বৈদেশিক অর্থ ছাড় বাড়াতে বিশেষ এলসিজি বৈঠক- শুরু হবে ১০ জানুয়ারি by হামিদ-উজ-জামান মামুন
বৈদেশিক অর্থের ব্যবহার বাড়াতে বিশেষ লোকাল কন্সালটেটিভ গ্রুপের (এলসিজি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিনদিনের এ বৈঠকে অংশ নেবে ১৮টি ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য। দাতা সংস্থা, সরকার এবং প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো নিয়ে এসব ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছিল।
রাজধানীর শেরেবাংলানগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন এলসিজি প্ল্যানারি গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব আবুল কালাম আজাদ এবং ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি নেল ওয়াকার। এ বিষয়ে আবুল কালাম আজাদ বৃহস্পতিবার জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে ওয়ার্কিং গ্রুপের কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজখবর নেব। এর ফলে উল্লেখযোগ্য হারে বৈদেশিক সহায়তার ব্যবহার বাড়বে এবং সেই সঙ্গে বৈদেশিক অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অপর এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফোরামের (বিডিএফ) বৈঠকের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এ এলসিজি বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এছাড়া যৌথ সহযোগিতা কৌশলপত্রের (জেসিএস) বিভিন্ন দিক নিয়েও ব্যাপক আলোচনা হবে।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১০ জানুয়ারি এ বৈঠক শুরু হবে। এর পর ২০ এবং ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। ১৮টি ওয়ার্কিং গ্রুপের মধ্যে প্রত্যেক বৈঠকে ছয়টি করে গ্রুপের সদস্যরা অংশ নেবেন।
বৈঠকে বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, কাউন্সিলর ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফর সাউথ এশিয়া, অস্ট্রেলিয়ান এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট, সিডা, ডেনমার্ক সরকারের পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রতিনিধি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মান সরকারের পক্ষে প্রতিনিধি, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জাপান সরকারের পক্ষে জাইকার প্রতিনিধি, কোরিয়া সরকারের পক্ষে প্রতিনিধি, নেদারল্যান্ডস সরকারের পক্ষে প্রতিনিধি, নরওয়ে সরকারের পক্ষে প্রতিনিধি, স্পেন সরকার, সুইডেন সরকার, সুইজারল্যান্ড সরকার এবং যুক্তরাজ্যের পক্ষে বাংলাদেশ প্রতিনিধি, জাতিসংঘের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত আবাসিক সমন্বয়কারী, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সহকারী মিশন পরিচালকসহ অন্য দাতাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছে ইআরডি।
এলসিজি বৈঠকের গুরুত্ব বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, যথাসময়ে এই এলসিজি বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ সময় বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক সাহায্য সহযোগিতার প্রয়োজন। বিশেষ করে পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও রাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় বিশ্বব্যাংকসহ অন্য দাতাদের অর্থায়ন নেই দরকার। তাছাড়া আমাদের ব্যালেন্স অব পেমেন্টে চাপ কমাতে বৈদেশিক অর্থ ছাড় এ মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরী।
এর আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছিল এলসিজি প্ল্যানারি গ্রুপের বৈঠক। এতে বৈদেশিক সহায়তার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি যৌথ সহযোগিতা কৌশলপত্রের (জেসিএস) এ্যাকশন প্ল্যান পাস করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল।
ইআরডি মনে করছে, পদ্মা সেতু নিয়ে জটিলতা শুরু হওয়ার পর থেকেই ঘন ঘন এলসিজি বৈঠকের আয়োজন করা হচ্ছে ইআরডির পক্ষ থেকে। এর ফলে দাতাদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত তেমন কোন দূরত্ব সৃষ্টি হয়নি। এর ভাল প্রভাব পড়ছে। চলতি অর্থবছরে দাতাদের অর্থছাড় বেড়ে গেছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নবেম্বর) দাতারা মোট ৯০ কোটি ৬৫ লাখ ডলার অর্থছাড় করেছে। এর মধ্যে ঋণ ৭৩ কোটি ডলার ও অনুদান সাড়ে ১৭ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৪ কোটি ডলার। এর মধ্যে ঋণ ২৮ কোটি ডলার ও অনুদান ১৬ কোটি ডলার। এক্ষেত্রে সার্বিকভাবে সকল দাতা সংস্থার অর্থছাড়ের পরিমাণ বেড়েছে।
তবে অর্থছাড় বাড়লেও বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি কমে গেছে। প্রথম পাঁচ মাসে চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি এসেছে মাত্র ১৮১ কোটি ডলার। এর মধ্যে ঋণ ১৪৬ কোটি ডলার ও অনুদান ৩৫ কোটি ডলার। যেখানে গত অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীরা ঋণ ও অনুদান দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ২২৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে ঋণ ১৬৯ কোটি ডলার ও অনুদান ৫৫ কোটি ডলার।
চলতি অর্থবছরের ৫ মাসে বিশ্বব্যাংক সর্বোচ্চ অর্থছাড় করেছে ২৬ কোটি ৪১ লাখ ডলার। অর্থবছরের শেষ নাগাদ অর্থছাড় ১০০ কোটি ডলার হতে পারে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১৫ কোটি ডলার। সম্প্রতি বিদ্যুত, শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ কয়েকটি খাতে নতুন প্রকল্প বোর্ডসভায় অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এর ফলে দেশে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬টিতে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বিপরীতে ৪৮০ কোটি ডলার ঋণ ও অনুদান দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ছাড়া অন্য দাতা সংস্থাগুলোর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ১৫ কোটি ডলার, জাপানের সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ১৭ কোটি ডলার, চীন ১০ কোটি ডলার এবং ভারত ৩ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার ঋণ ছাড় দিয়েছে।
No comments