নওশীনের স্বপ্নযাত্রা
দুপুর গড়িয়ে বিকেল। নাগরিক ব্যস্ততায় ছুটছে সবাই। মগবাজার মোড় থেকে গাড়িতে একছুটে আমিও চলে এলাম গন্তব্যে। গন্তব্য চ্যানেল আইয়ের অফিস। উদ্দেশ্য ভিট-চ্যানেল আই টপ মডেল নওশীনের সাক্ষাতকার নেওয়া। সুদৃশ্য গ্লাস ডোর ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখলাম এক কোণে বসে আছে এবারের ভিট-চ্যানেল আই টপ মডেল নওশীন। গল্প করতে করতেই শুরু হলো সাক্ষাতকার পর্ব।
নওশীন শারমিলা। জিতে নিয়েছেন এবারের ভিট-চ্যানেল আই টপ মডেলের তকমা। পড়ছেন চট্টগ্রাম সরকারী মহিলা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে। নওশীনের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানে। ছোটবেলা থেকেই গান শেখা, সেটা অবশ্য মায়ের অনুরোধে। ছবি আঁকাতেও ছিল অনেক আগ্রহ। মিডিয়া নিয়ে কোন রকমের স্বপ্নই ছিল না তার। অথচ একজন মডেল হিসেবে শুরু করেছেন তাঁর যাত্রা। ২০০৫ সালের নতুন কুড়ি প্রতিযোগিতায় বিভাগীয় পর্যায়ে সেরা হয়েছিলেন । কিন্তু ঢাকায় মূল পর্বে এসে আর অংশগ্রহণ করা হয়নি তার। কারণ বাবা-মা ভেবেছিলেন এতে তার পড়ালেখার ক্ষতি হবে। ফেসবুকে ভিট- চ্যানেল আই টপ মডেলের এ্যাড দেখে অংশগ্রহণ করার কথা ভাবেন। সেটা অবশ্য নিছকই কৌতূহল। বড় ভাই আবরার অবশ্য তাকে অনেক ক্ষেপাতেন এই বিষয়টা নিয়ে। এ নিয়েই ভাইয়ের সঙ্গে জিদ করে আগে তোলা কিছু ছবি পাঠিয়ে দেন তিনি। এতেই বাজিমাৎ। সিলেক্ট হন তিনি। তখন অবশ্য তার বড় ভাই বলেছিল, ‘তুই প্রথম রাউন্ডেই বাদ পড়বি।’ বাবা প্রথমে সাপোর্ট না করলেও টপ হওয়ার পর উৎসাহ দিচ্ছেন তবে সব কিছুই করতে হবে পড়াশোনাটা ঠিক রেখে, এমনটাই আদেশ বাবার।আস্তে আস্তে একের পর এক রাউন্ড আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পার হতে থাকেন তিনি। মোট এক হাজার প্রতিযোগীর মধ্য থেকে বেছে নেয়া হয় ২০০। সেখানে টিকে যান নওশীন। এরপর আস্তে আস্তে সেরা ২০-এর মধ্যে চলে আসেন নওশীন। শুরু হয় গ্রুমিং। এখানেই তিন মাস নিবিড় চর্চার মধ্য দিয়ে নিজেকে শাণিত করে নেন তিনি। এখানে শিখেছেন সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা । ক্যাম্পে অনেক মজা করেছেন সবাই মিলে। প্রথম রানার আপ আশার সঙ্গেই চলত সব সময় খুনসুটি। নওশীনের লক্ষ্য ভাল মডেল হওয়া। মডেল আইকন হতে চান তিনি । ছোটবেলায় পরিবারের সবাই মিলে চলে যেতেন সমুদ্রবিহারে। সমুদ্র আর পাহাড় তাকে এখনও টানে। অবসরে বই পড়তে নওশীনের ভীষণন ভাল লাগে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, হুমায়ূন আহমেদ, সমরেশ মজুমদার, শীর্ষেন্দু আর জাফর ইকবালের বই ভীষণ প্রিয় তার। অসম্ভব পছন্দ রবীন্দ্রনাথের সমাপ্তি গল্পের মৃন্ময়ী চরিত্র। নিজেকে মাঝে মাঝে মৃন্ময়ী মনে হয় তার। প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের সব গল্পের নারী চরিত্রের মাঝে নিজেকে দেখতে ভালবাসেন নওশীন।
ফাইনালে রাউন্ডের আগে একটু নার্ভাস লাগছিল তার। কিন্তু আস্তে আস্তে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে সময় লাগেনি নওশীনের। বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রের ফাইনাল অনুষ্ঠানে ছিলেন চাচা-চাচি, মা, বড় ভাই আবরার, হান্না আপুসহ পরিবারের অনেকেই। টপ মডেল হিসেবে তার নাম ঘোষিত হওয়ার পর থেকে আনন্দে ভাষাহীন হয়ে পড়েন তিনি।
মিডিয়াতে একটু বেছে বেছে কাজ করতে চান তিনি। ফ্যাশন আইকন হিসেবে নোবেল, মৌ, আজরাকে পছন্দ করেন নওশীন। দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে মেঝ নওশীন। বায়োটেকনোলজি নিয়ে স্নাতক করার ইচ্ছা নওশীনের। দেশের জন্য কাজ করতে চান তিনি। আর মডেলিংটা করতে চান তবে পড়াশোনার ক্ষতি না করে। এবার বিদায়ের পালা। নওশীনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ছুটলাম অফিসের পথে। ততক্ষণে হলদে সূর্যটা একটু একটু করে পশ্চিম দিকে হেলতে শুরু করছে। ঢাকা শহরটা সেজে উঠছে বর্ণিল রূপে।
ইমরান হোসেন
No comments