বইয়ের বোঝা by নিশাত সুলতানা
রোজ সকালে অফিসে যাওয়ার সময় চোখে পড়ে স্কুলগামী অসংখ্য শিশু, কাঁধে তাদের দানবাকৃতির ব্যাগ। অবাক বিস্ময়ে চেয়ে দেখি তাদের ছোট্ট দেহগুলো নুয়ে পড়েছে বইয়ের ব্যাগের ভারে।
বয়স কতই-বা হবে তাদের! তিন, পাঁচ কিংবা খুব বেশি হলে সাত! ফুলের মতো নিষ্পাপ, সুন্দর মুখগুলো দানবাকৃতির ব্যাগের ভারে যেন ক্লান্ত। ভাবি, এ বোঝা কি শুধুই বইয়ের বোঝা? না, এ বোঝা যে দায়িত্বেরও। শিশুরা হাঁটাচলা কিংবা নিজেদের শরীরের ভারসাম্য রক্ষার কৌশল শেখার আগেই শিখছে দায়িত্ব বহনের জটিল কৌশল। অতিরিক্ত বোঝা বহন শরীরের জন্য ক্ষতিকর আমরা সবাই জানি। অনেক পিতা-মাতাকেই দেখি এগিয়ে আসেন সন্তানের সাহায্যে। এক হাতে সন্তান আর অন্য হাতে সন্তানের ব্যাগ নিয়ে এগিয়ে চলেন স্কুলমুখে। ইদানীং ট্রলিব্যাগের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। কিন্তু অতিরিক্ত দায়িত্বের ভারে জর্জরিত শিশুর মনস্তাত্তি্বক জগৎ লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে যায়। সে বোঝা বইবে কে!
দীর্ঘ সময় স্কুলে থাকার পরও এসব শিশুকে দেওয়া হয় হোমওয়ার্ক বা বাড়ির কাজ। বাড়ির কাজ দেওয়ার এই চর্চা শুরু হয় প্রি-স্কুল থেকেই। ভেবে পাই না প্রি-স্কুলের কোমলমতি এ শিশুদের বাড়ির কাজ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আদৌ আছে কি-না! এটা ঠিক যে, গত দু'দশকে শিক্ষাক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে বহুগুণে। স্বাভাবিকভাবেই স্কুলগুলোতে এর প্রভাব পড়েছে। আর এই প্রভাব থেকেই মূলত জন্ম নিয়েছে বাড়ির কাজ দেওয়ার এই চর্চাটি। কিন্ডারগার্টেন আর ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোতে এই প্রবণতা যেন আরও বেশি। একদিকে পাহাড়সম সিলেবাস আর অন্যদিকে প্রতিদিনের বাড়ির কাজ শেষ করার চাপে চ্যাপ্টা হওয়ার অবস্থা মূল স্কুল শুরু করার আগেই স্কুলের স্বাদ পাওয়া এই শিশুগুলোর। স্কুলগুলোও যেন আজ প্রতিযোগিতায় মত্ত_ কার চেয়ে কার সিলেবাস কলেবরে বড় তা নিয়ে। তাদের সঙ্গে আছেন অতিউৎসাহী কিছু অভিভাবক, যারা ভূমিকা রেখে চলেছেন সিলেবাসকে আরও স্বাস্থ্যবান বানানোর ব্যাপারে। তাই তো প্রি-স্কুলের যে শিশুটি 'ছাত্র' শব্দটির অর্থই ঠিকমতো বোঝে না, তাকে মুখস্থ করতে শুনি শব্দটির একবচন/বহুবচন কিংবা পুংলিঙ্গ/স্ত্রীলিঙ্গ। শিশুর এই পাণ্ডিত্যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের পিতা-মাতাও মহাখুশি। কাউকে কাউকে আত্মতৃপ্তির সঙ্গে বলতেও শুনি, 'আমার বাচ্চা পারছে তো!' পারছে তো বটেই, তবে তাড়াতাড়ি এত পারার ব্যাপারটি কি সত্যিই স্বাস্থ্যকর! ভাবার অবকাশ আছে বৈকি!
অন্যদিকে রোজ সন্ধ্যায় এসব কোমলমতি শিশুকে পড়াতে বসান তাদের মা-বাবারা, বিশেষত মায়েরা। শিশুদের পড়াতে বসানোর এই গুরুদায়িত্ব্ব একজন কর্মজীবী মায়ের জন্য যে কতটা ক্লান্তিকর তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সারাদিনের কর্মক্লান্তির পর তার উদ্যম যখন প্রায় ফুরিয়ে এসেছে, তখন তাকে নবউদ্যমে নিয়োজিত হতে হয় সন্তানকে শিক্ষিত করে তোলার মহান দায়িত্ব পালনে। বাজারের কোনো হেলথ ড্রিঙ্কই পারে না কর্মজীবী সেসব মায়ের উদ্যম ফিরিয়ে আনতে! অন্যদিকে শিশুরা পড়তে বসে একরাশ বিরক্তি নিয়ে। তাদের যে অনেক পড়া, শেষ করতে হবে বাড়ির কাজ!
