২০১৩-তে রাজপথ উত্তপ্ত হওয়ার কোন কারণ নেই- স্বদেশ রায়
খ্রিস্টীয় নববর্ষ সারা পৃথিবীতে সমানভাবে পালিত না হলেও এই গ্রেগরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আমাদের জীবন চলে। তাই সত্যি অর্থে এ দিনেই আমরা একটি নতুন বছরে প্রবেশ করি। এ লেখা লিখতে বসেছি নতুন বছরের প্রথম দিনে।
নতুন বছরের প্রথম দিনটি অন্য আর পাঁচটি দিনের সঙ্গে আলাদা করা যায় না। কারণ এদিন সূর্য তার নির্ধারিত সময় মতোই তার নিজস্ব রঙ নিয়ে ওঠে। এ দিনের বাতাসেও থাকে না নতুন কোন গন্ধ। এ দিন নতুন কোন বিশেষ ফুল ফোটে না যা দিনটিকে অন্য দিনের সঙ্গে আলাদা করবে। তবে তারপরেও এ দিনটি নতুন দিন। বছরের প্রথম দিন। এবং বছরের অন্য সকল দিনের সঙ্গে আলাদা। আর প্রত্যেকের কাছেই আলাদা মনে হয়। আসলে এই দিনটির সঙ্গে অন্য সকল দিনের যা কিছু আলাদা সেটা মানুষের মন হাজার বছর ধরেই তৈরি করেছে। দিনের সূর্যের রঙ নতুন হয় মানুষের মনে, বাতাসের গন্ধ নতুন হয় মনে, ফুলগুলো এমনকি ঝরে যাওয়ায় নতুন পাতাও বিশেষ হয়ে দেখা দেয় মনে।
নতুন বছরের প্রথম দিনের সূর্য ওঠারও আগে রাজধানীর এক টুকরো নিশ্বাস রমনা পার্কে পৌঁছাতে গিয়ে দেখি রাস্তার পাশে একটি বড় গাছের নিচে ঝরে পড়ে আছে অনেক পাতা। যা গুনলে হয়ত ৩৬৫টির অনেক বেশি হবে। ঝরে যাওয়া পাতাগুলোর দিকে তাকিয়ে মনে হলো এমনি করেই ২০১২ এর সব দিন ঝরে গেছে আমাদের জীবন থেকে। এমনি করেই অতীতের অনেক বছরের দিনগুলো ঝরে গেছে। এমনি করেই ঝরে গেছে আমাদের জাতীয় জীবনের দিনগুলো। আর এটাই নিয়ম। এই তীব্র শীত কেটে গেলেই গাছটিতে নতুন পাতা আসবে। সেখানে ৩৬৫ পাতা হবে। এই চিন্তা নিয়েই শীতের কুয়াশা ঢাকা পার্কে ঢুকে শীত ও কুয়াশাকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে হলো, ২০১৩ কী সত্যি সত্যি আমাদের জীবনে নতুন হয়ে আসবে। না অতীতের অনেক বছরের মতো একই ঘুর পাকে ঘুরে শেষ হয়ে যাবে। আরেক শীতে পৌঁছে যাবে শেষের প্রান্তে। যেখানে থাকবে শুধু এমনি শীত, কুয়াশা আর পাতা ঝরা! পাশাপাশি আবারও মনে হলো, আসলে কি প্রতিটি বছরই একই রকম যায়। আমরা বার বার বলি গড্ডলিকা প্রবাহে চলে যায়, একইভাবে দিনগুলো কেটে যায়। কখনও কখনও আরও হতাশার কথা শুনি, এর থেকে অতীতের দিনগুলো আরও ভাল ছিল। বাস্তবে কি তাই!
