বুধবার সারাদেশে সিপিবি, বাসদের ‘গণধর্ণা’ কর্মসূচী
বর্তমান সরকারের মেয়াদে ৬ষ্ঠ বারের মতো জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির
প্রতিবাদে পৃথক কর্মসূচী ঘোষণা করেছে বিভিন্ন বাম রাজনৈতিক দল ও জোট। ৯
জানুয়ারি দেশব্যাপী ধিক্কার দিবস, সকল জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও ঢাকায়
বিইআরসি কার্যালয়ের সামনে ‘গণধর্ণা’ কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের
কমিউনিস্ট পার্টি, (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।
এর
মধ্যে জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির
প্রক্রিয়া বন্ধ না হলে হরতাল অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচী দেয়া হবে বলেও হুমকি
দিয়েছে আর দলগুলো। এদিকে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার পক্ষ থেকে হরতালের
সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। সমমনা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার পর তারিখ
ঘোষণার কথা জানানো হয়েছে মোর্চার পক্ষ থেকে। তবে আগামী ১৫ জানুয়ারি বাম
দলগুলো পৃথকভাবে হরতাল কর্মসূচী ঘোষণা করতে পারে। জ্বালানি তেলের
মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও
বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন বাম রাজনৈতিক দল।তেলের বাড়তি মূল্য প্রত্যাহার করুন, অন্যথায় হরতাল Ñখালেকুজ্জামান ॥ তেলের মূল্যবৃদ্ধি প্রত্যাহার করা না হলে হরতাল-অবরোধসহ কঠোর গণপ্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান। শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, নতুন করে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে পরিবহন ভাড়া, সেচ খরচ বেড়ে যাবে। ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যয় ও দ্রব্যমূল্য বহুগুণ বেড়ে যাবে, দুর্বিষহ হয়ে উঠবে জনজীবন। আর এ জন্য দায়ী থাকবে সরকার।
প্রত্যাহারের দাবি গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির ॥ গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির কার্যকরী সভাপতি প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু এক বিবৃতিতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, সরকার জনস্বার্থের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
৯ জানুয়ারি দেশব্যাপী কালোপতাকা হাতে গণধর্ণা ॥ জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সিপিবি ও বাসদ আয়োজিত সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সরকারী সিদ্ধান্ত জনগণ মেনে নেয়নি। এর খেসারত সরকারকে দিতে হবে। নেতৃবৃন্দ বর্তমান সরকারকে অতীতের সরকারগুলোর মতো আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের স্বার্থরক্ষাকারী ও জনগণের পকেট কাটার সরকার হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এসব গণবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিপিবি প্রেসিডিয়াম সদস্য হায়দার আকবর খান রনো। বক্তব্য রাখেন সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, জুলফিকার আলী প্রমুখ। নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে সরাসরি জনগণের পকেট থেকে আড়াই কোটি টাকা তুলবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম গত এক বছরে বাড়েনি, বরং অনেক ক্ষেত্রে কমেছে। গত অর্থবছরে এ ক্ষেত্রে বিপিসি সরকারকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ট্যাক্স দিয়েছে। এই ট্যাক্স কমালে ভর্তুকির অজুহাতে তেলের দাম বাড়ানোর প্রশ্ন আসত না।
হরতালের সিদ্ধান্ত বাম মোর্চার ॥ শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে জ্বালানি তেলের বর্ধিত দাম প্রত্যাহারের দাবিতে এবং বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারার বিরুদ্ধে পদযাত্রা কর্মসূচী পালন করেছে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা। পদযাত্রা পূর্ববর্তী সমাবেশে মোর্চার সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বাম মোর্চা ইতোমধ্যেই জ্বালানি তেলের দামবৃদ্ধির বিরুদ্ধে হরতালের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন গণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে হরতালের তারিখ ঘোষণা করা হবে।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ড. আখতারুজ্জামান, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির (পুনর্গঠিত) কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুর রহমান, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক, মহিনউদ্দীন চৌধুরী লিটন প্রমুখ। এ ছাড়া বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ করেছে। মোহাম্মদপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বাসদ মোহাম্মদপুর শাখা।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন করবে- ওয়ার্কার্স পার্টি ॥ বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, কোন কারণ ছাড়াই আইএমএফকে তুষ্ট করতে আবারও হঠাৎ করেই জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। জোট সরকার তার ২৩ দফা নির্বাচনী অঙ্গীকারে এ দেশের জনগণের স্বার্থরক্ষায়, জনজীবনে স্বস্তিরক্ষায় দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখাসহ মূল্যস্ফীতি কমানোর দায়িত্ব নিয়েছিল। কিন্তু জনস্বার্থ না দেখে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের স্বার্থ রক্ষায় জনজীবনকে নতুন করে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে। এই মূল্যবৃদ্ধি সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন করবে। সরকারকে সাম্রাজ্যবাদী তোষণনীতি থেকে সরে আসতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য সাম্রাজ্যবাদী তোষণনীতির কারণে জনবিচ্ছিন্নতার সুযোগকে আরও বেশি কাজে লাগাবে যুদ্ধাপরাধী জঙ্গীবাদী শক্তি ও তাদের মিত্ররা। রাজনৈতিক বিপদ আরও ঘনীভূতরূপে জনগণের সামনে হাজির হবে। ওয়ার্কার্স পার্টি পরিষ্কারভাবেই মনে করে এই মূল্যবৃদ্ধি প্রত্যাহার করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হবে।
No comments