উন্নয়নে বাংলাদেশ-প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে সরকারকেই
আশাবাদী তারুণ্যকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না। এর জন্য দেশের অধিকাংশ মানুষ দায়ী করে দুর্নীতি ও অধিক জনসংখ্যাকে। ওয়াশিংটনভিত্তিক বিশ্বখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'গ্যালাপ'-এর জরিপে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
অর্থনীতি, জীবনযাত্রা, রাজনীতিতে ধর্মের ভূমিকা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই- এমন ১৩টি বৃহৎ ইস্যুর ওপর পরিচালিত হয়েছে এই জরিপ। জরিপে প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি অনেক ইতিবাচক দিকও উঠে এসেছে। যেমন পরিবারের জীবনযাত্রা সম্পর্কে যে ফল পাওয়া গেছে, তাকে সন্তোষজনক বলতে দ্বিধা নেই। সেখানে দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ মানুষ সরাসরি জবাব দিয়েছে, তাদের পারিবারিক জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। তার সঙ্গে যদি স্থিতাবস্থায় বিশ্বাসীদের জবাব যোগ করা যায়, তাহলে ৮১ শতাংশের জবাবকে ইতিবাচক বলে মনে করতে হবে। সে ক্ষেত্রে মাত্র ২০ শতাংশেরও কম জবাবদাতার কাছ থেকে নেতিবাচক জবাব পাওয়া গেছে। অন্যদিকে অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের জবাবকে ইতিবাচক হিসেবে আখ্যায়িত করতে হবে। যেখানে মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ মনে করছে, অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। এত ইতিবাচক জবাবের পরও বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিকে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ের বলে মনে করা যায় না। অন্তত প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল, ক্রমবর্ধমান রেমিট্যান্সপ্রাপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হওয়ার সুযোগ ছিল তা হচ্ছে না। দেশের সামগ্রিক অবস্থাকে যথাযথ উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে হলে বৈদেশিক বিনিয়োগের যে লক্ষ্য, তাও অর্জন করা যাচ্ছে না। এই ব্যর্থতা দূর করার প্রয়োজনে এ ধরনের জরিপের ফল দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করতে পারে। পূর্ণাঙ্গ জরিপ হিসেবে সেই দিকনির্দেশনাও বেরিয়ে এসেছে এখান থেকে। আবারও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে দুর্বল দক্ষতার জনসংখ্যা, অপরাধ ও জননিরাপত্তা বিধানে ব্যর্থতার মতো কিছু বিষয়। দুর্বল দক্ষতার জনসংখ্যাকে উৎপাদনশীল শক্তি হিসেবে গড়ে তোলার প্রধান দায়িত্ব সরকারের। অপরাধ ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বও প্রধানত সরকারের ওপর বর্তায়। তাই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে সরকারকেই নিয়ামক ভূমিকা পালন করতে হবে। উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় যে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, দেশের ৮৪ শতাংশ মানুষ তার অবসান চায়। উন্নয়নের স্বার্থে এই দ্বন্দ্ব নিরসনের দায়ও পড়ে সরকারের ওপর। বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে হলেও সরকারকেই ভূমিকা নিতে হবে। বিনিয়োগ উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সর্বোপরি সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা বাড়াতে হবে। রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়াতে হবে।
No comments