আধুনিক রাষ্ট্রে ব্যক্তি জীবন আর রাষ্ট্রীয় জীবন বা জাতীয় জীবন এত বেশি এক সঙ্গে জড়ানো যে একে পার্থক্য করা যায় না। ব্যক্তি জীবনের প্রায় সবটুকুই নানানভাবে নির্ভর করে জাতীয় জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনের ওপর। তাই জাতীয় জীবনের অনেক কিছুর ভিতর দিয়ে যেমন ব্যক্তিকে খুঁজতে হয়, তেমনি ব্যক্তি জীবনের অনেক কিছুর ভিতর দিয়ে জাতীয় জীবনকে খুঁজতে হয়। ব্যক্তির চাহিদাগুলোর যোগফলই জাতীয় জীবনের চাহিদা হয়ে ওঠে। তাই ২০১৩ তে আমাদের চাহিদা কি সেটা খুঁজতে গেলে যেমন জাতীয় জীবনের অনেক রূপরেখার দিকে তাকাতে হবে তেমনি ব্যক্তি জীবনের চাহিদাগুলোও এক এক করে খুঁজে দেখা দরকার। ব্যক্তি জীবনের সেই চাহিদা নিয়েই তৈরি করা প্রয়োজন আমাদের ২০১৩’র জাতীয় জীবনের পথ চলা। আবার এই ব্যক্তির ভিতরও পার্থক্য আছে যারা আগামীর পথে তাদের চাহিদাকে যে পাল্লায় তোলার প্রয়োজন, যারা অনেক পথ পেরিয়ে এসেছে, যাদের পা এখন ক্রমেই পশ্চিম দিগন্তের দিকে এগিয়ে চলেছে তাদের চাহিদা আরেক পাল্লায় তোলা প্রয়োজন। আর যারা আগামীর পথে তাদের চাহিদাকেই দিতে হবে সব থেকে বেশি গুরুত্ব।
নতুন এই বছরটি আসার আগেই এ বছর নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। মিডিয়ায় কয়েকটি দিন ভরা ছিল এ বছর নিয়ে নানান কথায়। সেখানে এ বছরকে এক টালমাটাল রাজনীতির বছর বলা হয়েছে। নির্বাচনের বছর বলা হয়েছে। রাজনীতির টালমাটাল বছর বলা হচ্ছে এ কারণেই, অনেকের ধারণা এ বছর রাজনীতি নিয়ে বিরোধী দল রাজপথকে উত্তপ্ত করে তুলবে। বিরোধী দল কাকে নিয়ে এই রাজপথ উত্তপ্ত করবে সেটা কিন্তু কেউ বলছে না। বিরোধী দল ২০১২তে কিন্তু রাজপথ কম উত্তপ্ত করেনি! বিরোধী দল ২০১২তে রাজপথে গাড়িতে আগুন দেবার রেকর্ড করেছে। যারা ১৯৪৮ থেকে আজ অবধি দেশের রাজনীতির সাক্ষী এমন কয়েকজনের মুখ দিয়েই এ সত্য বেরিয়ে এসেছে, তারা তাদের জীবনে কখনও এক দিনে এত গাড়ি পোড়াতে ও ভাংচুর করতে দেখেনি যা হয়েছিল ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর জামায়াত- বিএনপির ডাকা রাজপথ অবরোধের দিন। তেমনিভাবে ২০১২ সালের নবেম্বর মাসজুড়ে ও ডিসেম্বরের কিছুদিন রাজপথে যেভাবে পুলিশের গাড়িতে হামলা হয় ও আগুন দেয়া হয় এমনও এর আগে কখনও এ দেশের রাজপথে ঘটেনি। কিন্তু এর পরেও যে সব রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, আগামী বছর রাজপথ উত্তপ্ত হবে তাঁরা ২০১২-এর শেষে এসে বলেছেন বিরোধী দল রাজপথকে উত্তপ্ত করতে পারেনি।
বাস্তবে গাড়ি ভেঙ্গে, গাড়ি পুড়িয়ে ও পুলিশের ওপর হামলা করে রাজপথে দুর্বৃত্তায়নকে প্রতিষ্ঠিত করা যায় কিন্তু রাজপথকে উত্তপ্ত করা যায় না। রাজপথ উত্তপ্ত হয় মানুষের গগনবিদারী সেøাগানে, রাজপথ উত্তপ্ত হয় অগণিত মানুষের পদভারে। সেই মানুষ কিন্তু একজনও রাজপথে নামেনি। তাই ২০১৩র আগমনের আগেই যাঁরা বলেছেন, ২০১৩তে রাজপথ উত্তপ্ত হবে নিশ্চিত বলা যায়, ২০১৩র শেষে তাঁরা আবার বলবেন, ২০১৩তে রাজপথ উত্তপ্ত হয়নি।
