বিএনপির সঙ্গে আলোচনা
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। বিএনপি সাড়া দিলে অচিরেই তাদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় বসতে চাই।’ তিনি সোমবার সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের শুরুতে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
সৈয়দ আশরাফের এ বক্তব্য দেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা মনে করি। রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে আলোচনা ও সমঝোতাই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সফল করে। এ ক্ষেত্রে সরকারী দল ও বিরোধী দলকে নমনীয় হতে হবে; কাউকেই কোন সিদ্ধান্ত আঁকড়ে ধরে থাকলে চলবে না। দুটি দলকেই সর্বক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ ও জনকল্যাণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী সংসদে বক্তব্য প্রদানকালে বিরোধী দলের সঙ্গে যে আলোচনার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন তা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকারের গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় বহন করে। এরপর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ যেভাবে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন, বিএনপির উচিত তাঁর সে আহ্বানে সাড়া দেয়া। কারণ গণতন্ত্রই আধুনিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় জনগণের ইচ্ছা ও মতামতকে সর্বক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয়। এখানে কোন ব্যক্তিবিশেষের স্বেচ্ছাচারিতার স্থান নেই। তবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সর্বক্ষেত্রে টিকিয়ে রাখা যথেষ্ট কঠিন ব্যাপার। এ জন্য সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলসমূহের দরকার গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি।আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন প্রসঙ্গে একজন সাবেক আমলা ও বুদ্ধিজীবীর ‘চার ফর্মুলা’ বিষয়ে বলেছেন, এসব আলোচনা কেবল একটি শ্রেণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। আসলে বৃহত্তর জনগণের সুযোগ-সুবিধার কথা সম্পূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতেই বিবেচনা করতে হবে। বিরোধী দলকে বর্তমান রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক বাস্তবতাকে গ্রহণ করতে হবে। এর বাইরে গেলে বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের এমন দায়িত্বশীলতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দেয়া উচিত, যাতে গণতন্ত্র বিপন্ন না হয়। বিরোধী দল গত কয়েক বছর ধরে উন্নয়ন ও জনকল্যাণের বিষয়ে সরকারকে খুব একটা সহায়তা করেনি। বরং তারা অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করে আসছে। তারা জামায়াতের ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসাত্মক কর্মসূচির প্রতি সমর্থন দিয়েছে।
এ অবস্থায় মনে প্রশ্ন জেগেছে, বিরোধী দল এভাবে দেশে অচলাবস্থার সৃষ্টি করতে চায় কেন? সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুঃশাসনের কথা দেশবাসী এখনও বিস্মৃত হয়নি। সে সময় তারা চেয়েছিল, দেশকে রাজনীতিক শূন্য করতে। এক ধরনের অগণতান্ত্রিক স্বেচ্ছাচার কায়েমই ছিল তাদের মূল্য উদ্দেশ্য। এতে জনগণের কোন লাভ হবে না। ফলে কেবল দেশে অগণতান্ত্রিক শক্তি ও তাদের সহযোগীদের উপকার হবে। আলোচনার পথ বন্ধ হয়নি। বর্তমান সরকার বিএনপির সঙ্গে আলোচনার যে ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে, বিরোধী দলকে অবস্থা দেশ ও জাতির স্বার্থে সে আহ্বানে সাড়া দেয়া উচিত।
No comments