অভিমত ॥ বিনামূল্যে বই বিতরণ ॥ সরকারের একটি সফলতম কাজ by ইজাজ আহমেদ মিলন
আমরা সবাই কোটি বই হাতে/নব প্রভাতের সূর্য/আমরা বাজাবো কালে মহাকালে সবুজের তূর্য। আজ আমাদের কোটি কোটি হাতে আঁধারবিনাশী গ্রন্থ/পতাকার জয়মন্ত্র।’ ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসব’কে উপলক্ষ করে কবি কামাল চৌধুরীর লেখা অসাধারণ একটি কবিতা।
১ জানুয়ারি । বছর শুরুর দিন। ঝকঝকে নতুন বই হাতে হাজারও শিশুর কণ্ঠে ছিল এই কবিতা। রাজ্যের সব আনন্দ যেন দখল করেছে কোমলমতি শিশুদের হৃদয়। সন্তানের আনন্দে অভিভাবকদের মধ্যেও উচ্ছলতার কমতি নেই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন সবুজের আমন্ত্রণে এদিন তারই সঙ্গে এমন অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখতে বিভিন্ন বিদ্যালয় ঘুরেছি। গন্ধমাখা নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে দেখে আমি আমার শৈশবে হারিয়ে গিয়েছিলাম। তখন কিছুটা ঈর্ষাও গ্রাস করে আমাকে। হায়রে! সময়। আমাদের সময়ও কিন্তু নিরানন্দে কাটেনি। শত আনন্দেই কাটিয়েছি। কিন্তু বছর শুরুর দিন অন্তত নতুনসব বই হাতে পেয়ে ঝকঝকে, তকতকে গন্ধ শুঁকার আনন্দটা তো পাইনি। তখন বছরের ২/৩ মাস চলে যাওয়ার পর আমাদের হাতে বই আসত। বছরের প্রথমদিন অন্তত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের পদচারণায় কোন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ মুখরিত হতো না। ওই দিন সাত-আটটি বিদ্যালয় ঘুরে দেখেছি। পুরো দেশের খ্যাতনামা শুধু নয়, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ‘মডেল‘ শ্রীপুরের মাওনা জেএম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই স্কুল চত্বরে যেতেই কথা হয় মোস্তফা হোসেন নামে এক অভিভাবকের সঙ্গে। তার ৫ ছেলে । চারজন কাজ করে দিনমজুরের। বই-খাতা-কলম কেনা আর স্কুলের বেতন যোগাড় করতে না পেরে চার সন্তানকে পড়াশোনা করাতে পারেননি। সরকার এবার বিনামূল্যে বই দিচ্ছে খবর পেয়েই মোস্তফা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন ছোট ছেলেকে সর্বোচ্চ পড়াশোনা করাবেন। তিনি বললেন ‘শেকের বেডি অন্তত এই কাজডা বালা করছে, সব পোলাপইনরে ফিরি বই দিতাছে।’ এ বছর প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৮৬ হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে ২৬ কোটি ১৮ লাখ বই বিনামূল্যে বিতরণ করেছে সরকার।সরকার পরিচালনা করতে গেলে সফলতার ঝুড়ি যেমন পূর্ণ হয় না তেমনি ব্যর্থতার ঝুড়ি শূন্য থাকে না। কেউ যদি প্রশ্ন করে, বর্তমান সরকারের সবচেয়ে সফলতম কাজ কোন্টি? গ্রামের সহজ-সরল-নিরক্ষর মানুষজন একবাক্যে উত্তর দেবেÑশিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতি। এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, গত চার বছরে মহাজোট সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এনেছেন পুরো দেশে। প্রধান বিরোধী দলও এটাকে ইতিবাচকই দেখছেন।
সম্প্রতি দেশের শীর্ষ একটি জাতীয় পত্রিকার করা ‘মহাজোট সরকারের চার বছর’ শীর্ষক জরিপ কাজ পরিচালনায় আমার সামান্য অংশগ্রহণ ছিল। এ সংক্রান্ত ৩৪ টি প্রশ্নের একটি ফরম নিয়ে একেবারে খেটেখাওয়া মানুষের কাছে গিয়েছি। তারা না আ’লীগ, না বিএনপি। এরাই এদেশের সাধারণ মানুষ। ওই ফরমের একটি প্রশ্ন ছিল ‘এই সরকারের সবচেয়ে সফলতম কাজ কোন্টি? আমার কাছে থাকা ৫০টি ফরমের প্রত্যেকটিতেই উত্তর একÑশিক্ষা খাত। শিক্ষাক্ষেত্রের এই উন্নতি বা অগ্রগতিই মহাজোট সরকারের মূল পুঁজি হতে পারে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এ সরকারকে মানুষ মনে রাখার মতো অনেক কাজ থাকলেও শিক্ষা খাতে মহাজোটের অবদানের কথা কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করবে এ জাতি। সম্প্রতি গাজীপুরের পুষ্পদাম নামক একটি রেস্টুরেন্টে বসে আমার দীর্ঘক্ষণ কথা হয় দক্ষ ও বিচক্ষণ শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে। তিনি জানালেন, এই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তাঁর মহাপরিকল্পনার কথা,স্বপ্নের কথা। আর একটু সময় পেলে শিক্ষা খাত নিয়ে বঙ্গবন্ধুর দেখা স্বপ্নপূরণ করা খুব সহজ হবে। আমরাও আশাবাদী, আমাদের এ দেশ শিক্ষাক্ষেত্রে বিশ্বের মডেল হোক।
No comments