কেন ২০১৩তে রাজপথ উত্তপ্ত হবে না? তার আগে প্রশ্ন করা যায়, কেন ২০১৩তে রাজপথ উত্তপ্ত হবে? রাজপথ উত্তপ্ত করবে কে? রাজপথ উত্তপ্ত নিশ্চয়ই সরকারী দল করবে না, করবে বিরোধী দল। এখন বিরোধী দল বলতে কারা? রাজপথে আন্দোলনে আছে ১৮ দলীয় জোট। এটা আক্ষরিক অর্থে। বাস্তবে এই আঠারো দলের ১৬টি দলের কোন অস্তিত্ব নেই। দুটি দলই রাজপথে আছে। এক বিএনপি, দুই জামায়াতে ইসলামী। এই দুই দল কী কী দাবিতে রাজপথ উত্তপ্ত করবে। এই দুই দলের দাবি এখন জনগণের কাছে স্পষ্ট, বিএনপির দাবি দুটি। এক, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা। দুই, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল আনা সংসদে। আর জামায়াতে ইসলামীর দাবি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা। বিচারের জন্যে গঠিত সাংবিধানিক ট্রাইব্যুনাল বাতিল করা। দুই দলের প্রথম দাবির সপক্ষে অর্থাৎ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের দাবিতে কিছু দেশদ্রোহী ছাড়া কেউ রাজপথে নামবে না। কারণ যারা এদেশের মানুষ হত্যা, দুগ্ধপোষ্য শিশু হত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যা ও মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠনের নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের পক্ষে দেশদ্রোহী ছাড়া এ দেশের কোন সন্তান রাজপথে নামবে না। এবং ইতোমধ্যে যারা রাজপথে নেমে পুলিশের ওপর হামলা করেছে, গাড়িতে আগুন দিয়েছে ড. কামাল হোসেনও তাদেরকে দেশদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। শুধু রাজপথে নয়, আজ তাদের আইনী সহায়তা দিতে জামায়াত বিএনপির যে সব আইনজীবী নেতা বিচারালয়ে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন- এ দেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম যদি তাদের দেশদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করে, তাদের বিচার করে তাহলেও কিন্তু আশ্চর্য হবার কিছু নেই। কারণ, ইউরোপে নাজি যুদ্ধাপরাধীরা কতটুকু আইনী সহায়তা পায় সেটা সকলেই জানেন। তাই যুদ্ধাপরাধী বিচার বন্ধের দাবিতে রাজপথ উত্তপ্ত হবার কোন কারণ নেই। বরং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যদি সরকারের দিক থেকে বিলম্বিত করার কোন ঘটনা ঘটে তার বিরুদ্ধে মানুষ রাজপথে নেমে আসতে পারে।
এছাড়া রাজপথ উত্তপ্ত করার দাবি থাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির জন্য। এই দাবিতেও কিন্তু রাজপথে মানুষ নেমে আসার কোন কারণ নেই। কারণ সাহাবুদ্দীন থেকে ফখরুদ্দীন অবধি দেখার পরে মানুষের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চূড়ান্ত রূপ দেখা হয়ে গেছে। এর পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী শ্রেণীসহ প্রায় কারও কোন মোহ নেই। মোহ আছে কিছু ভিন্ন পেশাজীবীর। যাঁরা ইতোমধ্যে এই তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হয়ে সমাজের কেউকেটা হয়েছেন তাঁদের। এবং ভবিষ্যতে যাঁরা কেউকেটা হতে চান তাঁদের। এছাড়া আর কারও কোন মোহ নেই। তাছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রাজনৈতিক ভিত্তি শেষ হয়ে গেছে ১৯৯১ সালের পরেই। ১৯৯১ সালে সকল রাজনৈতিক দলের মিলিত সিদ্ধান্তের ফলেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বাস্তবে সকল রাজনৈতিক দলের মিলিত সিদ্ধান্ত ছাড়া বৈধভাবে কোন অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতায় বসার কোন সুযোগ নেই। তাই ১৯৯১ সালে নির্বাচনের পরে যখনই বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষ ত্যাগ করে তখনই এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভিত্তি শেষ হয়ে যায়। কারণ, বিএনপির তত্ত্ববধায়কের পক্ষ ত্যাগ করার অর্থ দাঁড়ায় বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক প্রশ্নে যে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছিলো সেটা শেষ হয়ে যাওয়া। