হাজারো বাঁধে বিপন্ন জীববৈচিত্র্য
হিমালয় নিকট ভবিষ্যতেই বাঁধের সংখ্যার দিক থেকে আরেকটি রেকর্ডের দাবিদার হবে। এটি হয়তো হয়ে উঠবে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বাঁধের স্থান।
ভারত, নেপাল ও ভুটান মিলিয়ে হিমালয় অঞ্চলে এক হাজারেরও বেশি বাঁধ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।
এর মধ্যে কিছু বাঁধ ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে, কিছু তৈরি হচ্ছে, বাকিগুলো পরিকল্পনাধীন। ভারতের জলবিদ্যুৎ থেকে বর্তমানে ৩৯ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। ভবিষ্যতে জলবিদ্যুৎ থেকে দেশটি এর চার গুণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে। তাই এসব বাঁধ নির্মাণ।ভারত, নেপাল ও ভুটান মিলিয়ে হিমালয় অঞ্চলে এক হাজারেরও বেশি বাঁধ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।
এই বাঁধগুলো সরাসরি শক্তির উৎস ছাড়াও বন্যানিয়ন্ত্রণ এবং বিশুদ্ধ পানির আধার হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু এই বাঁধগুলোর জন্য বিপন্ন হয়ে পড়েছে প্রকৃতি। সবচেয়ে বেশি হুমকির সম্মুখীন স্থানীয় প্রজাতি। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মহারাজ পণ্ডিত এবং চীনের একাডেমি অব সায়েন্সের গবেষক আর এডওয়ার্ড গ্রামবিন যৌথভাবে হিমালয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই বাঁধগুলোর প্রতিক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁরা পরিকল্পিত ২৯২টি বাঁধ নিয়ে এই গবেষণা করেন। তাঁরা এই গবেষণায় ব্যবহার করেন হিমালয়ের স্যাটেলাইট ছবি এবং বিভিন্ন জীব-প্রজাতির ওপর প্রকাশিত নিবন্ধ। প্রতিটি বাঁধ আশপাশের জীবজগৎকে কীভাবে প্রভাবিত করে, বিষয়টি তাঁরা লক্ষ করেন।
গবেষক পণ্ডিত বলেন, ‘আমাদের হিসাবমতে, প্রায় এক হাজার ৭০০ বর্গকিলোমিটার বনাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাবে বা ডুবে যাবে এই কর্মকাণ্ডের কারণে। ২০২৫ সালের মধ্যে এই অঞ্চলের প্রায় ২২ প্রজাতির সপুষ্পক উদ্ভিদ এবং সাতটি মেরুদণ্ডী প্রাণীর প্রজাতি হারিয়ে যাবে। ২১০০ সালের মধ্যে হারিয়ে যাবে এক হাজার ৫০৫ প্রজাতির সপুষ্পক উদ্ভিদ এবং ২৭৪ প্রজাতির মেরুদণ্ডী প্রাণী। আর এসব ঘটবে যদি বাঁধ নির্মাণ চলতেই থাকে।
সম্প্রতি আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, হিমালয় অঞ্চলে বাঁধের কারণে প্রায় ৩০০টি মাছের প্রজাতি ধ্বংস হবে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের জে ভাটের নেতৃত্বে একদল গবেষক হিমালয়ের ১৬টি নদীর মাছের ওপর গবেষণাটি করেন। তাঁরা বলছেন, এসব নদী জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ। এই অঞ্চলগুলোতেও বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
দক্ষিণ এশিয়ার বাঁধ, নদী এবং প্রজাতিবিষয়ক একটি সংস্থার পরিচালক হিমাংশু থ্যাকার বলেন, এক ডজনের বেশি বাঁধের প্রকল্প ইতিমধ্যেই মামলায় আটকে গেছে। বাঁধের কারণে মানুষের বসতি ধ্বংস, নদীর স্বাভাবিক গতি নষ্ট এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। কয়েক শ বাঁধ এখানে নির্মাণের ফলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ সুবিশাল হবে। নিউসায়েন্টিস্ট।
No comments