শাহজালাল বিমানবন্দরে ১০ বানর ও ১৬০ পাখি উদ্ধার- দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা হয়েছে
শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বিরল প্রজাতির ১০ বানর ও ১৬০টি বিভিন্ন ধরনের পাখি উদ্ধার করেছে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ। পুলিশ বন্যপ্রাণী পাচারকারী চক্রের মোস্তাফিজুর রহমানকে (৪৫) গ্রেফতার করেছে।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো হাউস থেকে প্রাণীগুলো উদ্ধার করা হয়। বন বিভাগ সূত্র জানায়, জব্দকৃত প্রাণীগুলোর মধ্যে ধূসর বর্ণের ১০টি প্রজাতির দক্ষিণ অফ্রিকান কমন মারমোসেট বানর, ৩০টি অফ্রিকান গ্রে প্যারট, ১০০টি বাজিরিগার, ১০টি রেইনবো কীট, ১০টি গোল্ডেন ম্যানটেইল্ড রোজেলা, ১০টি গ্রীন চিক্ড প্যারাকীট নামের বিরল প্রজাতির পাখি রয়েছে। বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ এহতেশাম জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে করে এসব বিরল প্রজাতির পশু-পাখি আনা হয়। তিনি জানান, জব্দকৃত প্রাণীগুলোকে বন বিভাগের কাছে এবং আটককৃত পাচারকারী চক্রের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানকে বিমানবন্দর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। বন্যপ্রাণী বিভাগের ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ সাহাবুদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বিমানবন্দরে অবতরণের পর বিরল প্রজাতির প্রাণীগুলোকে পাচারের জন্য বিমানবন্দরের ১নং ক্যানোপির সামনে একটি সাদা পিকআপে রাখা হয়। ওই পিকআপের আশপাশে সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট পরিচয় দেয়া মোস্তাফিজুর রহমানকে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখে কর্তব্যরত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা তাকে আটক করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তাকে সন্দেহ হওয়ায় বন কর্মকর্তাদের খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ রবিউল আলম ও শরীফুজ্জামান বিমানবন্দরে গিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ বিরল প্রজাতির পশু-পাখি উদ্ধার করেন। এ সময় আটককৃত মোস্তাফিজুর পরে বন অধিদফতরের অনুমতিপত্র ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্র দেখাতে না পারায় তাকে গ্রেফতার করে থানায় পাঠানো হয়। সূত্রগুলো জানায়, বিদেশ থেকে এধরনের প্রাণী আমদানি করতে বন বিভাগের অনুমতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু এ প্রাণীগুলো আমদানিতে বন অধিদফতরের কোন অনুমতি নেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, ঢাকার পরিদর্শক মোঃ সোহেল রানা বাদী হয়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২এর ৪০ ও ৪১ ধারায় বিমানবন্দর থানায় মামলা দায়ের করেন। গ্রেফতারকৃত মোস্তাফিজুর রহমানের পিতার নাম মৃত অজিউল্লাহ। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের বড় বল্লভপুরে। গ্রেফতারকৃত মোস্তাফিজুর রহমান পুলিশকে জানায়, ঢাকার সাভারের মেসার্স রাজু ট্রেডার্স নামের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক নাজমুল হুদা মঞ্জু প্রাণীগুলোকে সাউথ আফ্রিকা থেকে আমদানি করেছেন, যা কাস্টমস থেকে ছাড় করা হয়েছে। অপরদিকে ঢাকা অঞ্চলের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণের বন সংরক্ষক ড. তপন কুমার দে জানান, উদ্ধার করা বানর ও পাখিগুলো বিরল ও অত্যন্ত দুষ্প্রাপ্য। এসব প্রাণী আমদানিতে ‘কনভেনশন অন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইন এনডেঞ্জারড অব ওয়াইল্ড ফনা এ্যান্ড ফ্লোরা’ (সাইটিস) সনদ প্রয়োজন হয়। কিন্তু পাকিস্তানের নামে সাইটিস সদন ইস্যু করে তারা কাস্টমসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে এগুলো পাচারের চেষ্টা করছিল। উদ্ধারকৃত প্রাণীগুলোকে গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভুরুলিয়াস্থ বন্যপ্রাণী রেসকিউ সেন্টারে সংরক্ষণ ও পরিচর্চা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
No comments