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের আর কোন সত্যিকার পথ থাকে না। আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্ঠার জন্যে আন্দোলন করে ঠিকই, তারা বিএনপিকে দিয়ে এক ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করাতে সমর্থ হয়েছিল কিন্তু সেটা রাজনৈতিক ঐকমত্যের বৈধ তত্ত্বাবধায়ক নয়। কেবলমাত্র একটি তথাকথিত সংসদের মাধ্যমে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক। এটুকুও আওয়ামী লীগ করাতে পেরেছিল দুই কারণে : এক, বিএনপি ১৯৯১ সালে ক্ষমতা পাবার পর থেকে তাদের পুরো শাসনামলে কোন নির্বাচন সঠিকভাবে করেনি। যা মানুষকে বিশ্বাস করাতে সমর্থ হয় যে, বিএনপির অধীনে সঠিক নির্বাচন সম্ভব নয়। দুই বা যেটা সব থেকে বড় কারণ তা হলো ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করার ফলে বিএনপি রাজনৈতিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল। তাই ক্ষমতায় গেলে তাদের প্রশাসনসহ কারও ওপরে কোন রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগের পথ ছিল না। বিএনপি রাজনৈতিক ক্ষমতাহীন ছিল বলেই তারা বাধ্য হয়েছিল তত্তা¡বধায়ক বিল আনতে। অন্যদিকে মানুষ যে রাজপথে নেমে এসেছিল তার মূল কারণ ছিল রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন একটি শক্তিকে তারা ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই বিএনপি সংসদের মাধ্যমে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল আনে বা যে তত্ত্বাবধায়ক চালু হয় সেটা একটি বাধ্যতামূলক বিষয় ছিল রাজনৈতিক ঐকমত্যের বিষয় নয়। যে কারণে দেখা যায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার কম জোর হয়ে পড়ে। সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসার সুযোগ খোঁজে যেটা কেবলমাত্র বিচারপতি হাবিবুর রহমানের সাহস ও ব্যক্তিত্বের কারণে বন্ধ করা সম্ভব হয়েছিল। আর এর পরের তত্ত্বাবধায়ক সরকার তো পুরোপুরি সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তাই রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া যে কোনভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার করার অর্থই হচ্ছে সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতায় আনা। যা কোন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচী হতে পারে না অন্যদিকে জনগণও নিশ্চয়ই রাজনৈতিক সরকারের বদলে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতায় আনার জন্য রাজপথে নামবে না। এ কারণে বিএনপি যতই হরতাল ডাকুক আর গাড়ি পোড়াক না কেন, রাজপথ কোন মতেই উত্তপ্ত হবে না তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে। কারণ এখন দেশের রাজনীতির বড় অংশই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিপক্ষে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের শেষ পর্যায়ের সেই অবস্থা এখন আর নেই।