যদিও বাড়ির কাজ দেওয়ার ব্যাপারে স্কুলগুলোর আগ্রহের সীমা নেই। অধিকাংশ গবেষণাতেই দেখা গেছে, বাড়ির কাজ দেওয়ার এই বিষয়টি শিশুর শিখন ফলাফল আনয়নে তেমন কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে না। বরং এ ধরনের চাপ শিশুমনে ফেলছে নেতিবাচক প্রভাব। শিশুরা পড়াশোনার প্রতি অনাগ্রহী হয়ে বেড়ে উঠছে। গবেষণায় এমনও দেখা গেছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিষণ্নতা কিংবা নিদ্রাহীনতায় ভুগছে। অতিরিক্ত পড়ার বোঝা হালকা করার অবিরাম প্রচেষ্টায় শিশু বঞ্চিত হচ্ছে তার খেলার সময় থেকে কিংবা পরিজনদের মূল্যবান সানি্নধ্য থেকে। জীবনের চলার পথ বোধ করি কারও জন্যই কুসুমাস্তীর্ণ নয়। জীবনের জটিল সমীকরণের হিসাব মেলাতে আর নানাবিধ দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে আমরা বড়রাই হিমশিম খাচ্ছি। থাক না শিশুরা আরও কিছুদিন এ জগৎ থেকে কিছুটা দূরে।
দীর্ঘ সময় স্কুলে থাকার পরও এসব শিশুকে দেওয়া হয় হোমওয়ার্ক বা বাড়ির কাজ। বাড়ির কাজ দেওয়ার এই চর্চা শুরু হয় প্রি-স্কুল থেকেই। ভেবে পাই না প্রি-স্কুলের কোমলমতি এ শিশুদের বাড়ির কাজ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আদৌ আছে কি-না! এটা ঠিক যে, গত দু'দশকে শিক্ষাক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে বহুগুণে। স্বাভাবিকভাবেই স্কুলগুলোতে এর প্রভাব পড়েছে। আর এই প্রভাব থেকেই মূলত জন্ম নিয়েছে বাড়ির কাজ দেওয়ার এই চর্চাটি। কিন্ডারগার্টেন আর ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোতে এই প্রবণতা যেন আরও বেশি। একদিকে পাহাড়সম সিলেবাস আর অন্যদিকে প্রতিদিনের বাড়ির কাজ শেষ করার চাপে চ্যাপ্টা হওয়ার অবস্থা মূল স্কুল শুরু করার আগেই স্কুলের স্বাদ পাওয়া এই শিশুগুলোর। স্কুলগুলোও যেন আজ প্রতিযোগিতায় মত্ত_ কার চেয়ে কার সিলেবাস কলেবরে বড় তা নিয়ে। তাদের সঙ্গে আছেন অতিউৎসাহী কিছু অভিভাবক, যারা ভূমিকা রেখে চলেছেন সিলেবাসকে আরও স্বাস্থ্যবান বানানোর ব্যাপারে। তাই তো প্রি-স্কুলের যে শিশুটি 'ছাত্র' শব্দটির অর্থই ঠিকমতো বোঝে না, তাকে মুখস্থ করতে শুনি শব্দটির একবচন/বহুবচন কিংবা পুংলিঙ্গ/স্ত্রীলিঙ্গ। শিশুর এই পাণ্ডিত্যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের পিতা-মাতাও মহাখুশি। কাউকে কাউকে আত্মতৃপ্তির সঙ্গে বলতেও শুনি, 'আমার বাচ্চা পারছে তো!' পারছে তো বটেই, তবে তাড়াতাড়ি এত পারার ব্যাপারটি কি সত্যিই স্বাস্থ্যকর! ভাবার অবকাশ আছে বৈকি!
অন্যদিকে রোজ সন্ধ্যায় এসব কোমলমতি শিশুকে পড়াতে বসান তাদের মা-বাবারা, বিশেষত মায়েরা। শিশুদের পড়াতে বসানোর এই গুরুদায়িত্ব্ব একজন কর্মজীবী মায়ের জন্য যে কতটা ক্লান্তিকর তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সারাদিনের কর্মক্লান্তির পর তার উদ্যম যখন প্রায় ফুরিয়ে এসেছে, তখন তাকে নবউদ্যমে নিয়োজিত হতে হয় সন্তানকে শিক্ষিত করে তোলার মহান দায়িত্ব পালনে। বাজারের কোনো হেলথ ড্রিঙ্কই পারে না কর্মজীবী সেসব মায়ের উদ্যম ফিরিয়ে আনতে! অন্যদিকে শিশুরা পড়তে বসে একরাশ বিরক্তি নিয়ে। তাদের যে অনেক পড়া, শেষ করতে হবে বাড়ির কাজ!
যদিও বাড়ির কাজ দেওয়ার ব্যাপারে স্কুলগুলোর আগ্রহের সীমা নেই। অধিকাংশ গবেষণাতেই দেখা গেছে, বাড়ির কাজ দেওয়ার এই বিষয়টি শিশুর শিখন ফলাফল আনয়নে তেমন কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে না। বরং এ ধরনের চাপ শিশুমনে ফেলছে নেতিবাচক প্রভাব। শিশুরা পড়াশোনার প্রতি অনাগ্রহী হয়ে বেড়ে উঠছে। গবেষণায় এমনও দেখা গেছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিষণ্নতা কিংবা নিদ্রাহীনতায় ভুগছে। অতিরিক্ত পড়ার বোঝা হালকা করার অবিরাম প্রচেষ্টায় শিশু বঞ্চিত হচ্ছে তার খেলার সময় থেকে কিংবা পরিজনদের মূল্যবান সানি্নধ্য থেকে। জীবনের চলার পথ বোধ করি কারও জন্যই কুসুমাস্তীর্ণ নয়। জীবনের জটিল সমীকরণের হিসাব মেলাতে আর নানাবিধ দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে আমরা বড়রাই হিমশিম খাচ্ছি। থাক না শিশুরা আরও কিছুদিন এ জগৎ থেকে কিছুটা দূরে।
No comments