সমন্বিত হলে ক্ষতি কী? by ইলিয়াস উদ্দীন বিশ্বাস
উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের বিড়ম্বনা বেড়েই চলেছে। ভর্তিচ্ছু যদি নারী হন, তাহলে বিড়ম্বনা আরও বাড়ে। একজন ছাত্রের পক্ষে একাকী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব হলেও ছাত্রীর সঙ্গে অভিভাবককেও অংশ নিতে হয়।
এক ভদ্রমহিলা তার মেয়েকে নিয়ে রংপুর থেকে ২৩ ডিসেম্বর সকালে সিলেট এসেছিলেন। জানা গেল, তার মেয়েটি ২১-২২ ডিসেম্বর মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে, ২৩ ডিসেম্বর সিলেট মেডিকেল কলেজে, ২৪ ডিসেম্বর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে, ২৫ ডিসেম্বর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। পরের দিন রংপুর না গিয়ে ঢাকা গেলেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য। মেয়েটি এর আগে আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে ছোটাছুটি করতে লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। এখন মা-মেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন।
এভাবে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য ছুটে বেড়াতে হয় দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। তাতে তাদের কষ্টের সীমা থাকে না। যেখানে দুটি অথবা সর্বোচ্চ চারটি ইউনিটের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়, সেখানে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ১৫-১৬টি ইউনিট করে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ভর্তি পরীক্ষাকে ঘিরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার, হোটেল মালিক, বাস মালিক সবাই যেন বাড়তি আয় করতে ব্যস্ত। এই বাড়তি আয়ের জোগান দিতে গরিব অভিভাবকের যে কী কষ্ট হচ্ছে তা আমরা কেউ ভেবে দেখি না।
গত বছর তুরস্কের বিলকেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা 'সমঝোতা স্মারক' স্বাক্ষরের জন্য সে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। বিলকেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডিনের সঙ্গে সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে আলাপ হয়েছিল। তার কাছ থেকে জানতে পারি, তুরস্ক ১৯৬০ সাল থেকে কাউন্সিল অব হায়ার এডুকেশনের অধীনে 'স্টুডেন্ট সিলেকশন অ্যান্ড প্লেসমেন্ট সেন্টারে'র তত্ত্বাবধানে 'ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এন্ট্রান্স' পরীক্ষার মাধ্যমে সে দেশের ১০৪টি পাবলিক ও ৬২টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু ছাত্রছাত্রী বাছাই করে থাকে। গত বছর তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৪ লাখ ৫ হাজারটি আসনের জন্য ১৬ লাখ ৯২ হাজার ছাত্রছাত্রী 'ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এন্ট্রান্স' পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
তুরস্কের মতো আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি সম্পন্ন করলে শিক্ষার্থীরা তিন মাস ধরে ভর্তি পরীক্ষার বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পাবেন। প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের পছন্দের বিষয় পেতে এক বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাওয়ার কারণে অনেক আসন শূন্য থেকে যায়, সেটা কমে আসবে। ভর্তি পরীক্ষার জন্য অভিভাবকদের অর্থ ব্যয় অনেক কম হবে। এইচএসসি পরীক্ষার ফল জুলাই মাসে প্রকাশের পর দুই মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। ফলে অক্টোবর মাসে একযোগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস শুরু করা যাবে, এতে সেশনজট কমে আসবে।
আগে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন ফরম সংগ্রহ করাও ছিল অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম ২০০৯ সালে মোবাইলের মাধ্যমে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করায় এবং পরবর্তী বছর থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ পদ্ধতি অনুসরণ করায় আবেদনের জন্য যে কষ্ট হতো তা লাঘব হয়েছে। ২০১০ সালে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মো. সালেহ উদ্দিন ও প্রফেসর মুহম্মদ জাফর ইকবাল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একত্রে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরাও শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শিক্ষামন্ত্রী এ উদ্যোগে সাড়া দিয়ে উপাচার্যদের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে একটি সভাও করেছিলেন; কিন্তু কাজ হয়নি। কারণ, উপাচার্য এককভাবে একাডেমিক বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। আবার বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, কাজেই এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীরও বেশি কিছু করার নেই।