এছাড়া দেশের সমাজ জীবনে অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে। পরিবর্তন ঘটে গেছে দেশের অর্থনৈতিক জগতে। সমাজ জীবনের সব থেকে বড় ঘটনা হচ্ছে, গত পাঁচ বছরে এক কোটি নাগরিকের বয়স আঠারো বছর পূর্ণ হয়েছে। এই নাগরিকদের একটি বড় অংশ নারী এবং তারা অধিকাংশ ছাত্রী। এই এক কোটি নাগরিক উন্নত জীবন চায়। তারা ভবিষ্যতে কাজ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে ৫ কোটি নাগরিকের বয়স ১৮ থেকে ২৫-এর ভিতর। তারা এখন সবাই কাজের জন্যে প্রস্তুত। এর পাশাপাশি ২০১২ সালে বাংলাদেশের তরুণ নাগরিকরা বিদেশে কাজ করে দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ১৪ হাজার কোটি ডলার। ২০১২ সালে দেশ গার্মেন্টস পণ্য রফতানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে গেছে। পশ্চিমা বিশ্ব মনে করছে আগামী ২০২১ সালের ভিতর অর্থনীতিতে বাংলাদেশ ইউরোপকে ছাড়িয়ে যাবে। জাপানসহ এশীয় অন্যান্য দেশ মনে করে বাংলাদেশ যদি তার ৬ কোটির ওপর তরুণ নাগরিককে দেশে ও বিদেশে কাজ দিতে পারে তাহলে ২০২১ এর আগে ইউরোপকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নে।
অন্যদিকে গত চার বছর দেশ উন্নয়নের ধারায় প্রবাহিত হয়েছে। যার ফলে দেশ প্রথম বারের মতো দ্রুত সময়ে প্রয়োজনীয় বিদ্যুত উৎপাদন করেছে এবং আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের যে পরিমাণ বিদ্যুত প্রয়োজন হবে উন্নয়নের জন্যে তার রূপরেখা অনুযায়ী অনেক কাজ শুরু হয়েছে।
তাই এখন রাজনীতি আর কোনক্রমেই রাজপথ উত্তপ্তের ভিতর নেই। রাজনীতি এখন এই ৬ কোটি তরুণসহ ষোলো কোটি মানুষের উন্নয়নের পথরেখায়। এই পথরেখা ধরে ২০১৩তে যাঁরা হাঁটতে পারবেন; যাঁরা আরও সঠিক পথরেখার দিক নির্দেশনা দেবেন জনগণের সামনে তাঁদের সঙ্গেই রাজনীতি চলবে। গাড়ি পোড়ানোর সঙ্গে আর পুলিশের ওপর হামলার সঙ্গে নিশ্চয়ই আর রাজনীতি চলবে না।
swadeshroy@gmail.com
নতুন বছরের প্রথম দিনটি অন্য আর পাঁচটি দিনের সঙ্গে আলাদা করা যায় না। কারণ এদিন সূর্য তার নির্ধারিত সময় মতোই তার নিজস্ব রঙ নিয়ে ওঠে। এ দিনের বাতাসেও থাকে না নতুন কোন গন্ধ। এ দিন নতুন কোন বিশেষ ফুল ফোটে না যা দিনটিকে অন্য দিনের সঙ্গে আলাদা করবে। তবে তারপরেও এ দিনটি নতুন দিন। বছরের প্রথম দিন। এবং বছরের অন্য সকল দিনের সঙ্গে আলাদা। আর প্রত্যেকের কাছেই আলাদা মনে হয়। আসলে এই দিনটির সঙ্গে অন্য সকল দিনের যা কিছু আলাদা সেটা মানুষের মন হাজার বছর ধরেই তৈরি করেছে। দিনের সূর্যের রঙ নতুন হয় মানুষের মনে, বাতাসের গন্ধ নতুন হয় মনে, ফুলগুলো এমনকি ঝরে যাওয়ায় নতুন পাতাও বিশেষ হয়ে দেখা দেয় মনে।
নতুন বছরের প্রথম দিনের সূর্য ওঠারও আগে রাজধানীর এক টুকরো নিশ্বাস রমনা পার্কে পৌঁছাতে গিয়ে দেখি রাস্তার পাশে একটি বড় গাছের নিচে ঝরে পড়ে আছে অনেক পাতা। যা গুনলে হয়ত ৩৬৫টির অনেক বেশি হবে। ঝরে যাওয়া পাতাগুলোর দিকে তাকিয়ে মনে হলো এমনি করেই ২০১২ এর সব দিন ঝরে গেছে আমাদের জীবন থেকে। এমনি করেই অতীতের অনেক বছরের দিনগুলো ঝরে গেছে। এমনি করেই ঝরে গেছে আমাদের জাতীয় জীবনের দিনগুলো। আর এটাই নিয়ম। এই তীব্র শীত কেটে গেলেই গাছটিতে নতুন পাতা আসবে। সেখানে ৩৬৫ পাতা হবে। এই চিন্তা নিয়েই শীতের কুয়াশা ঢাকা পার্কে ঢুকে শীত ও কুয়াশাকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে হলো, ২০১৩ কী সত্যি সত্যি আমাদের জীবনে নতুন হয়ে আসবে। না অতীতের অনেক বছরের মতো একই ঘুর পাকে ঘুরে শেষ হয়ে যাবে। আরেক শীতে পৌঁছে যাবে শেষের প্রান্তে। যেখানে থাকবে শুধু এমনি শীত, কুয়াশা আর পাতা ঝরা! পাশাপাশি আবারও মনে হলো, আসলে কি প্রতিটি বছরই একই রকম যায়। আমরা বার বার বলি গড্ডলিকা প্রবাহে চলে যায়, একইভাবে দিনগুলো কেটে যায়। কখনও কখনও আরও হতাশার কথা শুনি, এর থেকে অতীতের দিনগুলো আরও ভাল ছিল। বাস্তবে কি তাই!
