও আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মী হিসেবে আছি। আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। আর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার এবং জয় বাংলার বাইরে রাজনীতি করবো না। এটা আমাকে দল থেকে বাদ দেয়া বা দলে রাখার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। ন্যূনতম ১১ দফার ভিত্তিতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছি শিগগিরই। প্রাথমিক পর্যায়ে ২৯শে অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা রয়েছে। ফ্রন্টের কর্মপন্থা ও ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি চূড়ান্ত হবে ডিসেম্বরের মধ্যেই। বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে সকল দল-মতের অংশগ্রহণ ছিল না। একটি গ্রহণযোগ্য ও সকলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি ধীরে ধীরে দেশ ছাড়িয়ে দেশের বাইরেও জোরালো হচ্ছে। সকলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলে দেশে গণতন্ত্র পুনঃস্থাপিত হবে না। এখন দেশে চলছে মোসাহেবির রাজনীতি। চামচারাই যেন সবকিছু। এতটা গণতন্ত্রহীনতাই দেশ কখনও চলেনি। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না।
আমাদের লক্ষ্য হবে, ১১ দফার ভিত্তিতে ব্যক্তিগত, দলগত ও ফ্রন্টগতভাবে নির্বাচনের প্রস্ততি নেয়া। যদি দলগত অবস্থান থেকে নির্বাচনে ফ্রন্ট অংশ না নেয় তবে এককভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবো। সেই প্রস্ততিই নিতে শুরু করেছি। সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গেও যোগাযোগ শুরু করেছি। কারা থাকছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সময় হলেই তা দেখা যাবে। পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেই অনেককেই দেখা যাবে। আগামীর রাজনীতিতে ভূমিকা কি হবে- এমন প্রশ্নে বলেন, আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। মানুষের যে বিশ্বাস ও আকাঙ্ক্ষা তাই আমার রাজনীতির শক্তি। কোন চাপ বা হুমকির কাছে এই বিশ্বাস নষ্ট বা ধ্বংস করতে চাই না। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করে যাবো- এটাই প্রতিজ্ঞা।
No comments