নিউল্যান্ডসে কিছু একটা আছে!
মধ্যাহ্নবিরতির সময় ধারাভাষ্যকার মাইক হেইসম্যান সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার শন পোলককে নিয়ে নিউল্যান্ডসের উইকেটটা খুব মন দিয়ে দেখলেন। দেখালেন বিশ্বজোড়া টেলিভিশন দর্শককেও।
যে উইকেটে লাঞ্চের আগেই পড়ে গেছে ১১ উইকেট, নিউজিল্যান্ড অলআউট মাত্র ৪৫ রানে—সেটি তো কৌতূহলের বিষয় হওয়ারই কথা। দেখেটেখে দুজনই একমত হলেন, এই ধ্বংসযজ্ঞে উইকেটের কোনো ভূমিকা নেই। প্রথম দিনের প্রথম দুই ঘণ্টায় টেস্টের প্রথাগত উইকেট পেসারদের দিকে যতটুকু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, তার চেয়ে বেশি কিছু করেনি ওই ২২ গজ।তবে নিউল্যান্ডসের উইকেটে যদি কিছু না-ও থেকে থাকে, আলো-বাতাসে বোধ হয় কিছু একটা আছে! নইলে টেবল মাউন্টেনের আশ্চর্য সুন্দর পশ্চাৎপট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তর্কযোগ্যভাবে বিশ্বের সুন্দরতম মাঠেই বারবার এমন উইকেট-প্রপাতের ঘটনা ঘটবে কেন! চৌদ্দ মাসের মধ্যে ৫০ রানের নিচে দুটি ইনিংস দেখে ফেলল এই মাঠ। ২০১১ সালের ১০ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়া অলআউট হয়েছিল মাত্র ৪৭ রানে। ঘটনা সেখানেই শেষ (বা শুরু) হলে হতো। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংস শেষ হয়েছে ৯৬ রানে। হ্যাঁ, সেটিও সেই একই দিনে! এর আগে সকালে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসের শেষ দুটি উইকেট পড়েছে, বিকেলে দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসের একটি। আলোকস্বল্পতায় খেলা আগেভাগে শেষ হয়ে যাওয়ার পরও ওই এক দিনে ২৩ উইকেট!
টেস্ট ক্রিকেট গতকাল ৫০-এর কম রানের ইনিংস দেখল ১৯তম বারের মতো। কেপটাউনই দেখেছে সবচেয়ে বেশি—৫ বার। যেখানে অন্য কোনো মাঠে দুবারের বেশি এ ঘটনা নেই। ব্যাটিং লাইনআপের তাসের ঘর হয়ে যাওয়ার বেশির ভাগ গল্পই উইকেট অনাবৃত থাকার সময়কার। যখন বৃষ্টিভেজা উইকেটে রোদ পড়ার পর তাতে বল সাপের মতো এদিক-ওদিক করত। বল লাফানো-টাফানোরও কোনো নিয়মনীতি থাকত না। ‘স্টিকি উইকেট’ বলে আলাদা নামও ছিল এ ধরনের উইকেটের। ৫০-এর কম ১৯টি স্কোরের ১১টিই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের ঘটনা। গত ৫৫ বছরে মাত্র ছয়টি।
প্রায় অমরত্ব নিশ্চিত করে ফেলা নিউজিল্যান্ডের ওই অবিশ্বাস্য ২৬ অবশ্য বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার ১০ বছর পর। অকল্যান্ডে বার্ট সাটক্লিফ যখন চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়ে ফিরেছিলেন, কল্পনাও করেননি আর মাত্র ১২ রান পরই শেষ হয়ে যাবে ইনিংস! তাঁর ১১-ই হয়ে থাকবে ইনিংসে দুই অঙ্কের একমাত্র রান। এর আগে নিউজিল্যান্ডের একটা ৪২ ছিল, এর পর একটা ৪৭। কালকের ৪৫ যোগ হওয়ার পর টেস্টে ৫০-এর নিচে ৪টি স্কোর হয়ে গেল কিউইদের। অস্ট্রেলিয়াকে ধরেও ফেলল। তবে শীর্ষস্থানটা এই দুই দলের কোনোটিরই নয়। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডকে চতুর্থ ‘লজ্জা’ উপহার দেওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা এখানে সবাইকে ছাড়িয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। ৫০-এর নিচে স্কোর ৭টি, টেস্টে সর্বনিম্ন পাঁচটি স্কোরের চারটিই তাদের! ১৫টির হিসাব তো পেয়েই গেলেন। ‘পঞ্চাশেরও কম’ ক্লাবের বাকি তিন সদস্য ইংল্যান্ড (২ বার), ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
জিম্বাবুয়ে (৫১) ও পাকিস্তান (৫৩) অল্পের জন্য এই ক্লাবে ঢুকতে পারেনি। ১৯৯৪ সালে ক্যান্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে পুবুদু দাসানায়েকের ১৯ আর অতিরিক্ত থেকে আসা ১১ রানের কল্যাণে শ্রীলঙ্কাও বেঁচে গেছে (এক অঙ্কের রানে আউট হওয়া বাকি নয় ব্যাটসম্যানের মিলিত অবদান ছিল ৪১)। বাংলাদেশও এই ‘পঞ্চাশেরও কম’ ক্লাবে নেই (সর্বনিম্ন ৬২)। ভাগ্যিস নেই! বাংলাদেশ এমন ৪৪-৪৫ রানে অলআউট হলে নির্ঘাত ‘টেস্ট ক্রিকেটের জাত গেল’ বলে হাহাকার শুরু হয়ে যাবে!
No comments