আধুনিক রাষ্ট্রে ব্যক্তি জীবন আর রাষ্ট্রীয় জীবন বা জাতীয় জীবন এত বেশি এক সঙ্গে জড়ানো যে একে পার্থক্য করা যায় না। ব্যক্তি জীবনের প্রায় সবটুকুই নানানভাবে নির্ভর করে জাতীয় জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনের ওপর। তাই জাতীয় জীবনের অনেক কিছুর ভিতর দিয়ে যেমন ব্যক্তিকে খুঁজতে হয়, তেমনি ব্যক্তি জীবনের অনেক কিছুর ভিতর দিয়ে জাতীয় জীবনকে খুঁজতে হয়। ব্যক্তির চাহিদাগুলোর যোগফলই জাতীয় জীবনের চাহিদা হয়ে ওঠে। তাই ২০১৩ তে আমাদের চাহিদা কি সেটা খুঁজতে গেলে যেমন জাতীয় জীবনের অনেক রূপরেখার দিকে তাকাতে হবে তেমনি ব্যক্তি জীবনের চাহিদাগুলোও এক এক করে খুঁজে দেখা দরকার। ব্যক্তি জীবনের সেই চাহিদা নিয়েই তৈরি করা প্রয়োজন আমাদের ২০১৩’র জাতীয় জীবনের পথ চলা। আবার এই ব্যক্তির ভিতরও পার্থক্য আছে যারা আগামীর পথে তাদের চাহিদাকে যে পাল্লায় তোলার প্রয়োজন, যারা অনেক পথ পেরিয়ে এসেছে, যাদের পা এখন ক্রমেই পশ্চিম দিগন্তের দিকে এগিয়ে চলেছে তাদের চাহিদা আরেক পাল্লায় তোলা প্রয়োজন। আর যারা আগামীর পথে তাদের চাহিদাকেই দিতে হবে সব থেকে বেশি গুরুত্ব।
নতুন এই বছরটি আসার আগেই এ বছর নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। মিডিয়ায় কয়েকটি দিন ভরা ছিল এ বছর নিয়ে নানান কথায়। সেখানে এ বছরকে এক টালমাটাল রাজনীতির বছর বলা হয়েছে। নির্বাচনের বছর বলা হয়েছে। রাজনীতির টালমাটাল বছর বলা হচ্ছে এ কারণেই, অনেকের ধারণা এ বছর রাজনীতি নিয়ে বিরোধী দল রাজপথকে উত্তপ্ত করে তুলবে। বিরোধী দল কাকে নিয়ে এই রাজপথ উত্তপ্ত করবে সেটা কিন্তু কেউ বলছে না। বিরোধী দল ২০১২তে কিন্তু রাজপথ কম উত্তপ্ত করেনি! বিরোধী দল ২০১২তে রাজপথে গাড়িতে আগুন দেবার রেকর্ড করেছে। যারা ১৯৪৮ থেকে আজ অবধি দেশের রাজনীতির সাক্ষী এমন কয়েকজনের মুখ দিয়েই এ সত্য বেরিয়ে এসেছে, তারা তাদের জীবনে কখনও এক দিনে এত গাড়ি পোড়াতে ও ভাংচুর করতে দেখেনি যা হয়েছিল ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর জামায়াত- বিএনপির ডাকা রাজপথ অবরোধের দিন। তেমনিভাবে ২০১২ সালের নবেম্বর মাসজুড়ে ও ডিসেম্বরের কিছুদিন রাজপথে যেভাবে পুলিশের গাড়িতে হামলা হয় ও আগুন দেয়া হয় এমনও এর আগে কখনও এ দেশের রাজপথে ঘটেনি। কিন্তু এর পরেও যে সব রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, আগামী বছর রাজপথ উত্তপ্ত হবে তাঁরা ২০১২-এর শেষে এসে বলেছেন বিরোধী দল রাজপথকে উত্তপ্ত করতে পারেনি।
বাস্তবে গাড়ি ভেঙ্গে, গাড়ি পুড়িয়ে ও পুলিশের ওপর হামলা করে রাজপথে দুর্বৃত্তায়নকে প্রতিষ্ঠিত করা যায় কিন্তু রাজপথকে উত্তপ্ত করা যায় না। রাজপথ উত্তপ্ত হয় মানুষের গগনবিদারী সেøাগানে, রাজপথ উত্তপ্ত হয় অগণিত মানুষের পদভারে। সেই মানুষ কিন্তু একজনও রাজপথে নামেনি। তাই ২০১৩র আগমনের আগেই যাঁরা বলেছেন, ২০১৩তে রাজপথ উত্তপ্ত হবে নিশ্চিত বলা যায়, ২০১৩র শেষে তাঁরা আবার বলবেন, ২০১৩তে রাজপথ উত্তপ্ত হয়নি।
কেন ২০১৩তে রাজপথ উত্তপ্ত হবে না? তার আগে প্রশ্ন করা যায়, কেন ২০১৩তে রাজপথ উত্তপ্ত হবে? রাজপথ উত্তপ্ত করবে কে? রাজপথ উত্তপ্ত নিশ্চয়ই সরকারী দল করবে না, করবে বিরোধী দল। এখন বিরোধী দল বলতে কারা? রাজপথে আন্দোলনে আছে ১৮ দলীয় জোট। এটা আক্ষরিক অর্থে। বাস্তবে এই আঠারো দলের ১৬টি দলের কোন অস্তিত্ব নেই। দুটি দলই রাজপথে আছে। এক বিএনপি, দুই জামায়াতে ইসলামী। এই দুই দল কী কী দাবিতে রাজপথ উত্তপ্ত করবে। এই দুই দলের দাবি এখন জনগণের কাছে স্পষ্ট, বিএনপির দাবি দুটি। এক, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা। দুই, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল আনা সংসদে। আর জামায়াতে ইসলামীর দাবি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা। বিচারের জন্যে গঠিত সাংবিধানিক ট্রাইব্যুনাল বাতিল করা। দুই দলের প্রথম দাবির সপক্ষে অর্থাৎ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের