৫শ’ বছরের মংরাজ পরিবারের ঐতিহ্য এখন বিলুপ্তির পথে!
পার্বত্য চট্টগ্রামের ৫ শত বছরের পুরনো মংরাজ পরিবারের ঐতিহ্য এখন বিলুপ্তির পথে। পর্যটকশূন্য স্থাপনাগুলো এখন অযতœ, অবহেলা ও সংরক্ষণের অভাবে দিন দিন জরাজীর্ণ ও নিষ্প্রাণ হয়ে বিলুপ্তির পথ ধরেছে! ঐতিহ্যের প্রাণ ফিরে পাবার আশাও ছেড়ে দিয়েছে বর্তমান প্রজন্মরা!
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ষোড়শ শতাব্দীর শুরুতে বর্তমান মিয়ানমারের মান রাজার বংশধররা চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনের উদ্দেশ্যে প্রথমে চট্টগ্রামের পটিয়া ও পরে রাউজানের মহামুণি, হাটাজারীর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ফটিকছড়ির হাফানিয়া (১৫১২-১৭৯৬) এই দীর্ঘ সময় মংরাজারা পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন করত। আজো এসব এলাকায় মংরাজ বংশের শত শত স্থাপনা অযতœ ও অবহেলায় নিষ্প্রাণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির পথে। অথচ স্থাপনাগুলো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে সেগুলো দেশের দর্শনীয় স্থান হিসেবে দেশে বিদেশে পরিচিতি লাভ করত। খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে প্রথম রাজা হিসেবে যাদের পরিচয় পাওয়া যায় তাঁরা হলেন, মংরাজা কংজয় (১৭৯৬-১৮২৬) এর রাজত্বের মধ্য দিয়ে এখানে মংরাজ বাড়িতে মংরাজার কার্যক্রম শুরু হয়। সপ্তম মংরাজা মম্প্রু সেইন (১৯৫৪-১৯৮৪) রাজা থাকা অবস্থায় পার্বত্য খাগড়াছড়ির উন্নয়নে রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে প্রজাদের সুখ-দুঃখে রাজার অবদান ছিল অবিস্মরণীয়। রাজা ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১১ সেক্টরের অধীনে তৎকালীন মহকুমা শহর রামগড়ে মুক্তিবাহিনীর সাথে একত্রিত হয়ে যুদ্ধ করেন। এক পর্যায়ে রাজা তাঁর স্ত্রী, মেয়ে, নাতী ও নাতনীদের নিয়ে তাঁর স্বর্ণালঙ্কার ও গুপ্তধন মাটির নিচে চাপা দিয়ে জীবন রক্ষার্থে পার্শ্ববর্তী ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাটি ও মানুষের মায়ায় পুনরায় মানিকছড়ি রাজপ্রাসাদে ফিরে আসে, কিন্তু মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা স্বর্ণালঙ্কার ও গুপ্তধনের কোন হদিস পায়নি। তারপরও রাজা দেশের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে ১৯৮৪ সালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর স্ত্রী রানী নিহার দেবী (১৯৮৪-১৯৯১) অষ্টম রাজা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ১৯৯১ সালে মারা যান। কিন্তু তাঁদের কোন সন্তান-সন্ততি ছিল না ফলে পালিত কন্যা রানী উনিকা দেবী (৮০) নবম রাজা হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করলে তৎকালীন সরকার উক্ত মংচীফ পদটিকে শূন্য ঘোষণা করে খাগড়াছড়ি জেলা তথ্য কর্মকর্তা পাইলাপ্রু চৌধুরীকে দশম মংচীফ ঘোষণা করে। যার ফলে রাজত্ব চলে যায় মূলস্রোতের বাহিরে নিষ্প্রাণ নেমে আসে রাজবাড়িতে।পার্বতাঞ্চল প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি
No comments