উপাচার্যরা বিষয়টি নিয়ে নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা করেছিলেন কি-না তা আমার জানা নেই। আবার একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে আগ্রহী হবেন কি-না সেটা বলাও কঠিন। বিশ্ববিদ্যালয় কেবল জ্ঞান বিতরণের কেন্দ্রই নয়, জ্ঞান সৃষ্টির কেন্দ্রও বটে। প্রচলিত ভর্তি প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী বাছাই করায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের যে দুর্ভোগ হচ্ছে, সেটাকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
প্রফেসর ড. ইলিয়াস উদ্দীন বিশ্বাস কোষাধ্যক্ষ, শাবিপ্রবি, সিলেট
এভাবে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য ছুটে বেড়াতে হয় দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। তাতে তাদের কষ্টের সীমা থাকে না। যেখানে দুটি অথবা সর্বোচ্চ চারটি ইউনিটের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়, সেখানে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ১৫-১৬টি ইউনিট করে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ভর্তি পরীক্ষাকে ঘিরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার, হোটেল মালিক, বাস মালিক সবাই যেন বাড়তি আয় করতে ব্যস্ত। এই বাড়তি আয়ের জোগান দিতে গরিব অভিভাবকের যে কী কষ্ট হচ্ছে তা আমরা কেউ ভেবে দেখি না।
গত বছর তুরস্কের বিলকেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা 'সমঝোতা স্মারক' স্বাক্ষরের জন্য সে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। বিলকেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডিনের সঙ্গে সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে আলাপ হয়েছিল। তার কাছ থেকে জানতে পারি, তুরস্ক ১৯৬০ সাল থেকে কাউন্সিল অব হায়ার এডুকেশনের অধীনে 'স্টুডেন্ট সিলেকশন অ্যান্ড প্লেসমেন্ট সেন্টারে'র তত্ত্বাবধানে 'ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এন্ট্রান্স' পরীক্ষার মাধ্যমে সে দেশের ১০৪টি পাবলিক ও ৬২টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু ছাত্রছাত্রী বাছাই করে থাকে। গত বছর তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৪ লাখ ৫ হাজারটি আসনের জন্য ১৬ লাখ ৯২ হাজার ছাত্রছাত্রী 'ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এন্ট্রান্স' পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
তুরস্কের মতো আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি সম্পন্ন করলে শিক্ষার্থীরা তিন মাস ধরে ভর্তি পরীক্ষার বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পাবেন। প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের পছন্দের বিষয় পেতে এক বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাওয়ার কারণে অনেক আসন শূন্য থেকে যায়, সেটা কমে আসবে। ভর্তি পরীক্ষার জন্য অভিভাবকদের অর্থ ব্যয় অনেক কম হবে। এইচএসসি পরীক্ষার ফল জুলাই মাসে প্রকাশের পর দুই মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। ফলে অক্টোবর মাসে একযোগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস শুরু করা যাবে, এতে সেশনজট কমে আসবে।
আগে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন ফরম সংগ্রহ করাও ছিল অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম ২০০৯ সালে মোবাইলের মাধ্যমে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করায় এবং পরবর্তী বছর থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ পদ্ধতি অনুসরণ করায় আবেদনের জন্য যে কষ্ট হতো তা লাঘব হয়েছে। ২০১০ সালে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মো. সালেহ উদ্দিন ও প্রফেসর মুহম্মদ জাফর ইকবাল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একত্রে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরাও শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শিক্ষামন্ত্রী এ উদ্যোগে সাড়া দিয়ে উপাচার্যদের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে একটি সভাও করেছিলেন; কিন্তু কাজ হয়নি। কারণ, উপাচার্য এককভাবে একাডেমিক বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। আবার বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, কাজেই এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীরও বেশি কিছু করার নেই।
উপাচার্যরা বিষয়টি নিয়ে নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা করেছিলেন কি-না তা আমার জানা নেই। আবার একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে আগ্রহী হবেন কি-না সেটা বলাও কঠিন। বিশ্ববিদ্যালয় কেবল জ্ঞান বিতরণের কেন্দ্রই নয়, জ্ঞান সৃষ্টির কেন্দ্রও বটে। প্রচলিত ভর্তি প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী বাছাই করায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের যে দুর্ভোগ হচ্ছে, সেটাকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
প্রফেসর ড. ইলিয়াস উদ্দীন বিশ্বাস কোষাধ্যক্ষ, শাবিপ্রবি, সিলেট
No comments