দাবিতে কিছু দেশদ্রোহী ছাড়া কেউ রাজপথে নামবে না। কারণ যারা এদেশের মানুষ হত্যা, দুগ্ধপোষ্য শিশু হত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যা ও মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠনের নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের পক্ষে দেশদ্রোহী ছাড়া এ দেশের কোন সন্তান রাজপথে নামবে না। এবং ইতোমধ্যে যারা রাজপথে নেমে পুলিশের ওপর হামলা করেছে, গাড়িতে আগুন দিয়েছে ড. কামাল হোসেনও তাদেরকে দেশদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। শুধু রাজপথে নয়, আজ তাদের আইনী সহায়তা দিতে জামায়াত বিএনপির যে সব আইনজীবী নেতা বিচারালয়ে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন- এ দেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম যদি তাদের দেশদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করে, তাদের বিচার করে তাহলেও কিন্তু আশ্চর্য হবার কিছু নেই। কারণ, ইউরোপে নাজি যুদ্ধাপরাধীরা কতটুকু আইনী সহায়তা পায় সেটা সকলেই জানেন। তাই যুদ্ধাপরাধী বিচার বন্ধের দাবিতে রাজপথ উত্তপ্ত হবার কোন কারণ নেই। বরং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যদি সরকারের দিক থেকে বিলম্বিত করার কোন ঘটনা ঘটে তার বিরুদ্ধে মানুষ রাজপথে নেমে আসতে পারে।
এছাড়া রাজপথ উত্তপ্ত করার দাবি থাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির জন্য। এই দাবিতেও কিন্তু রাজপথে মানুষ নেমে আসার কোন কারণ নেই। কারণ সাহাবুদ্দীন থেকে ফখরুদ্দীন অবধি দেখার পরে মানুষের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চূড়ান্ত রূপ দেখা হয়ে গেছে। এর পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী শ্রেণীসহ প্রায় কারও কোন মোহ নেই। মোহ আছে কিছু ভিন্ন পেশাজীবীর। যাঁরা ইতোমধ্যে এই তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হয়ে সমাজের কেউকেটা হয়েছেন তাঁদের। এবং ভবিষ্যতে যাঁরা কেউকেটা হতে চান তাঁদের। এছাড়া আর কারও কোন মোহ নেই। তাছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রাজনৈতিক ভিত্তি শেষ হয়ে গেছে ১৯৯১ সালের পরেই। ১৯৯১ সালে সকল রাজনৈতিক দলের মিলিত সিদ্ধান্তের ফলেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বাস্তবে সকল রাজনৈতিক দলের মিলিত সিদ্ধান্ত ছাড়া বৈধভাবে কোন অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতায় বসার কোন সুযোগ নেই। তাই ১৯৯১ সালে নির্বাচনের পরে যখনই বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষ ত্যাগ করে তখনই এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভিত্তি শেষ হয়ে যায়। কারণ, বিএনপির তত্ত্ববধায়কের পক্ষ ত্যাগ করার অর্থ দাঁড়ায় বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক প্রশ্নে যে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছিলো সেটা শেষ হয়ে যাওয়া। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের আর কোন সত্যিকার পথ থাকে না। আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্ঠার জন্যে আন্দোলন করে ঠিকই, তারা বিএনপিকে দিয়ে এক ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করাতে সমর্থ হয়েছিল কিন্তু সেটা রাজনৈতিক ঐকমত্যের বৈধ তত্ত্বাবধায়ক নয়। কেবলমাত্র একটি তথাকথিত সংসদের মাধ্যমে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক। এটুকুও আওয়ামী লীগ করাতে পেরেছিল দুই কারণে : এক, বিএনপি ১৯৯১ সালে ক্ষমতা পাবার পর থেকে তাদের পুরো শাসনামলে কোন নির্বাচন সঠিকভাবে করেনি। যা মানুষকে বিশ্বাস করাতে সমর্থ হয় যে, বিএনপির অধীনে সঠিক নির্বাচন সম্ভব নয়। দুই বা যেটা সব থেকে বড় কারণ তা হলো ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করার ফলে বিএনপি রাজনৈতিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল। তাই ক্ষমতায় গেলে তাদের প্রশাসনসহ কারও ওপরে কোন রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগের পথ ছিল না। বিএনপি রাজনৈতিক ক্ষমতাহীন ছিল বলেই তারা বাধ্য হয়েছিল তত্তা¡বধায়ক বিল আনতে। অন্যদিকে মানুষ যে রাজপথে নেমে এসেছিল তার মূল কারণ ছিল রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন একটি শক্তিকে তারা ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই বিএনপি সংসদের মাধ্যমে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল আনে বা যে তত্ত্বাবধায়ক চালু হয় সেটা একটি বাধ্যতামূলক বিষয় ছিল রাজনৈতিক ঐকমত্যের বিষয় নয়। যে কারণে দেখা যায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার কম জোর হয়ে পড়ে। সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসার সুযোগ খোঁজে যেটা কেবলমাত্র বিচারপতি হাবিবুর রহমানের সাহস ও ব্যক্তিত্বের কারণে বন্ধ করা সম্ভব হয়েছিল। আর এর পরের তত্ত্বাবধায়ক সরকার তো পুরোপুরি সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তাই রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া যে কোনভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার করার অর্থই হচ্ছে সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতায় আনা। যা কোন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচী হতে পারে না অন্যদিকে জনগণও নিশ্চয়ই রাজনৈতিক সরকারের বদলে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতায় আনার জন্য রাজপথে নামবে না। এ কারণে বিএনপি যতই হরতাল ডাকুক আর গাড়ি পোড়াক না কেন, রাজপথ কোন মতেই উত্তপ্ত হবে না তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে। কারণ এখন দেশের রাজনীতির বড় অংশই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিপক্ষে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের শেষ পর্যায়ের সেই অবস্থা এখন আর নেই।
এছাড়া দেশের সমাজ জীবনে অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে। পরিবর্তন ঘটে গেছে দেশের অর্থনৈতিক জগতে। সমাজ জীবনের সব থেকে বড় ঘটনা হচ্ছে, গত পাঁচ বছরে এক কোটি নাগরিকের বয়স আঠারো বছর পূর্ণ হয়েছে। এই নাগরিকদের একটি বড় অংশ নারী এবং তারা অধিকাংশ ছাত্রী। এই এক কোটি নাগরিক উন্নত জীবন চায়। তারা ভবিষ্যতে কাজ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে ৫ কোটি নাগরিকের বয়স ১৮ থেকে ২৫-এর ভিতর। তারা এখন সবাই কাজের জন্যে প্রস্তুত। এর পাশাপাশি ২০১২ সালে বাংলাদেশের তরুণ নাগরিকরা বিদেশে কাজ করে দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ১৪ হাজার কোটি ডলার। ২০১২ সালে দেশ গার্মেন্টস পণ্য রফতানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে গেছে। পশ্চিমা বিশ্ব মনে করছে আগামী ২০২১ সালের ভিতর অর্থনীতিতে বাংলাদেশ ইউরোপকে ছাড়িয়ে যাবে। জাপানসহ এশীয় অন্যান্য দেশ মনে করে বাংলাদেশ যদি তার ৬ কোটির ওপর তরুণ নাগরিককে দেশে ও বিদেশে কাজ দিতে পারে তাহলে ২০২১ এর আগে ইউরোপকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নে।
অন্যদিকে গত চার বছর দেশ উন্নয়নের ধারায় প্রবাহিত হয়েছে। যার ফলে দেশ প্রথম বারের মতো দ্রুত সময়ে প্রয়োজনীয় বিদ্যুত উৎপাদন করেছে এবং আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের যে পরিমাণ বিদ্যুত প্রয়োজন হবে উন্নয়নের জন্যে তার রূপরেখা অনুযায়ী অনেক কাজ শুরু হয়েছে।
তাই এখন রাজনীতি আর কোনক্রমেই রাজপথ উত্তপ্তের ভিতর নেই। রাজনীতি এখন এই ৬ কোটি তরুণসহ ষোলো কোটি মানুষের উন্নয়নের পথরেখায়। এই পথরেখা ধরে ২০১৩তে যাঁরা হাঁটতে পারবেন; যাঁরা আরও সঠিক পথরেখার দিক নির্দেশনা দেবেন জনগণের সামনে তাঁদের সঙ্গেই রাজনীতি চলবে। গাড়ি পোড়ানোর সঙ্গে আর পুলিশের ওপর হামলার সঙ্গে নিশ্চয়ই আর রাজনীতি চলবে না।
swadeshroy@gmail.com
No comments